করোনার টিকা কেনায় ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, সালমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত
Published: 17th, March 2025 GMT
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেডের মালিক সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে করোনা ভ্যাকসিন ক্রয়ে ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) সাবেক চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী, তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেনসহ অনেক প্রভাবশালীর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে সালমান এফ রহমান ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। সোমবার (১৭ মার্চ) কমিশনের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
আরো পড়ুন:
গবেষকদের দাবি: ভয়ঙ্কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কোভ্যাক্সিনের টিকায়
অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সঙ্গে আরো এক প্রাণঘাতী রোগের সংযোগ
অভিযোগ অনুসন্ধানে ইতিমধ্যে দুদকের পক্ষ থেকে একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
এর আগে মইদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি করোনা ভ্যাকসিন ক্রয়ে বেক্সিকো ফার্মার হয়ে সালমান এফ রহমান ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে বলা হয়, করোনাভাইরাসের আগ্রাসনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি টাকা কেনার জন্য সে বছরের ডিসেম্বরে চুক্তি করে বাংলাদেশ। এতে সরবরাহকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড। বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো এবং সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যকার টিকা ক্রয় চুক্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার ঘাটতি ছিল প্রকট। টিকা ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করা হয়নি। বেক্সিমকো ফার্মার চাপে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একটি উৎস ছাড়া বিকল্প উৎস অনুসন্ধানেও ঘাটতি ছিল। একটি উৎস থেকে ক্রয়ের ক্ষেত্রে দর-কষাকষির নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত প্রতিনিধিদের মধ্যে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও আছেন, যা আইনের লঙ্ঘন। নীতিমালা লঙ্ঘন করে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। টিকা আমদানি করে তৃতীয় পক্ষকে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। যার বোঝা জনগণকে বইতে হয়। এভাবে যৌক্তিক কারণ না দেখিয়ে টিকা আমদানিতে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বেক্সিমকোকে অন্তর্ভুক্ত করায় অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি মূল্যে বাংলাদেশকে সেরামের টিকা কিনতে হয়েছে। সরকার সরাসরি সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে টিকা আনলে প্রতি ডোজে যে টাকা বাঁচত তা দিয়ে ৬৮ লাখ বেশি টিকা ক্রয়ের চুক্তি করা যেত।
এতে বলা হয়, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ভারত থেকে আমদানি করা অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা কোডিড-১৯ ড্যাকসিনের প্রতিটি ডোজ থেকে অন্য সব খরচ মিটিয়ে ৭৭ টাকা করে লাভ করেছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের ৭০ মিলিয়ন ডোজ পেয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৪২৫ টাকা, যার মোট খরচ ২,৯৭৫ বিলিয়ন টাকা।
স্বাস্থ্য সেবা সংস্থার বিজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, গ্রীন থেকে সিনোফার্ম ড্যাকসিনের ৩.
অভিযোগে আরো বলা হয়, করোনা ভ্যাকসিনকে কেন্দ্র করে সালমান এফ রহমান ও জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটে আরো ছিলেন তৎকালীন স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (ডিএমআরসি) চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের আলী ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। এই সিন্ডিকেটের শক্তির বলয়েই আটকে যায় বঙ্গভ্যাক্স। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আমদানি করে চক্রটি অন্তত ২২ হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছে। তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত মার্চ মাসে বলেছিলেন, কোডিড-১৯ টিকা বিতরণের ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
অভিযোগে আরো বলা হয়, কিন্তু টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খরচ সর্বোচ্চ ১৯৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। চক্রটি তাদের পকেট ভারি করতেই মূলত বাংলাদেশ আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিনের অনুমোদন পেতে প্রভাব খাটিয়ে গড়িমসি করেছে। সেরাম থেকে সালমান এফ রহমান আলাদা কমিশন নিয়েছেন। সালমান এফ রহমান তার নিজের প্রতিষ্ঠানকে তার প্রভাব খাটিয়ে লাভবান করেছেন, রাষ্ট্রে সম্পদের অপচয় হয়েছে আর বাংলাদেশের যে সম্ভাবনাময়কে পদদলিত করেছে। এই অসাধু চক্রে মারা যারা জড়িত ছিল, তাদের সবাইকে কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
অভিযোগে আলো বলা হয়, এই অসাধু সিন্ডিকেট নিজেদের পকেট ভারী করতে আমলাতন্ত্রের লাল ফিতায় আটকে রেখেছিল গ্লোব বায়োটেকের বঙ্গভ্যাক্স অনুমোদন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অন্তত অর্ধডজন চিঠি দিয়েও কোনো সহায়তা মেলেনি। হামলা করা হয় প্রতিষ্ঠানটির অফিসে, গবেষকদের দেওয়া হয়েছিল হুমকিও। প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসান নিয়েও ক্ষমতাধরদের দাপটে মেনে নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে করোনার প্রকোপ শেষ হয়ে গেলে মেলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন। প্রথমে একটি আনঅফিসিয়াল মিটিংয়ে সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের সঙ্গে গ্লোব বায়োটেককে প্রযুক্তি শেয়ার করার দাবি করা হয়। বেক্সিমকো ও গ্লোব বায়োটেক মিলে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বঙ্গভ্যাক্স বাজারজাত করার কথা বলেন সালমান এফ রহমান। প্রথমে তাতে সায় দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। বিষয়টি নিয়ে সমাধানের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে সালমান এফ রহমানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছিল গ্লোব বায়োটেকের। এর মধ্যেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকোর একটি চুক্তি হয়ে যায়। পরে বেক্সিমকো গ্রুপের মাধ্যমে সেয়াম ইনস্টিটিউটের ড্যাকসিন বাংলাদেশে আমদানি করার কারণে বঙ্গভ্যাক্সের অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তর থেকে অপ্রয়োজনীয় সব শর্ত জুড়ে দিয়ে করা হয় সময়ক্ষেপণ। গ্লোব বায়োটেক থেকে সেসব প্রশ্নের জবাব দেওয়া হলেও পরে নতুন নতুন শর্ত দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিঠি দিয়েছে সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল দপ্তর। আর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে যাওয়ার পর।
এমতাবস্থায়, বর্ণিত সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত সালমান এফ রহমান, জাহিদ মালেক, মোদাচ্ছের আলী, লোকমান হোসেনসহ আমদানির সাথে জড়িত অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের মাধ্যমে প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়ে দুর্নীতির অনুসন্ধানপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি আবেদন করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর তৎক ল ন সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রপ্তানিকারকদের সুবিধা বাড়ল, বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব থেকে সোয়াপ করে টাকা তোলা যাবে
রপ্তানিকারকদের সুবিধা বাড়ল। এখন থেকে রপ্তানিকারকেরা নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রা (এফসি) হিসাব থেকে সোয়াপের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন।
আজ সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোকে ৩০ দিনের পুলে রক্ষিত বৈদেশিক মুদ্রা এবং রপ্তানিকারকের রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা-টাকা সোয়াপ চুক্তি করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সোয়াপ কীসার্কুলার অনুসারে, আলোচ্য সোয়াপ চুক্তি বলতে একটি নির্দিষ্ট হারে ও মেয়াদে টাকার বিনিময়ে বৈদেশিক মুদ্রার স্পট ক্রয় এবং একই সঙ্গে একটি নির্ধারিত তারিখে পুনঃবিক্রয়ের ব্যবস্থাকে বোঝাবে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানিকারকের নিজস্ব উৎসের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহৃত হবে। সোয়াপের মেয়াদ ইআরকিউ তহবিলের ব্যবহারযোগ্য মেয়াদের বেশি হতে পারবে না এবং ৩০ দিনের পুল তহবিলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩০ দিন মেয়াদি সোয়াপ করা যাবে।
সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, সোয়াপের হার নির্ধারণে বাজারভিত্তিক বা খরচভিত্তিক সুদ বা মুনাফার পার্থক্য বিবেচনায় নেওয়া যাবে। আলোচ্য সোয়াপ লেনদেনকে ঋণ বা অর্থায়ন সুবিধা হিসেবে গণ্য করা হবে না। সোয়াপের মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা শুধু রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চলতি মূলধনের চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা যাবে। কোনো ফটকা উদ্দেশ্যে ওই অর্থ ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
শিল্প খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগের কারণে রপ্তানিকারকদের স্বল্পমেয়াদি তারল্য চাপ কমাতে সহায়তা করবে। এতে প্রচলিত রপ্তানি ঋণের ওপর নির্ভর না করেও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালাতে পারবেন। পাশাপাশি এটি বাজারভিত্তিক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনাকেও উৎসাহিত করবে।