ঝালকাঠিতে মাদ্রাসার আয়োজনে প্রতিদিন হাজার মানুষের ইফতার
Published: 17th, March 2025 GMT
তখন সূর্য পশ্চিম আকাশে অনেকটা হেলে পড়েছে। আর কিছু সময় পরই মাগরিবের আজান পড়বে। এমন সময়ে ঝালকাঠি নেছারাবাদ এন এস কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে চলছে ইফতারের আয়োজন। শিক্ষার্থীরা ইফতারের প্লেট সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সারা দিনের রোজা শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পথচারী সাধারণ মানুষ ইফতারের জন্য প্যান্ডেলে দিকে আসছেন। প্রায় এক হাজার মানুষের এই ইফতারে শামিল হতে কোনো টাকা লাগে না। বিনা মূল্যে রোজাদাররা প্লেটে চিড়ামুড়ি, খেজুর, জিলাপি, পেঁয়াজু, লেবু, শরবত আর বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন। দীর্ঘ বছর ধরে এখানে এভাবেই হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই ইফতারে অর্থায়ন করেন।
শনিবার বিকেলে কিছু বেলা থাকতে ঝালকাঠি নেছারাবাদ এন এস কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ইফতারের প্রস্তুতি তখন শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা চিড়ামুড়ি, খেজুর, জিলাপি ও পেঁয়াজু দিয়ে প্লেট সাজাচ্ছেন। মাইকে জিকির ও গজল শোনা যাচ্ছে। আগে থেকেই মাঠে রঙিন কাপড়ের লম্বা চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা ইফতারের প্লেট সেই চাদরের ওপর সাজিয়ে রাখছেন। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সমবেত হতে থাকেন মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পথচারী ও গ্রামের লোকজন। পুরো প্রক্রিয়াটি বসে পর্যবেক্ষণ করছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষকেরা।
ইফতারের আগমুহূর্তে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। সেখানে দেশের মানুষের কল্যাণ কামনা করা হয়। এখানে পুরো এক মাস ডেকোরেটরের মাধ্যমে প্যান্ডেল করা হয়। রোজাদারদের বসার জন্য রঙিন কাপড় বিছানো হয়। প্যান্ডেলের মধ্যে আলোকসজ্জাসহ এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে সেখানে।
ঝালকাঠি কৃষি ব্যাংকের মুখ্য আঞ্চলিক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে শনিবার এখানে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাঁদের নিজেদের বেতনের অংশ থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা ইফতারের জন্য খরচ করেছেন।
কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো.
দক্ষিণ পিপলিতা গ্রাম থেকে ইফতার করতে আসা সোলায়মান হায়দার (৫৫) বলেন, একসঙ্গে এত মানুষ ইফতার করার নেয়ামত অন্য রকম। এ ছাড়া এই ইফতার মাহফিলে বসে মোনাজাতে অংশ নেওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার।
মাদ্রাসার দাখিলের শিক্ষার্থী নেছার উদ্দিন বলে, প্রতিদিন ইফতারের বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তৈরি করতে তারা সহায়তা করে। সবাই মিলে আনন্দের সঙ্গে কাজটি করে তারা।
ঝালকাঠি নেছারাবাদ এন এস কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা গাজী মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও মাদ্রাসার পক্ষ থেকে মাসব্যাপী রোজাদারদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষকে সুশৃঙ্খলভাবে ইফতার করানো হয়। অনেক ধনী ব্যক্তির অর্থায়নে এই ইফতারের আয়োজন করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।
আরো পড়ুন:
নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”
প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”
গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী