প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ১৫১ জন। সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় কর্তৃক ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত নন এমন প্রার্থীদের মধ্য থেকে নন-ক্যাডার পদে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (প্রশিক্ষণবিহীন) নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণি হিসেবে বেতন স্কেল- ২০১৫ অনুযায়ী গ্রেড-১২ (টাকা ১১,৩০০-২৭,৩০০/)–তে বেতন পাবেন। সুপারিশকৃতরা উপজেলা/থানা ভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হলো।

আজ সোমবারের (২৪ মার্চ) প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত প্রযোজ্য হবে। এগুলো হলো—

ক.

চাকরিতে যোগদানের পর ২ বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হবে

খ. শিক্ষানবিশকালে অযোগ্য বিবেচিত হলে কোন কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে তাঁদের চাকরি হতে অপসারণ করা যাবে

গ. শিক্ষানবিশকাল সন্তোষজনক বিবেচিত হলে বিধি মোতাবেক চাকরিতে স্থায়ী করা হবে

ঘ. চাকরিতে তাঁদের জ্যেষ্ঠতা বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন সচিবালয় কর্তৃক সুপারিশকৃত মেধা তালিকা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে;

ঙ. তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন এমন ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে অথবা বিবাহের অঙ্গীকারবদ্ধ হলে এ নিয়োগ বাতিল বলে গণ্য হবে;

চ. সরকারের প্রচলিত বিধি বিধান, আদেশ এবং সরকার কর্তৃক ভবিষ্যতে প্রণীতব্য বিধি বিধান/আদেশ দ্বারা তাঁর চাকরি নিয়ন্ত্রিত হবে;

আরও পড়ুনআইডিবি দেবে ৭২০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ, মিলবে হাতখরচের অর্থ২৩ মার্চ ২০২৫

ছ. এ চাকরিতে যোগদানের জন্য তিনি কোন ভ্রমণ ভাতা/দৈনিক ভাতা প্রাপ্য হবেন না;

জ. প্রশিক্ষণবিহীন প্রার্থীদের নিয়োগ আদেশ প্রাপ্তির পরবর্তী ৪ (চার) বছরের মধ্যে ‘প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য মৌলিক প্রশিক্ষণ (বিটিপিটি)’ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে;

ঝ. নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষক/শিক্ষিকা কর্তৃক সরবরাহকৃত যে কোন তথ্য ও সনদপত্র মিথ্যা/ভুয়া/ত্রুটিপূর্ণ হলে নিয়োগ আদেশ বাতিল করা যাবে এবং প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী তাঁর/তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে;

ঞ. শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না, করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে;

আরও পড়ুনপেছাল গণিত পরীক্ষা, এসএসসি-২০২৫-এর নতুন রুটিন প্রকাশ১৯ মার্চ ২০২৫

ট. নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে পদায়নকৃত কর্মস্থলে যোগদান করবেন। অন্যথায় নিয়োগ আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে;

ঠ. প্রত্যেক প্রার্থী সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর যোগদান পত্র দাখিল করবেন। উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার যোগদানপত্র গ্রহণপূর্বক একটি প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবেন। বর্ণিত প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ করে তিনি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে যোগদান করবেন। সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসার বরাবর যোগদানের তারিখই শিক্ষকের চাকরিতে যোগদানের তারিখ হিসেবে গণ্য হবে;

ড. নিয়োগকৃত শিক্ষকের বেতন ভাতাদি কোড ১২৪০২০৯০০০০০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহ খাত হতে মিটানো হবে।

*বিস্তারিত দেখতে এখানে ক্লিক

আরও পড়ুনবেসরকারি মেডিকেলে শূন্য আসনের তালিকা প্রকাশ, ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তি২৯ আগস্ট ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ কর ত কর ত ক করব ন সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মজুরি বৈষম্যের শিকার নারী কৃষিশ্রমিক

‘১৫-২০ বছর ধইরা (ধরে), ই-খলায় (ধান মাড়াই ও শুকানোর স্থান) কাজ করি আমরা। আমরারে ৫০০ টেকা (টাকা) রোজ দেইন (দেন), আর বেটাইনতে (পুরুষরা) পাইন ৭০০ থেকে ৮০০ টেকা, দুপুরে আমরারে চিড়া-গুড় দেওয়া অয় (হয়) হেরার (পুরুষদের) লাগি ভাতের ব্যবস্থা করা অয়।’ 

কথাগুলো বলছিলেন তাহিরপুরের শনির হাওরপারের কালীবাড়ির সামনে একটি খলায় ধান শুকানো, ঝাড়াই ও বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকা দুই নারীশ্রমিক গীতা বর্মণ ও লক্ষ্মী রানী বর্মণ।

কেবল তাহিরপুরের ধানের খলায় নয়। হাওর এলাকাজুড়েই ধানের খলায় কাজ করা নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মজুরিতে বৈষম্য রয়েছে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরের নতুনপাড়ার বারীক মিয়ার খলায় কাজ করছিলেন, পাশের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মধ্যবয়সী নারীশ্রমিক প্রেমলতা বিশ্বাস। কখন কাজে এসেছেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন, সকাল ৮টায়। কয়টায় ছাড়বেন কাজ, বললেন বিকাল ৫টায়। মজুরি কত জানতে চাইলে বললেন, দিনে ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিকরা কত পায় প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, ৭০০ টাকা। আপনাকে কম দেওয়া হচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রেমলতা বলেন, ‘ই-দেশও নিয়মওই এইটা, বেটাইনতে (পুরুষরা) বেশি পায়।’
মধ্যনগরের বংশিকুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা হাসিনা বেগম জানান, ধান মাড়াই, শুকানো ও গোলায় তোলার কাজ করেন তিনি। প্রতিদিনই সকালে আগে কাজে লাগেন এবং কাজ শেষে সবার পরে ফেরেন তিনি। কিন্তু মজুরি দেবার সময় তাঁকে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। পুরুষ শ্রমিককে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকাও দেওয়া হয়।

দিরাই উপজেলার রাজাপুর গ্রামের বড় গৃহস্থ সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছত্তার মিয়ার ভাষ্য, রাজাপুরে নারী কৃষিশ্রমিক কমে গেছে। পাশের ইসলামপুরে এখনও বেশির ভাগ কাজ করেন নারীরা। ওখানে নারী ও পুরুষ শ্রমিক অর্ধেক-অর্ধেক। এবার পুরুষ ও মহিলা শ্রমিককে কত টাকা চুক্তিতে গ্রামের বড় কৃষকরা কাজে লাগিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, পুরুষ ২০ দিনে ১৬ মণ ধান এবং নারী শ্রমিকদের ৮ মণে করানো হচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি এই মজুরি বৈষম্যের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কথাও তুলেছি, কিন্তু অন্যরা তাতে বিরক্ত হন, তারা বলেন, চেয়ারম্যান সাবে রেইট বাড়িয়ে সবাইকে বেকায়দায় ফেলতে চান।’ 

হাওরের কৃষি ও কৃষক রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, হাওরের ফসল উৎপাদনে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় কৃষি শ্রমিকের চাইতে এক সময় বেশি ছিল নারী শ্রমিক। মজুরি বৈষম্যের কারণে এদের অনেকে এলাকার কাজ ছেড়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় শহরে চলে গেছে। 

সুনামগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌরী ভট্টাচার্য্য বললেন, কৃষিতে মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে গ্রামীণ এলাকা ছেড়ে উপজেলা, জেলা ও রাজধানীর গার্মেন্টসমুখী হয়েছে হাজার হাজার নারীশ্রমিক।  কৃষি ছাড়াও অন্যান্য পেশায়ও মজুরি বৈষম্য থাকায় নারীর উপস্থিতির সংখ্যা কমছে।

গৌরী ভট্টাচার্য্য আরও বলেন, এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গিয়ে কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত পুরুষদের পেশা কৃষক লিখলেও নারীর ক্ষেত্রে হয় না। নারীর প্রতি এমন বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ