‘‘আট-দশ বছর আগেও ঈদ এলে দোকানে সাজানো থাকতো বাহারি রঙের ঈদকার্ড। সেগুলো পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকায় বিক্রি হতো। নানা বয়সী মানুষের ব্যাপক চাহিদা ছিল ঈদকার্ডে। এখন মানুষ আর ঈদকার্ড কেনে না। মোবাইলে শুভেচ্ছা ও ভাবের আদান-প্রদান করে।’’
রবিবার (৩০ মার্চ) দুপুরে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা বাজারের সামাদ কসমেটিকসের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ৪০ বছর ধরে কসমেটিকসের ব্যবসা করছি। আমার দোকানে অন্তত দুই হাজার ধরনের পণ্যের পসরা রয়েছে। তবে সেখানে ঈদকার্ড নেই।’’
তিনি বলেন, ‘‘বন্ধু তুমি অনেক দূরে, তাইতো তোমায় মনে পড়ে; সুন্দর এই সময় কাটুক খুশিতে, সব কষ্ট ভুলে যেও আপনজনের হাসিতে।’ ‘বাকা চাঁদের হাসিতে, দাওয়াত দিলাম আসিতে; আসতে যদি না পার, ঈদ মোবারক গ্রহণ কর।’ ঈদ ঘিরে প্রায় এক যুগ আগেও এসব বাণী লেখা ঈদকার্ডের জন্য অধীর আগ্রহে সময় গুনত প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধবরা। কে কাকে আগে ঈদের কার্ড দেবে, এ নিয়েও চলতো প্রতিযোগিতা। প্রিয়জনের ঈদকার্ড ছাড়া যেন ঈদের আনন্দ জমতো না। তবে কালের বিবর্তনে আর মোবাইলের ফোনের কাছে হেরে গেছে বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের এই মাধ্যম। এখন হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে চলছে কৃত্রিম অনুভূতির আদান-প্রদান।’’
আমলা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড.
আমলা বাজারের ফুলবারী স্টোর, আদর্শ লাইব্রেরি, সামাদ কসমেটিকস, আমিরুল স্টোর, টুটুল স্টোর, রনি কম্পিউটারসহ অন্তত ২৫টি কসমেটিকস দোকান ঘুরে দেখা গেছে, দোকানে সাজানো হাজারো পণ্যের পসরা রয়েছে। তবে সেখানে ঈদকার্ড নেই।
রনি কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী হারুনার রশিদ রনি জানান, অনেক বছর হলো ক্রেতারা ঈদকার্ড চান না। বিক্রিও হয় না। সেজন্য এগুলো আর দোকানে তোলা হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ‘‘১০-১৫ বছর আগেও ঈদ কার্ডের প্রচলন ছিল। ছোটবেলায় অনেক কার্ড পেয়েছি।’’
কুষ্টিয়া সরকারী মহিলা কলেজের অর্নাসের ছাত্রী রত্মা খাতুন জানান, তিনি ঈদকার্ড কী জানেন না। কখনো দেখেননি। কোনোদিন চিঠিও লেখা হয়নি।
কবি ও নাট্যকার লিটন আব্বাস জানান, নব্বইয়ের দশকে ঈদকার্ডের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল। কার্ড কেনার জন্য সারা বছর এক-দুই টাকা করে গোছানো হতো। ঈদকার্ড সংগ্রহ করে তাতে নিজস্ব অথবা কোনো বিখ্যাত কবির কয়েকটি লাইন লিখে প্রিয়জনকে দাওয়াত দেওয়া হতো। তবে মোবাইলের কারণে ঈদকার্ড আর চলে না। বাঙালির সংস্কৃতি হিসেবে পুনরায় ঈদকার্ড চালু হওয়া দরকার।
অনলাইনে দেখে অনুপ্রেরিত হয়ে এবার বেশকিছু ঈদকার্ড কিনে গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নূর ই সিয়াম উচ্চারণ। তিনি জানান, ২০১৩ সালের দিকে চাচাত বোন প্রথম ঈদকার্ড দিয়েছিল। আর দেওয়া-নেওয়া হয়নি। তবে প্রিয়জনদের দেওয়ার জন্য এবার বেশকিছু কিনেছেন। প্রাচীন এই সংস্কৃতি আবারও ফিরিয়ে আনতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ভেড়ামারা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘‘কাগজে-কলমে লিখে মনের যে ভাব প্রকাশিত হয়, তা যান্ত্রিকরণের মাধ্যমে হয় না। একটা সময় হালখাতা কার্ডের প্রচলন ছিল। তেমনিভাবে ঈদে ঈদকার্ড ছিল। এখন কালের বিবর্তনে সবই হারিয়ে গেছে। তবে নতুন প্রজন্মের মাঝে প্রাচীন এ সব সংস্কৃতি আবারও জাগ্রত করা উচিত।’’
ঢাকা/বকুল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে কারখানায় বিস্ফোরণ, দগ্ধ ৩
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় মঞ্জু টেক্সটাইলে এন্ড ডাইং কারখানায় গ্যাস লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে কারখানার দুই নিরাপত্তাকর্মীসহ তিন জন দগ্ধ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ মে) সকাল পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার তারাবো পৌরসভার কাজীপাড়া এলাকায় কারখানায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দগ্ধরা হলেন, সিকিউরিটি ইনচার্জ আব্দুল হান্নান, গার্ড কবির হোসেন ও সিনিয়র অফিসার সাইফুল ইসলাম।
কারখানার সুপারভাইজার মিজানুর জানান, নাইট ডিউটি শেষে সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা চলে যাওয়ার ঠিক পরপরই তিতাস গ্যাস সংযোগের আরএমএস রুমে গ্যাসের অতিরিক্ত চাপে বিকট শব্দে একটি দেয়াল ধসে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। এ সময় নিরাপত্তাকর্মীসহ তিনজন দগ্ধ হন। বিস্ফোরণ ও আগুনের তীব্রতায় আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ, সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক
মাইক্রোবাসে বিস্ফোরণ, অল্পের জন্য বেঁচে গেলেন ৫ ছাত্রনেতা
তিনি জানান, কারখানায় দায়িত্বে থাকা টেকনিশিয়ান ও অন্যান্য নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত গ্যাসের চাবি বন্ধ করে নিজেরাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে দগ্ধ তিনজনকে দ্রুত রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। আগুনে কারখানার কিছু কাপড় ও আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে ইউনিট সেখানে যায়। তবে তার আগেই কারখানার লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে। বিস্ফোরণ ও আগুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। শুনেছি তিনজন দগ্ধ হয়েছেন এবং তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/অনিক/বকুল