বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে মনে করেন ব্রিটিশ এমপি বা সংসদ সদস্যরা। তাঁরা মনে করছেন, আহসান এইচ মনসুর যেহেতু বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে অপতথ্য দেওয়া হচ্ছে।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের কাছে পাঠানো এক ই–মেইলে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মেয়ের বিলাসী জীবন সম্পর্কে তথ্য দিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত করা হচ্ছে না? এক সাংবাদিক এই ই–মেইল পাঠিয়েছেন বলে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে।

আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে লন্ডন সফরে রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা চাইতে তিনি এই সফর করছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এই অর্থ যুক্তরাজ্যে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ। গভর্নরের বিশ্বাস, ওই অর্থ দিয়ে যুক্তরাজ্যে সম্পদ কেনা হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে আহসান মনসুরের যুক্তরাজ্য সফর শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকীর পদত্যাগ নিয়ে সৃষ্ট শোরগোলের কারণে ঢাকা পড়ে গেছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা করার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

এখন আহসান মনসুরের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু হয়েছে বলে ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা মনে করছেন। সম্প্রতি দেশটির ৪৭–দলীয় শক্তিশালী অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) আহসান মনসুরের বিষয়ে ই–মেইল পেয়েছে। সেদিনই আহসান মনসুরের সঙ্গে তাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

ই–মেইলটি পাঠিয়েছেন এক সাংবাদিক। ই–মেইলটির সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের একটি লিংক পাঠানো হয়েছে। সেখানে আহসান মনসুরের মেয়ের বিলাসী জীবন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সাংবাদিকের জিজ্ঞাসা, আহসান মনসুরের মেয়ের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত করা হচ্ছে না?

কিন্তু দ্য গার্ডিয়ান সেই ই–মেইল প্রেরণকারীর সাংবাদিক হিসেবে আর কোনো প্রোফাইল খুঁজে পায়নি। যে ছবি ই–মেইলে ব্যবহার করা হয়েছে, তা–ও নকল বলে মনে হয়েছে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আহসান মনসুর ও ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা মনে করেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানোর সমন্বিত কৌশলের অংশ। গভর্নর বিশ্বাস করেন, যাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার তদন্ত হচ্ছে, সেই ব্যক্তিরাই তাঁর মানহানি করতে এই প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা বিভিন্নভাবে গভর্নরকে লক্ষ্যবস্ত করছে।

আহসান মনসুর আরও জানান, তাঁর কন্যা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক; বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর তেমন সম্পর্ক নেই।

এদিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি গ্রুপের আরেক সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হককেও একই রকম চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠি দিয়েছে ব্রিটিশ জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান প্যালাটাইন কমিউনিকেশন। ই–মেইলে বলা হয়েছে, আহসান মনসুর টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলে তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধেও একই রকম তদন্ত হওয়া উচিত। যদিও গভর্নর বলেছেন, তিনি টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কখনো একটি কথাও বলেননি।

এ বিষয়ে প্যালাটাইন কমিউনিকেশনের বক্তব্য হলো, এই চিঠির সত্যাসত্য সম্পর্কে তাদের দাবি নেই। যা বলা হয়েছে তা ধ্রুব সত্য, এ রকম কথা তারা বলছে না। কিন্তু তারা মনে করে, আরও অনেক বিষয়ের মতো বাংলাদেশ সম্পর্কে এই বিষয়টিও রাজনীতিকদের মাথায় রাখা উচিত।

অন্যদিকে পলিসি ডাইজেস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গভর্নর আহসান মনসুরের মেয়ের বিলাসী জীবন নিয়ে যে প্রতিবেদন লেখা হয়েছে, তার লেখক নাম প্রকাশে রাজি নন। তিনি আরও বলেন, সেই লেখার বিষয়বস্তুর যে যথেষ্ট সত্যতা আছে, সে বিষয়ে তারা আত্মবিশ্বাসী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহস ন এইচ মনস র ট উল প স দ দ ক র মনস র র ম য় র ব আহস ন মনস র র মনস র র ব অপতথ য সদস য তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্কে এটাই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। আগামীকাল ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক নগরে মেয়র পদে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে।

গতকাল রোববার ছিল আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। এদিন প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। নগরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার ঘটনা। তা ছাড়া এদিন ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এর মধ্য দিয়ে আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের গড় বয়সও কমে এসেছে। গড় বয়স ৫০ বছরে নেমে এসেছে।

আগের সপ্তাহের প্রথম দিকে কম বয়সী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ওই সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ হাজার নিউইয়র্কবাসী ভোট দিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গতকাল রোববারই এ বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি।

আরও পড়ুনমামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা০২ নভেম্বর ২০২৫

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।

নিউইয়র্কে সর্বপ্রথম মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ২০২১ সালে। ওই নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। ওই নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্লিওয়াকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন।

অবশ্য চলতি বছর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটকে ছাড়াতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের বয়স তুলনামূলক কম। এটা অবাক করা বিষয়। কারণ, সাধারণত যারা আগাম ভোট দেন তাঁদের গড় বয়স মোট নিবন্ধিতদের গড় বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগে

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের গড় বয়স ছিল ৫১ বছর। তবে এবার মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটারদের গড় বয়স আরও কমে ৫০ বছরে নেমেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ