ঈদ নিরাপত্তায় তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
Published: 27th, March 2025 GMT
ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানী ঢাকাকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানা পর্যায়ে নিরাপত্তার বিশেষ বার্তা পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ বেশকিছু সুপারিশ করেছে।
সম্পতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ঈদ নিরাপদ উদযাপনের জন্য নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঈদে ভ্রমণ করা, ভ্রমণে নিজ ও পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে বিবেচনায় রাখা, চালকদের দ্রুতগতিতে গাড়ি চালাতে তাগিদ না দেওয়া, ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী হয়ে ছাদে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।রাস্তা পারাপারের সময় জেব্রা ক্রসিং অথবা ওভার ব্রিজ ব্যবহার করা, যেখানে জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভার ব্রিজ নেই সেখানে যানবাহনের গতি দেখে নিরাপদে রাস্তা পার হওয়া, প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে।
বাস মালিকদের প্রতি অপেশাদার, অদক্ষ ক্লান্ত অসুস্থ চালককে যাত্রীবাহী বাস বা গাড়ি না চালাতে বলা হয়েছে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের না করা, চালক যাতে নিয়ম মেনে গাড়ি চালায়, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং না করে স্বাভাবিক গতিতে গাড়ি চালাতে হবে।
আরো পড়ুন:
শপিংমলগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে: র্যাব
রাজশাহীতে ভগ্নিপতিকে হত্যায় সম্বন্ধি গ্রেপ্তার
মালিকপক্ষকে পুলিশ জানিয়েছে, লঞ্চ স্পিডবোর্ড, স্টিমারে যাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে না ওঠা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের নৌভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশের নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও আনসার সদস্য মাঠে রয়েছেন। তাদের নিরাপত্তায় সহযোগিতা করতে মাঠে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের।
এছাড়া সারা দেশে র্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।বিপুলসংখ্যক র্যাব সদস্য নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, “ঈদের আগে, ঈদ ও ঈদ পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার উদ্ভব যেন না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা শুরু করেছে। পোশাক পরিহিত পুলিশের সঙ্গে গোয়েন্দারা সমন্বয় করে এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, ঈদের সময় চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি বেশি হয়। এসব প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি ঢাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বসানো হয়েছে বিপুল পরিমাণ চেকপোস্ট, নেওয়া হয়েছে টহল তৎপরতা। অলি-গলিতে টহল জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সারা দেশের সবগুলো থানা এবং রাজধানীর ৫০ থানার অফিসার ইনচার্জদের নিয়ে ডিএমপি কমিশনার সভা করেছেন। সেখানে ঈদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। পাশাপাশি মানুষ গ্রামে গেলে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকার বাসা বাড়িতে যেন কোনো ধরনের চুরি, ডাকাতির মতো ঘটনা না ঘটে সেজন্য থানা পুলিশের সঙ্গে এলাকার নিরাপত্তা প্রহরীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় এলাকায় দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যামেরা স্থাপন করা হয় সে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী বলেন, “আমরা আগে থেকেই পরিকল্পিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এ কারণে এখন পর্যন্ত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যেন এ ধরনের পরিস্থিতির না হয় সেজন্য ডিএমপির প্রতিটি সদস্যকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে, প্রতিবারের মতো র্যাবও ঈদে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।এরই অংশ হিসেবে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া র্যাবের টহল টিম, মোবাইল টিম দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসহ বিভিন্ন স্থানে টহল অব্যাহত রেখেছে।
বুধবার (২৬ মার্চ) রাতে র্যাবের লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, “ঈদে নিরাপত্তায় কোনো ধরনের ঝুঁকি বা শঙ্কা নেই। তারপরও সতর্ক অবস্থানে রয়েছি আমরা। মানুষ যেন ঈদ উংসব আনন্দমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করতে পারেন সেজন্য রাজধানীতে ১০০টি এবং সারা দেশে পায় সাড়ে ৩০০ টহলদল কাজ করছে।”
ঢাকা/এমআর/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সদস য ব যবস থ স জন য ধরন র ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস