আসামির পক্ষে-বিপক্ষে থানায় বিএনপির ২ পক্ষের বাগ্বিতণ্ডা, এক নেতাকে লাথি আসামির
Published: 16th, March 2025 GMT
রাজশাহীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার এক আসামির পক্ষে-বিপক্ষে থানার ভেতরে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়েছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। পরে আসামিকে থানা থেকে আদালতে নেওয়ার সময় হাতকড়া পরা অবস্থায় তিনি কৃষক দলের এক নেতাকে লাথি মারেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
গতকাল শনিবার বিকেলে নগরের বোয়ালিয়া থানার ভেতরে এ ঘটনা ঘটে। গ্রেপ্তার ওই আসামির নাম আবুল কালাম আজাদ (৫৫)। তাঁর বাড়ি নগরের বালিয়াপুকুর এলাকায়। তিনি বিসিআইসির সার ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এবং ট্রাক–কাভার্ড ভ্যান অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী জেলার সভাপতি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি উষামা বিন ইকবাল নামের একজন বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার ৬৫ নম্বর আসামি আবুল কালাম আজাদ।
লাঞ্ছিত হওয়া কৃষক দলের নেতার নাম আল আমিন ওরফে টিটু। তিনি কৃষক দলের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক। গ্রেপ্তার হওয়া আবুল কালাম আজাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি থানায় বিএনপির অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, আবুল কালাম আজাদ যখন গ্রেপ্তার হয়ে থানায় ছিলেন, তখন থানায় কৃষক দল নেতা আল আমিন সাংবাদিকদের বলছিলেন, ‘ছাত্র-জনতার ওপরে ৫ আগস্ট যে হামলা হয়েছে, তার গুলি কেনার টাকা লিটনকে (সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান) দিয়েছেন এই আবুল কালাম আজাদ।’ এই কথার তীব্র প্রতিবাদ জানান মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন, আসলাম সরকার, শাহ মখদুম থানা বিএনপির সদস্য সাবেক আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান শরীফসহ কয়েকজন। তখন তাঁদের মধ্যে চরম বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর মধ্যে আবুল কালাম আজাদকে আদালতে নিতে থানা থেকে পুলিশের গাড়ির দিকে নেওয়া হচ্ছিল। তখন সামনে পেয়ে হাতকড়া পরা অবস্থায় আল আমিনকে একটি লাথি মারেন তিনি। এ সময় আবুল কালাম আজাদের বিপক্ষের নেতারা তাঁকে ধরতে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশসহ অন্যান্যরা তাঁদের নিবৃত্ত করেন।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, আবুল কালাম আজাদ বরাবরই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁকে আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের পরিচিত হওয়ায় সমবেদনা জানাতে থানায় দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আল আমিন যখন তাঁকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়ে তাঁকে ছাড়াতে এসেছেন’, তখন তিনি তাঁর কথার প্রতিবাদ করেন। কারণ, টিটু দেখাতে পারবেন না, আবুল কালাম আজাদ কখন, কোথায়, কীভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তিনি বরাবরই বিএনপির লোক।
তবে কৃষক দলের নেতা আল আমিন বলেন, আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তারের খবর শুনে বিএনপির নেতারা তাঁকে ছাড়াতে থানায় যান। এইটা জানার পর তিনিও থানায় গিয়ে এর প্রতিবাদ করেন। আর ওই ক্ষোভে তাঁকে লাথি মারা হয়। তিনি বলেন, আবুল কালাম আজাদ খায়রুজ্জামান লিটন ও সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে কীভাবে মিশেছেন, তার ছবি তিনি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
এদিকে আজ রোববার বেলা দুইটায় নগরের একটি রেস্তোরাঁয় আবুল কালামের নিঃশর্ত মুক্তি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছেন সার ব্যবসায়ী ও ট্রাক সমিতির নেতারা। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএডিসির রাজশাহী ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহফুজুল হাসনাইন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ষড়যন্ত্র এখনো বিদ্যমান। তারই অংশ হিসেবে জনপ্রিয় একজন রাসায়নিক ও ট্রাক পরিবহন ব্যবসায়ী নেতাকে মোটা অঙ্কের টাকা না পাওয়ায় তাঁর পদ থেকে সরাতে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বোয়ালিয়া থানা সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী মাসুদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তদন্তের নামে এজাহারবহির্ভূত ৭৪ জনের নাম সংযুক্ত করে প্রাথমিক তথ্যবিবরণীতে উল্লেখ করেন।
মাহফুজুল হাসনাইন বলেন, মামলার বাদী উষামা বিন ইকবাল প্রাথমিক তথ্যবিবরণীর ব্যাপারে জানতে পেরে স্বপ্রণোদিতভাবে আবুল কালামের নামে অভিযোগ প্রত্যাহার করে জেলা নোটারি পাবলিক কার্যালয়ে একটি অ্যাফিডেভিট দেন, যা বোয়ালিয়া থানা ও মহানগর পুলিশ কমিশনার বরাবর পাঠানো হয়েছে। এরপরও আবুল কালামকে গ্রেপ্তার করা আইন অবমাননার শামিল। আবুল কালামকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে রাজশাহী অঞ্চলের ট্রাক পরিবহন ও কৃষি ক্ষেত্রে একটি অস্থিতিশীলতা পরিস্থিতি সৃষ্টির চরম ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাঁরা সংবাদ সম্মেলন থেকে পুলিশ বিভাগের এ ধরনের ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ ও আবুল কালামের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
অ্যাফিডেভিটের বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক হাসান বলেন, অ্যাফিডেভিট করে দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের কিছু বলার নেই। এ রকম কিছু বাদী করে থাকলে আদালত সেটা বিচার করবেন। তাঁরা এজাহারনামীয় আসামি হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছেন। লাথি দেওয়ার বিষয়ে থানায় কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি বলে তিনি জানান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ষড়যন ত র ব এনপ র ত র কর
এছাড়াও পড়ুন:
কারিগরি শিক্ষার্থীদের অবরোধের ঘোষণা সহিংস আন্দোলনের উসকানি: সংবাদ সম্মেলনে বুয়েট শিক্ষার্থীরা
কারিগরি শিক্ষার্থীদের গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণাকে ‘সহিংস আন্দোলনের উসকানি ও গভীর ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পরে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। ‘প্রকৌশল অধিকার আন্দোলন’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বুয়েট শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আলোচনায় বসে। দাবির যৌক্তিকতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমাধারী—উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে ডাকে। সবার যুক্তিতর্ক সমানভাবে উপস্থাপনের সুযোগ করে দেয়, যাতে কারও প্রতি কোনোরূপ বৈষম্য না হয়।
লিখিত বক্তব্যে বুয়েট শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আলোচনার টেবিলে সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আজ গাজীপুরে রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে কারিগরি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। ডিপ্লোমাধারীদের পক্ষ থেকে যে প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরাই অবরোধ ডেকে সহিংস আন্দোলনের জন্য ক্রমাগত উসকানি দিয়ে যাচ্ছেন।
আলোচনার টেবিল ছেড়ে কেন জনদুর্ভোগ করে অবরোধের উসকানি দেওয়া হচ্ছে—এমন প্রশ্ন রাখেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
আলোচনার টেবিল ছেড়ে অবরোধ কোনো যৌক্তিক সমাধান হতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে। এতে বলা হয়, এগুলো শুধুই বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারা ও গভীর ষড়যন্ত্র, যা প্রথাগত আন্দোলনকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আলোচনার টেবিল ছেড়ে যাঁরা অবরোধ করে দেশে নৈরাজ্য তৈরির উসকানি দিচ্ছেন, তাঁদের আসল উদ্দেশ্য ও এজেন্ডা খতিয়ে দেখা দরকার।
বুয়েট শিক্ষার্থীরা বলেন, যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য গায়ের জোর খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবরোধের প্রয়োজন নেই। যৌক্তিক দাবি জানালে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে তা আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেবে।