সিলেটে স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে বাধা, প্রতিবাদের পর ফটক খুলল পুলিশ
Published: 26th, March 2025 GMT
মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন দুটি ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ একপর্যায়ে তাঁদের পুষ্পস্তবক অর্পণ করার সুযোগ দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টার দিকে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে যান বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেটের নেতা-কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় কিছু লোকজন। তবে তাঁরা সেখানে গিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশের ফটক বন্ধ দেখতে পান। ফটকের সামনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের নিরাপত্তাবলয় ছিল।
ছাত্রসংগঠন দুটির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে তাঁরা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে শহীদ মিনারে গেলে সেখানে থাকা পুলিশ তাঁদের জানায়, রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা রয়েছে সূর্যোদয়ের আগে কেউ ফুল দিতে পারবেন না। এ সময় তাঁরা এ-সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা দেখতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।
পুলিশ সদস্যদের এমন বাধার মুখে সংগঠন দুটির নেতা-কর্মী এবং উপস্থিত জনতা প্রতিবাদে সোচ্চার হন। শহীদ মিনারের ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে তাঁরা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদী স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তাঁরা ‘এই রাষ্ট্রের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই শহীদ মিনারের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘এই পুলিশের মালিক কারা, কৃষক শ্রমিক সর্বহারা’, ‘জবাব চাই জবাব দে, নইলে তালা খুলে দে’-সহ নানা স্লোগান দেন।
একপর্যায়ে পুলিশ ফটকের তালা খুলে দেয়। এরপর উপস্থিত ছাত্র-জনতাসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ছাত্রসংগঠন দুটির নেতা-কর্মীরা নগরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে তাঁরা স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনার তালাবদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদ জানান।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে রাতে ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদের সভাপতি মনীষা ওয়াহিদ ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি ঘটনাটিকে ‘শহীদ মিনারে আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপ’ উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘উপস্থিত ছাত্র-জনতা শহীদ মিনারে এই ঘৃণ্য আমলাতান্ত্রিক সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে পুলিশ প্রশাসন একপর্যায়ে তালা খুলে দিতে বাধ্য হয়। স্বাধীনতা দিবসে যে পোশাক ফুল দিতে বাধা দেয়, সেই পোশাককে জনগণের মুখোমুখি হতেই হবে।’
এ বিষয়ে জানতে আজ বুধবার সকাল সাতটার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুধু এতটুকুই বলব, সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুষ্পস্তবক অর্পণের রাষ্ট্রীয় যে রীতি আছে, সবাই যেন সেটা শ্রদ্ধার সঙ্গে অনুসরণ করেন।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।
ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।