তুরস্কের সরকার রাজধানী আঙ্কারাসহ বিভিন্ন শহর থেকে শুক্রবার রাতভর ৩৪৩ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে। শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে আটকের প্রতিবাদে গত বুধবার থেকে তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভ চলছে।

রিপাবলিকান পিপলস পার্টির ইমামোগলুকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁকে এরদোয়ানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঘুষ ও একটি সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তার অভিযোগে বুধবার ইমামোগলুকে আটক করা হয়। এর আগে তাঁর শিক্ষাগত ডিপ্লোমা বাতিল করা হয়।

বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, এরদোয়ানের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষ। আন্দোলনের একপর্যায়ে এবার শুরু হয়েছে এরদোয়ানের পদত্যাগ দাবি।

এ ঘটনাকে ২০১৩ সালের পরে সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন অনেকে। সে বছরের আন্দোলন চলাকালে অন্তত ৮ জন নিহত হয়েছিলেন।

এবার অবশ্য বিক্ষোভ দমনে ইস্তাম্বুলের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির প্রশাসন। এ ছাড়া বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়া শহরগুলোতে সব ধরনের জমায়েতের ওপর পাঁচ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ঘটা সহিংসতার কারণে আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অবস্থিত একটি মেট্রো স্টেশনও বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার ইস্তাম্বুলে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর পেপার স্প্রে, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। রাজধানী আঙ্কারা ও ইজমির শহরেও বলপ্রয়োগে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। আঙ্কারায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা একটি প্রধান সড়ক ধরে অগ্রসর হতে গেলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

দেশটির প্রশাসনের এমন বাধা ও প্রেসিডেন্টের হুমকির তোয়াক্কা না করেই আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন বিক্ষোভকারীরা। এমনকি, এরদোয়ানের শাসনকে ফ্যাসিবাদের সঙ্গে তুলনা করে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে তাকে সরে দাঁড়ানোর দাবি তোলেন অনেকে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এরদ য় ন র ত রস ক

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ