আহসান মনসুরের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে মনে করেন ব্রিটিশ এমপিরা
Published: 24th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে মনে করেন ব্রিটিশ এমপি বা সংসদ সদস্যরা। তাঁরা মনে করছেন, আহসান এইচ মনসুর যেহেতু বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেহেতু তাঁর বিরুদ্ধে অপতথ্য দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের কাছে পাঠানো এক ই–মেইলে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের মেয়ের বিলাসী জীবন সম্পর্কে তথ্য দিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, তাঁর মেয়ের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত করা হচ্ছে না? এক সাংবাদিক এই ই–মেইল পাঠিয়েছেন বলে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে লন্ডন সফরে রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে যুক্তরাজ্য সরকারের সহায়তা চাইতে তিনি এই সফর করছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা এই অর্থ যুক্তরাজ্যে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ। গভর্নরের বিশ্বাস, ওই অর্থ দিয়ে যুক্তরাজ্যে সম্পদ কেনা হয়েছে।
দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে আহসান মনসুরের যুক্তরাজ্য সফর শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকীর পদত্যাগ নিয়ে সৃষ্ট শোরগোলের কারণে ঢাকা পড়ে গেছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা করার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
এখন আহসান মনসুরের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু হয়েছে বলে ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা মনে করছেন। সম্প্রতি দেশটির ৪৭–দলীয় শক্তিশালী অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ (এপিপিজি) আহসান মনসুরের বিষয়ে ই–মেইল পেয়েছে। সেদিনই আহসান মনসুরের সঙ্গে তাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।
ই–মেইলটি পাঠিয়েছেন এক সাংবাদিক। ই–মেইলটির সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের একটি লিংক পাঠানো হয়েছে। সেখানে আহসান মনসুরের মেয়ের বিলাসী জীবন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সাংবাদিকের জিজ্ঞাসা, আহসান মনসুরের মেয়ের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত করা হচ্ছে না?
কিন্তু দ্য গার্ডিয়ান সেই ই–মেইল প্রেরণকারীর সাংবাদিক হিসেবে আর কোনো প্রোফাইল খুঁজে পায়নি। যে ছবি ই–মেইলে ব্যবহার করা হয়েছে, তা–ও নকল বলে মনে হয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আহসান মনসুর ও ব্রিটিশ সংসদ সদস্যরা মনে করেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে অপতথ্য ছড়ানোর সমন্বিত কৌশলের অংশ। গভর্নর বিশ্বাস করেন, যাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার তদন্ত হচ্ছে, সেই ব্যক্তিরাই তাঁর মানহানি করতে এই প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা বিভিন্নভাবে গভর্নরকে লক্ষ্যবস্ত করছে।
আহসান মনসুর আরও জানান, তাঁর কন্যা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক; বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর তেমন সম্পর্ক নেই।
এদিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি গ্রুপের আরেক সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হককেও একই রকম চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠি দিয়েছে ব্রিটিশ জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান প্যালাটাইন কমিউনিকেশন। ই–মেইলে বলা হয়েছে, আহসান মনসুর টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলে তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধেও একই রকম তদন্ত হওয়া উচিত। যদিও গভর্নর বলেছেন, তিনি টিউলিপ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে কখনো একটি কথাও বলেননি।
এ বিষয়ে প্যালাটাইন কমিউনিকেশনের বক্তব্য হলো, এই চিঠির সত্যাসত্য সম্পর্কে তাদের দাবি নেই। যা বলা হয়েছে তা ধ্রুব সত্য, এ রকম কথা তারা বলছে না। কিন্তু তারা মনে করে, আরও অনেক বিষয়ের মতো বাংলাদেশ সম্পর্কে এই বিষয়টিও রাজনীতিকদের মাথায় রাখা উচিত।
অন্যদিকে পলিসি ডাইজেস্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গভর্নর আহসান মনসুরের মেয়ের বিলাসী জীবন নিয়ে যে প্রতিবেদন লেখা হয়েছে, তার লেখক নাম প্রকাশে রাজি নন। তিনি আরও বলেন, সেই লেখার বিষয়বস্তুর যে যথেষ্ট সত্যতা আছে, সে বিষয়ে তারা আত্মবিশ্বাসী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহস ন এইচ মনস র ট উল প স দ দ ক র মনস র র ম য় র ব আহস ন মনস র র মনস র র ব অপতথ য সদস য তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।