গরুরা কি পরস্পরের সঙ্গে কথা বলতে পারে
Published: 30th, March 2025 GMT
গরুরা কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তা দেখে মুগ্ধ ডাচ ভাষাবিদ লিওনি কর্নিপস। কিন্তু গরুর এই যোগাযোগপদ্ধতিকে কি সত্যিই ‘ভাষা’ বলা যায়?
কর্নিপস নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের মিয়ার্টেন্স ইনস্টিটিউটের সমাজভাষাবিদ। ইনস্টিটিউটের অলংকৃত প্রবেশপথ পেরোনো পণ্ডিতদের সাধারণত ডাচ ভাষা ও সংস্কৃতি অধ্যয়নে বিশেষজ্ঞ বলে বিবেচনা করা হয়।
মৃদুভাষী গবেষক কর্নিপস গত শতকের নব্বইয়ের দশকে তাঁর শিক্ষাগত জীবনে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি এখনো নেদারল্যান্ডসের বিভিন্ন উপভাষার মধ্যে বাক্য গঠনের ভিন্নতা নিয়ে গবেষণা করেন। পাশাপাশি প্রাণীর ভাষা নিয়েও কাজ করেন।
বছরের পর বছর ধরে কর্নিপস তাঁর গ্রীষ্মকালীন ছুটি একটি খামারে কাটিয়েছেন। শুরু থেকেই তিনি প্রতিটি গরুর ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিত্ব দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
কর্নিপস একজন দার্শনিকের লেখা একটি প্রবন্ধ পড়েছিলেন। যেখানে দার্শনিক প্রশ্ন করেছিলেন, ভাষাবিদেরা কেন কখনো প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করেন না? এই প্রশ্ন কর্নিপসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
কর্নিপসের মনে হয়েছিল, গরুর বুদ্ধিমত্তা ও সামাজিক অভ্যাসের বিষয়টি একজন ভাষাবিদের জন্য গবেষণার ভালো বিষয় হতে পারে।
ডাচ নাগরিক হিসেবে কর্নিপস জানতেন, পনিরের প্রতি অনুরাগী একটি জাতির (নেদারল্যান্ডস) জন্য গরু একটি সাংস্কৃতিক প্রতীক। তাই তিনি গরুর ভাষাগত যোগাযোগ নিয়ে কাজের দিকে ঝোঁকেন।
শতাব্দীর পর শতাব্দী মানুষ ধরে নিয়েছে যে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের একটি পরিমাপক। এমনকি এর জন্য একটি একাডেমিক শব্দও আছে—‘লোগোসেন্ট্রিজম’। এর অর্থ, যারা শব্দ (ভাষার ধ্বনি) ব্যবহার করে, তারা সমাজে একটি বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত অবস্থান দখল করে।
অনেক ভাষাবিদ বলেন, ‘ভাষাই আমাদের মানুষ করে তুলেছে। অন্য প্রাণীরা হয়তো ঘোঁত ঘোঁত, ঘেউ ঘেউ, কিচিরমিচির করতে পারে। কিন্তু তাদের এমন কিছু নেই, যা ভাষা হিসেবে গণ্য হয়।’
কর্নিপস এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য দুগ্ধ খামারে গরুর যোগাযোগ নিয়ে কাজ করছেন। অবশ্য প্রাণীর যোগাযোগ নিয়ে কাজ নতুন নয়। গত শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে এ ধরনের কাজ দেখা যাচ্ছে। যেমন শিম্পাঞ্জিদের নিয়ে জেন গুডালের কাজ, রজার পেইনের হাম্পব্যাক তিমির রেকর্ডিং। এসব কাজের মধ্য দিয়ে দেখা যায়, মানুষ হয়তো ভাষাগতভাবে অতটা অনন্য না–ও হতে পারে, যতটা আমরা ধরে নিয়েছিলাম।
কর্নিপস বলেন, সমস্যা হলো, ভাষা সম্পর্কে মানুষের স্পষ্ট ধারণা নেই। তারা যখন ভাষা সম্পর্কে কথা বলে, তখন তারা সব সময় মুখ থেকে যা বের হয়, তার কথা বলে।
গরুর ভাষা নিয়ে বেশির ভাগ গবেষণাই শব্দের ওপর জোর দেয়। উদাহরণস্বরূপ, নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে করা একটি গবেষণায় গরুর ডাকের ওঠানামা তাদের আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছিল। গবেষণাটি বলেছিল, এটা তাদের মঙ্গলের একটা উপায় হতে পারে।
২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় দেখা গেছে, গরুর কেবল স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বরই (ডাক) থাকে না, বরং বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে স্বতন্ত্র ডাকগুলো তারা বজায় রাখে।
কর্নিপস তাঁর গবেষণায় গরুর আচরণ ও শব্দের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তিনি দেখতে চান যে তারা কীভাবে যোগাযোগ করে। কর্নিপস বলেন, ‘আমি গরুর ক্ষেত্রে লক্ষ করেছি যে তাদের শরীর হলো অন্যকে জানার একটি উপায়।’
গরুরা যখন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তখন ধৈর্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যখন একটা মা গরু তার বাছুরকে ডাকে, তখন কখনো কখনো বাছুরটির সাড়া দিতে ৬০ সেকেন্ড সময় লাগে।
ডাক ও সাড়ার মাঝখানের সময়টিতে গরু নানা অঙ্গভঙ্গি করে থাকে। অস্ট্রিয়ার গবেষণায় দেখা গেছে, কানের অবস্থান ও ঘাড় প্রসারিত করা গরুর ভাষার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
মানুষ আমাদের কান নাড়ানোর ক্ষমতাকে একটা বিনোদনের কৌশল মনে করে। কিন্তু একটি গরুর ক্ষেত্রে তা যোগাযোগের মৌলিক আচরণ বলে মনে হয়। গরুর সঙ্গে গরুর কথোপকথনের প্রথম বাক্যটি সম্ভবত কান নাড়ানো ও তাকানো।
গরুই একমাত্র প্রাণী নয়, যার জটিল যোগাযোগপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক শাব্দিক প্রতিবেশের বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক মিশেল ফোরনেট জানতে পেরেছেন, তিমি ও সিলের মতো সামুদ্রিক প্রজাতির ওপর মানুষের খেয়ালখুশি চাপিয়ে দেওয়াটা কোনো কাজের কথা নয়।
ফোরনেট বলেন, প্রাণীরা মানুষের চেয়ে একেবারে আলাদাভাবে শব্দ ব্যবহার করে। তিনি বলেন, ‘প্রাণীরা কীভাবে যোগাযোগ করছে এবং কেন তারা যোগাযোগ করছে, তা বুঝতে যদি আমরা ভালোভাবে কাজ করতে চাই, তাহলে আমাদের তাদের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত।’
যারা মানুষ নয়, তাদের মধ্যে তথ্য আদান–প্রদানকে বর্ণনা করার জন্য ‘ভাষা’ শব্দটি ব্যবহার করেন না ফোরনেট। তিনি বলেন, ‘প্রাণীদের ব্যবস্থা আমাদের চেয়ে কম নয়, বরং অন্য রকম। আমরা মিল খুঁজতে গিয়ে তাদের প্রতি অন্যায্য আচরণ করি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য গ য গ কর ব যবহ র র জন য কর ন প আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।
এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।
এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।
সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।
আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।
শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।
পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’