সন্জীদা খাতুন—শ্রদ্ধা ও সমীহের সঙ্গে উচ্চারিত একটি নাম
Published: 25th, March 2025 GMT
বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির জগতে শ্রদ্ধা ও সমীহের সাথে উচ্চারিত একটি নাম সনজীদা খাতুন। রবীন্দ্রনাথের জন্মের সার্ধশত বছরে শান্তিনিকেতন থেকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতির জন্যে বাংলাদেশে তিনিই যোগ্যজন। সাধনা ও সংগ্রামের মিশ্রণে এ এক অনন্য জীবন। প্রায় আশি ছুঁই ছুঁই বয়সেও পথচলার সুদীর্ঘ এই ধারায় কখনও ছেদ পড়েনি, বরং উত্তরোত্তর নতুন নতুন দায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি।
সাহিত্য ও সংগীত সনজীদাআপার মূল দুই সঞ্জীবনী, সেই সূত্রে রবীন্দ্রনাথ প্রেরণার প্রধান উৎস, পথ চলার সহায় ও সঙ্গী।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিচিত্র সৃষ্টির পাশাপাশি ভাবনা ও কর্মে বাঙালিকে গ্রাম্যতার গণ্ডি কাটিয়ে নাগরিক বিশ্বপরিসরে উত্তরণের পথ দেখিয়েছেন। কবির মূল এই অভিপ্রায়ের সাথে আমাদের কৃষি-নির্ভর রক্ষণশীল সমাজের পরিচয়সাধন এবং অভীষ্ট লক্ষ্যে তার উত্তরণের পথে অচলায়তন অন্তরে-বাহিরে, এবং তা দুস্তর ও বিস্তর। রবীন্দ্র-ভাবশিষ্যা সনজীদা খাতুন আজীবন সেই বাধাসংকুল দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে চলেছেন। অন্তর্নিহিত সাধকসত্তা তাঁকে সকল বাধা তুচ্ছ করে প্রয়োজনে একাই এগিয়ে চলার শক্তি দেয়। আর তাঁর স্বোপার্জিত সংগ্রামী সত্তা দিয়েছে সমমানাদের সংঘবদ্ধ করার প্রেরণা।
তাঁর সেই শক্তি ও প্রেরণার সার্থক প্রকাশ ছায়ানট-মহীরুহ। গত শতকের ষাট দশকে জাতির জাগরণের উত্তাল সময়ে ছায়ানট হয়ে ওঠে বাঙালির সাংস্কৃতিক যাত্রার দিশারী সংগঠন। আর স্বাধীনতা-পরবর্তী প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রত্যাঘাতের সময় ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামেও ছায়ানট থাকল একই অবস্থানে অবিচল প্রত্যয়ে। গোড়ায় ছিলেন অনেকের একজন, ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর বাস্তবতায় যখন ছায়ানটের গুরুত্ব উত্তরোত্তর বেড়েছে, এবং যখন জাগরণে ও প্রতিরোধে বৃহত্তর সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনুঘটকের ভূমিকায় ছায়ানট তখন বা ততদিনে এ প্রতিষ্ঠানের কাণ্ডারী সনজীদা খাতুন। প্রতিষ্ঠান অনেকের ভূমিকা ও অবদানেই রূপ পায়, তবে তখনই পায় যখন নেতৃত্ব থাকে সঠিক।
বাঙালি মুসলিম সমাজের রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীদের প্রথম প্রজন্মের একজন তিনি, তবে তিনি কেবল সেই ভূমিকায় আবদ্ধ থাকলেন না, নিজেকে ছড়িয়ে দিলেন এবং ছাড়িয়ে উঠলেন সংগীত শিক্ষকের ও সংগঠকের দায় কাঁধে নিয়ে। সাহিত্যই তাঁর আগ্রহ ও চর্চার আদি বিষয় হওয়ায় তাঁর শিক্ষা সাঙ্গীতিক ব্যাকরণের পাঠ ছাপিয়ে জীবন, সমাজ ও সংস্কৃতি অবধি পরিব্যাপ্ত।
ছায়ানট জন্মাবধি ধর্মান্ধ প্রতিক্রিয়াশীলদের হুমকির মুখেই ছিল। কিন্তু ২০০৩-এ সেটা আড়াল সরিয়ে সরাসরি যখন আঘাত হানল নববর্ষের অনুষ্ঠানে তখন অনেকেরই মনে হল শুধু সঙ্গীত ও সংস্কৃতির কাজে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, হাত দিতে হবে মানুষ গড়ার আরও মৌলিক ক্ষেত্রে—শিক্ষায়। সেই ভাবনায় ও কাজে এদেশে রবীন্দ্রসংস্কৃতি বিকাশের প্রাণপুরুষ প্রয়াত ওয়াহিদুল হক ছিলেন অগ্রণী। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানেরও ধাত্রী এবং ওয়াহিদ ভাইয়ের মৃত্যুর পর, এর অভিভাবক, সনজীদাআপাই।
আজ বিশ্বায়ন ও বাণিজ্যায়ন যেন পরিপূরক ভূমিকায় মানুষের সামনে সম্পূর্ণ জগত খুলে ধরে ক্ষান্ত নয়, মেলে ধরেছে ভোগের সীমাহীন সম্ভার এবং তা স্বভাবতই মানুষকে, বিশেষত তরুণদের, ঠেলে দিয়েছে ব্যস্ততা-অস্থিরতার এক কোলাহলময় জঙ্গম জীবনে। তোড়ের মুখে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভেসে যাচ্ছে অনেকে, কেউ পথ হাতড়ে মরছে, কেউবা ধর্মান্ধতার বিবরে আশ্রয় নিচ্ছে।
কিন্তু কবির জীবনসায়াহ্নের সাবধানবাণী শোনে নি কেউ। প্রাচ্যও, পশ্চিমেরই মত, এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি আজ। ব্যবহারিক সংস্কৃতিতে এত বিপুল পরিবর্তন ঘটে চলেছে যে তার প্রভাব মানুষের চিন্তার জগৎকেও কেবল আলোড়িত করছে না, নতুন বা ভিন্ন সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করছে সকলকে। তবে দেশে ও বিশ্বে অনেকেরই বিশ্বাস—এবং তা বাড়ছে, বেড়েই চলেছে—এ সময়ে রবীন্দ্রনাথ থেকে নেওয়ার প্রয়োজন ও সুযোগ উভয়ই বাড়ছে।
আশি বছরের দ্বারপ্রান্তে এসে নতুন কালের সামনে দাঁড়িয়ে আজ সনজীদা আপা; তবে তাঁর হৃদয় মাঝে অভয় বাজে নিশ্চয়—কারণ চিরনূতনেরে ডাক দিয়ে যান যে কবি তিনিই তো তাঁর সহায় ও সাথী।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।
আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে