দিনাজপুরে মৌসুম শেষেও সুগন্ধি ধানের দাম কম
Published: 21st, March 2025 GMT
এবার আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে সুগন্ধি জিরা-৩৪ জাতের ধানের আবাদ করেছিলেন হযরত আলী। ধান পেয়েছেন ২০ মণ। লাভের আশায় নিজের উৎপাদিত ধানের সঙ্গে একই জাতের ২২ মণ ধান কিনে মজুত করেছিলেন। প্রতি মণের দাম পড়েছে ২ হাজার ২০০ টাকা। দিন কয়েক আগে সেই ধান হাটে নিয়ে ২ হাজার ৭৫ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। তাতে প্রতি মণে তাঁর লোকসান হয়েছে ১২৫ টাকা করে। অন্যদিকে ওই হাটে সেদিন প্রতি বস্তা (২ মণ) গুটি স্বর্ণা জাতের ধান ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকা এবং সুমন স্বর্ণ-৫১ জাতের ধান বিক্রি হয়েছে প্রতি বস্তা ২ হাজার ৭০০ টাকা (প্রতি মণ ১,৩৫০ টাকা) দরে, যা মৌসুম শুরুর দিকের দামের চেয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।
দিনাজপুর সদর উপজেলার কর্ণাই গ্রামের কৃষক হযরত আলীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয় এখানকার গোপালগঞ্জ হাটে। তিনি জানান, আগের দুই বছর কৃষকেরা সুগন্ধি জাতের ধান বিশেষ করে জিরা-৩৪ জাতের ধানের দাম ভালো পেয়েছেন। প্রতি মণ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার আশার মুখে ছাই পড়েছে। পরিবহন খরচ, হাটখাজনা বাদে প্রতি মণে ১২৫ টাকা করে লোকসান গুনেছি।’ ধানের দাম কমার সঠিক কারণ জানেন না তিনি। তবে মিলমালিকদের এজেন্টরা নাকি বলেছেন, সুগন্ধি চালের উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কম। চাল বাইরে যাচ্ছে না। তাই ধানের দাম কম।
হযরত আলীর মতো সুগন্ধি ধানে ভালো দামের আশায় গত কয়েক বছরে অনেকেই এটির আবাদে ঝুঁকেছেন। কেউ কেউ আবার ধান কিনে মজুত করেছিলেন। গোপালগঞ্জ ধানের হাট সপ্তাহে দুই দিন বসে, প্রতি শুক্র ও সোমবার। সেখানে কৃষক, পাইকার ও হাট ইজারাদারের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। এর মধ্যে ইজারাদার ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমন মৌসুম শেষের দিকে। আজকে বাজারে সর্বোচ্চ ধান উঠেছে ৬০০-৭০০ বস্তা। ভরা মৌসুমে উঠে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার বস্তা।’
সদর উপজেলার বড়ইল এলাকার কৃষক যামিনী কান্ত রায় বলেন, ‘হারা কৃষক একবার যুদি কোনহ ফসলত লাভ দেখিনো তো সবায় হুমড়ি খাই আবাদ করির ধরিনো। সুগন্ধি ধানের মত এইবার আলুতেও ধরা খাইছি হারা।’ তিনি জানান, এবার এক বিঘা জমি শুধু আমন আবাদের জন্য ১৫ হাজার টাকায় বর্গা নিয়েছেন। চাষ, বিচন (চারা), রোপণ, সার ও কীটনাশক ছিটানো, সেচ, নিড়ানি, কাটা–মাড়াই এবং পরিবহন খরচ বাবদ তাঁর খরচ পড়েছে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে সাড়ে ৩৯ হাজার টাকা। ধান পেয়েছেন সাড়ে ২০ মণ। গত দুই হাটে ২০ মণ বিক্রি করে পেয়েছেন ৪১ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ তাঁর লাভ হয়েছে মাত্র ২ হাজার টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের জাত হিসেবে ব্রি-৩৪, চিনিগুঁড়া, ফিলিপাইন কাটারি, কালিজিরা, কাঠারিভোগ, জটাকাঠারি, জিরাকাঠারি ও চল্লিশ জিরার আবাদ হয়। তবে ব্রি-ধান ৩৪ ও কাঠারিভোগ আবাদ হয় বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ জেলায় ৯৩ হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন সুগন্ধি ধান উৎপাদন হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৫ হাজার ৬৫২ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে।
দিনাজপুর শহরের পাইকারি মোকাম বাহাদুর বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সুগন্ধি জাতের চাল মান ও রকমভেদে প্রতি কেজি এখন ৯৪-৯৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মেসার্স এরশাদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এরশাদ হোসেন বলেন, ‘বছরখানেক আগে পাইকারিতে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হয়েছে। এখন বাজারে সরবরাহ বেশি, কিন্তু চাহিদা কম। ফলে দাম কমেছে।’
সুগন্ধি জাতের ধানের কম দামের বিষয়ে বাংলাদেশ মেজর ও অটো মেজর হাসকিং মিলমালিক সমিতির সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ধান সাধারণত আমন মৌসুমে আবাদ হয়। মৌসুম শেষ হওয়ার পর এখনো দুই মাস যায়নি। তা ছাড়া কয়েক বছর থেকে এই চালের রপ্তানি বন্ধ আছে। আবার মিলাররা আগে তৈরি করা চাল বিক্রি শেষ করতে পারেননি। তাই তাঁরা নতুন করে ধান কেনা বন্ধ রেখেছেন। মৌসুমের শুরুতে কৃষক এই ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়েছেন। এখন যাঁরা ধানের দাম কমার কথা বলছেন, তাঁদের অধিকাংশই কৃষক নন। অতি মুনাফার আশায় মৌসুমের শুরুতে একধরনের মৌসুমি ব্যবসায়ী এই ধান কিনে রেখেছেন। তাঁরাই এখন সুগন্ধি ধানের দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
দিনাজপুর জহুরা অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হান্নান বলেন, সুগন্ধি চাল দিনাজপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী পণ্য। এই চাল রপ্তানি শুরু হওয়ায় কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হন। তাতে আবাদ বৃদ্ধি পায়। এরই মধ্যে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া অনেক মিলমালিকের গত বছরের প্রস্তুতকৃত চাল এখনো গুদামে পড়ে আছে। তবে আশার কথা, ইতিমধ্যে ২৫ হাজার মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হয়তো খুব দ্রুতই কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই লাভবান হবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ ন র দ ম কম উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ইবিতে ছুটি ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত সেই মোজাম্মেল
হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তিকারী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাব-রেজিস্ট্রার মোজাম্মেল হক পলাতক রয়েছেন। তিনি কোনো ধরনের ছুটি না নিয়ে কর্সস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে, হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তির বিষয়টি সামনে এলে ওই কর্মকর্তার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ঝিনাইদহ জেলা ইমাম পরিষদ।
শিক্ষার্থীরা বলেন, মোজাম্মেল হক দীর্ঘদিন থেকে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নারীলোভী বলে কটুক্তি করে আসছিলেন। অথচ মহান আল্লাহ স্বয়ং মহানবী (স.) এর চরিত্রের সনদ দিয়েছেন। সমস্ত পৃথিবীর রহমত স্বরূপ তাকে প্রেরণ করা হয়েছে। তার এ হীন কাজের জন্য আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
আরো পড়ুন:
রাসূল (সা.)-কে নিয়ে কটুক্তিকারী ইবি কর্মকর্তার বহিষ্কার দাবি
নারী কমিশনের সুপারিশ প্রত্যাহার দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, সারা দেশের মানুষকে আলোর পথ দেখাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় এবং আল হাদিস বিভাগের কর্মকর্তার রাসূলের শানে এ ধরনের বেয়াদবি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই প্রশাসনের কাছে এই কর্মকর্তার বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।
ঝিনাইদহ ইমাম পরিষদের স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, মোজাম্মেল হক নামের এক ব্যক্তি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে নারীলোভী ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার পাশাপাশি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চরম কটূক্তি ও অশালীন মন্তব্য করেছে যা দেশের কোটি কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরম আঘাত হেনেছে। এমন ঘৃণ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য শুধু ধর্মীয় সহনশীলতা নষ্ট করে না, বরং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিঘ্নিত করে সমাজে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতে পারে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, “এ ঘটনায় আগেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটি এখন জাতীয় ইস্যু হয়ে গেছে। তবে অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক বিভাগে আসছে না। এ বিষয়ে আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং আছে। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোজাম্মেল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মহানবী (সা.)-কে কটুক্তিকারী মোজাম্মেল হক ঝিনাইদের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নের ভুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মহানবী (সা.)-কে নারীলোভী বলে কটুক্তি করার অভিযোগে গ্রামবাসী তাকে গণধোলাই দিয়ে আটকে রাখেন এবং পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে মৌখিক মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়।
ঢাকা/তানিম/মেহেদী