বৈশাখের উৎসবে রঙ বাংলাদেশ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ এই ধ্বনিতে আসি আসি করছে বাংলা নববর্ষ। প্রতিটি বাঙালির কাছে পয়লা বৈশাখ যেন নিজস্ব সংস্কৃতির আবহে নবনব রূপে নিজেদের নবায়ন করে নেওয়া। পয়লা বৈশাখ এলেই ধর্মবর্ণ ছোটবড় নির্বিশেষে সকলেই যেন নিজেদের গায়ে মেখে নিতে চায় উৎসবের রঙ।
পহেলা বৈশাখ এলেই ধর্মবর্ণ ছোটবড় নির্বিশেষে সকলেই যেন নিজেদের গায়ে মেখে নিতে চায় উৎসবের রঙ। আর এই উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোতে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় অনেক আগে থেকে। সেই ধারাবাহিকতায় পিছিয়ে নেই দেশের অন্যতম ও প্রশংসিত ফ্যাশন হাউস ‘রঙ বাংলাদেশ’ও। দেশের পোশাকে দেশের উৎসব আপ্তবাক্যে বিশ্বাসী এই প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই নববর্ষের পোশাকের শেষ করেছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
সকল উৎসবে থিমভিত্তিক সামগ্রী তৈরীর ভাবনার পথপ্রদর্শক রঙ বাংলাদেশ-এর কর্ণধার সৌমিক দাস জানান - বাঙালির এই অন্যতম উৎসবের আবহকে তুলে ধরতে আমরা এই বৈশাখের ডিজাইনে দুটি বিশেষ থিম নিয়ে কাজ করেছি। একটি হলো ‘কাঠের পুতুল’। কাঠের পুতুল বাঙালির লোকশিল্প ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অনন্য নিদর্শন হিসেবে সমাদৃত। সাধারণত হাতে তৈরি করা পুতুলের দেহজুড়ে থাকে নিখুঁতভাবে খোদাই করা দারুণ ডিজাইন ও তার সাথে নানারকম উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার। আর সেইসব অতুলনীয় নকশা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি হয়েছে রঙ বাংলাদেশের এবারের নববর্ষের পোশাক।
এ ছাড়া ব্যাপক বৈচিত্রের কথা মাথায় রেখে ‘কাঠের পুতুল’এর নকশার সাথে ‘মুখোশ’ এর থিমকেও ডিজাইনে নিয়ে এসেছি আমরা। দেশজুড়ে বৈশাখের শোভাযাত্রায় জায়গা করে নেওয়া মুখোশ বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতীকী এসব মুখোশে বাঘ, পাখি, মাছ, সূর্য, এবং গ্রামীণ জীবনের নানান নকশা ফুটে ওঠে। মুখোশের থিম পোশাকের নকশায় নিয়ে আসার কারণে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে সৌমিক দাস তার প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করেন।
এইসব নকশায় সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট হিসেবে তাদের থাকছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, কামিজ, স্ট্রিচ ড্রেস, ফ্রক ইত্যাদি। আর বৈশাখের উৎসবকে রাঙাতে তাদের সকল পণ্যে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছ লাল, মেরুন ও সাদার সাথে বিভিন্ন হাল্কা অথচ উজ্জ্বল রঙের নানারকম শেড। গরমের কথা বিবেচনায় রেখে কাপড়ে আরামের বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। পোশাকের সাথে মিলিয়ে রঙ বাংলাদেশ কাজ করেছে জুয়েলারি নিয়েও। পাওয়া যাবে বৈশাখ উপযোগী বিভিন্ন রকম হাতের চুড়ি, মালা, কানের দুল, লকেট, চুলের ব্যান্ড ইত্যাদি। ডাই ও প্রিন্ট কাপড়, সুতা, পুথি, কড়ি, কাপড়ের বল এর কম্বিনেশনে এই জুয়েলারিগুলো তৈরি করা হয়েছে এবং আনুষাঙ্গিক মোটিভ ছাড়াও মুখোশ মোটিভ দিয়েও তৈরি করা হয়েছে এই জুয়েলারিগুলো।
রঙ বাংলাদেশ এর ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন আউটগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে নববর্ষের পণ্য। চাইলে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেও নববর্ষ উৎসবের পণ্য কিনতে পারেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নববর ষ উৎসব র র উৎসব
এছাড়াও পড়ুন:
ফসলের ক্ষেতে আশার আলো
বৈশাখ মাস, চারদিকে উৎসবের আমেজ। সেই উৎসবের ঢেউ লেগেছে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে। নতুন ধান ঘরে তোলার ধুম লেগেছে হাওর অঞ্চলে; বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ কয়েকটি এলাকায়। হাওরের পুবালি বাতাসে এখন পাকা ধানের ম-ম গন্ধ। বৈশাখ এলেই সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে চিরচেনা এ রূপ চোখে পড়ে। ঠা-ঠা রোদ মাথায় নিয়ে ক্ষেতে ধান কাটেন কৃষক। অন্যদিকে চলে মাড়াই। কিষানিরা মনের আনন্দে মাড়াই করা ধান শুকান। বিকেলের শান্ত রোদে শুকনো ধান মাথায় নিয়ে ঘরে ফেরেন।
ধান কাটা উৎসবে শুধু কিষান-কিষানি নন, সব বয়সী মানুষই যোগ দেন। হাওরে এটি এক অনন্য উৎসব। চলে বৈশাখজুড়ে। এ উৎসবের কাছে কাঠফাটা রোদ, ঝড়-বৃষ্টি যেন তুচ্ছ। ধানের সবুজ শীষের রং যখন লালচে হতে শুরু করে, তখন কৃষকের মনের রং বদলায়। চোখ-মুখ খুশিতে ভরে ওঠে। লোকমুখে প্রচলিত– বছরের প্রথম দিনে ঘরে ফসল তুললে সারাবছর অভাব থাকে না। তাই তো হাওরে চলছে পাকা ধান কাটার উৎসব। তবে চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধান তলিয়ে যায়। যাতে অনেক কৃষক নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
আনন্দ-বেদনার এ বৈশাখে প্রকৃতি নতুন বিন্যাসে সাজে। বসন্তে প্রকৃতিতে যে রং লাগে, তা পূর্ণতা পায় বৈশাখে। অসীম আকাশে নানা বর্ণের মেঘের আনাগোনা আমাদের মনে সঞ্চারিত করে সঞ্জীবনী মন্ত্র। চোখে প্রশান্তি এনে দেয় সর্ববিস্তৃত প্রকৃতি। এ সময় চারদিকে আগুন ছড়ানো কৃষ্ণচূড়া, পলাশ, জারুল, বাগানবিলাসসহ প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি। দেখা মেলে আম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুলসহ মধুমাসের বিভিন্ন ফলের। কৃষিনির্ভর গ্রামবাংলা মেতে ওঠে উৎসব আমেজে। বৈচিত্র্যময় সমারোহে বসে বৈশাখী মেলা। এতে লোকগান, পুতুলনাচ, বায়োস্কোপ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি আকর্ষণ করে সবাইকে।
ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে রুদ্রমূর্তির বৈশাখে প্রকৃতিতে থাকে ভিন্ন চেহারা। কালবৈশাখী আসে তীব্রবেগে। উড়িয়ে নিয়ে যায় অভাগীর জীর্ণ কুটির। উপকূলে বিপদ হয়ে আসে সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস। গ্রীষ্মের তাপদাহে তটস্থ হয় মানুষ। এ সময় আবহমান গ্রামবাংলার ছোট নদী, খালবিল, ডোবা শুকিয়ে যায়। কৃষকরা পড়েন বিপাকে। আবার এ সময়ে প্রকৃতি সাজে নতুন করে। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করা মানুষ একটু স্বস্তি পেতে আশ্রয় নেয় সবুজ প্রকৃতির শীতল ছায়ায়। একদিকে বৈশাখ খরতাপ ছড়ায়, অন্যদিকে প্রকৃতির প্রশান্তির শীতল ছোঁয়া দেয় পরম আনন্দ। বৈশাখ আসে নতুন করে সব গড়তে। শীর্ণ-জীর্ণতায় সবুজ সতেজ করে তুলতে। ‘নূতনের কেতন উড়ে’ কালবৈশাখীতে। একরাশ স্বপ্ন বুকে নিয়ে শুরু হয় নবজীবনের হিসাবনিকাশ। স্বপ্নমুখর বৈশাখের রং তাই একটু বেশিই উজ্জ্বল। প্রকৃতি সজীব সতেজ আর মানুষেরা প্রাণচঞ্চল।
সুহৃদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়