Samakal:
2025-11-03@00:40:21 GMT

পেশাদারিত্ব সর্বাগ্রে

Published: 23rd, March 2025 GMT

পেশাদারিত্ব সর্বাগ্রে

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলির মধ্যে নাগরিকের সর্বাপেক্ষা নিকটে থাকে বলিয়া পুলিশের জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাও সর্বাধিক। বর্তমানে এহেন কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়িয়াছে বলিয়াই প্রতীয়মান। রবিবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুলিশের জনসম্পৃক্ত কর্মকাণ্ডে ভাটা পড়িয়াছে। আমরা বিস্মিত, গত বৎসর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভাঙিয়া পড়া পুলিশি ব্যবস্থা স্বাভাবিক হইতে যথায় কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম বৃদ্ধি জরুরি ছিল, ততায় উহা বন্ধ রহিয়াছে! পুলিশের সহিত জনগণের দূরত্ব বৃদ্ধির কারণেই যে আইন প্রয়োগ করিতে গিয়া বাহিনীটিকে বারংবার বাধার মুখে পড়িতে হইতেছে– উহা অস্বীকার করা যাইবে না।

আমরা জানি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহিত পুলিশের সংযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়া আস্থার সম্পর্ক গড়িয়া তুলিতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত ‘কমিউনিটি পুলিশিং’ কিংবা ‘বিট পুলিশিং’ প্রবর্তিত হইয়াছিল। জনসাধারণের সহিত মতবিনিময়ে সূচিত হইয়াছিল ‘ওপেন হাউস ডে’। কিন্তু পূর্বের শাসনামলে স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী ও সক্রিয় অনেকে অনুপস্থিত কিংবা নিষ্ক্রিয় হইবার কারণে এই সকল কার্যক্রমে ভাটা পড়িয়াছে। আমরা মনে করি, এই সকল কার্যক্রম অবিলম্বে সূচিত হওয়া জরুরি। বরং পূর্বাপেক্ষা অধিক হারে চালাইবার বিকল্প নাই। পুলিশের বিদ্যমান সংকটময় সময়ে এই ধরনের কার্যক্রম যত বৃদ্ধি পাইবে, মানুষের সহিত ততোধিক সম্পর্ক তৈয়ার হইবে। ইহাতে যদ্রূপ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হইবে, তদ্রূপ অঞ্চলভিত্তিক অপরাধীরাও ভীত থাকিবে। সর্বোপরি পুলিশ সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর হইবে।
আমরা দেখিয়াছি, রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ও আবাসিক এলাকার নিরাপত্তায় পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তৎসহিত বেসরকারি কর্মীদিগের ‘অক্সিলারি ফোর্স’ তথা সহযোগী বাহিনীরূপে নিয়োগের কথা জানাইয়াছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ। এই সিদ্ধান্ত খুব বেশি সাড়া না ফেলিলেও কিছুদিন ধরিয়া ‘সিটিজেন ফোরাম’ গড়িয়া স্থানীয় বাসিন্দাদের সহিত সম্পর্কের ভিত তৈয়ারের চেষ্টা করিতেছে পুলিশ। উহাকে আমরা স্বাগত জানাই। 

আমরা দেখিয়াছি, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবেও ছাত্রদিগের সমন্বয়ে কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুপারিশ রহিয়াছে। কারণ যুক্তরাজ্য, ভারতসহ অনেক দেশেই ছাত্রদিগের মাধ্যমে কমিউনিটি পুলিশিং পদ্ধতি প্রচলিত। পূর্বে কমিউনিটি পুলিশিং শুধু অপরাধ দমনের কৌশলরূপে সীমাবদ্ধ রাখা হইত। ইহার সহিত অফিস ও বাড়িতে বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদিগের পদ্ধতিগত কাঠামোর মাধ্যমে জনসম্পৃক্ত কার্যে যুক্ত করিলে নিরাপত্তা সুসংহত হইতে পারে। দেশে যেই গ্রাম আদালত ও চৌকিদারি ব্যবস্থা বিদ্যমান, উহাকে যথাযথরূপে কার্যকর করিলে অপরাধ দমন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহযোগী ভূমিকা পালন করিতে পারে। এই ক্ষেত্রে কমিশন কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার জন্য বাজেট বরাদ্দের যেই পরামর্শ দিয়াছে, উহা যথাযথ। 
অবশ্য স্মরণে রাখিতে হইবে, ইতোপূর্বে পুলিশকে যেইভাবে দলীয়করণ করা হইয়াছিল, উহাই সকল সংকটের মূল। গত বৎসরের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ‘কেমন পুলিশ চাই’ শীর্ষক জনমত জরিপে দেখা গিয়াছে, পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অবসান চায় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ। বিরোধী দল-মত দমনে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা পুলিশ সদস্যদিগের শাস্তিও দাবি করিয়াছে মানুষ। ‘গায়েবি’ মামলার অবসান চান সকলেই। একই সঙ্গে পুলিশের দুর্নীতি বন্ধও এখনকার জনদাবি। মানুষের সেই মতামতের প্রতিফলনরূপেও পুলিশকে পেশাদার বাহিনীরূপে দাঁড় করানো জরুরি। অন্যথায় সম্পূরক কিংবা সহযোগী সকল পদক্ষেপই গরল ভেল হইতে বাধ্য। উদ্ভিদের মূল কর্তন করিয়া অগ্রভাগে জলসিঞ্চনে ফল পাইবার সম্ভাবনা শূন্যই বটে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ র সহ ত

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল