যেভাবে কাটছে শেকৃবি শিক্ষার্থীদের রমজান
Published: 17th, March 2025 GMT
রমজান আসে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে। এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে বসে ইফতার করার আনন্দ রমজানের অন্যতম আকর্ষণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এ অভিজ্ঞতা অনেকটাই ভিন্ন।
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা কেমন কাটাচ্ছেন এবারের রমজান? জানতে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে রাইজিংবিডি ডটকম।
কোনো মতে সেহরি খেয়ে রোজা রাখতে হচ্ছে
শেকৃবিতে ক্লাসের চাপ অনেক। সারাদিন ক্লাস করার পর ইফতারের সময় মনে হয় যেন একটা মেশিনের মতো চলছি। প্রথমবারের মতো পরিবার ছাড়া রমজান পার করছি। পরিবারে থাকার সময় রমজানের আনন্দ দ্বিগুণ ছিল। বিশেষ করে মায়ের হাতের খাবারের স্বাদ এর অতুলনীয়।
ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবারের মান তত ভালো নয়। কোনো মতে সেহরি খেয়ে রোজা রাখতে হচ্ছে। এখন দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে পরিবারের কাছে ফেরার অপেক্ষায় আছি।
(লেখক: খাদিজা রুবাইয়াত, শিক্ষার্থী, কৃষি ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ, সেমিস্টার-২, লেভেল-২)
খাবারের সংকট ও ঘুমের সমস্যা
হলের খাবার দ্রুত শেষ হয়ে যায়। তাই রাত ৩টায় উঠে খাবারের খেতে হয়। এরপর ফজরের নামাজের জন্য জেগে থাকতে হয়। ফলে ঘুমের সমস্যা প্রকট। ক্যান্টিনের খাবারের মান ভালো নয়।
তারপরও রোজা রাখতে হবে। তাই এগুলো খেয়েই রোজা রাখতে হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে না পারায় কষ্ট লাগছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের এই সমস্যাগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা এবং সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া।
(লেখক: মো.
ভবিষ্যতের স্মৃতি
বাসায় থাকলে রমজানে ব্যস্ততা কম থাকে। ক্যাম্পাসে ক্লাস, পরীক্ষা, টিউশনের মাঝে সময় চলে যায়। তবে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারের মুহূর্তগুলো এক নতুন অভিজ্ঞতা। ভবিষ্যতের জন্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।
আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবারের মান উন্নত করা হোক। সেহরি ও ইফতারের জন্য মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করা হলে রোজা রাখা সহজ হবে।
(লেখক: মো. নূর, শিক্ষার্থী, কৃষি ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ, সেমিস্টার-২, লেভেল-২)
ক্যান্টিনের খাবার খেয়ে এলার্জি হয়েছিল
রমজান ভালোই কাটছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবকিছু উপভোগ করার মতো। বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার তৈরি করা, একসঙ্গে খাওয়া- এক নতুন অভিজ্ঞতা। ক্যাম্পাসে রোজা পালন না করলে হয়তো এই অভিজ্ঞতা কখনোই হতো না।
তবে ক্যান্টিনের খাবার খেয়ে আমি দুই সপ্তাহ এলার্জিতে ভুগেছি। কর্তৃপক্ষের উচিত খাবারের মান উন্নত করা।
(লেখক: শেখ রাইয়ান মাহমুদ, শিক্ষার্থী, কৃষি ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ, সেমিস্টার-১, লেভেল-২)
পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে
এটা আমার শেকৃবি ক্যাম্পাসে তৃতীয় রমজান। পরিবার থেকে দূরে আছি, কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে ভালোভাবেই ইফতার করছি। এজন্য পরিবারের যে অভাবটা, সেটা অনেকটা কমে আসে। তবে পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে। পরিবারের সবাই একসঙ্গে ইফতার করতাম। কিন্তু এখানে বাবা-মাকে ছাড়া ইফতার করছি বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে।
আর রমজানে ক্লাস ও পরীক্ষার সময়সূচি এমনভাবে নির্ধারণ করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা রমজানের আমল ও ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারে।
(লেখক: তাসমিয়া মামুন মারিয়া, শিক্ষার্থী, কৃষি ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ, সেমিস্টার-২, লেভেল-২)
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র ত র কর র জন য রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।