রোনালদো নাজেরিওর এক্স হ্যান্ডেলে শেষ বার্তাটা দু’দিন আগের বাসি, নেইমারকে নিয়ে। এর পর আর কোনো লেখালেখি নেই তাঁর। আর্জেন্টিনার কাছে ৪-১ গোলে আত্মসমপর্ণের কি কিছুই বলার নেই রোনালেদার? নাকি তাদের সময়ের সেই সুন্দর ফুটবলের ‘জাগো বনিতো’ কিংবা সৃজনশীলতার সেই ‘সাম্বা ফুটবল’কে বর্তমান প্রজন্মের কাছে মৃত হতে দেখে শোক পালনে তিনি?
কারণ যাই হোক, রাফিনিয়া-ভিনিদের এই হলুদ ব্রাজিলকে নিয়ে আর যাই হোক কাব্য লেখা যাচ্ছে না। এই প্রথম বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের কোনো ম্যাচে ৪ গোল হজম করতে হলো, তাও আবার ঘোল খেলো কিনা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার কাছে! বুয়েন্স আয়ার্সে আপন গ্যালারিকে সাক্ষী রেখে আলভারেজরা যখন কলার উঁচিয়ে লাতিন অঞ্চল থেকে প্রথম দল হিসেবে ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিতের উদযাপন করল, সে সময় ভিনিরা মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ার পথ খুঁজল।
‘আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, ছয় বছর ধরে আমরাই ফুটবলবিশ্বের সেরা।’ ম্যাচ শেষে ব্রডকাস্টার ক্যামেরার সামনে ডি পলের এই চিৎকার করে বলা কথাগুলোর মধ্যেই সত্যটা লুকিয়ে। মেসির আর্জেন্টিনা কিংবা মেসিকে ছাড়া আর্জেন্টিনা– গত ছয় বছরে ব্রাজিল তাদের কখনোই হারাতে পারেনি। ও গ্লোবোর মতো ব্রাজিলের দৈনিকের প্রতিবেদনে লজ্জা ঢাকা হয়েছে এই বলে, সাম্বা মুছে আর্জেন্টিনা তাদের জনপ্রিয় ‘ট্যাঙ্গো ডান্স’ দেখিয়ে দিল। ‘ঐতিহাসিক লজ্জা’– শিরোনাম করেছে ব্রাজিলের দৈনিক ও ডিয়া। এমন হারে কোনোভাবেই মুখ লুকাতে পারছে না তারা।
মঙ্গলবার রাতে বুয়েন্স আয়ার্সের মনুমেন্তাল স্টেডিয়াম প্রায় ৮০ হাজার দর্শক নিয়ে প্রস্তুত ছিল পার্টি নাইটের জন্য। মাঠে আলভারেজরাও বুঝি তৈরি হয়েছিলেন ব্রাজিলকে নিয়ে ‘ছেলেখেলার’। ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডেই আর্জেন্টিনার স্পাইডারখ্যাত আলভারেজ ব্রাজিলের জালে বল পাঠিয়ে দেন। আহত ব্রাজিলের পোস্টে ১২ মিনিটে অ্যাঞ্জো ফার্নান্দেজের গোল। ২৬ মিনিটে ব্রাজিলের হয়ে কুনিয়া একটি গোল শোধ করেন, তবে সেটাও ছিল আর্জেন্টিনার রোমেরোর ভুলে। এর পর ম্যাক অ্যালিস্টারের দৃষ্টিনন্দন ভলি। ফার্নান্দেজের মাপা পাস কাজে লাগিয়ে ব্রাজিলের জালে তৃতীয় গোল ম্যাক অ্যালিস্টারের। প্রথম হাফেই তিন গোল খেয়ে বসা ব্রাজিল সমর্থকদের মনে তখন ১১ বছর আগের সেই ‘সেভেন আপ’ ম্যাচের দুঃস্মৃতি।
সেই সময় বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল ম্যাচে জার্মানির কাছে প্রথম অর্ধে ৩ গোলই খেয়েছিল ব্রাজিল, পরে যা ৭-১-এর লজ্জায় ডুবিয়েছিল সেলেকাওদের। তবে এদিন আর তেমন কিছু হয়নি। ৭১ মিনিটে বদল নামা জিওলিয়ানো সিমিওনির গোল। জিওলিয়ানোর ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম গোল। ডিয়াগো সিমিওনির ছেলে– এই পরিচয়ের বাইরে নিজের স্বকীয়তা প্রমাণ দিচ্ছেন জিওলিয়ানো। এদিন অবশ্য আরও দুটি গোল হলেও হতে পারত, যদি ৯১ মিনিটে ফার্নান্দেজ আর ৯৩ মিনিটে ডি পল গোলের সুযোগ মিস না করতেন।
ব্রাজিলকে নিয়ে স্বাগতিকরা ঠিক কীভাবে ‘ছেলেখেলা’ করেছে কিছু পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট। আর্জেন্টিনা যেখানে গোলমুখে ৭টি শট নিয়েছে, সেখানে ব্রাজিলের মাত্র একটি। বল পজিশনেও তারা ৫৬-৪৪ শতাংশে এগিয়ে। আলভারেজরা যেখানে ৬টি কর্নার নিয়েছেন, সেখানে ব্রাজিল কিনা শূন্য! আসলে এদিন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি যে ৪-১-৪-১ ফরমেশনে মাঠ সাজিয়েছিলেন, তাতেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে ভিনিরা। কেননা, আদতে আর্জেন্টাইনরা খেলেছেন ৪-৬ ফরমেশনে। মাঝ মাঠের ছয় খেলোয়াড় এতটাই ফ্লেক্সিবল ছিলেন, তারা যে কোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের অবস্থান বদলে গোলমুখে শট নিয়েছেন। যাতে করে তাদের কাউকেই নির্দিষ্ট করে মার্ক করতে পারেননি ব্রাজিলের ডিফেন্ডাররা।
তবে যা হয়েছে তাতেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে পারেন আলভারেজ। ‘আমরা মাটিতে পা রেখেই নিজেদের কাজটা করেছি। দারুণ একটি ম্যাচ খেললাম। তাদের দারুণ প্রদর্শনী দেখিয়ে দিলাম। ৪-১ ব্যবধানের জয়– এটা ঐতিহাসিক ফল। আমরা দারুণ গর্বিত। সমর্থকরাও বোধ হয় এমন ম্যাচ দেখে তাদের পয়সা উশুল করতে পেরেছন।’
শুধু কি পয়সা উশুল, দু’দলের খেলোয়াড়দের ঠোকাঠুকি আর কথার লড়াইয়ের বাড়তি যে নাটক দেখেছে তারা, তাতেও কম উদ্বেলিত হননি। ভিনির সামনে এসে তিন আঙুল দেখিয়ে ট্যাগলেফিকোর–আর্জেন্টিনার এক বিশ্বকাপ আর দুটি কোপা চ্যাম্পিয়নের খোঁচা দেওয়া, তার পাল্টা হিসেবে ভিনির দুই আঙুলে দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার মধ্যে উত্তেজনা ঠাসা ছিল।
ম্যাচের পর রাফিনিয়ার গালে পারদেসের আলতো ছুঁয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার মধ্যেও অপমানের ছাপ ছিল। প্রতিপক্ষকে তাচ্ছিল্যের ছাপ ছিল এমিলিয়ানো মার্টিনেজের বল নিয়ে ডিফেন্ডারদের সামনেই ট্রিকস দেখিয়ে দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার মধ্যেও। তবে এসব অপমান হজম করেই ব্রাজিল কোচ দরিভাল জুনিয়র স্বীকার করে নিয়েছেন। ‘আমরা পারিনি, ব্যর্থ হয়েছি। আর্জেন্টিনা উন্নতর ফুটবল খেলেছে। তারা এই মুহূর্তে উড়ছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র জ ল আর জ ন ট ন আর জ ন ট ন র ব শ বক প আলভ র জ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস