এবার আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে সুগন্ধি জিরা-৩৪ জাতের ধানের আবাদ করেছিলেন হযরত আলী। ধান পেয়েছেন ২০ মণ। লাভের আশায় নিজের উৎপাদিত ধানের সঙ্গে একই জাতের ২২ মণ ধান কিনে মজুত করেছিলেন। প্রতি মণের দাম পড়েছে ২ হাজার ২০০ টাকা। দিন কয়েক আগে সেই ধান হাটে নিয়ে ২ হাজার ৭৫ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। তাতে প্রতি মণে তাঁর লোকসান হয়েছে ১২৫ টাকা করে। অন্যদিকে ওই হাটে সেদিন প্রতি বস্তা (২ মণ) গুটি স্বর্ণা জাতের ধান ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকা এবং সুমন স্বর্ণ-৫১ জাতের ধান বিক্রি হয়েছে প্রতি বস্তা ২ হাজার ৭০০ টাকা (প্রতি মণ ১,৩৫০ টাকা) দরে, যা মৌসুম শুরুর দিকের দামের চেয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।

দিনাজপুর সদর উপজেলার কর্ণাই গ্রামের কৃষক হযরত আলীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয় এখানকার গোপালগঞ্জ হাটে। তিনি জানান, আগের দুই বছর কৃষকেরা সুগন্ধি জাতের ধান বিশেষ করে জিরা-৩৪ জাতের ধানের দাম ভালো পেয়েছেন। প্রতি মণ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার আশার মুখে ছাই পড়েছে। পরিবহন খরচ, হাটখাজনা বাদে প্রতি মণে ১২৫ টাকা করে লোকসান গুনেছি।’ ধানের দাম কমার সঠিক কারণ জানেন না তিনি। তবে মিলমালিকদের এজেন্টরা নাকি বলেছেন, সুগন্ধি চালের উৎপাদন বেশি হওয়ায় দাম কম। চাল বাইরে যাচ্ছে না। তাই ধানের দাম কম।

হযরত আলীর মতো সুগন্ধি ধানে ভালো দামের আশায় গত কয়েক বছরে অনেকেই এটির আবাদে ঝুঁকেছেন। কেউ কেউ আবার ধান কিনে মজুত করেছিলেন। গোপালগঞ্জ ধানের হাট সপ্তাহে দুই দিন বসে, প্রতি শুক্র ও সোমবার। সেখানে কৃষক, পাইকার ও হাট ইজারাদারের সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। এর মধ্যে ইজারাদার ফিরোজ আহমেদ বলেন, আমন মৌসুম শেষের দিকে। আজকে বাজারে সর্বোচ্চ ধান উঠেছে ৬০০-৭০০ বস্তা। ভরা মৌসুমে উঠে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার বস্তা।’

সদর উপজেলার বড়ইল এলাকার কৃষক যামিনী কান্ত রায় বলেন, ‘হারা কৃষক একবার যুদি কোনহ ফসলত লাভ দেখিনো তো সবায় হুমড়ি খাই আবাদ করির ধরিনো। সুগন্ধি ধানের মত এইবার আলুতেও ধরা খাইছি হারা।’ তিনি জানান, এবার এক বিঘা জমি শুধু আমন আবাদের জন্য ১৫ হাজার টাকায় বর্গা নিয়েছেন। চাষ, বিচন (চারা), রোপণ, সার ও কীটনাশক ছিটানো, সেচ, নিড়ানি, কাটা–মাড়াই এবং পরিবহন খরচ বাবদ তাঁর খরচ পড়েছে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে সাড়ে ৩৯ হাজার টাকা। ধান পেয়েছেন সাড়ে ২০ মণ। গত দুই হাটে ২০ মণ বিক্রি করে পেয়েছেন ৪১ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ তাঁর লাভ হয়েছে মাত্র ২ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরে সুগন্ধি ধানের জাত হিসেবে ব্রি-৩৪, চিনিগুঁড়া, ফিলিপাইন কাটারি, কালিজিরা, কাঠারিভোগ, জটাকাঠারি, জিরাকাঠারি ও চল্লিশ জিরার আবাদ হয়। তবে ব্রি-ধান ৩৪ ও কাঠারিভোগ আবাদ হয় বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ জেলায় ৯৩ হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন সুগন্ধি ধান উৎপাদন হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৯৫ হাজার ৬৫২ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫৯ হাজার ২৮৬ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে।

দিনাজপুর শহরের পাইকারি মোকাম বাহাদুর বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, সুগন্ধি জাতের চাল মান ও রকমভেদে প্রতি কেজি এখন ৯৪-৯৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মেসার্স এরশাদ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী এরশাদ হোসেন বলেন, ‘বছরখানেক আগে পাইকারিতে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হয়েছে। এখন বাজারে সরবরাহ বেশি, কিন্তু চাহিদা কম। ফলে দাম কমেছে।’

সুগন্ধি জাতের ধানের কম দামের বিষয়ে বাংলাদেশ মেজর ও অটো মেজর হাসকিং মিলমালিক সমিতির সহসভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ধান সাধারণত আমন মৌসুমে আবাদ হয়। মৌসুম শেষ হওয়ার পর এখনো দুই মাস যায়নি। তা ছাড়া কয়েক বছর থেকে এই চালের রপ্তানি বন্ধ আছে। আবার মিলাররা আগে তৈরি করা চাল বিক্রি শেষ করতে পারেননি। তাই তাঁরা নতুন করে ধান কেনা বন্ধ রেখেছেন। মৌসুমের শুরুতে কৃষক এই ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়েছেন। এখন যাঁরা ধানের দাম কমার কথা বলছেন, তাঁদের অধিকাংশই কৃষক নন। অতি মুনাফার আশায় মৌসুমের শুরুতে একধরনের মৌসুমি ব্যবসায়ী এই ধান কিনে রেখেছেন। তাঁরাই এখন সুগন্ধি ধানের দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

দিনাজপুর জহুরা অটোরাইস মিলের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হান্নান বলেন, সুগন্ধি চাল দিনাজপুরের একটি ঐতিহ্যবাহী পণ্য। এই চাল রপ্তানি শুরু হওয়ায় কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হন। তাতে আবাদ বৃদ্ধি পায়। এরই মধ্যে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া অনেক মিলমালিকের গত বছরের প্রস্তুতকৃত চাল এখনো গুদামে পড়ে আছে। তবে আশার কথা, ইতিমধ্যে ২৫ হাজার মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। হয়তো খুব দ্রুতই কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয় পক্ষই লাভবান হবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধ ন র দ ম কম উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েটে ৫ মাস ১০ দিন পর ক্লাস শুরু

৫ মাস ১০ দিন পর মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ক্লাস শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ক্লাস শুরু হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

মঙ্গলবার সকালে কুয়েটের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগে ক্লাস পরিদর্শন করেছেন। 

সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে উপাচার্য ক্লাস শুরুর নির্দেশ দেন। এদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি তাদের আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে।

দুই দিন ধরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, সাধারণ শিক্ষার্থী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেছেন, উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভিসি-প্রোভিসি এবং ছাত্র কল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ দাবি করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে তারা ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ‎আন্দোলনের মুখে কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে অপসারণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১ মে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচারের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। অস্থিতিশীল পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ মে খুলনা ত্যাগ করেন অধ্যাপক ড. হযরত আলী। ২২ মে তিনি উপাচার্যের পদ ত্যাগ করেন। এর দুই মাস দুই দিনের মাথায় ভিসি নিয়োগ হলেও কুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল ৫ মাস ১০ দিন। 

গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদ হেলালীকে কুয়েটের উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুক্রবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যায় কুয়েটে যোগ দেন ড. মো. মাকসুদ হেলালী।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কুয়েটে ৫ মাস ১০ দিন পর ক্লাস শুরু