কয়েক দিন আগে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মাত্র ২৩ বছরের এক ছাত্র এসেছেন, বুকে ব্যথা নিয়ে। ইসিজি করে দেখা গেল হার্ট অ্যাটাক। মা–বাবা কোনোভাবেই মানতে পারছেন না, এত অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক! অবাক লাগলেও সত্যি, অনেক কম বয়সেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। আজকে আমরা জানব, কেন অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাক হয়?
অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাধূমপান
অল্প বয়সে হার্ট অ্যাটাকের একটি বড় কারণ ধূমপান। ধূমপানে রক্তনালিতে ক্ষত তৈরি হয় এবং রক্তনালির ভেতর চর্বি জমাট বাঁধার প্রবণতা বেড়ে যায়।
মাদকাসক্তি
হার্ট অ্যাটাকের আরেকটি বড় কারণ মাদকাসক্তি। কোকেন, ইয়াবা, গাঁজা, ইন্ট্রাভেনাস অ্যাবিউজিং ড্রাগ হার্টের রক্তনালির ক্ষতি করে এবং হৃৎস্পন্দন এলোমেলো করে, যা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুনতামিম ইকবালের হার্টে কীভাবে এত দ্রুত রিং পরানো সম্ভব হলো২৪ মার্চ ২০২৫মানসিক চাপ
অতিরিক্ত উদ্বেগ, মানসিক চাপ হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
স্থূলতা
হার্ট অ্যাটাকের আরেকটি বড় কারণ ওবেসিটি বা স্থূলতা। অতিরিক্ত ওজনের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি জমা বা কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়াসহ অনেক ধরনের অসুস্থতার ঝুঁকি থাকে।
অপর্যাপ্ত ঘুম
দিনে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
অলস জীবনযাপন
নিয়মিত শরীরচর্চা করলে হার্টের কাজ করার ক্ষমতা যেমন বাড়ে, তেমনি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও রক্তের চর্বির পরিমাণও কমে। অলস জীবন যাপন করলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
অস্বাস্থ্যকর খাবার
এখন অল্প বয়সীদের মধ্যে ঘরের বাইরে বা রেস্টুরেন্টে খাওয়ার প্রবণতা বেশি। বাইরের খাবারে অস্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট, অতিরিক্ত লবণ ও চিনি থাকে। এ খাবারগুলোর কারণে রক্তনালিতে চর্বি জমাট বাঁধাসহ হার্টের ক্ষতি হতে পারে।
বংশগত কারণ
পরিবারে হৃদ্রোগের ইতিহাস থাকলে কম বয়সেও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে। তাই রোগীর পারিবারিক ইতিহাস জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাবা, বড় ভাই বা চাচাদের কেউ হার্টের অসুখে ভুগলে এর কারণ জানতে হবে এবং বংশগত কিছু আছে কি না দেখতে হবে।
আরও পড়ুনহার্ট অ্যাটাকের ৬টি লক্ষণ এবং হার্ট অ্যাটাক হলে সঙ্গে সঙ্গে যা করবেন২৪ মার্চ ২০২৫প্রতিরোধের উপায় ব্যায়াম করতে হবে নিয়মিত.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি
পুঁজিবাজারে সাম্প্রতিক সময়ে ধারাবাহিক নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা পর্যবেক্ষণে অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তাই বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে তদন্ত করে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে করে কমিশন। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে বেশ কিছু শর্ত নির্ধারণ করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
গত রবিবার (২৭ এপ্রিল) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
‘অরেঞ্জ বন্ড অন্তর্ভুক্তিমূলক পুঁজিবাজার তৈরির সুযোগ দিচ্ছে’
যমুনা অয়েলের ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ৩৭.৭৮ শতাংশ
তদন্তের বিষয়টি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) অবহিত করা হয়েছে।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শামসুর রহমান, উপ-পরিচালক মুহাম্মদ ওরিসুল হাসান রিফাত, ডিএসইর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুর রহমান এবং সিডিবিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক কাজী মিনহাজ উদ্দিন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুঁজিবাজারের হাল ধরেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। ওই দিন অর্থাৎ ১৯ আগস্ট ডিএসইর প্রধান ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৭৭৫.৪৯ পয়েন্টে। তিনি কাজে যোগ দেওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও পুঁজিবাজারে গতিশীলতা ফিরে আসেনি। বরং, ক্ষেভে বিনিয়োগকারীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।
সর্বশেষ সোমবার (২৮ এপ্রিল) ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৫২.৭৯ পয়েন্টে। ফলে প্রায় ৮ মাসে ডিএসইএক্স সূচক ৮২২.৭০ পয়েন্ট কমেছে।
এমন পরিস্থিতি বিএসইসির গঠিত তদন্ত কমিটি সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখবে। এ কাজে কোনো কারসাজি চক্র জাড়িত আছে কি-না এবং বাজারে চক্রান্তকারী গুজব রটিয়েছে কিনা-তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারের নিম্নমুখী প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করেছে বিএসইসি, যা অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। তাই কমিশন বিষয়টি পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর XVII) এর ২১ ধারা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিও অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ (১৯৯৩ সনের ১৫ নম্বর আইন) এর ১৭(ক) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসি, ডিএসই এবং সিডিবিএলের ৪জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করবে।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
ডিএসইএক্স সূচকের সাম্প্রতিক পতনের কারণ চিহ্নিত করা। বাজারে গুজব ছড়ানোর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা অন্য কোনো আনুষঙ্গিক বিষয় থাকলে তা চিহ্নিত করা। গঠিত তদন্ত কমিটি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য সুপারিশ প্রদান করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজার নিম্নমুখী প্রবণতার কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি কি কি কারণে বাজার পতনমুখী প্রবণতায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানোর জন্য কি কি করা প্রয়োজন সে বিষয়েও সুপারিশ প্রদান করবে তদন্ত কমিটি।”
ঢাকা/এনটি/এসবি