সঙ্কটপ্রবণ অঞ্চলে প্রবাহের নিরাপদ পানি সরবরাহ
Published: 22nd, March 2025 GMT
দেশজুড়ে আজ (২২ মার্চ) পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। সুপেয় পানি সংরক্ষণ এবং নিরাপদ পানির গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। একইসাথে, আর্সেনিক দূষণ ও নোনাপানি-কবলিত অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে নিরাপদ ও পরিচ্ছন্ন পানি সরবরাহ করার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের উদ্যোগ ‘প্রবাহ’ এর ১৬তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করছে।
এ উপলক্ষে, সাতক্ষীরার আলিপুর ও গাবুরায় প্রবাহ উদ্যোগের অধীনে দুটি নতুন পানি শোধনাগার প্ল্যান্ট উদ্বোধন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের ২৫টি জেলায় এ উদ্যোগের অধীনে এ ধরনের প্ল্যান্টের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২৬টি।
বাংলাদেশের বেশকিছু অঞ্চলে শ্যালো টিউবওয়েলে আর্সেনিক দূষণ ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। খাবার পানিতে আর্সেনিক ও নোনা পানির কারণে কয়েক লক্ষ মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে; খরা ও সমুদ্র স্তর বৃদ্ধির কারণে স্বাদু পানির উৎসগুলোয় নোনাপানির অনুপ্রবেশ বাড়ছে। এই ভয়াবহ অবস্থা বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব পানি দিবসের গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
সুবিধাবঞ্চিত কমিউনিটির মাঝে নিরাপদ পানির প্ল্যান্ট স্থাপন করার মাধ্যমে নিরাপদ পানির সঙ্কট সমাধান করতে এবং সুপেয় পানি প্রয়োজন এমন মানুষদের জন্য তা সহজলভ্য করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ‘প্রবাহ’। ২৫টি জেলায় ১২৬টি পানি শোধনাগার প্ল্যান্ট স্থাপন করার মাধ্যমে এ উদ্যোগটি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কাজ করছে এবং নিরাপদ ও সুপেয় পানি নিশ্চিতে প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় কমিউনিটিগুলোকে সহায়তা করছে। কুষ্টিয়া থেকে মানিকগঞ্জ, রাঙ্গামাটি থেকে সাতক্ষীরা, নিরাপদ ও সুপেয় পানির ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধান নিশ্চিত করার মাধ্যমে সঙ্কট মোকাবিলা করতে চায় ‘প্রবাহ’।
‘প্রবাহ’র মুখপাত্র আহমেদ রায়হান আহসানউল্লাহ বলেন, “১৬তম বর্ষপূর্তিতে প্রবাহ দেশজুড়ে এর কার্যক্রম বিস্তৃত করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পানির সঙ্কট মোকাবিলা করতে চায়। নিরাপদ সুপেয় পানির দীর্ঘমেয়াদী সহজলভ্যতা নিশ্চিত করবে এমন একটি টেকসই মডেল সমাধান নিয়ে আসার জন্য কাজ করছি আমরা।”
‘প্রবাহ’র কর্মপদ্ধতির মূল ভিত্তি হচ্ছে কমিউনিটি’র অংশগ্রহণ। শোধনাগার প্ল্যান্ট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে যেন দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতা নিশ্চিত করা যায়। এই উদ্যোগের প্রভাবকে টেকসই ও বিস্তৃত করতে সকল সুবিধাভোগী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অব্যাহত সহায়তা প্রয়োজন।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র পদ প ন প রব হ
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’