যেসব সম্পদের জাকাত দিতে হয় এবং যারা প্রাপ্য
Published: 24th, March 2025 GMT
আরবি ‘জাকাত’ শব্দের অর্থ পবিত্রতা, বৃদ্ধি ও উন্নতি। পারিভাষিক অর্থে, নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কোনো মুসলিম কর্তৃক শরীয়ত নির্ধারিত অংশ দরিদ্র ও অভাবী মানুষের মধ্যে বিতরণ করাকে জাকাত বলে। জাকাতের মাধ্যমে সম্পদের প্রবৃদ্ধি ঘটে বলে জাকাতকে জাকাত নামকরণ করা হয়েছে। (হিদায়া, জাকাত অধ্যায়)
যেসব সম্পদের জাকাত দিতে হয়
ইসলামী শরিয়ত মানুষের জীবন ধারনের জন্য অপরিহার্য সম্পদের ওপর জাকাত আবশ্যক করেনি। তাই সব ধরনের সম্পদে জাকাত ফরজ নয়। শুধু সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা, পালিত পশু (নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী) এবং ব্যবসাপণ্যে জাকাত ফরজ। (সুনানে আবি দাউদ : ১/২৫৫; সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২২৫৮)
আরো পড়ুন:
জাকাতের গুরুত্ব ও বিধান
রমজানে নেক আমল ও সমাজসংস্কার
অলঙ্কার ছাড়া সোনা-রুপার অন্যান্য সামগ্রীর ওপরও জাকাত ফরজ। মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্বৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার জাকাত আদায় করা ফরজ। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭০৯১)
ব্যাংক ব্যালান্স, ফিক্সড ডিপোজিট, বন্ড, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদিও নগদ টাকা-পয়সার মতোই। এসবের ওপরও নির্ধারিত হারে জাকাত ফরজ। এ ছাড়াও কৃষিপণ্যের ওপরও জাকাত ফরজ। শরিয়তের পরিভাষায় তাকে উশর বলে। (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম ও ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া, জাকাত অধ্যায়)
যে হারে জাকাত দিতে হয়
ইসলামী শরিয়ত যেসব সম্পদের ওপর জাকাত ফরজ করেছে তার ৪০ ভাগের এক ভাগ জাকাত দেওয়া ফরজ। এ ক্ষেত্রে জাকাত দাতা সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে জাকাত প্রদান করবে। জাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে নগদ মূল্য বা নিত্যপ্রয়োজনীয় যে কোনো একটি দেওয়ার অবকাশ আছে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৫৭২)
জাকাত যাদের দিতে হয়
জাকাত কেবল দরিদ্র্য ও অসহায় মুসলিম মানুষকে দিতে হয়। কোনো অমুসলিমকে জাকাত দিলে তা আদায় হবে না। পবিত্র কোরআনে আট শ্রেণির মানুষকে জাকাতের উপযুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘সাদাকা তো কেবল ফকির, মিসকিন, কাকাত আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারী, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৬০)
আয়াতে উল্লিখিত আটটি শ্রেণিকে মুফাসসির ও ফকিহ আলেমরা এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তারা বলেন:
১.
২. মিসকিন হলো অতি দরিদ্র লোক। যাদের কোনো সম্পদ নেই।
৩. জাকাত আদায়কারী কর্মচারী বলতে তাদের বোঝানো হয় যারা জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত থাকে।
৪. মন জয় করা প্রয়োজন এমন ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য নওমুসলিম বা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তি। একদল ফকিহ মনে করেন এই খাতটি বর্তমান সময়ের জন্য প্রযোজ্য নয়।
৫. দাসমুক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায় এমন মুসলিম দাসকে অর্থ সাহায্য দেওয়া।
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি দ্বারা উদ্দেশ্য যারা ঋণ পরিশোধে অক্ষম।
৭. আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী দ্বারা উদ্দেশ্য দেশ ও উম্মাহের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তি এবং দ্বিনি আন্দোলনে আত্মনিয়োগকারী অভাবী মুসলিম।
৮. মুসাফির দ্বারা উদ্দেশ্য বিপদগ্রস্ত ভ্রমণকারী, যে অর্থের অভাবে ঘরে ফিরতে পারছে না। (তাফসিরে কুরতুবি)
বর্তমান যুগের আলেমরা জাকাত প্রদানে দ্বিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাধান্য দিতে বলেন। কেননা এতে যেমন অসহায় শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা এবং দ্বিনি শিক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সহজ হয়, তেমনি একটি শিশু আপনার সহযোগিতায় হাফেজ ও আলেম হলে পরবর্তীতে সে যত নেক আমল করবে এবং দ্বিনি খেদমত করবে তার একটি অংশ আপনার আমলনামায় যুক্ত হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক : মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
শাহেদ//
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন জ ক ত ফরজ দ র জন য আল ল হ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক