রাজশাহীতে হিমাগারে ‘আলু রাখার জায়গা নেই’ সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভেতরে ডিম রাখা হচ্ছে। গত শুক্রবার স্থানীয় প্রশাসন দুটি হিমাগারে গিয়ে ডিম দেখতে পায়। তারপর তারা ডিম সরানো শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে সেখানে আবার ডিম রাখা হয়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, বিশেষায়িত হিমাগার ছাড়া সাধারণ হিমাগারে ডিম রাখা যাবে না। রাজশাহীতে কোনো বিশেষায়িত হিমাগার নেই। এদিকে রাজশাহীতে হিমাগারে আলু রাখার জায়গা না পেয়ে চাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক চাষি এখনো তাঁদের জমি থেকে আলু তুলতে পারছেন না। আবার কেউ স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুই মাসের জন্য স্তূপ করে আলু সংরক্ষণ করছেন।

গত শুক্রবার রাজশাহীতে বৃষ্টির মধ্যে হিমাগারের সামনে আলুর গাড়ির সারি দাঁড়িয়ে যায়। কোনো কোনো গাড়ির আলু বাইরে ২৪ ঘণ্টা ধরে ভিজেছে, কিন্তু হিমাগারের ভেতরে ঢোকার সিরিয়াল পায়নি। খবর পেয়ে পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ উপজেলার উত্তরা কোল্ডস্টোরেজে ও আসমা কোল্ডস্টোরেজে গিয়ে দেখেন, আলুর জায়গায় ডিম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ডিমগুলো এসেছে বগুড়ার সান্তাহারের মা-বাবার ডিমের আড়ত, ঢাকার কাপ্তান বাজারের মেসার্স তৌফিক ট্রেডার্স, রাজশাহীর বিসমিল্লাহ ডিম ভান্ডার, মেসার্স শুকরিয়া পোলট্রি শপসহ ঢাকার আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব ডিমের খাঁচির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং কার্ড লাগানো রয়েছে। সোমবার দুপুরে গিয়েও আসমা কোল্ডস্টোরেজে ডিম পাওয়া যায়। অথচ এই হিমাগারের বাইরে লেখা রয়েছে, আলু রাখার জায়গা নেই, হিমাগার বন্ধ। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, তারা আলুর পরিবর্তে ঠিকই ডিম সংরক্ষণ করছে।

মা-বাবার ডিমের আড়তের ভিজিটিং কার্ডে আরিফ নামের একজনের ফোন নম্বর আছে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাঁরা আলুর মতোই সেখানে ডিম রেখে দিয়েছেন। কত ভাড়া জানতে চাইলে তিনি বলতে পারেননি। তিনি বলেন, তাঁর বড় ভাই এসব হিসাব রাখেন। তিনি বলতে পারবেন।

এই হিমাগারের ডিম সংরক্ষণ করা যাবে কি না, জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের রাজশাহীর উপপরিচালক শাহানা আক্তার জাহান বলেন, বিশেষায়িত হিমাগারগুলোতে ডিম রাখার জন্য বিশেষ চেম্বার থাকে। তাঁরা সেখানে ডিম সংরক্ষণ করতে পারেন। রাজশাহীতে কোনো বিশেষায়িত হিমাগার নেই। বগুড়ায় এ–জাতীয় দুটি হিমাগার আছে।

জানতে চাইলে হিমাগার দুটির মালিক আওলিয়া রাজীব প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত গরমের সময় ডিম পচে নষ্ট হয়ে যায়। এ সময় ডিমের ক্ষতি হলে দাম বেড়ে যাবে। ভোক্তাসাধারণই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। সেই জন্য মানবিক কারণে রাখা হয়। ডিমে খুব বেশি ‘টেম্পারেচার’ লাগে না। তিনি বলেন, গত শুক্রবার জেলা প্রশাসক ও পবার ইউএনও এসে দেখে গেছেন।

পবার ইউএনও আরাফাত আমান আজিজ সোমবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি গত শুক্রবার গিয়ে দেখে এসেছেন। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে তাদের সতর্ক করতে বলা হয়েছে। তারা সতর্ক না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জায়গা না পেয়ে আলুচাষিরা দিশাহারা

এদিকে হিমাগারে আলু রাখার জায়গা না পেয়ে চাষিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। রাজশাহীর তানোরের ইলামদোহী গ্রামের আলুচাষি আবদুর রাজ্জাক (৫৫) এবার সাত বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। আলুর দাম কম। বিক্রি করে উৎপাদন খরচ উঠছে না। আবার কোনো হিমাগারেও তিনি আলু রাখার সুযোগ পাননি। দেড় বিঘা জমির আলু মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তার আলু বাড়ির উঠানে ও মাঠে পড়ে আছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শুক্রবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। এখন তাঁর পরিবার আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

আবদুর রাজ্জাকের মেয়ের স্বামী শরীফ উদ্দিন বলেন, সাত বিঘা জমিতে তাঁর শ্বশুর এবার আলু চাষ করেছিলেন। কোনো হিমাগারে তিনি আলু রাখার সুযোগ পাননি। মাঠে আলুর দাম একেবারেই কম। তবু দেড় বিঘা জমির আলু মাত্র ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। এক কেজির আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা। এই অবস্থায় বাকি আলু বাড়িতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে আর জমিতে পড়ে আছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বাস্তবে আরও সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বেশি আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে ১০ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর আলুর উৎপাদন হয়েছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। সেই হিসাবে এবার ৯০ হাজার টন আলু বেশি উৎপাদন হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকায় সরকার কোল্ডস্টোরেজের সামনে আলুবোঝাই গাড়ির দীর্ঘ সারি বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা যায়। টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে এই সারিতে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছেন নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বাসিন্দা মো.

উজ্জ্বল। তিনি বললেন, রাত সাড়ে আটটা থেকে গাড়ি নিয়ে এই সারিতে আছেন। তখন পর্যন্ত ভেতরে ঢোকানোর কোনো সিরিয়াল পাননি। তাঁর মতে, বৃষ্টিতে আলু ভিজে গেছে। এটা আলুর জন্য ক্ষতিকর।

রাজশাহী কোল্ডস্টোরেজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহীর হিমাগারগুলোর ধারণক্ষমতার ৯০ ভাগ পূরণ হয়ে গেছে। আর এক সপ্তাহের মধ্যে সব হিমাগার বন্ধ হয়ে যাবে। বাকি আলু বাইরে থেকে যাবে। প্রতিবছরই কিছু আলু বাইরে থাকে। এবার উৎপাদনে একটু বেশি হয়েছে, এবার একটু বেশি থাকবে। বাইরের আলু দিয়েই পরবর্তী দুই মাস বাজার চালু থাকে। এবারও তাই থাকবে। তারপর হিমাগারের আলু বের করতে হবে। সোমবার বিকেলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ থাকার কারণে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।

এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।

তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।

মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।

পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।

তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।

পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’

জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পড়াশোনায় ফিরছেন দিনাজপুরের ‘ইংলিশম্যান’ হৃদয়, শেখাবেন ইংরেজি
  • আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
  • নারায়ণগঞ্জে ৩০ স্কুলে চালু হলো ‌‘মিড ডে মিল’
  • গাজীপুরে ১০ মাটি খেকোকে কারাদণ্ড
  • পাঠাগার থেকে লুট হওয়া বই ফেরত পেলো কর্তৃপক্ষ
  • দমদমিয়া আলোর পাঠশালায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিলেন ইউএনও
  • রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ, লুট হওয়া বই ফেরত পেল পাঠাগার কর্তৃপক্ষ
  • মুদি দোকানে যৌন উত্তেজক ঔষধ, জরিমানা