‘বড়ইবাড়ী-ভাওয়াল-মির্জাপুর আঞ্চলিক সড়কে সন্ধ্যার পর আমরা ডাকাতের ভয়ে যাত্রী নিয়ে যাই না। এ সড়কের হাটুরিয়া চালার প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটারের দুপাশে গভীর জঙ্গল। রাতে সেখানে ডাকাত দলের সদস্যরা অবস্থান নেয়। সুযোগ বুঝে সড়কে যাতায়াতকারী লোকজনের ওপর হামলা করে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব লুটে নেয় তারা।’ কথাগুলো গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার অটোরিকশাচালক আব্দুল কদ্দুসের।
উপজেলার তিন আঞ্চলিক সড়কে দুই মাসে একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ডাকাত দলের সদস্যরা পথচারী, যানবাহনের চালক এবং অটোরিকশার যাত্রীদের ওপর হামলা ও কুপিয়ে জখম করছে। তাদের টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী লুটে নিচ্ছে। সরেজমিন পথচারী, যানবাহনের চালক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিন সড়কে প্রতিদিনই কোনো না কোনো নির্জন স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। কাউকে কুপিয়ে জখম করে, কারও হাত-পা বেঁধে জঙ্গলে ফেলে সবকিছু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
সড়ক তিনটির মধ্যে বড়ইবাড়ী-ভাওয়াল-মির্জাপুর আঞ্চলিক সড়ক ও কালামপুর চার রাস্তা হয়ে চন্দ্রা-সাহেবাবাদ এবং কালিয়াকৈর-সিনাবহ আঞ্চলিক সড়কে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এ কারণে সন্ধ্যার পর সড়কটিতে ছোট ছোট যানবাহনের চালকরা যেতে রাজি হন না। ২০ মার্চ রাতে গাবচালা গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী মো.
খবর পেয়ে হাটুরিয়াচালার গ্রামের বাসিন্দারা দু’জনকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেন। গ্রেপ্তার দু’জন হলেন বগুড়ার শেরপুর থানার হাটগাড়ী গ্রামের সোহেল রানা ও দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মহেশপুর গ্রামের মিজানুর রহমান। তারা কালিয়াকৈরে ভাড়া বাসায় থেকে দিনে পোশাক কারখানায় চাকরি এবং রাতে ডাকাতিতে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এসব ডাকাতির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে।
সজিবের সংসারে স্ত্রী শারমিন বেগম ছাড়াও পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া সোয়াদ ও নার্সারিপড়ুয়া ছেলে দিদার হোসেন রয়েছে। শারমিন বলেন, ‘আমার স্বামীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে।’ আর সজিবের বাবা মুক্তার আলী ছেলে হত্যায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
২০ মার্চ একই স্থানে ডাকাতের হামলায় আহত হন আলম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি জামালপুর বাজার থেকে রাত ৮টার দিকে হাটুরিয়াচালার গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথে ১০-১২ জন গতিরোধ করে। চিনে ফেলায় তারা গাছ কাটার করাত দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। দৌড়ে তাদের হাত থেকে প্রাণে রক্ষা পাই।’
এক মাসে ২০ থেকে ২২টি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি দোয়ানীচালা গ্রামের শাহাদৎ হোসেনের। তিনি বলেন, সড়কের উত্তর পাশে গলাচিপার বিশাল গজারি বন থাকায় ডাকাত কিংবা ছিনতাইকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে এসব অপকর্ম করতে সাহস পায়। এ সড়কে পুলিশের টহল নেই বলেই চলে।’
কালামপুর আঞ্চলিক সড়কে এক পথচারী জানান, কয়েকদিন আগে সাহেবাবাদ ও সিনাবহ সড়কের নির্জন স্থানে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। অনেককে বেঁধে রেখে টাকা ও মোবাইল ফোন লুট করেছে। কয়েকজনকে মারধর করে। ১৮ মার্চ এ সড়কে ডাকাত সদস্যরা চালকের হাত-পা বেঁধে তাঁর অটোরিকশা নিয়ে যায়।
দুই মাসে দুই সড়কে ডাকাতি বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্তা সামছুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, এখানে পুলিশ রাত ১০টার পর আর দেখা যায় না। সারা রাত টহল থাকলে হয়তো ডাকাতির সাহস পাবে না দুর্বৃত্তরা। ১৮ মার্চ কালামপুর চাররাস্তার আশপাশে গণডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগী আবুল কাশেম মণ্ডল থানায় অভিযোগ দেন। পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
প্রতিটি নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের উল্লেখ করে দুদকের সাবেক আইনজীবী মোজাম্মেল হক বলেন, সড়কে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়, সেগুলো সঠিক তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হলে আর কোনো অপরাধ সংঘটিত হবে না। ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বেড়ে গেলে রাতে পুলিশের টহল বাড়ানো জরুরি।
সম্প্রতি সড়কে ডাকাতি বেড়েছে স্বীকার করে শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আফজাল হোসেন বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকেও অপরাধীদের ধরার চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সামনে ঈদ থাকায় ছিনতাই-ডাকাতি বেড়েছে। যেসব এলাকায় এসব ঘটনা ঘটছে, সেখানে রাতে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন ছ নত ই
এছাড়াও পড়ুন:
স্টিভ জবসের মডেল কন্যাকে কতটা জানেন?
মার্কিন ফ্যাশন মডেল ইভ জবস। অ্যাপল কম্পিউটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের কন্যা তিনি। স্টিভ জবস ও লরেন পাওয়েল জবস দম্পতির কন্যা ইভ।
কয়েক দিন আগে বয়সে ছোট প্রেমিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ২৭ বছরের ইভ। তার বরের নাম হ্যারি চার্লস। যুক্তরাজ্যের নাগরিক হ্যারি অলিম্পিকে স্বর্ণপদকজয়ী অশ্বারোহী। বয়সে ইভের চেয়ে এক বছরের ছোট হ্যারি। গ্রেট ব্রিটেনে এ জুটির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইভের জাঁকজমকপূর্ণ বিয়েতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধনাঢ্য পরিবারের লোকজন। এ তালিকায় রয়েছেন—তারকা শেফ ব্যারনেস রুথ রজার্স, বিল গেটসের মেয়ে জেসিকা, রোমান আব্রামোভিচের মেয়ে সোফিয়া প্রমুখ। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা উত্তরাধিকারীর পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের বিলাসবহুল মিনিবাসের স্রোত বইছিল বিয়ের ভেন্যুতে।
জাকজমকপূর্ণ বিয়েতে কত টাকা খরচ হয়েছে তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। সংবাদমাধ্যমটিকে প্রয়াত স্টিভ জবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল জবস বলেন, “ইভ-হ্যারির বিয়েতে ৫ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়েছে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯০ কোটি ২৮ লাখ টাকার বেশি)।
১৯৯১ সালে লরেন পাওয়েলকে বিয়ে করেন স্টিভ জবস। এ সংসারে তাদের তিন সন্তান। ইভ এ দম্পতির কনিষ্ঠ কন্যা। ১৯৯৮ সালের ৯ জুলাই ক্যালিফর্নিয়ায় জন্ম। তার বড় বোন এরিন, ভাইয়ের নাম রিড। লিসা নামে তার একটি সৎবোনও রয়েছে।
ইভা পড়াশোনা করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২১ সালে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং সমাজ (সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড সোসাইটি) বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। একই বছর প্যারিসে ‘কোপের্নি’ সংস্থার হাত ধরে মডেলিং দুনিয়ায় পা রাখেন। মডেলিং জগতে পা রেখেই চমকে দেন স্টিভ-তনয়া।
অনেকে নামিদামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছেন ইভ। বিখ্যাত ব্যাগ প্রস্তুতকারী সংস্থা লুই ভিতোঁরের মডেল হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। মডেলিংয়ের পাশাপাশি অশ্বারোহী হিসাবেও খ্যাতি রয়েছে ইভের। এক সময় বিশ্বের ২৫ বছরের কম বয়সি ১ হাজার সেরা অশ্বারোহীর মধ্যে পঞ্চম স্থানে ছিলেন তিনি।
মাত্র ছয় বছর বয়সে ঘোড়ার পিঠে চড়ে দৌড় শুরু করেছিলেন স্টিভ জবস তনয়া। ঘোড়ায় চড়ার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মেয়ে যাতে পড়াশোনায় মন দেয়, সে দিকে বরাবরই সজাগ দৃষ্টি ছিল ইভের বাবা-মায়ের। তবে গ্রীষ্মাবকাশ ও বসন্তের ছুটির সময়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য বাবা-মায়ের অনুমতি পেতেন ইভ।
ইভ যেখানে অশ্বারোহণের প্রশিক্ষণ নেন, সেই জায়গার মূল্য দেড় কোটি ডলার। ইভ প্রশিক্ষণ শুরু করার পর তার মা ওই জায়গা কিনে নিয়েছিলেন। তবে মডেল হওয়ার কোনো পরিকল্পনা কখনো ছিল না ইভের। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আগে কখনো মডেলিং করিনি। তবে প্রস্তাব পেয়ে ঘাবড়ে যাইনি। আমার মনে হয়েছিল, কেন নয়? এই প্রস্তাব আমাকে আকৃষ্ট করেছিল।”
ঢাকা/শান্ত