Samakal:
2025-08-01@19:39:43 GMT

ইমিউনিটি কীভাবে বাড়াবেন

Published: 17th, March 2025 GMT

ইমিউনিটি কীভাবে বাড়াবেন

পুষ্টিকর খাবার মানে সুস্থ শরীর। রোজকার ডায়েটে সবই তো রাখা হচ্ছে এখন। তা সত্ত্বেও ইমিউনিটির এত অভাব! খাবার থেকে পুষ্টি আসে, এ কথা ঠিক। তবে ইমিউনিটির সঙ্গে যখন আপস করাই হচ্ছে, তার মানে পুষ্টিতে কমতি রয়েছে, সেটি স্পষ্ট। ভাত, ডাল, তরিতরকারি, মাছ-মাংস, ডিম, দুধ, ফল, পানি এসব খেলে সুস্থ থাকবেন তখনই, যখন তার পরিমাণটা ঠিক ঠিক হবে। আপনার শরীরে যতটা দরকার, মেপে মেপে ঠিক ততটাই দিতে হবে এবং তা যে শরীর ভালোভাবে গ্রহণ করছে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
ব্যালান্সড ডায়েট মানে কিন্তু শাকসবজি বা লাগজারিয়াস খাবার নয়। বাজারে যা পাওয়া যায়, যা প্রতিনিয়ত খেয়ে আসছি আমরা, সেগুলো দিয়েই ব্যালান্সড ডায়েট চার্ট তৈরি করা সম্ভব। উপকরণের চেয়েও এখানে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিমাণ এবং রান্নার ধরন। 
এমনভাবে রোজকার ডায়েট সাজাতে হবে, যাতে খাবারের মূল যে ছয়টা উপকরণ– প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, মিনারেল এবং পানি– এই প্রতিটিই পরিমিত পরিমাণে থাকে। কার্বোহাইড্রেট বলতে মূলত আমরা বুঝি ভাত-রুটি। রোজকার যে এনার্জি আমাদের দরকার, সেটি কিন্তু কার্বোহাইড্রেট থেকেই আমরা পাই। প্রোটিন জরুরি মাসল বিল্ডিংয়ের জন্য। আমরা যখনই কোনো অসুখে ভুগি, তখন ব্যাপক পরিমাণে মাসল ব্রেকডাউন হয়। যেটা এখন খুব হচ্ছেও সংক্রমণের কারণে। দীর্ঘদিন অসুখে ভুগলে আমরা যে রোগা হয়ে যাই, সেটা মূলত এই মাসল ব্রেকডাউনের কারণেই। সেজন্যই প্রোটিন নিয়ে এত জোরাজুরি এখন। শরীর যাতে সেই পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকে, তাই নিয়মিত প্রোটিন খেতে হবে। ইনস্ট্যান্ট এনার্জি সোর্সের অনেকটা আসে ফ্যাট থেকেও। এ ছাড়া শরীরের অনেক জরুরি প্রক্রিয়াই ফ্যাট ছাড়া অসম্পূর্ণ। অনেকেই ভাবেন, ডায়েট থেকে ফ্যাট বাদ দিয়ে দিলেই তা স্বাস্থ্যকর হয়ে যায়। এই ধারণা ভুল। এমন অনেক ভিটামিন আছে, যা শরীর মানিয়ে নেয় ফ্যাটের সাহায্যে। তাই ফ্যাটও ডায়েটে সমান গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ও মিনারেল প্রধানত ইমিউনিটির জন্য জরুরি। নানা ধরনের অসুখ থেকে সুরক্ষা দিতে শরীরে ভিটামিন ও মিনারেল দরকার। এ ছাড়া দরকার ফাইবার। খাবার শুধু খেলেই তো হয় না, তা যাতে শরীরে ভালোমতো অ্যাবসর্ব হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। খাবারের যথাযথ ডাইজেশন তাই খুব জরুরি। সে কাজটাই করে ফাইবার। হজমশক্তি এবং বাওয়েল সিস্টেম ভালো রাখতে তাই প্রতিদিনের খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার রাখতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই ফ্লুইড বা পানি। শুধু এই সময়ের জন্য নয়, সারা বছরই শরীরে পর্যাপ্ত পানি দরকার। শরীর যাতে ডিহাইড্রেটেড না হয়ে পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ সবক’টিই যদি দৈনন্দিন ডায়েটে পরিমিত পরিমাণে থাকে, তাহলে সেটিই হবে ব্যালান্সড ডায়েট। এই উপকরণগুলোর মধ্যে শরীরে যদি কোনো একটারও অভাব হয়, সে ক্ষেত্রে সবার আগে প্রভাব পড়বে এনার্জি লেভেলে। কাজ করায় উৎসাহ পাবেন না, ক্লান্ত লাগবে। তারপর প্রভাব পড়বে ইমিউন রেসপন্সে। শারীরিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থেকে যাবে আর বাহ্যিক রোগ-জীবাণুর সঙ্গে লড়াইয়েও শরীর পেরে উঠবে না। পরিমাণের মোটামুটি একটা হিসাব ধরতে হলে রোজকার খাবারে ফ্যাট, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের অনুপাত ৪:৪:৯ হলে আদর্শ। অর্থাৎ, একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির দৈনন্দিন যত কিলোক্যালরির দরকার, কার্বোহাইড্রেট লাগবে তার ৫৫-৬৫ শতাংশ, ফ্যাট লাগবে ১৫-৩০ শতাংশ এবং প্রোটিন লাগবে ১০-১৫ শতাংশ। এই পরিমাণটা জেন্ডার, বয়স এবং শরীরভেদে আলাদা হতে পারে। কারও যদি ডায়াবেটিস থাকে, তার যেমন কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমাতে হতে পারে, তেমনি ওবেসিটিতে ফ্যাটের পরিমাণ হয়তো খানিকটা কমবে। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য পর ম ণ দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চা শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর করে ‘পাতিচখা’

চায়ের সবুজ বাগানে গাছ থেকে পাতা কুঁড়ি তোলার কাজ সবচেয়ে বেশি করেন নারী শ্রমিকরা। রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে চায়ের বাগানের টিলায় পাতা কুঁড়ি সংগ্রহ করতে হয় তাদের।

ক্লান্ত দুপুরে নিজ হাতে তৈরি ‘পাতিচখা’ বা কাঁচা চা পাতির ভর্তা খেয়ে দুর্বল স্নায়ুকে আবার সবল করেন তারা। এরপর আবারো শুরু করেন কর্মযজ্ঞ। পড়ন্ত বিকেলে ওজন ধারের কাছে তোলা পাতার হিসাব দিয়ে ঘরে ফেরেন এই নারীরা।

চা সংশ্লিষ্টরা জানান, চায়ের কাঁচা পাতায় রয়েছে ক্যাফেইন নামক উপাদান। হাতের মলায় ক্যাফেইন তৈরি হয়। যা খেলে শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। পাতিচখা বা চা পাতির ভর্তা চা শ্রমিকদের প্রিয় খাবার। দুপুর হলেই তারা গাছের ছায়ায় গোল হয়ে বসে চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে চা পাতার কচি কুঁড়ি দিয়ে হাতের তালুতে ডলে তৈরি করেন পাতিচখা।

আরো পড়ুন:

পিয়াইন নদীতে ‍নিখোঁজ বালু শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার

গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগান গিয়ে শ্রমিকদের পাতিচখা খাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। 

কথা হলে চা শ্রমিকরা জানান, নারী শ্রমিকদের সর্দারনি সবার কাছ থেকে রুটি, পেঁয়াজ, মুড়ি, রসুন, চানাচুর, সিদ্ধ আলুসহ পাতিচখার উপকরণ সংগ্রহ করেন। একটি পাত্রে সব উপকরণ জমা করে সব শেষে চা পাতার কচি কুঁড়ি হাতের তালুতে ডলে সবাই মিলে তৈরি করেন পাতিচখা। সর্দারনি আবার সকলের হাতে হাতে তা বন্টন করেন।

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক বাসন্তি মুন্ডার বলেন, “আমরা ক্লান্তি দূর করার জন্য পাতিচখা খাই। এটা আমাদের নিজস্ব খাবার।”

বসন্তি মুন্ডার কাছে বসে থাকা অপর নারী শ্রমিক সুমা কর্মকার বলেন, “ক্লান্ত দুপুরে গাছের শান্ত ছায়ায় বসে আমরা পাতিচখা খেয়ে কাজে যায়। আমরা এ থেকে শক্তি পাই।”

বাগানের শ্রমিক উর্মিলা তাপসী বলেন, “আমাদের দুপুরের নাস্তা পাতিচখা খেলে শক্তি আসে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, চা জনগোষ্ঠীর আদি পেশা হলো কৃষি। কৃষি কাজ করে তাদের জীবন চলত। ১৮৪০ সালের দিকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে চায়ের চাষ বৃদ্ধি পায়। কর্মক্ষেত্র ক্লান্তি দূর করায় চায়ের কদর বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রথম কর্ণফুলী চা বাগানের মাধ্যমে চায়ের চাষাবাদ শুরু হয়। মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূলে থাকায় সিলেট ও চট্টগ্রামে চা বাগান গড়ে ওঠে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চা গাছ পরিচর্যার জন্য এখানে শ্রমিক আনা হয়। কাজের ক্লান্তি দূর করার জন্য মধ্যাহ্ন বিরতিতে রুটি খাওয়া ছিল তাদের পুরানো প্রথা। মনের খেয়ালে চা-গাছের কচি পাতা হাতের তালুতে ডলে রুটির সঙ্গে খেতে শুরু করেন তারা।

শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে তারা দুপুরে রুটির সঙ্গে চায়ের কচি পাতা খাওয়ার প্রথা শুরু করেন। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদান। শ্রমিকদের ভাষায় চাপাতি ভর্তা। এর বর্তমান নাম পাতিচখা।

চা বাগানের শ্রমিকদের সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাগানে কাজ করতে হয়। দুপুরে ঘরে ফেরার সুযোগ নেই তাদের। 

কথা হলে করিমপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা জাবেদ খান বলেন, “নারী শ্রমিকরা দুপুরে খাবার জন্য দুইটি রুটি সঙ্গে নিয়ে যান। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, চায়ের কচি পাতা রসুন, পেঁয়াজসহ অন্যান্য উপাদান। ভর্তা খাওয়ার প্রথা আদিকাল থেকে চলে আসছে।”

ওই চা বাগানের সাবেক পঞ্চায়েত সভাপতি ৮০ বছর বয়সী কতুব আলী বলেন, “পাতিচখা এটি আদিকাল থেকে চলে আসছে। নাস্তা খাওয়ার পর শরীরে এনার্জি আসে, সেটি খেয়ে আবার কাজে মন দেন শ্রমিকরা।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চা শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর করে ‘পাতিচখা’