আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরে লম্বা ছুটিতে পড়তে যাচ্ছে দেশ। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদ উপলক্ষে টানা পাঁচ দিন ছুটি পাচ্ছেন।

তবে বাস্তবে এই ছুটি আরও বেশি হবে। কারণ, ঘোষিত এই পাঁচ দিনের ছুটির আগে-পরে আছে মহান স্বাধীনতা দিবস, পবিত্র শবে কদর ও সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র-শনিবার)।

এই হিসাবে এবার ঈদের আগে-পরে ১১ দিনের মধ্যে ৯ দিন ছুটি থাকবে। এর মধ্যে শুধু দুই দিন (ঈদের আগে ও পরে) অফিস খোলা থাকবে।

সাপ্তাহিক ছুটি, সাধারণ ছুটি ও নির্বাহী আদেশে ছুটি মিলিয়ে এসব ছুটি হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, ছুটি তো ছুটিই, সেখানে আবার সাধারণ ছুটি ও নির্বাহী আদেশে ছুটির পার্থক্য কী?

সরকারি চাকরি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটাদাগে সাধারণ ছুটি হলো সেটি, যেটি মূলত উদ্‌যাপন বা পালনের জন্য করা হয়। এটি সর্বজনীন, সবার জন্যই এটি প্রযোজ্য। যেমন ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস, মহান বিজয় দিবস ইত্যাদি।

আরও পড়ুনএবার ঈদে লম্বা ছুটি, কবে থেকে কত দিন২১ ঘণ্টা আগে

আর সরকার নির্বাহী আদেশে যে সরকারি ছুটি দেয়, সেটি মূলত নির্দিষ্ট শ্রেণির লোকদের জন্য। যেমন ঈদের আগে-পরে নির্বাহী আদেশে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সরকারি ছুটি হয়।

আসন্ন ঈদের কথাই ধরা যাক। এবার ঈদ উপলক্ষে ২৯, ৩০ ও ৩১ মার্চ এবং ১ ও ২ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি থাকবে। এর মধ্যে ঈদের দিনটি সাধারণ ছুটি (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঠিক হবে, সম্ভাব্য তারিখ ৩১ মার্চ)। এ ছাড়া ঈদের আগের দুই দিন এবং পরের দুই দিন নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

ফিরোজ মিয়ার ভাষ্য, নির্বাহী আদেশের এই ছুটি মূলত সরকারি, আধা সরকারি, সংবিধিবদ্ধ স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য হয়। এটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য নয়। তারা তাদের মতো ছুটি ঘোষণা করে, কিন্তু সাধারণ ছুটি সবার জন্যই প্রযোজ্য।

আরও পড়ুন২০২৫ সালে কলেজে ছুটি ৭১ দিন, একটানা ২৫ দিন০৬ জানুয়ারি ২০২৫

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, যেসব অফিসের সময়সূচি ও ছুটি নিজস্ব আইনকানুন দিয়ে চলে (যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক) অথবা যেসব অফিস, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের চাকরি সরকার অত্যাবশ্যক হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেগুলো নিজস্ব আইনকানুন অনুযায়ী জনস্বার্থ বিবেচনা করে এই ছুটি ঘোষণা করবে।

অবশ্য অতীত অভিজ্ঞতা হলো, ঈদের ছুটি সরকার যে কয়দিন নির্ধারণ করে, সাধারণত অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও সেটি অনুসরণ করে।

আছে আরেক ধরনের ছুটি

সাধারণ ও নির্বাহী—এই দুই ধরনের ছুটির বাইরে আছে আরেক ধরনের ছুটি। সেটিকে বলা হয় ঐচ্ছিক ছুটি। তবে নামে ঐচ্ছিক হলেও তা ইচ্ছামতো নেওয়ার সুযোগ নেই। এটি মূলত ধর্মীয় পর্ব অনুযায়ী বছরে সর্বোচ্চ তিন দিন নেওয়ার সুযোগ আছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, একজন কর্মচারীকে তাঁর নিজ ধর্ম অনুযায়ী বছরে অনধিক তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। প্রত্যেক কর্মচারীকে বছরের শুরুতে নিজ ধর্ম অনুযায়ী নির্ধারিত তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে। সাধারণ ছুটি, নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে যুক্ত করে ঐচ্ছিক ছুটি ভোগ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।

আরও পড়ুনআগামী বছর ছুটি ২৬ দিন, তার মধ্যে ৯ দিনই সাপ্তাহিক ছুটি১৭ অক্টোবর ২০২৪

কোন ধর্মের কোন পর্বগুলোতে এই ঐচ্ছিক ছুটি নেওয়া যাবে, সেটিও বাৎসরিক ছুটির পঞ্জিতে উল্লেখ করে দেওয়া হয়। যেমন এ বছরের বাৎসরিক ছুটির পঞ্জিতে মুসলমানদের জন্য পাঁচটি পর্বে পাঁচ দিন ঐচ্ছিক ছুটি (সর্বোচ্চ তিন দিন নেওয়া যাবে) নেওয়ার সুযোগ আছে। এই পর্বগুলো হলো পবিত্র শবে মিরাজ, ঈদুল ফিতরের পরের তৃতীয় দিন, ঈদুল আজহার পরের চতুর্থ দিন, আখেরি চাহার শোম্বা ও ফাতেহা-ই ইয়াজদাহম।

একইভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ৮টি পর্বে ৯ দিন (যেমন সরস্বতী পূজা), খ্রিষ্টান ধর্মের জন্য ৭টি পর্বে ৮ দিন (যেমন খ্রিষ্টীয় নববর্ষ) ও বৌদ্ধ ধর্মের ৬টি পর্বের জন্য ৭ দিন (যেমন মাঘী পূর্ণিমা) ঐচ্ছিক ছুটি নেওয়ার সুযোগ আছে।

আরও পড়ুনঈদুল ফিতরে ৫ দিন, ঈদুল আজহায় ৬ দিন, দুর্গাপূজায় ২ দিন ছুটি১৭ অক্টোবর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ র জন য অন য য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়

শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।

সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।

এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।

জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।

আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।

এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের মহান মে দিবস আজ
  • কর্মক্ষেত্রে অধিকার আদায়ের রক্তাক্ত গৌরবময় দিন
  • শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
  • শিগগিরই শ্রম আইন সংশোধন করা হবে: শ্রম উপদেষ্টা 
  • আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসে শিল্পকলা একাডেমির  দুই দিনের আয়োজন
  • মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসানো যাবে না, নির্দেশ হাইকোর্টের
  • আইনগত সহায়তা দিবসে আলোচনা সভা-শোভাযাত্রা
  • আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন