গরুরা কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তা দেখে মুগ্ধ ডাচ ভাষাবিদ লিওনি কর্নিপস। কিন্তু গরুর এই যোগাযোগপদ্ধতিকে কি সত্যিই ‘ভাষা’ বলা যায়?

কর্নিপস নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের মিয়ার্টেন্স ইনস্টিটিউটের সমাজভাষাবিদ। ইনস্টিটিউটের অলংকৃত প্রবেশপথ পেরোনো পণ্ডিতদের সাধারণত ডাচ ভাষা ও সংস্কৃতি অধ্যয়নে বিশেষজ্ঞ বলে বিবেচনা করা হয়।

মৃদুভাষী গবেষক কর্নিপস গত শতকের নব্বইয়ের দশকে তাঁর শিক্ষাগত জীবনে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি এখনো নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন উপভাষার মধ্যে বাক্য গঠনের ভিন্নতা নিয়ে গবেষণা করেন। পাশাপাশি প্রাণীর ভাষা নিয়েও কাজ করেন।

বছরের পর বছর ধরে কর্নিপস তাঁর গ্রীষ্মকালীন ছুটি একটি খামারে কাটিয়েছেন। শুরু থেকেই তিনি প্রতিটি গরুর ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

কর্নিপস একজন দার্শনিকের লেখা একটি প্রবন্ধ পড়েছিলেন। যেখানে দার্শনিক প্রশ্ন করেছিলেন, ভাষাবিদেরা কেন কখনো প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করেন না? এই প্রশ্ন কর্নিপসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।

কর্নিপসের মনে হয়েছিল, গরুর বুদ্ধিমত্তা ও সামাজিক অভ্যাসের বিষয়টি একজন ভাষাবিদের জন্য গবেষণার ভালো বিষয় হতে পারে।

ডাচ নাগরিক হিসেবে কর্নিপস জানতেন, পনিরের প্রতি অনুরাগী একটি জাতির (নেদারল্যান্ডস) জন্য গরু একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক। তাই তিনি গরুর ভাষাগত যোগাযোগ নিয়ে কাজের দিকে ঝোঁকেন।

শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ ধরে নিয়েছে যে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের একটি পরিমাপক। এমনকি এর জন্য একটি একাডেমিক শব্দও আছে—‘লোগোসেন্ট্রিজম’। এর অর্থ, যারা শব্দ (ভাষার ধ্বনি) ব্যবহার করে, তারা সমাজে একটি বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত অবস্থান দখল করে।

অনেক ভাষাবিদ বলেন, ‘ভাষাই আমাদের মানুষ করে তুলেছে। অন্য প্রাণীরা হয়তো ঘোঁত ঘোঁত, ঘেউ ঘেউ, কিচিরমিচির করতে পারে। কিন্তু তাদের এমন কিছু নেই, যা ভাষা হিসেবে গণ্য হয়।’

কর্নিপস এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য দুগ্ধ খামারে গরুর যোগাযোগ নিয়ে কাজ করছেন। অবশ্য প্রাণীর যোগাযোগ নিয়ে কাজ নতুন নয়। গত শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে এ ধরনের কাজ দেখা যাচ্ছে। যেমন শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে জেন গুডালের কাজ, রজার পেইনের হাম্পব্যাক তিমির রেকর্ডিং। এসব কাজের মধ্য দিয়ে দেখা যায়, মানুষ হয়তো ভাষাগতভাবে অতটা অনন্য না–ও হতে পারে, যতটা আমরা ধরে নিয়েছিলাম।

কর্নিপস বলেন, সমস্যা হলো, ভাষা সম্পর্কে মানুষের স্পষ্ট ধারণা নেই। তারা যখন ভাষা সম্পর্কে কথা বলে, তখন তারা সব সময় মুখ থেকে যা বের হয়, তার কথা বলে।

গরুর ভাষা নিয়ে বেশির ভাগ গবেষণাই শব্দের ওপর জোর দেয়। উদাহরণস্বরূপ, নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে করা একটি গবেষণায় গরুর ডাকের ওঠানামা তাদের আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। গবেষণাটি বলেছিল, এটা তাদের মঙ্গলের একটা উপায় হতে পারে।

২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় দেখা গেছে, গরুর কেবল স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরই (ডাক) থাকে না, বরং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে স্বতন্ত্র ডাকগুলো তারা বজায় রাখে।

কর্নিপস তাঁর গবেষণায় গরুর আচরণ ও শব্দের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি দেখতে চান যে তারা কীভাবে যোগাযোগ করে। কর্নিপস বলেন, ‘আমি গরুর ক্ষেত্রে লক্ষ করেছি যে তাদের শরীর হলো অন্যকে জানার একটি উপায়।’

গরুরা যখন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখন ধৈর্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যখন একটা মা গরু তার বাছুরকে ডাকে, তখন কখনো কখনো বাছুরটির সাড়া দিতে ৬০ সেকেন্ড সময় লাগে।

ডাক ও সাড়ার মাঝখানের সময়টিতে গরু নানা অঙ্গভঙ্গি করে থাকে। অস্ট্রিয়ার গবেষণায় দেখা গেছে, কানের অবস্থান ও ঘাড় প্রসারিত করা গরুর ভাষার অবিচ্ছেদ্য অংশ।

মানুষ আমাদের কান নাড়ানোর ক্ষমতাকে একটা বিনোদনের কৌশল মনে করে। কিন্তু একটি গরুর ক্ষেত্রে তা যোগাযোগের মৌলিক আচরণ বলে মনে হয়। গরুর সঙ্গে গরুর কথোপকথনের প্রথম বাক্যটি সম্ভবত কান নাড়ানো ও তাকানো।

গরুই একমাত্র প্রাণী নয়, যার জটিল যোগাযোগপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক শাব্দিক প্রতিবেশের বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক মিশেল ফোরনেট জানতে পেরেছেন, তিমি ও সিলের মতো সামুদ্রিক প্রজাতির ওপর মানুষের খেয়ালখুশি চাপিয়ে দেওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়।

ফোরনেট বলেন, প্রাণীরা মানুষের চেয়ে একেবারে আলাদাভাবে শব্দ ব্যবহার করে। তিনি বলেন, ‘প্রাণীরা কীভাবে যোগাযোগ করছে এবং কেন তারা যোগাযোগ করছে, তা বুঝতে যদি আমরা ভালোভাবে কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদের তাদের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত।’

যারা মানুষ নয়, তাদের মধ্যে তথ্য আদান–প্রদানকে বর্ণনা করার জন্য ‘ভাষা’ শব্দটি ব্যবহার করেন না ফোরনেট। তিনি বলেন, ‘প্রাণীদের ব্যবস্থা আমাদের চেয়ে কম নয়, বরং অন্য রকম। আমরা মিল খুঁজতে গিয়ে তাদের প্রতি অন্যায্য আচরণ করি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য গ য গ কর ব যবহ র র জন য কর ন প আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক ভারতে থেকে থাকলে, তাঁদের উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে।

ভারত থেকে কিছু মানুষকে বিভিন্ন জেলার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। আমাদের দেশের নাগরিক যদি ভারতে থাকেন, তাহলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠালে আমরা নেব। কিন্তু তাঁদের জঙ্গলের ভেতর ও নদীতে ফেলে যাওয়া কোনো সভ্য দেশের আচরণ হওয়া উচিত নয়।’

আজ রোববার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঈদ–পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় ও আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে মারধর করলে পুলিশকে খুব সচল বলে ভাবা হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার এমন পুলিশ চাইছে না। আমরা মানবিক পুলিশ চাচ্ছি, যারা সবার সঙ্গে ভালো আচরণ করবে। এখনকার পুলিশ হচ্ছে মানবিক পুলিশ। তারা এখন ভালো ব্যবহার করে দেখেই সাধারণ জনগণ ভাবছে, পুলিশ সচল হয়নি। বর্তমান পুলিশ কিন্তু আগের চেয়ে আরও বেশি সক্রিয়।’

আরও পড়ুন২৪ দিনে ১১৪৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ০১ জুন ২০২৫

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা প্রস্তুত এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন যখন নির্বাচনের সময় ঘোষণা করবে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে অনুযায়ী প্রস্তুত রয়েছে।’

আরও পড়ুনভারত থেকে ‘পুশ ইন’ ঠেকানো সম্ভব নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা০৩ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতে কোনো বাংলাদেশি থাকলে উপযুক্ত চ্যানেলে পাঠাতে হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ, সামরিক কুচকাওয়াজ ঘিরে উত্তেজনা
  • যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ, সামরিক কুচকাওয়াজ ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা