গাজীপুরে দুই মহাসড়কে যাত্রীর চাপ বেড়েছে, তবে যানজট নেই
Published: 26th, March 2025 GMT
ঈদ উদ্যাপন করতে শহর ছেড়ে গ্রামে যেতে শুরু করেছেন লোকজন। এতে আজ বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরের দুই মহাসড়কে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখী মানুষ।
শিল্প–অধ্যুষিত গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫৪টি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন লাখ লাখ কর্মী। ইতিমধ্যে অনেক কলকারখানা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। যানজট থেকে রেহাই পেতে ঘরমুখী মানুষেরা আগেভাগেই ঈদযাত্রা শুরু করেছেন। তবে বরাবরের মতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।
রাজধানীর প্রবেশমুখ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় যাত্রীরা সকাল থেকে ভিড় করছেন। অনেকেই কাঙ্ক্ষিত গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে আছেন। তবে কোথাও কোনো যানজট পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে জেলা, মহানগর ও ট্রাফিক বিভাগ সমন্বিতভাবে কাজ করছেন।
পরিবহনমালিক ও শিল্পকারখানা সূত্র জানা গেছে, অল্প কিছু কারখানায় ছুটি হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে পর্যায়ক্রমে শিল্পকারখানাগুলোয় ছুটি হবে। এরপর কিছু কারখানা শুক্রবার এবং বাদবাকি কারখানা ছুটি হবে শনিবার। মূলত বৃহস্পতিবার থেকেই দুই মহাসড়কে যাত্রীদের চাপ কয়েক গুণ বাড়বে। অধিকাংশ কারখানা ছুটি হয় একসঙ্গে। তখন হাজার হাজার ঘরমুখী মানুষ মহাসড়কে নেমে আসবে। ফলে সড়কে যাত্রীর চাপের পাশাপাশি যানবাহনের সংকট ও যানজটের শঙ্কা করছেন পরিবহনসংশ্লিষ্ট ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত চন্দ্রা ত্রিমোড় গিয়ে দেখা যায়, আগের থেকে যাত্রীর চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের হাতেই একাধিক ব্যাগ, ঈদের শপিং ব্যাগ। কারও কারও মাথায় বস্তা। লম্বা ছুটি পাওয়ায় পরিবার-পরিজনকে অনেকে আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সাধারণ সময়ে পরিবহনের ভাড়ার থেকে কিছুটা বেশি ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়। লোকজন দর–কষাকষি করে পছন্দের পরিবহনে উঠছেন।
গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে যাচ্ছিন ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘ফুড কোম্পানির মার্কেটিং কাজ করি। পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছি। আজ মহাসড়কে কোনো ভোগান্তি নেই। আশা করছি, আরামে বাড়িতে যেতে পারব।’
পাবনার সাথিয়া এলাকার রিনা খাতুন বলেন, ‘আমার হাজবেন্ডের (স্বামী) ছুটি শুক্রবার থেকে। তখন যানজট হবে। এ জন্য আজ আমি সন্তানদের নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি।’
নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন বলেন, যানজট প্রতিরোধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। আজ কিছুটা যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আগামীকাল থেকে যাত্রীর চাপ শুরু হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’