‘যুদ্ধ–পরিকল্পনা’ ফাঁস হওয়ায় চাপে ট্রাম্প প্রশাসন
Published: 27th, March 2025 GMT
ইয়েমেনের হুতিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা নিয়ে বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ ‘সিগন্যাল’–এ হওয়া আলাপের বিবরণ বুধবার প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিক। গ্রুপ চ্যাটের তথ্য ফাঁস হওয়ার এ ঘটনায় চাপে পড়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
এই বিস্তারিত বিবরণ বের হওয়ার আগেই মঙ্গলবার থেকে বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে শুনানি চলছে। ডেমোক্র্যাটদের দাবি, হুতিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা প্রকাশ হওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এতে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে।
অবশ্য বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ওই গ্রুপ চ্যাটে গোপনীয় কিছু ছিল না। বুধবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথও একই কথা বলেছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট আটলান্টিকের প্রতিবেদনকে ‘ধোঁকাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন।
কয়েক দিন ধরে ইয়েমেনে হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলার পরিকল্পনা নিয়ে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজসহ ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় আরও কিছু কর্মকর্তা সিগন্যাল অ্যাপে আলাপ করছিলেন।
এই চ্যাট গ্রুপে ভুলক্রমে দ্য আটলান্টিকের সম্পাদক সাংবাদিক জেফরি গোল্ডবার্গকেও যুক্ত করা হয়েছিল। মাইক ওয়ালৎজ ভুলবশত গোল্ডবার্গকে চ্যাট গ্রুপে যুক্ত করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুধবার আটলান্টিকে চ্যাটের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। চ্যাটে হুতিদের ওপর হামলা নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের ১৫ মার্চের আলোচনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আটলান্টিকের দাবি, চ্যাটে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামলার সময় এবং কোনো ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে, তা উল্লেখ করেছেন। হুতিদের ওপর আগে যেসব হামলা চালানো হয়েছিল, সেগুলো কতটা কার্যকর ছিল, তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
হুতি কর্মকর্তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নারী ও পাঁচ শিশুসহ ৫৩ জন নিহত হয়েছেন।
চ্যাটে একটি বার্তায় হেগসেথ লিখেছেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে। মাত্র সেন্টকমকে নিশ্চিত করলাম আমরা অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। ১৪: ১৫: নিশানায় ড্রোনের আঘাত (এই সময়েই প্রথম বোমা ফেলা হবে)।’
পরে মাইক ওয়ালৎজ এক বার্তায় হামলার মুহূর্তের গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে একটি আক্রান্ত স্থাপনার অবস্থার কথা লিখেছেন। আটলান্টিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থাপনাটি ইয়েমেনের রাজধানী সানায় অবস্থিত বলে মনে হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটলান্টিকের প্রতিবেদন প্রকাশের পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ। ওই চ্যাটে গোপনীয় কিছু ছিল না বলে আবারও জোর গলায় দাবি করেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হেগসেথ লিখেছেন, ‘আটলান্টিক কথিত “যুদ্ধ–পরিকল্পনা” প্রকাশ করেছে। এসব “পরিকল্পনায়” কোনো নামের উল্লেখ ছিল না। কোনো লক্ষ্যবস্তুর উল্লেখ ছিল না। কোনো স্থানের উল্লেখ ছিল না। কোনো ইউনিটের নাম উল্লেখ ছিল না। ছিল না হামলা চালানোর কোনো রুটের নাম। কোনো সূত্রের উল্লেখ ছিল না। কোন পদ্ধতিতে হামলা চালানো হবে সেটাও ছিল না।’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ বলেন, ‘এটা থেকে এই বিষয়ই প্রমাণিত হয় যে জেফরি গোল্ডবার্গ কখনো কোনো যুদ্ধ পরিকল্পনা বা “হামলার পরিকল্পনা” দেখেননি (যেমনটি তিনি এখন দাবি করছেন)। তিনি এটার ধারেকাছেও ছিলেন না।’
হেগসেথ আরও লিখেন, ‘আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমও যেটা সবচেয়ে ভালো পারে, সেটা করবে—(আর তা হলো) ধোঁকাবাজি ফেরি করে বেড়ানো।’
স্থানীয় সময় বুধবার ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিত সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ ‘ভুলের’ দায় নিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্টের ‘জাতীয় নিরাপত্তা দলের ওপর আস্থা রয়েছে’ বলেও জানান তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উল ল খ ছ ল ন আটল ন ট ক র হ ত দ র ওপর কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় অপু গ্রেপ্তার
রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদ্য বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর ওয়ারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে গুলশানে ৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে ওয়ারী থেকে ডিবির ওয়ারী বিভাগের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেছেন। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৭ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র রাজধানীর গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন জানে আলম অপু ওরফে কাজী গৌরব অপু এবং আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। এ সময় শাম্মী আহমেদ দেশের বাইরে থাকায় তার স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে জিম্মি করে ভয় দেখানো হয়।
চক্রটি বাসায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করে প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা আদায় করে নেয়। এর মধ্যে ৫ লাখ টাকা ভাগ পান অপু এবং বাকি ৫ লাখ পান রিয়াদ। চাঁদার দ্বিতীয় কিস্তি আনতে ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আবারও গুলশানের ওই বাসায় গেলে চক্রের পাঁচ সদস্যকে আটক করে পুলিশ। তারা হলেন- আব্দুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং আমিনুল ইসলাম। তাদের সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বিভিন্ন পদে ছিলেন। গ্রেপ্তারের পরপরই তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে, চাঁদাবাজির এ ঘটনায় গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এজাহারনামীয় ছয় আসামি ও অজ্ঞাত ১০-১২ জন সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৭ জুলাই সকালে আমার গুলশান-২ নম্বরের বাসায় আসে। যার মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু আমাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করে। তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাকে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দেখায়। একপর্যায়ে আমি বাধ্য হয়ে ১০ লাখ টাকা দিই। পরে ১৯ জুলাই রাতে রিয়াদ ও অপু আমার বাসায় এসে ধাক্কাধাক্কি করে, যা আমি পুলিশকে ফোন করে জানাই। এ সময় অভিযুক্তরা সেখান থেকে সটকে পড়ে।
এজাহারে আরো বলা হয়েছে, ২৬ জুলাই শনিবার বিকেলে রিয়াদের নেতৃত্বে আসামিরা আমার বাসার সামনে এসে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমি বাসায় না থাকায় বাসার দারোয়ান আমাকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এ সময় আসামিরা তাদের দাবিকৃত আরো ৪০ লাখ টাকা না দিলে আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করানো হবে বলে হুমকি দিতে থাকে।
ঢাকা/এমআর/রফিক