কবীর সুমনকে কেন ‘জিহাদি’ বললেন তসলিমা?
Published: 18th, March 2025 GMT
সমকালীন ইস্যু নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় দারুণ সরব ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন। দুই বছর আগে কলকাতার বরেণ্য সংগীতশিল্পী কবীর সুমনের একটি বক্তব্য নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন তসলিমা নাসরিন। যদিও বিতর্কিত এই লেখিকার বক্তব্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি কবীর সুমন।
পশ্চিমবঙ্গে তসলিমা নাসরিনের বসবাসের ব্যাপারে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন কবীর সুমন; যা তসলিমার পছন্দ হয়নি। ফলে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তাতে কবীর সুমনকে ‘জিহাদি’ বলে মন্তব্য করেন তসলিমা।
তসলিমা নাসরিন বলেন, “মজার ব্যাপার হলো, আমি কলকাতায় ফিরব বা কলকাতায় বেড়াতে যাব, এই কথাটা বলিনি, আমাকে ফেরাবার দাবি তুলেছেন একজন সাংসদ, অমনি কলকাতার জিহাদিরা ভীষণ ভয়ে লম্ফঝম্ফ শুরু করেছে। এর মধ্যে আছেন কবীর সুমন। উদ্ভট উদ্ভট সব প্রশ্ন, আমি কেন বাংলাদেশে ফিরতে চাই না? উনি কী করে জানলেন আমি বাংলাদেশে ফিরতে চাই না? আমি ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশে ফিরতে চাইছি, এটা তিনি খুব ভালো করেই জানেন।”
আরো পড়ুন:
মধুমিতার বিয়ে
‘রং খেলার নামে কেউ শরীর স্পর্শ করবে তা হতে পারে না’
কিছু তথ্য না জানার ভান করছেন কবীর সুমন। তা স্মরণ করে তসলিমা নাসরিন বলেন, “আমাকে বাংলাদেশে ফিরতে দেওয়া হয় না বলে আমি নির্বাসনে বাস করতে বাধ্য হচ্ছি, তা তিনি জানেন না? ঠিকই জানেন, শুধু না জানার ভান করেন। তিনি চান না আমি কলকাতায় পা রাখি। কারণ হিসেবে বললেন, আমি বিদেশি। বিদেশি কাউকে তিনি কলকাতায় দেখতে চান না। কী হাস্যকর না? দুজন বাংলাদেশি মহিলাকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। তখন বিদেশি বলে তাদের কিন্তু দূর দূর করে তাড়াননি। যখন বাংলাদেশে গান গাইতে যান, তখন কিন্তু বুঝিয়ে আসেন, বাংলাদেশ তার কাছে আদৌ বিদেশ নয়।”
কবীর সুমনের কর্মকাণ্ডে বিস্মিত-হতাশ তসলিমা। তার ভাষায়, “সাক্ষাৎকারের শুরুতে বলে নিয়েছেন আমি মোটেই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নই। অথচ একদিন তিনি আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন আমাকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ মনে করেছিলেন বলে। সেক্যুলারিজমের কসম খেয়ে বলেছিলেন, আমার জন্য কলকাতাকে তিনি নিরাপদ রাখবেন। তখন তিনি অবশ্য কবীর সুমন হননি। আজ আমার মতো গুরুত্বহীন মানুষের নিন্দে গুছিয়ে করার জন্য তিনি লম্বা সময় নিয়েছেন, কলকাতা টেলিভিশনে প্রায় কুড়ি বছর আগে তিনি লম্বা সময় নিয়ে দ্বি-খণ্ডিত নিষিদ্ধের পক্ষে বলেছিলেন এবং আমার বিরুদ্ধে মৌলবাদীদের জারি করা ফতোয়ার পক্ষে অর্থাৎ আমার মাথার দাম ঘোষণার পক্ষে বেশ গুছিয়ে বলেছিলেন।”
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপরে নির্যাতনের প্রতিবাদে বিতর্কিত গ্রন্থ ‘লজ্জা’ রচনা করেন তসলিমা নাসরিন। এ তথ্য উল্লেখ করে তসলিমা বলেন, “বিজেপি আমার ‘লজ্জা’ পাইরেট করে ৩২ বছর আগে ট্রেনে-বাসে বিক্রি করেছিল। সেটা এমনভাবে বললেন, যেন দোষটা আমার ছিল। আমি আমার দেশের সংখ্যালঘুর ওপর অত্যচারের প্রতিবাদ করে বই লিখেছি, সেটা তার কাছে অন্যায়। অথচ তার দেশের সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচারের কাহিনি যখন তিনি শোনান, সেটাকে তিনি অন্যায় বলে মনে করেন না। হঠাৎ করে তিনি কাঁটাতারে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।”
কবীর সুমন ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সমালোচনা করার ফল ভোগ করছেন তসলিমা নাসরিন। এ কারণে তাকে নিয়ে আপত্তি কবীর সুমনের। তসলিমা নাসরিন বলেন, “প্রাচীনকাল থেকেই বর্বর শাসকেরা শিল্পী-সাহিত্যিকদের অনেককে নির্বাসনদণ্ড দিয়েছেন, এ বিষয়ে তার কোনো আইডিয়া নেই বলেই বোঝাতে চাইলেন। ফ্রিডম অব স্পিচে বিশ্বাস করেন না, ফ্রিডম অব মুভমেন্টে বিশ্বাস করেন না। তিনি কি মানবাধিকারে সামান্যও বিশ্বাস করেন? বাকস্বাধীনতায় কতটুকু বিশ্বাস করেন, তাও বুঝিয়ে দিলেন এই বলে যে, আমি তার সমালোচনা করেছি, আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছি। সুতরাং কলকাতায় থাকার অধিকার আমার নেই। বাহ। তোমরা মন্দ কাজ করবে, প্রতারণা করবে, মুখোশ পরে থাকবে আর তোমাদের মুখোশ খানিকটা খুলে ফেললে রে রে করে তেড়ে এসে আমাকে শূলে চড়াবে! বাংলাদেশি জিহাদিরা চায় না আমি বাংলাদেশে ফিরি, পশ্চিমবঙ্গের জিহাদিরা চায় না আমি পশ্চিমবঙ্গে ফিরি।”
কবীর সুমনকে ‘জিহাদি’ আখ্যা দিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, “মাঝে মাঝে অবাক হই এই ভেবে যে, কী করে এত ক্ষুদ্র, এত অনুদার, এত অমানবিক, এত স্বার্থপর, এত হীন এত নিষ্ঠুর মানুষটি অমন উদার অমন নিঃস্বার্থ অমন মানবিক অমন সমতা আর সমানাধিকারের গান লিখেছিলেন! অবাক হই এই ভেবে যে, কী করে ঈশ্বরকে অস্বীকার করে গান লেখা মানুষটি অমন জিহাদি হয়ে উঠতে পারেন। এক মানুষের ভেতর কি আসলে দুজন বাস করে? নাকি জিহাদি চরিত্রটিই তার আসল চরিত্র, অন্যটা অভিনয়?”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ ব স কর ন কর ছ ল ন ন তসল ম কলক ত য়
এছাড়াও পড়ুন:
‘হাদির ওপর হামলাকারীর শেকড় যতই শক্তিশালী হোক উপড়ে ফেলা হবে’
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘‘ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীর শেকড় যতই শক্তিশালী হোক না কেন তা উপড়ে ফেলা হবে। হাদি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক। আজ তিনি সন্ত্রাসীদের গুলিতে চিকিৎসাধীন। আমরা তার জন্য কায়মনোবাক্যে দোয়া করি।’’
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মালিথিয়া গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজনে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
হাদির ওপর গুলির ঘটনাটি বিচ্ছিন্ন উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে পতিত স্বৈরাচারের সন্ত্রাসী বাহিনী টার্গেট করেছে। কিন্তু, তারা সফল হবে না।’’
আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন বদ্ধ পরিকর। আগামী নির্বাচনে মানুষ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে এবারের নির্বাচনে।’’
ঢাকা/শাহরিয়ার/রাজীব