পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করতে শেষ মুহূর্তে রাজধানী ছাড়ছেন মানুষ। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলস্টেশনে। মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যাও বেড়েছে বহুগুণ। কিন্তু গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের চারটি মহাসড়কের কোথাও বড় ধরনের যানজটের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ ট্রেনই সময় মেনে ছেড়ে যাচ্ছে। লঞ্চেও সেভাবে ভোগান্তি হচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার এ পর্যন্ত ঈদযাত্রার স্বস্তির পেছনে বড় কারণ টানা ৯ দিনের ছুটি। এ ছাড়া মহাসড়ক, টার্মিনাল ও রেলস্টেশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। ঈদের আগে বড় চাপ অপেক্ষা করছে আজ রোববার। তবে ইতিমধ্যে অধিকাংশ মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাওয়ায় নতুন দুর্ভোগ হওয়ার আশঙ্কা কম বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিবহন–বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো.

হাদীউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগের তিন–চার দিনে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা থেকে ১ কোটি ২০ লাখ বা তারও বেশি মানুষ সারা দেশে যান। সাম্প্রতিক সময়ে সড়কে কিছুটা সক্ষমতা বেড়েছে। ছুটিও এবার লম্বা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। বলা যায়, শেষ পর্যন্ত এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিরই হবে।

অধ্যাপক হাদীউজ্জামান আরও বলেন, পোশাক কারখানাগুলো ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার বিষয়টি এবার কিছুটা নিশ্চিত করা গেছে। ভবিষ্যতেও এটা করতে হবে। কারণ, সব সময় তো এত লম্বা ছুটি পাওয়া যাবে না। সর্বোপরি ব্যবস্থাপনায় জোর অব্যাহত রাখতে হবে।

স্বস্তির ঈদযাত্রায় গতকাল কিছু কিছু পথের বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) টার্মিনালগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এহসানুল হকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাস টার্মিনাল পরিদর্শন করে যাত্রীদের কথা শুনেছেন।

চট্টগ্রাম ও সিলেট পথে ভোগান্তি নেই

ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যাত্রীরা বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই গতকাল নারায়ণগঞ্জ পাড়ি দিয়েছেন। ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হওয়ায় যাত্রীরা খুশি।

চার বছর বয়সী ছেলে মো. আযান ও আট বছরের মেয়ে রোখসানাকে নিয়ে ফেনীর দীঘিনালায় গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন গৃহবধূ রাজিয়া সুলতানা। অন্যান্য বছরের অভিজ্ঞতা থেকে ভোগান্তির শঙ্কা নিয়ে গতকাল দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে সাইনবোর্ডে এসেছিলেন; কিন্তু রাস্তায় বেরিয়ে কোনোরকম ভোগান্তিতে না পড়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন রাজিয়া। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের নিয়ে এত সহজে বাসে উঠতে পারব ভাবি নাই। খুব ভালো লাগছে।’

গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড ও শিমরাইল এলাকায় সরেজমিনে যাত্রীদের ভোগান্তি চোখে পড়েনি৷

ঈদ উপলক্ষে সড়কে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে যাত্রী ও পরিবহনের চাপ বেশি থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক দুটির নারায়ণগঞ্জ অংশে গতকাল যানজট দেখা যায়নি। তবে এক লেন থেকে ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলমান থাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে থেমে থেমে চলছিল যানবাহন৷ এ সময় মহাসড়ক দুটিতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে৷

বিকেলে শিমরাইল হাইওয়ে ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক আবু নাঈম সিদ্দিকী বলেন, ‘যাত্রীদের ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রা নিশ্চিত করার বিষয়টি দেশের মানুষের প্রতি আমাদের ঈদের উপহার। যাত্রীদের হাসিমুখ দেখলে পুলিশ ও আনসারদের পরিশ্রম আর গায়ে লাগে না।’

ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পথে ধীরগতি

দিনভর স্বস্তির যাত্রার পর সন্ধ্যায় ঘরমুখী মানুষ আর যানবাহনের ভিড় বেড়েছে। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকার তিন দিকে যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে। সেখানে থেমে থেমে যানবাহন চলছে।

নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি, রইছ উদ্দিন বলেন, ইফতারের সময় পুলিশ সদস্যরা ইফতার করতে যাওয়ায় যানবাহনের কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়। তখন যানবাহনের কিছুটা ধীরগতি সৃষ্টি হয়। তবে ইফতারের পর আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় কিছুটা জটলা ও যানবাহনের ধীরগতি থাকলেও যানজটের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

শিল্প ও হাইওয়ে পুলিশ জানায়, শিল্প–অধ্যুষিত গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫৪টি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন কয়েক লাখ কর্মী। শুক্রবার পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭৯টি কারখানা ছুটি হয়েছে। এসব কারখানা ছুটি হওয়ার পর শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।

ওই পথে চলাচলকারী যাত্রী আসমা বেগম বলেন, ‘১০ বছর ধরে গাজীপুরে কাজ করি। প্রতি ঈদেই যানজটের একটা ভয় থাকে। তবে এ বছরের মতো ফাঁকা মহাসড়ক কোনো ঈদে দেখিনি।’

লঞ্চে ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ছাদেও ছিল না তেমন ফাঁকা জায়গা। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঈদয ত র পর বহন ধ রগত য নজট গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল

ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।

বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।

প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সাড়ে চারটায় জামায়াত

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলন

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।

একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ