কম টাকায় স্বস্তির কেনাকাটায় নিম্নবিত্তের ভরসার ব্যবসাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম নগরের জহুর হকার্স মার্কেট। পুরোনো ঐতিহ্যবাহী এই মার্কেটের প্রধান প্রবেশ পথ দিয়ে যেতেই দেখা হয় নগরের আছাদগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লুৎফুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আছেন স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে। পরিবারের ঈদের কেনাকাটা অন্যান্যবার তিনি করেছেন নিউমার্কেট কিংবা অন্য কোনো শপিং সেন্টার থেকে। এবার এলেন হকার্সে। ঈদের কেনাকাটা সম্পর্কে জানতে চাইলে লুৎফুর বলেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার পেঁয়াজ, টমেটো, আলুসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কম। ঈদ পোশাকের দাম চড়া। দুই দিন দুটি মার্কেটে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে আকাশচুম্বী দামের কারণে কেনাকাটা না করেই ফিরতে হয়েছে। তাই এখানে এসেছি।’

নামিদামি মার্কেট বা শপিং সেন্টারে গতবারের চেয়ে এবার পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিসসহ প্রায় সব পোশাকের দাম বেশি। গতবার ছোট শিশুর যে পাঞ্জাবি ৪০০ টাকায় কেনা গেছে, এবার একই ধরনের পাঞ্জাবির দাম ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এ অবস্থায় নির্দিষ্ট বাজেটে ঈদের কেনাকাটা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেককেই। এ কারণে মধ্যবিত্তের অনেকেই ছুটছেন হকার্স মার্কেটে। ব্যবসায়ী ও সমিতির নেতারা বলছেন, এক বছরের ব্যবধানে সুতাসহ প্রায় সব সামগ্রীর দাম বেড়েছে। ভারতের ভিসা জটিলতার কারণেও আগাম বুকিং করা অনেক পণ্য পৌঁছায়নি। এ কারণে দাম বেশি। এবার কারখানা থেকেও বাড়তি দামে পোশাক কিনতে হচ্ছে।
জহুর হকার্স দোকান মালিক সমিতির নেতা এসএম জুয়েল বলেন, ‘কম আয়ের মানুষের কাছে হকার্স মার্কেট ভরসার জায়গা। অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় এখানে সবকিছুর দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। ব্যবসায়ীরা সামান্য লাভে পোশাক বিক্রি করেন। এবার অনেক মধ্যবিত্ত এখানে ছুটে আসছেন।’ আরেক ব্যবসায়ী নেতা মো.

হারুন বলেন, শপিং সেন্টারে যে পোশাক ২ হাজার টাকা, তা এখানে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।’

নগরীর টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান বলেন, ‘এক বছরের ব্যবধানে সুতা থেকে শুরু করে পোশাক তৈরির আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে ঈদের পোশাকে। এ কারণে কম টাকায় পরিবারের ঈদের কেনাকাটা করতে এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে ছুটতে হচ্ছে বেশির ভাগ ক্রেতাকে।’ ভিআইপি টাওয়ারের পোশাক বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান শাওন ফ্যাশনের মালিক মাহমুদুর রহমান শাওন বলেন, ‘ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীসহ বেশ কয়েকটি স্থান থেকে এবার চড়া দামে পণ্য কিনতে হয়েছে। গতবারের তুলনায় দাম বাড়তি থাকায় বেশির ভাগ ক্রেতা শুধু দেখাদেখি করেই দোকান ত্যাগ করছেন। এ কারণে মার্কেটে ক্রেতার সমাগম বেশি হলেও বিক্রি কম।’ 
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘ভোগ্যপণ্যের মতো ঈদ পোশাকের বাজারও চড়া। এতে পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। পোশাক থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুর দাম বাড়তি থাকায় কয়েকটি মার্কেটে গিয়েও পছন্দের পোশাকটি কিনতে পারছে না অনেকেই। তাই অনেকে হকার্স মার্কেটের মতো কম দামের মার্কেট বেছে নিচ্ছে।’ 
ঈদকে কেন্দ্র করে হকার্স মার্কেটের প্রতিটি দোকানেই নানা পণ্যের সমাহার। নামিদামি ব্র্যান্ড থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ও আমদানি করা সব ধরনের পণ্য রয়েছে। এবার বিভিন্ন রঙের জর্জেট ও সিল্কের থ্রিপিস, গাউন, ওয়ান পিস, সিল্কের ওপর বিভিন্ন রঙের ডিজিটাল প্রিন্টের চাহিদা বেশি। ভারী কাজ করা জর্জেটের কামিজ, বাটিক, সুতি, হাফসিল্ক, তাঁত ও জর্জেটের ওপর কাজ করা পোশাক বিক্রি হচ্ছে বেশি। সুতি কাপড়ের টি-শার্ট, বাটিকের ফতুয়া, শার্ট ও পাঞ্জাবি, বিভিন্ন ধরনের লেখাসহ টি-শার্টের প্রতি আগ্রহ বেশি শিশু ও তরুণদের। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ ব জ র হক র স ম র ক ট ঈদ র ক ন ক ট ব যবস য় ন বল ন গতব র

এছাড়াও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাবি শিবিরের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা।

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাখা সভাপতি এসএম ফরহাদ।

আগামী ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট এই কর্মসূচিগুলো অনুষ্ঠিত হবে। আয়োজনে থাকছে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, বিপ্লবী নাটক, গান, কবিতা, আলোচনা সভা ও বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী। কর্মসূচির সূচনা হবে ৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) ভোর ৫টায় প্রতীকী সাইকেল র‌্যালির মাধ্যমে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে গণভবন পর্যন্ত যাবে।

আরো পড়ুন:

মেয়াদোত্তীর্ণ অগ্নিনির্বাপকে চলছে বেরোবি

তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন

সকাল ৯টায় টিএসসিতে থাকবে সাধারণ নাস্তার আয়োজন। এর পরপরই প্রদর্শিত হবে ‘জুলাই বিপ্লব’ ভিত্তিক একটি প্রামাণ্যচিত্র। একইসঙ্গে বিপ্লবী গান ও কবিতা পরিবেশিত হবে । সকাল ১০টা থেকে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের মুখে অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা শোনার আয়োজন থাকবে।

দুপুর ২টায় একটি মাইম পরিবেশনা ও নাটক মঞ্চস্থ হবে। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টা ও সাড়ে ৫টায় পরপর আরো দুটি নাটক প্রদর্শিত হবে। সন্ধ্যা ৬টায় ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘প্ল্যানচ্যাট বিতর্ক’ অনুষ্ঠিত হবে। এটি একটি প্রতীকী বিতর্ক, যেখানে গণআন্দোলনে নিহতদের উত্তরাধিকার ও আত্মিক উপস্থিতিকে ঘিরে আলাপ-প্রতিআলাপের একটি রূপক পরিসর গড়ে উঠবে ।

৬ আগস্ট দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির শুরুতেই থাকবে রাজনৈতিক ও দার্শনিক আলোচনা সভা। সকাল ১০টার দিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও ফ্যাসিবাদ পলায়নের ১ বছর: প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেল ৩টার দিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি ও ডাকসু নির্বাচন’ বিষয়ে আলোচনা হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ‘নয়া রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ইসলাম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক মতবিনিময়ের মাধ্যমে পর্দা নামবে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচির।

কর্মসূচির তৃতীয় দিন ৭ আগস্ট দিনব্যাপী চলবে বিশেষ চিত্র প্রদর্শনী ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। সেখানে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ ও গণআন্দোলন সংশ্লিষ্ট নানা দলিল, ছবি ও ভিডিও উপস্থাপন করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণজাগরণ ও ছাত্র প্রতিরোধ ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। সেই ঘটনার স্মরণে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথরেখা নির্ধারণের প্রয়াসে ঢাবির টিএসসি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাবি শাখা আয়োজন করতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী ‘আমরাই ৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।”

তিনি বলেন, “এ আয়োজন হবে শিল্প, সংস্কৃতি, স্মৃতি ও রাজনৈতিক ভাবনার এক সংমিশ্রণ। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের অভিজ্ঞতা আমাদের অনুপ্রেরণা। আর সংস্কৃতির মাধ্যমে আমরা সেই প্রতিরোধ চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।”

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাবি শিবিরের ৩ দিনব্যাপী কর্মসূচি