গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় শুক্রবার রাত থেকে থেমে থেমে যানজট হয়েছে। তবে আজ শনিবার সকাল থেকে দুই মহাসড়কে স্বস্তি নিয়েই বাড়ি ফিরছে ঘরমুখী মানুষ। অতিরিক্ত যানবাহন ও মানুষের ভিড়ের কারণে চন্দ্রা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় কিছুটা জটলা আছে।

শিল্প ও হাইওয়ে পুলিশ জানায়, শিল্প–অধ্যুষিত গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫৪টি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন কয়েক লাখ কর্মী। শুক্রবার পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭৯টি কারখানা ছুটি হয়েছে। এসব কারখানা ছুটি হওয়ার পর শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। আজ দুপুরের পর জেলার সব কারখানা ছুটি ঘোষণা করার কথা আছে। সকালে কারখানা ছুটি হলে তখন জেলার ওপর দিয়ে যাওয়া দুই মহাসড়কে মানুষ আর যানবাহনের চাপ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে অর্ধেকের বেশি কারখানা ছুটি হওয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় বিকেলে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চন্দ্রা থেকে তিন দিকে প্রায় ১০-১২ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। রাতভর চলে এ অবস্থা। এতে দুর্ভোগে পড়েন উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের শত শত যাত্রী। অপর দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশে কয়েকটি পয়েন্টে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়।

শনিবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঘুরে দেখা যায়, পুলিশ কোথাও কোনো পরিবহনকে দুই থেকে তিন মিনিটের বেশি অবস্থান করতে দিচ্ছে না। ফলে পরিবহনগুলো যাত্রী নিয়ে দ্রুত অবস্থান পরিবর্তন করছে। তবে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অতিরিক্ত যাত্রী ও গাড়ি থাকায় সেখানে যানবাহনের কিছুটা ধীরগতি।

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের এনামুল হক বলেন, ‘আমাদের কারখানা গতকাল ছুটি হয়েছে। তবে ১০ দিন ছুটি থাকায় গতকাল বের হইনি। আজ সকালে বের হয়েছি, চিন্তায় ছিলাম যানজটের। তবে আল্লাহর রহমতে রাস্তা ক্লিয়ার। সবাই আনন্দে বাড়ি ফিরছে।’

আরেক যাত্রী আসমা বেগম বলেন, ‘১০ বছর ধরে গাজীপুরে কাজ করি। প্রতি ঈদেই যানজটের একটা ভয় থাকে। তবে এ বছরের মতো ফাঁকা মহাসড়ক কোনো ঈদে দেখিনি।’

এদিকে ৬৬ শতাংশ কারখানা ছুটি হওয়ায় জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনে সকাল থেকে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ট্রেন এলেই দৌড়াদৌড়ি করে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে। স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দুটি পকেট গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মূল গেটে বাঁশের বেড়া দিলেও এসব বাধা উপেক্ষা করেও পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা স্টেশনে প্রবেশ করছেন।

জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার আবুল খায়ের চৌধুরী বলেন, সাধারণ সময়েও জয়দেবপুর জংশনে যাত্রীদের চাপ থাকে। অধিকাংশ কারখানা ছুটি হওয়ায় চাপ বহুগুণ বেড়েছে।

নাওজোর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রইছ উদ্দিন বলেন, রাতে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল। তবে সকাল থেকে চাপ অনেকটাই কমে গেছে। মহাসড়কের নিরাপত্তা রক্ষায় জেলা, মেট্রোপলিটন ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন। তাঁরা যানজট নিরসনের দায়িত্ব পালন করছেন। সকাল থেকে মহাসড়কে তেমন চাপ নেই। স্বস্তি নিয়ে মানুষ বাড়ি ফিরছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য নজট র এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ