ইয়েমেনের হুতিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা নিয়ে বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ ‘সিগন্যাল’–এ হওয়া আলাপের বিবরণ বুধবার প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য আটলান্টিক। গ্রুপ চ্যাটের তথ্য ফাঁস হওয়ার এ ঘটনায় চাপে পড়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

এই বিস্তারিত বিবরণ বের হওয়ার আগেই মঙ্গলবার থেকে বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটিতে শুনানি চলছে। ডেমোক্র্যাটদের দাবি, হুতিদের ওপর হামলার পরিকল্পনা প্রকাশ হওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এতে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকিতে পড়েছে।

অবশ্য বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার তিনি বলেছেন, ওই গ্রুপ চ্যাটে গোপনীয় কিছু ছিল না। বুধবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথও একই কথা বলেছেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলাইন লেভিট আটলান্টিকের প্রতিবেদনকে ‘ধোঁকাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন।

কয়েক দিন ধরে ইয়েমেনে হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকার বিভিন্ন স্থাপনায় ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলার পরিকল্পনা নিয়ে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজসহ ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষস্থানীয় আরও কিছু কর্মকর্তা সিগন্যাল অ্যাপে আলাপ করছিলেন।

এই চ্যাট গ্রুপে ভুলক্রমে দ্য আটলান্টিকের সম্পাদক সাংবাদিক জেফরি গোল্ডবার্গকেও যুক্ত করা হয়েছিল। মাইক ওয়ালৎজ ভুলবশত গোল্ডবার্গকে চ্যাট গ্রুপে যুক্ত করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বুধবার আটলান্টিকে চ্যাটের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। চ্যাটে হুতিদের ওপর হামলা নিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের ১৫ মার্চের আলোচনাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আটলান্টিকের দাবি, চ্যাটে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হামলার সময় এবং কোনো ধরনের উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে, তা উল্লেখ করেছেন। হুতিদের ওপর আগে যেসব হামলা চালানো হয়েছিল, সেগুলো কতটা কার্যকর ছিল, তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

হুতি কর্মকর্তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নারী ও পাঁচ শিশুসহ ৫৩ জন নিহত হয়েছেন।

চ্যাটে একটি বার্তায় হেগসেথ লিখেছেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে। মাত্র সেন্টকমকে নিশ্চিত করলাম আমরা অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। ১৪: ১৫: নিশানায় ড্রোনের আঘাত (এই সময়েই প্রথম বোমা ফেলা হবে)।’

পরে মাইক ওয়ালৎজ এক বার্তায় হামলার মুহূর্তের গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে একটি আক্রান্ত স্থাপনার অবস্থার কথা লিখেছেন। আটলান্টিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থাপনাটি ইয়েমেনের রাজধানী সানায় অবস্থিত বলে মনে হয়েছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটলান্টিকের প্রতিবেদন প্রকাশের পর পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ। ওই চ্যাটে গোপনীয় কিছু ছিল না বলে আবারও জোর গলায় দাবি করেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে হেগসেথ লিখেছেন, ‘আটলান্টিক কথিত “যুদ্ধ–পরিকল্পনা” প্রকাশ করেছে। এসব “পরিকল্পনায়” কোনো নামের উল্লেখ ছিল না। কোনো লক্ষ্যবস্তুর উল্লেখ ছিল না। কোনো স্থানের উল্লেখ ছিল না। কোনো ইউনিটের নাম উল্লেখ ছিল না। ছিল না হামলা চালানোর কোনো রুটের নাম। কোনো সূত্রের উল্লেখ ছিল না। কোন পদ্ধতিতে হামলা চালানো হবে সেটাও ছিল না।’

প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ বলেন, ‘এটা থেকে এই বিষয়ই প্রমাণিত হয় যে জেফরি গোল্ডবার্গ কখনো কোনো যুদ্ধ পরিকল্পনা বা “হামলার পরিকল্পনা” দেখেননি (যেমনটি তিনি এখন দাবি করছেন)। তিনি এটার ধারেকাছেও ছিলেন না।’

হেগসেথ আরও লিখেন, ‘আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব। একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমও যেটা সবচেয়ে ভালো পারে, সেটা করবে—(আর তা হলো) ধোঁকাবাজি ফেরি করে বেড়ানো।’

স্থানীয় সময় বুধবার ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিত সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ ‘ভুলের’ দায় নিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্টের ‘জাতীয় নিরাপত্তা দলের ওপর আস্থা রয়েছে’ বলেও জানান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র উল ল খ ছ ল ন আটল ন ট ক র হ ত দ র ওপর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ