Prothomalo:
2025-05-01@11:41:25 GMT

মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণ

Published: 28th, March 2025 GMT

অষ্টম হিজরির রমাদান মাসে মুসলিমগণ বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন। তখন এক নারী রাসুলের (সা.) কাছে এসে প্রবল উৎসাহে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি অত্যন্ত দরদের সঙ্গে জানান, ‘আল্লাহর রাসুল, আমার স্বামী প্রাণের ভয়ে ইয়েমেনের দিকে পলায়ন করেছে। আমি আপনার কাছে তাঁর নিরাপত্তা ভিক্ষা চাইছি। যদি নিশ্চিত করেন তবে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে পারি।’ রাসুল (সা.

) বললেন, ‘যাও, তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হলো।’ এই নারী হলেন উম্মু হাকিম বিনতে হারিস (রা.)। তার মা ফাতিমা বিনতে ওয়ালিদ হলেন খ্যাতিমান বীর সাহাবি খালিদ ইবনে ওয়ালিদের (রা.) বোন। (ইমাম ইবনুল আসির, উসদুল গাবা: ৭/৩০৯)

উম্মু হাকিম জন্মগ্রহণ করেন এমন এক পরিবারে যা ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে এক বিষাক্ত দুর্গ। তার পিতা হারিস ইবনে হিশাম ইসলামের কঠোর শত্রু এবং চাচা কুখ্যাত আবু জাহেল। অবশ্য পিতা হারিসও মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন।

আরও পড়ুনরমজানে মহানবীর (সা.) কোরআন অনুশীলন১৮ মার্চ ২০২৫

উম্মু হাকিম বিয়ে করেন তাঁর চাচাতো ভাই আবু জাহেলের পুত্র ইকরিমাকে। উম্মু হাকিম তার জন্যই নিরাপত্তা চান রাসুলের (সা.) কাছে।

স্বামীর প্রতি উম্মু হাকিমের ছিল সীমাহীন ভালোবাসা। তিনি জানতেন যে তাঁর স্বামীর অপরাধ অমার্জনীয়। শ্বশুর আবু জাহেলের মৃত্যুর পর তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইকরিমা মুশরিকদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। উহুদ যুদ্ধেও কাফেরদের প্রথমসারির সেনাপতি ছিলেন। এমনকি মক্কা বিজয়ের দিন মামা খালিদ বিন ওয়ালিদের (রা.) নেতৃত্বে যে দল মক্কায় প্রবেশ করেছিল তাদেরও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি কুরাইশ যুবকদের নিয়ে।

মক্কা বিজয় সম্পন্ন হলে ইকরিমা প্রাণ নিয়ে ইয়েমেনের দিকে পালিয়ে যান। রাসুল (সা.) ইকরিমার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিলে উম্মু হাকিম তাঁর এক দাসকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর খোঁজে বেরিয়ে পড়েন। ইকরিমা ততক্ষণে লোহিত সাগরে ইয়ামেনগামী নৌকায় চেপে বসেন। কিন্তু প্রবল সামুদ্রিক ঝড়ে পড়ে প্রার্থনা করেন, ‘আল্লাহ, ওয়াদা করছি, যদি আমাকে এ বিপদ থেকে মুক্তি দেন তবে নিজেকে মুহাম্মদের (সা.) সামনে পেশ করব। তিনি বড় দয়ালু ও ক্ষমাশীল।’

আরও পড়ুনমহানবীর (সা.) ইতিকাফ২০ মার্চ ২০২৫

ঝড় থেমে গেলে নৌকা কূলে এসে ভেড়ে এবং উম্মু হাকিম তাকে দেখে জানান রাসুলের (সা.) নিরাপত্তার কথা। ইকরিমা স্ত্রীর সঙ্গে রওনা হয়ে রাসুলের সামনে উপস্থিত হন। রাসুল (সা.) তাঁকে দেখে উষ্ণতা মাখানো সম্বোধনে বললেন, ‘স্বাগতম, হে ভিনদেশগামী আরোহী।’

ইকরিমা ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রাসুল (সা.)-কে অনুরোধ করেন তাঁর পূর্বের অপরাধগুলোর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে। রাসুল (সা.) তাঁর জন্য দোয়া করেন। এর পর তাঁর জীবনে এক মহাবিপ্লব সাধিত হয়। যত তীব্রতার সঙ্গে তিনি ইসলামের বিরোধিতা করেছিলেন, তার চেয়েও বেশি উদ্দীপনার সঙ্গে তিনি ইসলামের তরে নিজেকে বিলিয়ে দেন। পরবর্তী সময়ে মুসলমানরা সিরিয়া আক্রমণ করলে ইকরিমা (রা.) উম্মে হাকিম (রা.)-কে নিয়ে সিরিয়ার অভিযানে গমনকারী মুজাহিদ দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান এবং আজনাদাইনের যুদ্ধে তিনি শাহাদত বরণ করেন।

উম্মে হাকিম (রা.) বিদেশ বিভুঁইয়ে বিধবা হয়ে যান। ইদ্দত শেষ হওয়ার পর প্রথম যুগে ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবি খালিদ ইবনু সাঈদের (রা.) সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয় চারশ দিনার মোহরের বিনিময়ে মারজুস সফর নামক স্থানে। স্থানটি দামেস্কের নিকট অবস্থিত। সে সময় মুসলিম বাহিনী দামেস্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। একটি পুলের নিকট (বর্তমানে যাকে উম্মে হাকিমের পুল বলা হয়) অলিমার আয়োজন করা হলো। লোকজন খাওয়া শেষ করেনি, এমন সময় রোমকরা হামলা করে বসে। খালিদ বিন সাঈদ (রা.) বেরিয়ে যান এবং লড়াই করে শহিদ হন।

উম্মে হাকিম (রা.) স্বামীর শাহাদাতের দৃশ্য দেখছিলেন, যার সঙ্গে কেবল বিয়ে হলো। তিনি নিজেও তারপর হাতের কাছে পাওয়া তাঁবুর খুঁটি উঠিয়ে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং রোমকদেরকে সাড়াশির মতো আক্রমণ চালান। এমনকি যুদ্ধে তিনি সাতজন রোমক সৈন্যকে হত্যা করলেন। (ইমাম ইবনুল আসির, উসদুল গাবা: ৭/৩০৯)

এরপর ওমর (রা.) তাঁকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির একটি একটি কন্যা সন্তান হয় ফাতিমা বিনতে উমর। উম্মু হাকিম (রা.) চতুর্দশ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।

আরও পড়ুনরমজানে মহানবীর (সা.) দানশীলতা২১ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম গ রহণ ইসল ম র ইকর ম

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ, কী বলেছেন তিনি

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাধারণত আলোচনার কেন্দ্রে আসেন না। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছেন তিনি—শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমানা পেরিয়ে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রেও।

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর কয়েক দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন আসিম মুনির। তাঁর এসব মন্তব্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু তারা এটির একেক অংশ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে এ ভূখণ্ড।

জেনারেল মুনিরের বক্তব্য যদিও প্রত্যক্ষভাবে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, তবু তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটিকে বেশি আগ্রাসী মনোভাবের হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আসিম মুনিরকে বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকারকে ক্ষমতায় বসানো ও অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী নানা ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী এ দুই দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন তিনি।

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন জেনারেল মুনির। দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁকে প্রকাশ্যে তেমন কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে তাঁর একটি বক্তব্য ব্যাপকভাবে মনোযোগ কেড়েছে।

আরও পড়ুনভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট২৯ এপ্রিল ২০২৫

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

জেনারেল মুনিরের এ বক্তব্যের সঙ্গে পেহেলগামে হামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকতে পারে। কেননা পাকিস্তানের নেতারা অনেক বছর ধরেই এমন ধরনের আদর্শিক বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছেন।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার স্থলে ছড়িয়ে আছে চেয়ার–টেবিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ