‘দান-অনুদান একটা মহৎ কাজ, সওয়াবের কাজ। এতে আত্মার পরিতৃপ্তি হয়, আত্মার আত্মশুদ্ধি হয়। আর এখন যেহেতু প্রায় সবকিছুই ডিজিটালি করা যায়, আমরা যাঁদের জন্য অনুদান দিতে চাই, তাঁদের চাইলে ঘরে বসেই দিয়ে দিতে পারি। এই কাজটাই সহজ করে দিয়েছে বিকাশের ডোনেশন সেবা,’ বলছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শহিদ উল্লাহ।

সাবেক এই কর্মকর্তার কথা ধরেই বলা যায়, যাঁর সাহায্য প্রয়োজন আর যিনি সাহায্য দিতে চান, তাঁদের মধ্যে দূরত্ব এখন আর বাধা নয়। গ্রহীতা ও দাতার মধ্যে এই দূরত্ব দূর করে বিকাশের মতো প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে মানবিক ও সামাজিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার বিশ্বস্ত মাধ্যম। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কিংবা দূরত্বের দেয়াল ভেঙে মানুষের ভালোবাসা পৌঁছে যাচ্ছে সঠিক ঠিকানায়। উন্নত ডিজিটাল প্রযুক্তির কল্যাণে, দানের প্রচলিত পদ্ধতিতে বিকাশ এনেছে আমূল পরিবর্তন; নিশ্চিত করছে, প্রতিটি সাহায্য যেন দ্রুত আর নিরাপদে পৌঁছে যায় সঠিক মানুষের কাছে। বিকাশ অ্যাপ থেকে কয়েকটি ট্যাপেই ৪০টি সংস্থার মাধ্যমে কোটি কোটি অসহায় মানুষের জন্য সাহায্য পাঠানো যাচ্ছে। দাতার জন্য দানের প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় মানবিকতার প্রকাশ এখন আরও সাবলীল হয়েছে এবং আরও বেশি মানুষ সাধ্যমতো দান করছেন।

‘এখন তো ব্যাংকিং, লেনদেন—সবকিছুই অ্যাপে করছি। দান করার জন্য বিকাশের এই ডোনেশন অপশনটা খুবই সময়োপযোগী। আমাদের সমাজে কিছু প্রতারক আছে, মানুষের কাছ থেকে টাকা তোলে কিন্তু সেটা জায়গামতো পৌঁছায় না, আবার কেউ কেউ পার্সেন্টেজ নেয়। এসব ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে দেখলাম, অ্যাপের মাধ্যমে কাজটা করলে আমি যাঁকে দান করছি, তাঁর কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, আবার আমার দেওয়া অনুদান কোথায় খরচ হচ্ছে, সেটাও জানতে পারছি,’ বলেন শহিদ উল্লাহ।

শহিদ উল্লাহর মতো লাখো মানুষের পাঠানো টাকা দাতব্য ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যয় হয় এতিম, ছিন্নমূল, দিনমজুর ও অতিদরিদ্র পরিবারের খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহায়তায়। তেমনই একজন শাহীনূর। তাঁর দুই মেয়ে তানহা ও সুমাইয়া থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় চলছে তাদের চিকিৎসা।

শাহীনূর বলেন, ‘ডাক্তাররা বলেছেন, যত দিন বেঁচে থাকবে, তত দিন রক্ত দিতে হবে। বড় মেয়েটাকে ১৪ বছর ধরে ব্লাড দিচ্ছি। আমরা খাই বা না খাই, ওদের চিকিৎসা দেওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। চিকিৎসা তো করতে পারতাম না, যদি থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা না পেতাম।’

বিকাশ অ্যাপে ডোনেশন দেওয়া যায়, এমন একটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা.

সৈয়দা মাসুমা রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে থ্যালাসেমিয়ামুক্ত বাংলাদেশ গড়া। বিত্তবান মানুষের জাকাত, অনুদানের একটা বিশাল ভূমিকা আছে এখানে। প্রচুর মানুষ এখন আমাদের ফাউন্ডেশনে বিকাশের মাধ্যমে ডোনেশন দিচ্ছেন। অনেক মানুষ প্রতি মাসে ৫০০, ১ হাজার বা ২ হাজার টাকা দিচ্ছেন বিকাশের মাধ্যমে।’

বিকাশে কোন কোন প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিতে পারছেন

আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট, ঢাকা আহ্‌ছানিয়া মিশন, ডু-নেশন ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, এসো সবাই, খুকুমনি ফাউন্ডেশন, ফ্রেন্ডশিপ, হিউম্যান এইড বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম, প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ত্রাণ তহবিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ত্রাণ তহবিল, ব্র্যাক, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বিএনএফডব্লিউ ডোনেশন ফান্ড, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী কল্যাণ ট্রাস্ট, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ত্রাণ তহবিল, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পরিবার কল্যাণ সংঘ অনুদান ফান্ড, টিএমএসএস, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, একশনএইড, ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন (জাকাত), আইসিডিডিআরবি, জাগো ফাউন্ডেশন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, বিদ্যানন্দ, মির্জাপুর এক্স ক্যাডেটস অ্যাসোসিয়েশন, মজার ইশকুল, ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন, প্রথম আলো ট্রাস্ট, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সাজিদা ফাউন্ডেশন, সাফল্যময় সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা, শক্তি ফাউন্ডেশন, এসওএস চিলড্রেন ভিলেজ বাংলাদেশ, তাসাউফ ফাউন্ডেশন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন—এসব প্রতিষ্ঠানে সহজেই অনুদান দিতে পারছেন মানুষ। বিকাশের মাধ্যমে ডোনেশনের বিস্তারিত জানতে পারেন এই লিংকে।

বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘বিকাশ সব সময়ই চেষ্টা করছে মানুষের প্রতিদিনকার লেনদেনগুলোকে সহজ করতে। এই রমজান মাসে মানুষ জাকাত দেন, দান-সদকা প্রদান করেন। এ প্রক্রিয়াকে সহজ করা, অনুদানের পরিপূর্ণ সৎ ব্যবহার নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরির কথা মাথায় রেখেই বিকাশ এ ডোনেশন সেবা নিয়ে এসেছে। প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠানে এ মুহূর্তে মানুষ বিকাশে অনুদান দিতে পারছেন। ভবিষ্যতে প্ল্যাটফর্মটিকে আরও বড় করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, যাতে আমাদের গ্রাহকেরাও পছন্দের প্রতিষ্ঠানে অনুদান দিতে পারেন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন দ ন দ ত ণ তহব ল কল য ণ দ ন কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু, পুলিশ স্বাভাবিক মৃত্যু বললেও ‘অস্বাভাবিক’ বলে প্রচার

ময়মনসিংহে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা মো. রুহুল আমিন আকাশের (৩০) মৃত্যু হয়েছে। ছাত্রলীগ নেতার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বল জানিয়েছে পুলিশ ও তার পরিবার। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে প্রচার করা হচ্ছে। আজ সোমবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। 

জানা যায়, রুহুল আমিন আকাশ রোববার রাতে ময়মনসিংহ নগরীতে তার বোন নাফিয়া আক্তারের বাসায় বেড়াতে আসেন। সোমবার সকাল ১০টার দিকে দিঘারকান্দা শান্তিনগর আলহাজ্ব সিরাজ আলী জামে মসজিদের সামনে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যান। এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এর আগে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা ঈসমাইল হোসেন এবং গৃহকর্মী মোছা. বকুল আক্তার দ্রুত এগিয়ে এসে ছাত্রলীগ নেতা আকাশের মাথায় পানি ঢেলে এবং পরে উদ্ধার করে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তবে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের ভগ্নিপতি বোম্বের সুইটস কোম্পানির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আনিছুর রহমান সমকালকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মাত্র দেড় মাস আগে রুহুল আমিন আকাশ বিয়ে করেছিলেন। তার স্ত্রী গাজীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। 

আনিছুর রহমান বলেন, ‘গতরাতে সে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমার বাসায় বেড়াতে আসে। সন্ধ্যায় তার শারীরিক অবস্থার একটু খারাপ হলে সে বমি করে। এরপর রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে হাসপাতালে যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়। পথে সে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। পরে বিষয়টি হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয়।’

এদিকে, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফিরোজ হোসেন জানান, ‘এটি স্বাভাবিক মৃত্যু। মৃতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তবে একটি মহল এই মৃত্যুর ঘটনাটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে।’

তবে পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু বললেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা নিজ নিজ ফেসবুক পোস্টে শোক প্রকাশের পাশাপাশি এই মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক এবং হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করছেন।

সোমবার বিকেল পৌনে ৪টায় ‘বাংলাদেশ স্টুডেন্ট লীগ’ নামের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্টে দাবি করা হয়, ‘ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন আকাশ এর মৃতদেহ পাওয়া গেছে রাস্তার পাশে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতা রুহুল আমিন আকাশ এর অপমৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানায়।’ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার বিদেহী আত্মার শান্তি ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত মো. রুহুল আমিন আকাশ নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেলায়াতলী গ্রামের বাসিন্দা মো. নওয়াব আলীর ছেলে। তিনি গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ