বিকেলের শেষ আলোয় শাকবাড়িয়া নদীর চরে পা রাখতেই নরম কাদায় দেবে গেল পা। নদীর লোনাপানি ছুঁয়ে কয়েক কদম এগোতেই চোখে পড়ল পানির মধ্যে জাল টেনে চরের কাদায় চুপচাপ বসে আছেন পুষ্প রানী সানা (৪৫)। পাশে অগোছালো কাদায় পা গেড়ে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর স্বামী বিন্দু সানা। দুজনে মিলে গুনছেন চিংড়ির রেণু পোনা।

কাছে গিয়ে এই প্রতিবেদক জিজ্ঞেস করেন, ‘কত পোনা পেলেন?’ পুষ্প রানী বলেন, ‘আজ কপাল ভালো ভাই, ১১৯টা পাইছি। তিন ঘণ্টা জাল টাইনে এইগুলা পাইছি।’ পাশে দাঁড়িয়ে তাঁর স্বামী যোগ করলেন, ‘লোনাপানিতে জাল টানা খুব কষ্টের কাম। আগে আমি টানতাম। শরীর খারাপ, এখন আর পারি না। তাই ওকে করতে হয়।’

রোববার বিকেলে খুলনার কয়রা উপজেলায় সুন্দরবনসংলগ্ন শাকবাড়িয়া নদীর চরে দাঁড়িয়ে গল্প হচ্ছিল পুষ্প ও বিন্দুর সঙ্গে। কথা বলতে বলতে জানা গেল, বিন্দুর হৃৎপিণ্ডে রোগ বাসা বেঁধেছে। একসময় এই নদীই ছিল তাঁদের ভরসা। নৌকা ছিল, জাল ছিল—সুন্দরবনের নদীতে দুজনে মিলে মাছ ধরতেন, পোনা তুলতেন। এখন পুষ্পকে একাই পোনা ধরার কাজ করতে হয়।

জালে ধরা পোনা থালায় তুলে আলাদা করতে করতে পুষ্প রানী দূরের চরের দিকে হাত দেখিয়ে বললেন, ‘ওইখানেই ছিল আমাদের ঘর। আইলায় সব ভাসাই নিল। এখন বেড়িবাঁধের ধারে কোনোমতে পইড়ে আছি। চার ছেলে–মেয়ে সবাই বিয়া করে আলাদা। ওরা নিজেরাই টানাটানিতে আছে, আমাদের দেখবে কেমনে? নিজের জায়গাজমিও নাই।’

পাথরখালী গ্রামের বেড়িবাঁধের ধারে ছোট্ট ঝুপড়িটুকুই এখন তাঁদের শেষ ভরসা। বিন্দু সানা হেসে বললেন, ‘গেরস্তের গরু-ছাগলও আমাদের চাইতে ভালো থাকে। গাঙে বেশি জোয়ার হলি ঘরের কোনায় পানি উঠে যায়।’

সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা নদীতে জাল টেনে চিংড়ির পোনা আহরণ করছেন নারীরা। রোববার কয়রা উপজেলার বানিয়াখালী গ্রামের কয়রা নদীর তীরে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শিয়াল মারার ফাঁদে জড়িয়ে প্রাণ গেল গৃহবধূর 

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে শিয়াল মারার ফাঁদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রূপবান বেগম (৪৫) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার দুপুর ২টার দিকে ‘সুন্দরবন প্রজেক্ট নামে একটি মুরগির খামার’ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। 

রূপবান বেগম শ্যামনগর উপজেলার রমজাননগর ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রামের জহুর আলী মোল্লার স্ত্রী। 

এদিকে শিয়াল মারার ফাঁদে জড়িয়ে গৃহবধূর মৃত্যুর খবর জানাজানি হলে প্রজেক্টের কর্মচারীরা পালিয়ে যান।

নিহত গৃহবধূর ছেলে আব্দুর সবুরের ভাষ্য, সকালে তার মা ছাগলের জন্য ঘাস কাটতে সুন্দরবন প্রজেক্টের মধ্যে গিয়েছিলেন। আগের দিন প্রজেক্টের ম্যানেজার মাকসুদ ঘাস কেটে নেওয়ার জন্য তার মাকে বলেছিলেন।

আব্দুর সবুর বলেন, ‘দুপুর গড়িয়ে গেলেও মাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। একপর্যায়ে প্রতিবেশীসহ আশপাশে বাড়িতে খুঁজতে থাকি। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে আব্দুর রহমানসহ স্থানীয় গ্রামবাসীরা প্রজেক্টের মধ্যে বিদ্যুতের তারে আটকে থাকা মায়ের মরদেহ দেখে খবর দেন।’

দুর্ঘটনার সময় প্রজেক্টে উপস্থিত থাকা মাকসুদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সুন্দরবন প্রজেক্টর মালিক নুর ইসলাম জানান, খবর পেয়ে তিনি প্রজেক্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। শিয়ালের উপদ্রব বেশি হওয়ায় রাতে প্রজেক্টের চারপাশে জিআই তার দিয়ে তৈরি ফাঁদে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রাখা হয়। ভুলবশত মাকসুদ সকালে বিদ্যুতের সংযোগ খুলে রাখেননি।

শ্যামনগর থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের নিহতের পরিবারের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করুন
  • শিয়াল মারার ফাঁদে জড়িয়ে প্রাণ গেল গৃহবধূর 
  • চুলায় পোড়ে সুন্দরবনের বাহারি ফল, থমকে যায় বনের স্বপ্ন