Samakal:
2025-06-16@17:21:17 GMT

স্বাধীনতার ইতিহাসে চাই ঐক্য

Published: 25th, March 2025 GMT

স্বাধীনতার ইতিহাসে চাই ঐক্য

পৃথিবীতে যেসব দেশ সাম্রাজ্যবাদীর দখল থেকে লড়াই করে, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেসব দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস কতখানি মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ, সেটা যদি সে দেশের নাগরিক বিশেষ করে শিশু ও তরুণ প্রজন্ম অনুধাবন করতে না পারে, তার চেয়ে হতাশাজনক আর কিছু হতে পারে না। দেশকে এগিয়ে যেতে সঠিক ইতিহাস থাকা জরুরি। 

দেশের নাগরিকদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত যতই বিভেদ-বৈষম্য-মতবিরোধ থাকুক; অন্ততপক্ষে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ, নির্বিবাদ শ্রদ্ধাবোধ এবং মতৈক্য থাকতে হবে। এটিই শক্তিশালী জাতি গঠনের প্রধান শর্ত। যথার্থ দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে প্রজন্মের শিক্ষাস্তরভেদে পাঠ্যপুস্তকে স্থান দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম ভুল-ভ্রান্তি, স্বজনপ্রীতি, ব্যক্তিবিদ্বেষ অথবা অবজ্ঞা সমগ্র জাতি এবং রাষ্ট্রকে বিতর্কিত ও কলুষিত করবে। এ কারণে জাতির ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস অত্যন্ত সতর্কতা ও গুরুত্বের সঙ্গে লেখার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। 

আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে জনগণের মধ্যে নানা মত ও বিভেদ বিদ্যমান। যে কারণে স্বাধীনতার পর আমাদের স্বনির্ভর হতে বারবার বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে; ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে সজ্ঞানে। সজ্ঞানে স্বাধীনতার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বাসভবনে এবং জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমন হত্যাকাণ্ড বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ও কলঙ্কজনক। রাজনৈতিকভাবে এসব ঐতিহাসিক ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হচ্ছে মনগড়া তথ্য দিয়ে। এমনকি তাদের অবদান অস্বীকার করার মতো ধৃষ্টতাও দেখানো হচ্ছে। 

মানুষ মাত্রই ভুলভ্রান্তি থাকে। কর্ম ও নেতৃত্বে ভুল থাকতেই পারে। মানজজীবনে এটা যথাস্বীকৃত। তাই বলে হত্যা করতে হবে– এমন বিধান কোথাও নেই। বিশেষ করে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াকু বীর বা রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করা কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে বা বিনাবিচারে, তা কোনোভাবেই যথার্থ কাজ নয়। মহান স্বাধীনতার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে প্রজন্ম বিপথগামী হয়; অদৃষ্টবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অর্ধশতকে স্বাধীন বাংলাদেশে তা-ই হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য লাগাতার সংগ্রাম, রক্তঢালা লড়াই, শ্রমসাধ্য নেতৃত্ব এবং শেষমেশ যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের যতখানি অবদান তার ততখানি মূল্যায়ন নিয়ে আজও বিতর্ক চলমান। সেই সঙ্গে চলছে স্বজনপ্রীতি, দলীয় স্বার্থ, অবজ্ঞা-অবহেলা, প্রতারণা, যা সভ্য দেশে চিন্তাই করা যায় না। 

একটি জাতির ইতিহাস, তার স্বাধীনতার ইতিহাস কোনোভাবেই অবজ্ঞা-অবহেলার বিষয় নয়। তার প্রমাণ পাওয়া যায় এশিয়ার একাধিক দেশে যেমন ভারত, জাপান, চীন, দুই কোরিয়া, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান প্রভৃতি। এসব দেশে ঐতিহাসিক ঘটনা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে নানাবিধ সমস্যা থাকার কারণে সত্যিকার ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়নি, বরং সজ্ঞানে ভুলভ্রান্তি সাজিয়ে ইতিহাস লিখিত হয়েছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে ভুল ইতিহাস শেখানো হচ্ছে। এমনকি একাধিক দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব দেশের অবদান রয়েছে অথবা দেশ গঠনে সার্বিক বিনিয়োগ ও সহযোগিতা রয়েছে, সেসব সজ্ঞানে অস্বীকার করা হয়েছে। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুলভ্রান্তি শিখে বড় হচ্ছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভক্তি ও সহমর্মিতা জলাঞ্জলি দিচ্ছে। এমনকি তারা জানতেই পারছে না, তার দেশের সত্যিকারের ইতিহাস কতখানি সঠিক, যৌক্তিক ও প্রামাণিক! সুতরাং এতে জাতিগত ঐক্যেই শুধু ফাটল নেই; আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও দুর্বল হয়ে থাকতে হয়। এখন রাষ্ট্রের সঠিক ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে সর্বাগ্রে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সর্বজনের স্বীকৃতি ও নিরঙ্কুশ ঐক্য স্থাপন জরুরি।

প্রবীর বিকাশ সরকার: শিশুসাহিত্যিক ও গবেষক   

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত প রজন ম সব দ শ

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস

বাবা সন্তানের ওপর ছায়ার মতো স্নেহময় এক উপস্থিতি। নিঃশর্ত ভরসার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়োজনে নিজের বর্তমান, এমনকি নিজের স্বপ্নও নীরবে উৎসর্গ করে দিতে পারেন যিনি– আজ তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। বাবা দিবস উপলক্ষে সমতা’র বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত

আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে। এখন সেই জায়গাটা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার সমুদয়কাঠি গ্রাম। তখনকার সামাজিক পরিসরে আমাদের পরিবারের অবস্থা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভালো ছিল। আমার বাবা বিজয় কুমার আইচ তখন পিরোজপুরে কাজ করতেন। তাঁর রেশনের দোকান ছিল। প্রতি শনিবার বাড়ি আসতেন। আমরা বাবার আশায় বসে থাকতাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একরকম আশীর্বাদের মতো।
বাবার একটি ব্যবসাও ছিল। এ থেকে মূলত আমাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের চেয়ে সম্ভবত বাবার জ্ঞান বা বোধ উন্নততর ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য দশ গ্রামের লোকজন তাঁকে মানত। গ্রামে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। বাবার সঙ্গে কথা না বলে কেউ থানা-পুলিশ করতে যেত না। বাবা সবাইকে খুব বুঝিয়ে বলত– মামলা করলে কে জিতবে, কে হারবে– এটি অনেক পরের কথা। মামলা নিয়ে বরিশাল-পিরোজপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দুই পক্ষই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তারচেয়ে বরং তোমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেল।
গ্রামের পণ্ডিতরা তখন তালপাতায় অ-আ-ক-খ শেখাতেন হাত ধরে ধরে। আমার সেটি একদম পছন্দ হতো না। বাবা কী করলেন, তিনি একটা স্লেট ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন। অ-আ-ক-খ দিয়ে যত ছবি আঁকা হয়, তা শেখাতেন। এর মধ্যে আমার যে ছবিটা পছন্দ হতো, সেটি আমি মনের মধ্যে গেঁথে নিতাম। যার ফলে বাবার মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক শিক্ষা পেয়েছি আমি। 
আমার বাবারা ছিলেন ৪ ভাই। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দু’জন পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার বাবা ও এক কাকা বাড়ি ছেড়ে যাননি। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ৩ বোন। কাকাতো ভাই ৪ জন, বোন একজন। মোট ১৪ ভাইবোন। কাকা কম বয়সেই গত হন। বিলাসী জীবন আমাদের ছিল না। তবে গ্রামের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বড়লোক। পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও খাবারের অভাব হতো না কখনোই। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়ও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি। আমাদের একটা গুদামঘর ছিল। সেখানে বাবা পাশের বন্দর কাউখালী থেকে সারা বছরের চাল, ডাল, পাউডার দুধ, চিনি, লবণ, গুড় এনে ড্রামে ভরে রাখতেন। বাইরে যত সংকটই থাকুক না কেন, বছরজুড়ে খাবারের অভাব হতো না। সমস্যা হতো ঝড়ের সময়। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন ঝড় মাঝে মাঝেই আসত। কখনও ঘরের চাল উড়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম। 
অন্যদের সামনে বাবা নিজের অবস্থানের জন্যই বেশি হাসি-তামাশা করতেন না। যখন আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো হাসি-খুশি থাকতেন। তখনকার বাবাদের আমরা মারধর করতে দেখেছি, এমনকি খড়ম দিয়ে পেটাতে দেখেছি। বাবা আমার গালে জীবনেও একটা চড় মারেনি। কোনো ভাইবোনকেও মারধর করতে দেখিনি। তখন হয়তো আরও এমন বাবা ছিলেন। তবে গ্রামে আমি এমন বাবা আর দেখিনি। সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলেও তিনি কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, কেন দেরি করে ঘরে ফিরেছি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিষ্যদের কড়া বার্তা দিলেন রিয়ালের নতুন কোচ আলোনসো
  • বিশ্ববাজারে আজও বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম
  • ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্রকে থামাইতেই হইবে
  • বন্ধু হওয়ার সুযোগ দিন, শত্রু নয়
  • ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’
  • একদিনে আয় ৮১ লাখ, ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের তাণ্ডব!
  • ফুসফুসের সুরক্ষায় যা করণীয়
  • লন্ডন বৈঠকের পর এখন বিএনপির দৃষ্টি নির্বাচনে , কী ভাবছে অন্য দলগুলো
  • সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
  • কুয়েত থেকে ফিরে খেজুরের বাগান, আছে মরিয়ম–আজওয়া–মেডজল খেজুর