Samakal:
2025-09-18@01:05:28 GMT

স্বাধীনতার ইতিহাসে চাই ঐক্য

Published: 25th, March 2025 GMT

স্বাধীনতার ইতিহাসে চাই ঐক্য

পৃথিবীতে যেসব দেশ সাম্রাজ্যবাদীর দখল থেকে লড়াই করে, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, সেসব দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস কতখানি মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ, সেটা যদি সে দেশের নাগরিক বিশেষ করে শিশু ও তরুণ প্রজন্ম অনুধাবন করতে না পারে, তার চেয়ে হতাশাজনক আর কিছু হতে পারে না। দেশকে এগিয়ে যেতে সঠিক ইতিহাস থাকা জরুরি। 

দেশের নাগরিকদের মধ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় বা সম্প্রদায়গত যতই বিভেদ-বৈষম্য-মতবিরোধ থাকুক; অন্ততপক্ষে স্বাধীনতা, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ, নির্বিবাদ শ্রদ্ধাবোধ এবং মতৈক্য থাকতে হবে। এটিই শক্তিশালী জাতি গঠনের প্রধান শর্ত। যথার্থ দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে প্রজন্মের শিক্ষাস্তরভেদে পাঠ্যপুস্তকে স্থান দেওয়া রাষ্ট্রের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে সামান্যতম ভুল-ভ্রান্তি, স্বজনপ্রীতি, ব্যক্তিবিদ্বেষ অথবা অবজ্ঞা সমগ্র জাতি এবং রাষ্ট্রকে বিতর্কিত ও কলুষিত করবে। এ কারণে জাতির ইতিহাস, স্বাধীনতার ইতিহাস অত্যন্ত সতর্কতা ও গুরুত্বের সঙ্গে লেখার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। 

আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে জনগণের মধ্যে নানা মত ও বিভেদ বিদ্যমান। যে কারণে স্বাধীনতার পর আমাদের স্বনির্ভর হতে বারবার বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে; ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে সজ্ঞানে। সজ্ঞানে স্বাধীনতার সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর বাসভবনে এবং জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে জেলখানায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমন হত্যাকাণ্ড বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ও কলঙ্কজনক। রাজনৈতিকভাবে এসব ঐতিহাসিক ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হচ্ছে মনগড়া তথ্য দিয়ে। এমনকি তাদের অবদান অস্বীকার করার মতো ধৃষ্টতাও দেখানো হচ্ছে। 

মানুষ মাত্রই ভুলভ্রান্তি থাকে। কর্ম ও নেতৃত্বে ভুল থাকতেই পারে। মানজজীবনে এটা যথাস্বীকৃত। তাই বলে হত্যা করতে হবে– এমন বিধান কোথাও নেই। বিশেষ করে স্বাধীনতা সংগ্রামের লড়াকু বীর বা রাষ্ট্রপ্রধানকে হত্যা করা কোনো আন্দোলনের মাধ্যমে বা বিনাবিচারে, তা কোনোভাবেই যথার্থ কাজ নয়। মহান স্বাধীনতার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় বা জাতীয় ঐক্য না থাকার কারণে প্রজন্ম বিপথগামী হয়; অদৃষ্টবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অর্ধশতকে স্বাধীন বাংলাদেশে তা-ই হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য লাগাতার সংগ্রাম, রক্তঢালা লড়াই, শ্রমসাধ্য নেতৃত্ব এবং শেষমেশ যুদ্ধক্ষেত্রে যাদের যতখানি অবদান তার ততখানি মূল্যায়ন নিয়ে আজও বিতর্ক চলমান। সেই সঙ্গে চলছে স্বজনপ্রীতি, দলীয় স্বার্থ, অবজ্ঞা-অবহেলা, প্রতারণা, যা সভ্য দেশে চিন্তাই করা যায় না। 

একটি জাতির ইতিহাস, তার স্বাধীনতার ইতিহাস কোনোভাবেই অবজ্ঞা-অবহেলার বিষয় নয়। তার প্রমাণ পাওয়া যায় এশিয়ার একাধিক দেশে যেমন ভারত, জাপান, চীন, দুই কোরিয়া, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান প্রভৃতি। এসব দেশে ঐতিহাসিক ঘটনা ও কর্মকাণ্ড নিয়ে নানাবিধ সমস্যা থাকার কারণে সত্যিকার ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়নি, বরং সজ্ঞানে ভুলভ্রান্তি সাজিয়ে ইতিহাস লিখিত হয়েছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে ভুল ইতিহাস শেখানো হচ্ছে। এমনকি একাধিক দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যেসব দেশের অবদান রয়েছে অথবা দেশ গঠনে সার্বিক বিনিয়োগ ও সহযোগিতা রয়েছে, সেসব সজ্ঞানে অস্বীকার করা হয়েছে। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুলভ্রান্তি শিখে বড় হচ্ছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভক্তি ও সহমর্মিতা জলাঞ্জলি দিচ্ছে। এমনকি তারা জানতেই পারছে না, তার দেশের সত্যিকারের ইতিহাস কতখানি সঠিক, যৌক্তিক ও প্রামাণিক! সুতরাং এতে জাতিগত ঐক্যেই শুধু ফাটল নেই; আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও দুর্বল হয়ে থাকতে হয়। এখন রাষ্ট্রের সঠিক ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসতে সর্বাগ্রে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সর্বজনের স্বীকৃতি ও নিরঙ্কুশ ঐক্য স্থাপন জরুরি।

প্রবীর বিকাশ সরকার: শিশুসাহিত্যিক ও গবেষক   

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত প রজন ম সব দ শ

এছাড়াও পড়ুন:

কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 

বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না।  মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন  করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও  এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?

ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো।  বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে। 

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার ‍বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ

রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা 

রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে। 
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত। 

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। 

বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই। 

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।  

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরদের কাজ কি শুধু ভাইভা নেওয়া
  • কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস 
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-গ্রামবাসীতে বিদ্বেষ কেন
  • চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড: ট্রাম্প কি দাঙ্গা–ফ্যাসাদকেই নীতি হিসেবে নিয়েছেন