যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড দিল্লিতে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও ইসলামি মৌলবাদের উত্থান নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে দুই দেশের পত্রপত্রিকায় বেশ আলোচনা হচ্ছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমে অনেক আগে থেকেই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ব্যাপারে ভারতীয় প্রশাসনের অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশকে একটি মৌলবাদী ও পাকিস্তানপন্থী রাষ্ট্র হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। তাদের জন্য তুলসীর মন্তব্য প্রায় হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো। একটি পত্রিকা সোল্লাসে মন্তব্য করেছে, তুলসীর কথায় ইউনূস সরকার ভয়ে কাঁপছে।

অথচ তুলসী গ্যাবার্ড এমন কিছুই বলেননি, যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অথবা হোয়াইট হাউসে তাঁর মুখপাত্র আগে বলেননি। প্রথম আলোর কাছে এক লিখিত মন্তব্যে ওয়াশিংটনের উলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান তুলসীর বক্তব্যকে ‘পরিচিত ও পুরোনো’ বলে বর্ণনা করেছেন।

‘তুলসী গ্যাবার্ড নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিষয়টি দীর্ঘদিনের পুরোনো একটি উদ্বেগ। এখানে মূল শব্দটি হলো “দীর্ঘদিনের” (তুলসীর ভাষায় “লংস্টান্ডিং”)। অথচ সেই কথাকেই বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের সমালোচকেরা এই সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা হিসেবে তুলে ধরেছেন।’

যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন থেকেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সমালোচনা করে আসছে। ক্ষমতা ত্যাগের মাত্র এক সপ্তাহ আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে শুধু উদ্বেগই নয়, তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতার জন্য ইউনূস সরকার দায়ী থাকবে, এমন কথাও বলেছিলেন।

কুগেলম্যান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বিষয়ে মার্কিন উদ্বেগ আজকের নয়। শেখ হাসিনার আমলেও নানা সময়ে তারা এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক দশকের বেশি সময় আগে মার্কিন প্রশাসন হাসিনা আমলে ধর্মীয় উগ্রবাদের বৃদ্ধি সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল জনগোষ্ঠীকে যেভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল, সে ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

২০১৫ সালে শেখ হাসিনার শাসনামলে অন্তত পাঁচজন ‘সেক্যুলার ব্লগার’ ও প্রকাশক উগ্রপন্থীদের হামলায় নিহত হলে যুক্তরাষ্ট্র এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছিল। পাশাপাশি হুমকির মুখে থাকা ব্লগারদের যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছিল।

কুগেলম্যান মনে করেন, ‘তুলসী গ্যাবার্ড মার্কিন সরকারের দীর্ঘদিনের যে নীতির কথা বলেছেন, তা থেকে কেউ কেউ হয়তো এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন যে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের মতামতই অনুসরণ করবে। তবে আমার কাছে মনে হয়, তুলসীর মন্তব্য শুধু ইউনূস সরকারকে নিয়ে নয়, বাংলাদেশে বিগত একাধিক সরকারের ব্যাপারেও। এদের মধ্যে ভারতের প্রিয় (আওয়ামী লীগ) সরকারও রয়েছে।’

শেখ হাসিনা নিজে ও তাঁর প্রবাসী সমর্থকেরা আশায় আছেন, অধ্যাপক ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘কিছু একটা করবেন’। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ‘এক্স’ হ্যান্ডলে দেওয়া এক মন্তব্যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের সংবাদে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তখনো ভারতীয় গণমাধ্যমে সে মন্তব্য ঘিরে একই রকম উত্তেজক বক্তব্য ছড়ানো হয়েছিল।

ভারতীয় গণমাধ্যমের এমন সংবাদে সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়েছিলেন বিদেশে বসবাসরত বিগত শেখ হাসিনা সরকারের সমর্থকেরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ওয়াশিংটন সফরে এলে তাঁরা সদলবল প্ল্যাকার্ড–ফেস্টুন হাতে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।

এই ভেবে শেখ হাসিনার সমর্থক এসব প্রবাসী আশান্বিত হয়েছিলেন যে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আদায় করে নেবেন। বাস্তবে তা তো ঘটেনি, উল্টো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনে মার্কিন ‘ডিপ স্টেটের’ কোনো ভূমিকা নেই বলে ভারতীয় সাংবাদিকের দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছিলেন।

তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের মধ্যে একই রকম উত্তেজনা। আওয়ামী লীগের একজন নেতা নিউইয়র্কের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলকে এমন কথাও বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন শিগগিরই অধ্যাপক ইউনূসকে পানামার সাবেক একনায়ক ম্যানুয়েল নরিয়েগার মতো চ্যাংদোলা করে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পুরবেন।

দুই দিন আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেছিলেন, সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তায় ইউনূস সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে মার্কিন সরকার সন্তুষ্ট।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন স সরক র সরক র র ব ত লস র

এছাড়াও পড়ুন:

সাজেকে নিহত খুবি শিক্ষার্থী রিংকীর মরদেহ নেওয়া হবে গাইবান্ধা

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের সেশনাল ট্যুরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকীর মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে।

এছাড়া শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে এদিন সকল ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ রয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নাজমুস সাদাত এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের সেশনাল ট্যুরের সময় রাঙামাটির সাজেক যাওয়ার পথে গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোছা. রুবিনা আফসানা রিংকী নিহত হন। দুর্ঘটনায় নিহত রুবিনা আফসানা রিংকির মরদেহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের বাড়ি গাইবান্ধায় নেওয়া হবে। এই দুর্ঘটনায় আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদেরকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনজনকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হচ্ছে ।”

তিনি বলেন, “এই শোকাবহ ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে মর্মাহত। আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ঘোষণা করা হয়েছে, সকল ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত আছেন। তিনি নিজে এবং সহকারী পরিচালকসহ কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ি রওনা হয়েছেন।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে নিহত শিক্ষার্থীর আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতার জন্য বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা করার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। 

এদিকে, সাজেকে শিক্ষার্থী নিহত ও আহতের ঘটনায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব ধরনের সেশনাল ট্যুর অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার কাকলি রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষ ৪র্থ বর্ষ টার্ম-২ এর সেশনাল ট্যুরে অংশগ্রহণরত অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। শিক্ষার্থীর এই অকাল মৃত্যুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার গভীরভাবে শোকাহত এবং আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সকল দূরপাল্লার সেশনাল ট্যুর স্থগিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে যাওয়ার পথে চান্দের গাড়ি পাহাড়ের খাদে পড়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হন। এসময় আহত হয়েছেন আরো ১১ জন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সাজেকের হাউসপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত রুবিনা আফসানা রিংকী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহতরা সবাই একই বিভাগের শিক্ষার্থী।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ