৩ মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এত বাড়ার কারণ কী
Published: 27th, March 2025 GMT
চলতি বছরে মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অতীতে এই সময়ে আর কখনো হয়নি। রাজধানীর চেয়ে দেশের অন্যত্র ডেঙ্গুর রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণ কমাতে সরকারি তৎপরতা তেমন নেই। ডেঙ্গুতে এত দিন ধরে যে ধরন বেশি সক্রিয় ছিল, তার পরিবর্তে নতুন একটি ধরনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এতে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা জটিল হওয়ার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে চিকুনগুনিয়া নতুন ভীতি হিসেবে এসেছে। এ বছর এ রোগের সংক্রমণও বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মো.
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল (২৬ মার্চ) পর্যন্ত ছিল ১ হাজার ৮৪৯ জন। দেশে ডেঙ্গুর নতুন করে প্রাদুর্ভাব হয় ২০০০ সালে। এর পর থেকে প্রতিবছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে। দেশে ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬ জন। এ সময় ৮৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের। অর্থাৎ ২২ বছরে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছিল, তার দ্বিগুণ মৃত্যু হয় ২০২৩ সালে। ওই বছর সংক্রমণও অনেক বেশি ছিল আগের ২২ বছরের তুলনায়। আর সেই ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮২৫ জন। পরের বছরের (২০২৪) জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত রোগী ছিল ১ হাজার ৬৪৫ জন।
এবারের তিন মাসে সংখ্যার এই আধিক্য এটা নিশ্চিত করে না বা ইঙ্গিতও করে না যে ডেঙ্গু অনেক বাড়তে পারে। কিন্তু এটা একটা সতর্কবার্তা বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কয়েকটি কারণেই মশাবাহিত ডেঙ্গুসহ নানা রোগ এ বছর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বেশি আতঙ্কের। এ বছর এখন পর্যন্ত যত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন, তার মাত্র ৩১ শতাংশ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। বাকিরা ঢাকার বাইরের। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে বরিশালে।শঙ্কার কয়েকটি দিক
ডেঙ্গু সাধারণত বর্ষাকালে বেশি হয়। বাংলাদেশেও বর্ষায় প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। এরপর অক্টোবর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। কিন্তু ২০২২ সালে দেখা গেছে, ওই বছরের নভেম্বর মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে। আবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণও হয় নভেম্বরে। শীতকালে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসে। এবার সেই শীত কিন্তু জেঁকে নামেনি। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এবারের শীত এডিস মশার অনুকূলে ছিল অনেকটাই। কিন্তু মশার বিস্তার রোধে যথাযথ উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার অগোছালো অবস্থায় আছে। জরুরি এই জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি উপেক্ষিতই থাকছে।’
যদি বর্ষা দীর্ঘায়িত হয় এবং মশা বৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতা রোধ না করা যায়, তবে ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করেন ডা. মুশতাক হোসেন।
রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বেশি আতঙ্কের। এ বছর এখন পর্যন্ত যত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন, তার মাত্র ৩১ শতাংশ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। বাকিরা ঢাকার বাইরের। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে বরিশালে।
জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন সব্যসাচী দাস প্রথম আলোকে বলেন, নগরীর বাইরে পৌরসভাগুলোতেও সংক্রমণ বেশি। কিন্তু স্থানীয় সরকার পরিষদগুলো কতটুকু তৎপর, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।
নতুন ধরনের বিস্তার
ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন বা সেরোটাইপ আছে। সেগুলো হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪। সবচেয়ে বিস্তারের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গুর চার ধরনের মধ্যে ডেন-২ ধরনটি বেশি ছড়ায়। গত বছরও ডেন-২ ধরনটিতে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি ছিল। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে ডেন-২–এর পাশাপাশি ডেন-৪–এর সংক্রমণও দেখা গেছে বলে জানান আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেন, গত বছর নতুন সেরোটাইপের প্রাদুর্ভাব একটা শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। তবে চলতি বছরেই সেরোটাইপ-৪ যে বেশি ছড়াবে, তা না–ও হতে পারে। হয়তো ২০২৬ সালে এর বিস্তার বেশি হতে পারে। তবে এ নিয়ে সাবধানতার বিকল্প নেই।
একটি সেরোটাইপের সঙ্গে নতুন আরেকটি যোগ হলে রোগীর পরিস্থিতি সাধারণত জটিল হয়ে ওঠে। যেটি ২০২৩ সালে হয়েছিল।
চিকুনগুনিয়া নিয়ে শঙ্কা
চিকুনগুনিয়ায় দেশে বড় ধরনের সংক্রমণ হয় ২০১৭ সালে। এর পর থেকে ও রোগ প্রায় নাই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত বছর তা আবার ফিরে আসে। ডেঙ্গুর মতোই চিকুনগুনিয়া ছড়ায় এডিস মশা।
সম্প্রতি ‘চিকুনগুনিয়া’স রিটার্ন অ্যামিডস্ট ২০২৪ ডেঙ্গু সিজন: ইমপ্লিকেশনস ফর ফিউচার আউটব্রেকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, চলতি বছরের শেষে অন্তত ৫৫ রোগী পাওয়া যায়। তাঁদের সংক্রমণের মাত্রা ছিল মাঝারি থেকে উচ্চপর্যায়ের।
চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ব্যথা অনেক বেশি হয়। সঙ্গে গায়ে র্যাশ ও ডায়রিয়া থাকতে পারে।
গবেষকদের একজন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী শফিউল আলম। তিনি বলেন, ‘বাস্তবে এ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হবে। আমাদের আশঙ্কা, এ বছর ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার বাড়তে পারে। মশকনিধনে ব্যাপক কর্মসূচি না নিলে একে রোধ করা সম্ভব না।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র জনস ব স থ য র স ক রমণ ২০২৩ স ল র ব ষয়ট গত বছর অন ক ব হয় ছ ল বছর র এ বছর আশঙ ক
এছাড়াও পড়ুন:
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতি বরখাস্
বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণের অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৫ প্রকৌশলী এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের স্থপতিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্তকৃতরা হলেন: গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মনি, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল্লা আল মামুন, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন, নির্বাহী প্রকৌশলী ফারহানা আহমেদ, সহকারী প্রকৌশলী মফিজুল ইসলাম এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরের সহকারী স্থপতি শিরাজী তারিকুল ইসলাম।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় জানায়, কর্মস্থলে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকায় অসদাচরণ ও পলায়নের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত আদেশের মাধ্যমে এ সকল কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, মনিরুজ্জামান মনি টরেন্টো ইউনিভার্সিটিতে ডক্টোরাল প্রোগ্রামে অংশ নিতে ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি কাটানোর পর পরবর্তী সময়ে অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী তাকে ২১ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে বরখাস্ত করা হয়।
আবদুল্লা আল মামুন পিএইচ.ডি করতে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। এরপর থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা মোতাবেক তাকে ১৫ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
মোছাঃ রাহানুমা তাজনীন ২০২১ সালের ১ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের ৭ তারিখ পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন। ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অননুমোদিতভাবে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
ফারহানা আহমেদ ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষা ছুটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ৮ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
মফিজুল ইসলাম ২০২৩ এর ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি কাটালেও পরে ছুটি না নিয়ে অফিসে অনুপস্থিত। তাকে ২৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
শিরাজী তারিকুল ইসলামও ২০২২ সালের ১২ মে থেকে ছুটি না নিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে ২১ মে ২০২৫ তারিখে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//