মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন দুটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ একপর্যায়ে তাঁদের পুষ্পস্তবক অর্পণ করার সুযোগ দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টার দিকে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেটের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় কিছু লোকজন। তবে তাঁরা সেখানে গিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশের ফটক বন্ধ দেখতে পান। ফটকের সামনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের নিরাপত্তাবলয় ছিল।

ছাত্রসংগঠন দুটির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে তাঁরা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শহীদ মিনারে গেলে সেখানে থাকা পুলিশ তাঁদের জানায়, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা রয়েছে সূর্যোদয়ের আগে কেউ ফুল দিতে পারবেন না। এ সময় তাঁরা এ-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা দেখতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।

পুলিশ সদস্যদের এমন বাধার মুখে সংগঠন দুটির নেতা-কর্মী এবং উপস্থিত জনতা প্রতিবাদে সোচ্চার হন। শহীদ মিনারের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে তাঁরা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁরা ‘এই রাষ্ট্রের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই শহীদ মিনারের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই পুলিশের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘জবাব চাই জবাব দে, নইলে তালা খুলে দে’-সহ নানা স্লোগান দেন।

একপর্যায়ে পুলিশ ফটকের তালা খুলে দেয়। এরপর উপস্থিত ছাত্র-জনতাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ছাত্রসংগঠন দুটির নেতা-কর্মীরা নগরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে তাঁরা স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনার তালাবদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদ জানান।

পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে রাতে ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি ঘটনাটিকে ‘শহীদ মিনারে আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপ’ উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘উপস্থিত ছাত্র-জনতা শহীদ মিনারে এই ঘৃণ্য আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে পুলিশ প্রশাসন একপর্যায়ে তালা খুলে দিতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা দিবসে যে পোশাক ফুল দিতে বাধা দেয়, সেই পোশাককে জনগণের মুখোমুখি হতেই হবে।’

এ বিষয়ে জানতে আজ বুধবার সকাল সাতটার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুধু এতটুকুই বলব, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্পস্তবক অর্পণের রাষ্ট্রীয় যে রীতি আছে, সবাই যেন সেটা শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুসরণ করেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ধ নত স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

জ্বালানির দাম বাড়ল ৯ শতাংশের বেশি

ইরানের বিভিন্ন স্থাপনায় আজ শুক্রবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। এতে জ্বালানির তেলের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এমন আশঙ্কায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে ৯ শতাংশেরও বেশি, যা গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। খবর বিবিসি, রয়টার্সের

অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারস ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ মার্কিন ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৮ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়, যা গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এছাড়া মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬ দশমিক ৪৩ ডলার বা ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৭৪ দশমিক ৪৭ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৭ দশমিক ৬২ ডলারে উঠেছিল, যা ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সুপারমার্কেটে খাবারের দাম, গাড়িতে তেল ভরার খরচ, পরিবহন ব্যয়সহ সবকিছুর দাম বাড়বে।

হরমুজ প্রণালি বিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ। বিশ্বের মোট জ্বালানির প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়েই সরবরাহ হয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস উৎপাদক দেশগুলো এই পথ দিয়েই তাদের জ্বালানি বিশ্ববাজারে পাঠায়। উত্তরে ইরান, দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঘেরা হরমুজ প্রণালি উপসাগরীয় অঞ্চলকে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমএসটি মারকুইয়ের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশ্লেষক সল কাভোনিক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান যদি আঞ্চলিক জ্বালানি তেল পরিকাঠামোতে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। 

তিনি আরও জানান, চরম পরিস্থিতিতে ইরান অবকাঠামোতে হামলা বা হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলে বাধা দিলে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, এই হামলা ইসরায়েলের ‘বর্বর স্বভাবের প্রমাণ’। ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল নিজেই নিজের জন্য একটি করুণ পরিণতির পথ তৈরি করেছে, যার ফলাফল তারা নিশ্চিতভাবেই ভোগ করবে।’ ইসরায়েলকে এ হামলার জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে।

এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলা একতরফা পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেন, এতে ওয়াশিংটনের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তবে তেহরানকে সতর্ক করে তিনি বলেন, তারা (তেহরান) যেন মার্কিন স্বার্থ বা ব্যক্তিদের লক্ষ্য না করে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফিলিপ নভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সচদেবা বলেন, ইরান পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে শুধু তেলের সরবরাহ বিঘ্ন ঘটাবে না, আশপাশের অন্যান্য তেল উৎপাদকদের দেশগুলোতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।

আজ শুক্রবার ইরানের স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে তেহরানে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এর কিছু সময় পর, তেহরানে তখন ভোর ৫টা ৩০ মিনিট এবং ইসরায়েলের অন্যতম প্রধান শহর তেল আবিবে ভোর ৫টা, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হবিগঞ্জে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে চালক গ্রেপ্তার
  • এটিএম বুথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, নিরাপত্তাকর্মী পলাতক
  • গাইবান্ধায় যাত্রীদের বিরোধ মেটাতে গিয়ে মারধরের শিকার স্টেশনমাস্টার
  • মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আটক
  • জ্বালানির দাম বাড়ল ৯ শতাংশের বেশি