রমজান আসে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে। এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একসঙ্গে বসে ইফতার করার আনন্দ রমজানের অন্যতম আকর্ষণ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য এ অভিজ্ঞতা অনেকটাই ভিন্ন।

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা কেমন কাটাচ্ছেন এবারের রমজান? জানতে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে রাইজিংবিডি ডটকম।

কোনো মতে সেহরি খেয়ে রোজা রাখতে হচ্ছে

শেকৃবিতে ক্লাসের চাপ অনেক। সারাদিন ক্লাস করার পর ইফতারের সময় মনে হয় যেন একটা মেশিনের মতো চলছি। প্রথমবারের মতো পরিবার ছাড়া রমজান পার করছি। পরিবারে থাকার সময় রমজানের আনন্দ দ্বিগুণ ছিল। বিশেষ করে মায়ের হাতের খাবারের স্বাদ এর অতুলনীয়।

ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবারের মান তত ভালো নয়। কোনো মতে সেহরি খেয়ে রোজা রাখতে হচ্ছে। এখন দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে পরিবারের কাছে ফেরার অপেক্ষায় আছি।
(লেখক: খাদিজা রুবাইয়াত, শিক্ষার্থী, কৃষি ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ, সেমিস্টার-২, লেভেল-২)

খাবারের সংকট ও ঘুমের সমস্যা

হলের খাবার দ্রুত শেষ হয়ে যায়। তাই রাত ৩টায় উঠে খাবারের খেতে হয়। এরপর ফজরের নামাজের জন্য জেগে থাকতে হয়। ফলে ঘুমের সমস্যা প্রকট। ক্যান্টিনের খাবারের মান ভালো নয়।

তারপরও রোজা রাখতে হবে। তাই এগুলো খেয়েই রোজা রাখতে হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে না পারায় কষ্ট লাগছে। আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের এই সমস্যাগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা এবং সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া।
(লেখক: মো.

শাহীন আলম, শিক্ষার্থী, কৃষি ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ, সেমিস্টার-২, লেভেল-২)

ভবিষ্যতের স্মৃতি 

বাসায় থাকলে রমজানে ব্যস্ততা কম থাকে। ক্যাম্পাসে ক্লাস, পরীক্ষা, টিউশনের মাঝে সময় চলে যায়। তবে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারের মুহূর্তগুলো এক নতুন অভিজ্ঞতা। ভবিষ্যতের জন্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।

আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবারের মান উন্নত করা হোক। সেহরি ও ইফতারের জন্য মানসম্মত খাবারের ব্যবস্থা করা হলে রোজা রাখা সহজ হবে।
(লেখক: মো. নূর, শিক্ষার্থী, কৃষি ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ, সেমিস্টার-২, লেভেল-২)

ক্যান্টিনের খাবার খেয়ে এলার্জি হয়েছিল

রমজান ভালোই কাটছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সবকিছু উপভোগ করার মতো। বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার তৈরি করা, একসঙ্গে খাওয়া- এক নতুন অভিজ্ঞতা। ক্যাম্পাসে রোজা পালন না করলে হয়তো এই অভিজ্ঞতা কখনোই হতো না।

তবে ক্যান্টিনের খাবার খেয়ে আমি দুই সপ্তাহ এলার্জিতে ভুগেছি। কর্তৃপক্ষের উচিত খাবারের মান উন্নত করা।
(লেখক: শেখ রাইয়ান মাহমুদ, শিক্ষার্থী, কৃষি ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ, সেমিস্টার-১, লেভেল-২)

পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে

এটা আমার শেকৃবি ক্যাম্পাসে তৃতীয় রমজান। পরিবার থেকে দূরে আছি, কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে ভালোভাবেই ইফতার করছি। এজন্য পরিবারের যে অভাবটা, সেটা অনেকটা কমে আসে। তবে পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে। পরিবারের সবাই একসঙ্গে ইফতার করতাম। কিন্তু এখানে বাবা-মাকে ছাড়া ইফতার করছি বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে।

আর রমজানে ক্লাস ও পরীক্ষার সময়সূচি এমনভাবে নির্ধারণ করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা রমজানের আমল ও ইবাদতে মনোনিবেশ করতে পারে।
(লেখক: তাসমিয়া মামুন মারিয়া, শিক্ষার্থী, কৃষি ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা অনুষদ, সেমিস্টার-২, লেভেল-২)

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব র র ত র কর র জন য রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।

আরো পড়ুন:

নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি

শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 

এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”

খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”

পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”

প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”

তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”

গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।

শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।

ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের কাছে তেল বিক্রি করতে পারে পাকিস্তান, খোঁচা দিলেন ট্রাম্প
  • কেটি পেরি ও জাস্টিন ট্রুডোর ডিনার, গুঞ্জন
  • শিক্ষার্থী সাজিদ স্মরণে ইবিতে ব্যতিক্রমী আয়োজন
  • ৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী