নেত্রকোনায় কলেজশিক্ষক ও নারী খুনের রহস্য এখনো অজানা
Published: 25th, March 2025 GMT
নেত্রকোনা শহরে অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক দিলীপ কুমার সাহা রায় (৭১) ও মাজেদা খাতুন (৬৫) নামের আরেক নারী হত্যার রহস্য এখনো উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। কলেজশিক্ষক হত্যা ঘটনার আড়াই মাস এবং নারী হত্যার চার দিন চলে গেলেও জড়িতদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে মামলার বাদী, নিহতদের স্বজনসহ স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানা-পুলিশের পাশাপাশি জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (পিবিআই) একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দুটি হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ সক্ষম হবে।
দিলীপ কুমার সাহা রায় নেত্রকোনা আবু আব্বাছ কলেজের কৃষিশিক্ষা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মাইজার এলাকায়। তিনি নেত্রকোনা শহরের বড় বাজার এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। আর মাজেদা খাতুন আরামবাগ এলাকার বাসিন্দা ও তথ্য কার্যালয়ের সাবেক কর্মচারী প্রয়াত আরজান আলীর স্ত্রী।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা, থানা-পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দিলীপ কুমার রায় ও বিভা সাহা দম্পতির এক ছেলে ও মেয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। ঘটনার কয়েক দিন আগে ছেলের কাছে বেড়াতে গিয়েছিলেন বিভা সাহা। দিলীপ রায় বাসায় একাই ছিলেন। গত ১০ জানুয়ারি সকালে বিভা সাহা ঢাকা থেকে বাসায় পৌঁছে ঘরের দরজায় তালা দেখতে পান। পরে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে খাটের নিচ থেকে দিলীপের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে পুলিশ আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত খুনের রহস্য উদ্ঘাটনসহ এ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
বাদী বিভা সাহা বলেন, ‘ঘটনার আড়াই মাস চলে গেলেও এখনো পুলিশ খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারছে না। আমার স্বামীকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু আমি চাই, ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হোক। যারা তাঁকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’
এদিকে আরামবাগ এলাকার আরজান আলীর মৃত্যুর পর ওই বাসাটিতে তাঁর স্ত্রী মাজেদা একাই থাকতেন। তাঁর তিন মেয়ে বৈবাহিক সূত্রে অন্যত্র থাকেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে মেয়েরা মাজেদা খাতুনকে ফোনে পাচ্ছিলেন না। পরদিন শুক্রবার বিকেলে ছোট মেয়ে বাসায় এসে প্রধান দরজাটি তালাবদ্ধ দেখতে পান। অপর একটি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে গলায় গামছা প্যাঁচানো অবস্থায় বিছানায় মায়ের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে নিহতের বড় মেয়ে আবিদা সুলতানা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তবে এখনো কেউ গ্রেপ্তার বা রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ন র রহস য ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
১১ দিনেও সামিয়ার মৃত্যুরহস্য অজানা, ১০ দিন পর হত্যা মামলা
কুমিল্লার লাকসামে মাদ্রাসাছাত্রী সামিয়া আক্তারের মৃত্যু রহস্য ১১ দিনেও জানতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার ১০ দিন পর গত রোববার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, সে ছাদ লাফিয়ে পড়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
সামিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে গত শনিবার প্রবাস থেকে দেশে ফিরেছেন বাবা। সোমবার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনসহ দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে পরিবার। লাকসাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর মা শারমিন বেগম পিবিআইয়ের মাধ্যমে ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
নাঙ্গলকোট উপজেলার নাওগোদা গ্রামের প্রবাসী নিজাম উদ্দিনের মেয়ে সামিয়া আক্তার (১৩)। সে লাকসাম পৌর এলাকার ইকরা মহিলা মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির আবাসিক ছাত্রী ছিল। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৮ এপ্রিল মাদ্রাসার পাশের রাস্তায় আহত অবস্থায় তাকে পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির মালিকানাধীন বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
সেখানে অবস্থা গুরুতর দেখে শিক্ষক খলিলুর রহমান ও মা শারমিন আক্তারসহ সামিয়াকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে একটি হাসপাতালে পরদিন সে মারা যায়। কর্তৃপক্ষ বলছে, সে মাদ্রাসার পঞ্চম তলার একটি কক্ষে থাকত। ঘটনার দিন রাতে গোসলখানার জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে লাফিয়ে রাস্তায় পড়ে আহত হয়। পথচারীরা দেখে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায়।
শারমিন আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে মেধাবী ছাত্রী ছিল। তাকে অজ্ঞাত কোনো ঘটনায় পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে আত্মহত্যা করবে কেন? যে জানালার গ্রিল দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আহত হওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেখানকার সরু ফাঁকা স্থান দিয়ে মাথা-শরীর বের হওয়ার কথা নয়।’
শারমিন আক্তার আরও বলেন, ‘মেয়েকে মৃত ঘোষণার পর মাদ্রাসার শিক্ষক খলিলুর রহমান কৌশলে পালিয়ে গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ এলাকায় আনার পর জানাজায়ও মাদ্রাসার কেউ অংশ নেননি করেনি, খোঁজখবর নেননি। মাদ্রাসার মুহতামিমসহ অন্যরা পলাতক রয়েছে। পুলিশ ঘটনার পর হত্যা মামলা না নিয়ে নিয়েছে অপমৃত্যুর মামলা। ১০ দিন পর রোববার হত্যা মামলা নিয়েছে।’
নিজাম উদ্দিন শনিবার দেশে ফিরে হত্যারহস্য উদঘাটনসহ জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান। মাদ্রাসার মুহতামিম জামাল উদ্দিন পলাতক থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম মাহমুদ বলেন, ‘ওই ছাত্রী আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে পঞ্চম তলার জানালার গ্রিল দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন মারা যায়। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের কোনো দায় নেই।’
লাকসাম থানার ওসি নাজনিন সুলতানা বলেন, এ ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা হলেও ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হত্যা মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে পুলিশ। মৃত্যুর রহস্য বের করার চেষ্টা চলছে।