চলতি বছরে মার্চের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দেশে যত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অতীতে এই সময়ে আর কখনো হয়নি। রাজধানীর চেয়ে দেশের অন্যত্র ডেঙ্গুর রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সংক্রমণ কমাতে সরকারি তৎপরতা তেমন নেই। ডেঙ্গুতে এত দিন ধরে যে ধরন বেশি সক্রিয় ছিল, তার পরিবর্তে নতুন একটি ধরনে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এতে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগীদের অবস্থা জটিল হওয়ার শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে চিকুনগুনিয়া নতুন ভীতি হিসেবে এসেছে। এ বছর এ রোগের সংক্রমণও বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক মো.

হালিমুর রশীদ বলেন, ‘রোগী বাড়ছে—এর অর্থ হলো মশা বাড়ছে। আমরা রোগীর চিকিৎসার বিষয় দেখি। মশা নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু মশা তো নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।’

এবারের শীত এডিস মশার অনুকূলে ছিল অনেকটাই। কিন্তু মশার বিস্তার রোধে যথাযথ উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার অগোছালো অবস্থায় আছে। জরুরি এই জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি উপেক্ষিতই থাকছে।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল (২৬ মার্চ) পর্যন্ত ছিল ১ হাজার ৮৪৯ জন। দেশে ডেঙ্গুর নতুন করে প্রাদুর্ভাব হয় ২০০০ সালে। এর পর থেকে প্রতিবছর ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে। দেশে ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২ লাখ ৪৪ হাজার ২৪৬ জন। এ সময় ৮৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের। অর্থাৎ ২২ বছরে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছিল, তার দ্বিগুণ মৃত্যু হয় ২০২৩ সালে। ওই বছর সংক্রমণও অনেক বেশি ছিল আগের ২২ বছরের তুলনায়। আর সেই ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮২৫ জন। পরের বছরের (২০২৪) জানুয়ারি থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত রোগী ছিল ১ হাজার ৬৪৫ জন।

এবারের তিন মাসে সংখ্যার এই আধিক্য এটা নিশ্চিত করে না বা ইঙ্গিতও করে না যে ডেঙ্গু অনেক বাড়তে পারে। কিন্তু এটা একটা সতর্কবার্তা বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কয়েকটি কারণেই মশাবাহিত ডেঙ্গুসহ নানা রোগ এ বছর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।

রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বেশি আতঙ্কের। এ বছর এখন পর্যন্ত যত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন, তার মাত্র ৩১ শতাংশ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। বাকিরা ঢাকার বাইরের। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে বরিশালে।

শঙ্কার কয়েকটি দিক

ডেঙ্গু সাধারণত বর্ষাকালে বেশি হয়। বাংলাদেশেও বর্ষায় প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। এরপর অক্টোবর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। কিন্তু ২০২২ সালে দেখা গেছে, ওই বছরের নভেম্বর মাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় ডেঙ্গুতে। আবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণও হয় নভেম্বরে। শীতকালে সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসে। এবার সেই শীত কিন্তু জেঁকে নামেনি। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। আর ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘এবারের শীত এডিস মশার অনুকূলে ছিল অনেকটাই। কিন্তু মশার বিস্তার রোধে যথাযথ উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার অগোছালো অবস্থায় আছে। জরুরি এই জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি উপেক্ষিতই থাকছে।’

যদি বর্ষা দীর্ঘায়িত হয় এবং মশা বৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতা রোধ না করা যায়, তবে ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা করেন ডা. মুশতাক হোসেন।

রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বেশি আতঙ্কের। এ বছর এখন পর্যন্ত যত ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন, তার মাত্র ৩১ শতাংশ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। বাকিরা ঢাকার বাইরের। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে বরিশালে।

জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন সব্যসাচী দাস প্রথম আলোকে বলেন, নগরীর বাইরে পৌরসভাগুলোতেও সংক্রমণ বেশি। কিন্তু স্থানীয় সরকার পরিষদগুলো কতটুকু তৎপর, সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ।

নতুন ধরনের বিস্তার

ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরন বা সেরোটাইপ আছে। সেগুলো হলো ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪। সবচেয়ে বিস্তারের বছর ২০২৩ সালে ডেঙ্গুর চার ধরনের মধ্যে ডেন-২ ধরনটি বেশি ছড়ায়। গত বছরও ডেন-২ ধরনটিতে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি ছিল। কিন্তু গত বছরের শেষ দিকে ডেন-২–এর পাশাপাশি ডেন-৪–এর সংক্রমণও দেখা গেছে বলে জানান আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি বলেন, গত বছর নতুন সেরোটাইপের প্রাদুর্ভাব একটা শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। তবে চলতি বছরেই সেরোটাইপ-৪ যে বেশি ছড়াবে, তা না–ও হতে পারে। হয়তো ২০২৬ সালে এর বিস্তার বেশি হতে পারে। তবে এ নিয়ে সাবধানতার বিকল্প নেই।

একটি সেরোটাইপের সঙ্গে নতুন আরেকটি যোগ হলে রোগীর পরিস্থিতি সাধারণত জটিল হয়ে ওঠে। যেটি ২০২৩ সালে হয়েছিল।

চিকুনগুনিয়া নিয়ে শঙ্কা

চিকুনগুনিয়ায় দেশে বড় ধরনের সংক্রমণ হয় ২০১৭ সালে। এর পর থেকে ও রোগ প্রায় নাই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত বছর তা আবার ফিরে আসে। ডেঙ্গুর মতোই চিকুনগুনিয়া ছড়ায় এডিস মশা।

সম্প্রতি ‘চিকুনগুনিয়া’স রিটার্ন অ্যামিডস্ট ২০২৪ ডেঙ্গু সিজন: ইমপ্লিকেশনস ফর ফিউচার আউটব্রেকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, চলতি বছরের শেষে অন্তত ৫৫ রোগী পাওয়া যায়। তাঁদের সংক্রমণের মাত্রা ছিল মাঝারি থেকে উচ্চপর্যায়ের।

চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের ব্যথা অনেক বেশি হয়। সঙ্গে গায়ে র‌্যাশ ও ডায়রিয়া থাকতে পারে।

গবেষকদের একজন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী শফিউল আলম। তিনি বলেন, ‘বাস্তবে এ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হবে। আমাদের আশঙ্কা, এ বছর ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার বাড়তে পারে। মশকনিধনে ব্যাপক কর্মসূচি না নিলে একে রোধ করা সম্ভব না।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র জনস ব স থ য র স ক রমণ ২০২৩ স ল র ব ষয়ট গত বছর অন ক ব হয় ছ ল বছর র এ বছর আশঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

৭৮০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক

বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার রেকর্ড পরিচালন মুনাফা করলেও বছর শেষে ব্যাংকটির নিট মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়নি। গত বছর শেষে পূবালী ব্যাংকের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে ব্যাংকটি নিট মুনাফা করেছিল ৬৯৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা ৮২ কোটি টাকা বা প্রায় ১২ শতাংশ বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।

আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি গত বছরের জন্য লভ্যাংশও অনুমোদন করা হয় গতকালের এই সভায়। গত বছরের জন্য ব্যাংকটি ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যার মধ্যে সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ ও সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ। ২০২৩ সালেও ব্যাংকটি একই হারে শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ দিয়েছিল।

ব্যাংকসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংক ঋণের সুদ থেকে ১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা আয় করেছে। বিনিয়োগ, কমিশন, মুদ্রা বিনিময় ও ব্রোকারেজ থেকে আয় করেছে ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। তাতে সব মিলিয়ে আয় হয় ৪ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। বিদায়ী বছরে বেতন-ভাতাসহ নানা খাতে খরচ হয় ১ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। ফলে পরিচালন মুনাফা হয় ২ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। ব্যাংকটি বিদায়ী বছরে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে ৯৬১ কোটি টাকা। এরপর কর পরিশোধের পর নিট বা প্রকৃত মুনাফা হয় ৭৮০ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবিষ্যতের কথা বিবেচনায় আমরা চাহিদার বেশি নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক এই পরামর্শ দিয়েছে। খেলাপির তুলনায় বেশি সঞ্চিতি রাখার মাধ্যমে ব্যাংকটির ভিত্তি মজবুত করা হয়েছে।

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে পূবালী ব্যাংকের আমানত বেড়ে হয়েছে ৭৪ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। আর খেলাপি ঋণের হার কমে নেমে এসেছে ২ দশমিক ৬৭ শতাংশে। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন এখন ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আর কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজার ৬৭৮। সারা দেশে ৫০৮টি শাখা ও ২২৭টি উপশাখা রয়েছে ব্যাংকটির। বর্তমানে বেসরকারি খাতে সবচেয়ে বেশি নেটওয়ার্ক পূবালী ব্যাংকের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২০২৬ এশিয়ান গেমসেও থাকছে ক্রিকেট
  • শক্তিশালী ব্যালান্স শিট প্রবৃদ্ধিসহ ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য সাফল্য
  • ২০২৪ সালে রেকর্ড হারে বেড়েছে বিশ্বের সামরিক ব্যয়: সিপ্রির প্রতিবেদন
  • ২০২৬ এশিয়ান গেমসেও থাকছে ক্রিকেট
  • কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের পদাবনতি, দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার
  • ৭৮০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক
  • দুই বছর ধরে ঝুলছে যুবলীগ নেতা জামাল হত্যা মামলার তদন্ত
  • নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের জবি শাখার ৩৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
  • সড়কের কাজ ফেলে রেখে উধাও ঠিকাদার, দুর্ভোগে অর্ধলাখ বাসিন্দা
  • তালেবান সরকার কেন ভারতের দিকে ঝুঁকছে