হাওরপারের সেই তিন পরিবারে ঈদ উপহার পৌঁছে দিলেন ইউএনও
Published: 1st, April 2025 GMT
সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপারের একটি গ্রামের দরিদ্র মানুষদের ঈদ নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা ওই গ্রামে গিয়ে পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেন এবং ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী ও শাড়ি তুলে দেন।
সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপারের কান্দাহাটি গ্রামের দরিদ্র মানুষের ঈদের আনন্দ-বেদনা নিয়ে সোমবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘হাওরপারের ঈদ: বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু, ইলাই আমরার ঈদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে গ্রামের দরিদ্র সবুরা, জহুরা, রংমালা বিবির পরিবারের ঈদের প্রস্তুতি, ভাবনা ও দুঃখকষ্ট তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনটি সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার নজরে এলে তিনি প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে ওই পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সদরের ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের দেখার হাওরপারের কান্দাহাটি গ্রামে যান। তিনি সবুরা বেগম, জহুরা বিবি ও রংমালা বিবির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের আয়রোজগারের জন্য কোনো কিছু করা যায় কি না, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। একই সঙ্গে দরিদ্র সবুরা বেগমের ঘরটি নির্মাণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় তাঁদের হাতে খাদ্যসামগ্রী ও নতুন শাড়ি তুলে দেন ইউএনও।
আরও পড়ুন‘বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু, ইলাই আমরার ঈদ’৩১ মার্চ ২০২৫এ সময় লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো.
অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, এসব পরিবারের নারীরা অনেক কষ্টের কাজ করেন। তাঁরা যাতে কম পরিশ্রমে আয় করতে পারেন, সেটির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। পরিবারের পুরুষ সদস্য থাকলে তাঁকে দিয়ে সেটি করা যায়। প্রশাসন সহযোগিতা করবে।
ইউএনও বলেন, ‘ঘরগুলো একেবারে হাওরের পারে। বর্ষায় ঢেউয়ের কবলে পড়ে বসতভিটা ও ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এটি বড় সমস্যা। আমরা স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বলেছি, এঁদের জন্য কী করা যায়, চিন্তাভাবনা করার জন্য।’
প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপহারসামগ্রী পেয়ে খুশি লাভলী বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরার বাড়িত যে স্যার (ইউএনও) নিজে অত জিনিস লইয়া আইছইন, এর লাগি আমরা খুশি। আমরা খুব কষ্টে আছি। তাঁরা খইছইন আমরারে আরও সাহায্য খরবা।’
ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এই পরিবারগুলো খুবই দরিদ্র, অসহায়। ইউএনও স্যার বলেছেন, সব সময় তাদের খেয়াল রাখতে।’
সুনামগঞ্জের হাওরে বহুকাল থেকে ‘চৈত্রের নিদান’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। এই নিদানে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের ঘরে ঘরে খাবারের সংকট থাকে। কেউ কাউকে সহযোগিতা করার মতো অবস্থা থাকে না। যদিও এখন হাওরে সেই ‘নিদারুণ অভাব’ আগের মতো নেই। তবে একেবারে নিদানের রেশ কেটে যায়নি। তাই এই সময়ে হাওরের কৃষক পরিবারে টানাপোড়েন থাকে। পুরোনো ধান শেষ হয়ে আসে। হাওরে থাকে কাজের সংকট। এ অবস্থায় এবার ঈদ এল। তবু সাধ্য অনুয়ায়ী মানুষ চেষ্টা করেন ঈদের আনন্দে নিজেদের মেলাতে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র হ ওরপ র র প রথম আল পর ব র র দর দ র র হ ওর র র ঈদ আমর র সদস য উপহ র
এছাড়াও পড়ুন:
আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।
এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।
তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।
মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।
পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।
পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’
জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।