ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানী ঢাকাকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা পর্যায়ে নিরাপত্তার বিশেষ বার্তা পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বেশকিছু সুপারিশ করেছে।

সম্পতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ঈদ নিরাপদ উদযাপনের জন্য নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঈদে ভ্রমণ করা, ভ্রমণে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে বিবেচনায় রাখা, চালকদের দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে তাগিদ না দেওয়া, ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী হয়ে ছাদে  ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।রাস্তা পারাপারের সময় জেব্রা ক্রসিং অথবা ওভার ব্রিজ ব্যবহার করা, যেখানে জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভার ব্রিজ নেই সেখানে যানবাহনের গতি দেখে নিরাপদে রাস্তা পার হওয়া, প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।

বাস মালিকদের প্রতি অপেশাদার, অদক্ষ ক্লান্ত অসুস্থ চালককে যাত্রীবাহী বাস বা গাড়ি না চালাতে বলা হয়েছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের না করা, চালক যাতে নিয়ম মেনে গাড়ি চালায়, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং না করে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালাতে হবে।

আরো পড়ুন:

শপিংমলগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: র‌্যাব

রাজশাহীতে ভগ্নিপতিকে হত্যায় সম্বন্ধি গ্রেপ্তার

মালিকপক্ষকে পুলিশ জানিয়েছে, লঞ্চ স্পিডবোর্ড, স্টিমারে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে না ওঠা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের নৌভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশের নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা  ছাড়াও আনসার সদস্য মাঠে রয়েছেন। তাদের নিরাপত্তায় সহযোগিতা করতে মাঠে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের।

এছাড়া সারা দেশে র‍্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।বিপুলসংখ্যক র‌্যাব সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, “ঈদের আগে, ঈদ ও ঈদ পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার উদ্ভব যেন না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা শুরু করেছে। পোশাক পরিহিত পুলিশের সঙ্গে গোয়েন্দারা সমন্বয় করে এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।” 

পুলিশ জানিয়েছে, ঈদের সময় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বেশি হয়। এসব প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি ঢাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বসানো হয়েছে বিপুল পরিমাণ চেকপোস্ট, নেওয়া হয়েছে টহল তৎপরতা। অলি-গলিতে টহল জোরদার করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সারা দেশের সবগুলো থানা এবং রাজধানীর ৫০ থানার অফিসার ইনচার্জদের নিয়ে ডিএমপি কমিশনার সভা করেছেন। সেখানে ঈদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি মানুষ গ্রামে গেলে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার বাসা বাড়িতে যেন কোনো ধরনের চুরি, ডাকাতির মতো ঘটনা না ঘটে সেজন্য থানা পুলিশের সঙ্গে এলাকার নিরাপত্তা প্রহরীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় এলাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যামেরা স্থাপন করা হয় সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী বলেন, “আমরা আগে থেকেই পরিকল্পিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এ কারণে এখন পর্যন্ত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যেন এ ধরনের পরিস্থিতির না হয় সেজন্য ডিএমপির প্রতিটি সদস্যকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে, প্রতিবারের মতো র‍্যাবও ঈদে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।এরই অংশ হিসেবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া র‍্যাবের টহল টিম, মোবাইল টিম দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ বিভিন্ন স্থানে টহল অব্যাহত রেখেছে।

বুধবার (২৬ মার্চ) রাতে র‌্যাবের লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, “ঈদে নিরাপত্তায় কোনো ধরনের ঝুঁকি বা শঙ্কা নেই। তারপরও সতর্ক অবস্থানে রয়েছি আমরা। মানুষ যেন ঈদ উংসব আনন্দমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করতে পারেন সেজন্য রাজধানীতে ১০০টি এবং সারা দেশে পায় সাড়ে ৩০০ টহলদল কাজ করছে।”

ঢাকা/এমআর/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সদস য ব যবস থ স জন য ধরন র ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা দেশে সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৮৮
  • জুলাইয়ে মব তৈরি করে ১৬ জনকে হত্যা, অজ্ঞাতনামা ৫১ লাশ উদ্ধার
  • শৈলকুপায় ইউপি কার্যালয়ে তালা, বিএনপি নেতাসহ আটক ৬
  • ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেয়ায় বিএনপি নেতা আটক
  • গোপালগঞ্জে এনসিপির অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল, আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে
  • ‘ভূমিকম্পে ছিন্নভিন্ন হওয়া দেশকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার’
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • কক্সবাজারে ৩৫ পুলিশ সদস্যের পোশাকে থাকবে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’
  • ২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা
  • ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন