সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপারের একটি গ্রামের দরিদ্র মানুষদের ঈদ নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ উপহার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা ওই গ্রামে গিয়ে পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেন এবং ঈদ উপহার হিসেবে খাদ্যসামগ্রী ও শাড়ি তুলে দেন।

সুনামগঞ্জের দেখার হাওরপারের কান্দাহাটি গ্রামের দরিদ্র মানুষের ঈদের আনন্দ-বেদনা নিয়ে সোমবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘হাওরপারের ঈদ: বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু, ইলাই আমরার ঈদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে গ্রামের দরিদ্র সবুরা, জহুরা, রংমালা বিবির পরিবারের ঈদের প্রস্তুতি, ভাবনা ও দুঃখকষ্ট তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনটি সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়ার নজরে এলে তিনি প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে ওই পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেন।

মঙ্গলবার দুপুরে সদরের ইউএনও অতীশ দর্শী চাকমা সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের দেখার হাওরপারের কান্দাহাটি গ্রামে যান। তিনি সবুরা বেগম, জহুরা বিবি ও রংমালা বিবির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের আয়রোজগারের জন্য কোনো কিছু করা যায় কি না, স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। একই সঙ্গে দরিদ্র সবুরা বেগমের ঘরটি নির্মাণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এ সময় তাঁদের হাতে খাদ্যসামগ্রী ও নতুন শাড়ি তুলে দেন ইউএনও।

আরও পড়ুন‘বাইচ্চান্তরে লইয়া বড়া ও হান্দেশ খাইমু, ইলাই আমরার ঈদ’৩১ মার্চ ২০২৫

এ সময় লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো.

নিজাম উদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন, লিয়াকত আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অতীশ দর্শী চাকমা বলেন, এসব পরিবারের নারীরা অনেক কষ্টের কাজ করেন। তাঁরা যাতে কম পরিশ্রমে আয় করতে পারেন, সেটির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। পরিবারের পুরুষ সদস্য থাকলে তাঁকে দিয়ে সেটি করা যায়। প্রশাসন সহযোগিতা করবে।

ইউএনও বলেন, ‘ঘরগুলো একেবারে হাওরের পারে। বর্ষায় ঢেউয়ের কবলে পড়ে বসতভিটা ও ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এটি বড় সমস্যা। আমরা স্থানীয় ইউপি সদস্যকে বলেছি, এঁদের জন্য কী করা যায়, চিন্তাভাবনা করার জন্য।’

প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপহারসামগ্রী পেয়ে খুশি লাভলী বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরার বাড়িত যে স্যার (ইউএনও) নিজে অত জিনিস লইয়া আইছইন, এর লাগি আমরা খুশি। আমরা খুব কষ্টে আছি। তাঁরা খইছইন আমরারে আরও সাহায্য খরবা।’

ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘এই পরিবারগুলো খুবই দরিদ্র, অসহায়। ইউএনও স্যার বলেছেন, সব সময় তাদের খেয়াল রাখতে।’

সুনামগঞ্জের হাওরে বহুকাল থেকে ‘চৈত্রের নিদান’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। এই নিদানে কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষের ঘরে ঘরে খাবারের সংকট থাকে। কেউ কাউকে সহযোগিতা করার মতো অবস্থা থাকে না। যদিও এখন হাওরে সেই ‘নিদারুণ অভাব’ আগের মতো নেই। তবে একেবারে নিদানের রেশ কেটে যায়নি। তাই এই সময়ে হাওরের কৃষক পরিবারে টানাপোড়েন থাকে। পুরোনো ধান শেষ হয়ে আসে। হাওরে থাকে কাজের সংকট। এ অবস্থায় এবার ঈদ এল। তবু সাধ্য অনুয়ায়ী মানুষ চেষ্টা করেন ঈদের আনন্দে নিজেদের মেলাতে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ র হ ওরপ র র প রথম আল পর ব র র দর দ র র হ ওর র র ঈদ আমর র সদস য উপহ র

এছাড়াও পড়ুন:

মতলব দক্ষিণে এক বিদ্যালয়ের ২০ এসএসসি পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরে অন্য শিক্ষার্থীদের নাম

চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ের ২০ পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরে অন্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের ফলাফল আসেনি। নিবন্ধন প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে এমনটি হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

ওই বিদ্যালয়ের নাম আলহাজ তোফাজ্জল হোসেন ঢালী উচ্চবিদ্যালয়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ২০ জুলাই লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে গতকাল রোববার মৌখিক অভিযোগ করে বিদ্যালয়টির আরও ১৯ পরীক্ষার্থী। ফলাফল না পেয়ে এসব পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা হলো সামিয়া, নাদিয়া আক্তার, আঁখি, মীম, মাহিয়া আক্তার মাহী, রিফাতুল ইসলাম, আরাফাত রহমান, তানজিনা আক্তার, অন্তরা, ফারিয়া ইসলাম, সাবিকুন্নাহার জুমা, জাকিয়া আক্তার মুন্নী, ইয়াসমিন আক্তার, নুসরাত, আসমা আক্তার, দ্বীপ চক্রবর্তী, মাহমুদা, শিরিনা আক্তার, আহাদ ঢালী ও খাদিজা আক্তার ফাতেমা।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আলহাজ তোফাজ্জল হোসেন ঢালী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় সব বিভাগ হতে মোট ৮৪ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ৬৪ জনের ফলাফল পাওয়া যায়। বাকি ২০ জনের ফলাফল পাওয়া যায়নি। ওই ২০ জনের রোল নম্বরের বিপরীতে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নাম-তথ্য পাওয়া যায়, যারা এবার এসএসসি পরীক্ষাতেই বসেনি। ছাত্রীর রোল নম্বরের বিপরীতে ফলাফল শিটে ছাত্রের নাম এবং ছাত্রের ফলাফল শিটে ছাত্রীর নাম দেখা যায়।

সাবিকুন্নাহার অভিযোগে জানায়, ১০ জুলাই প্রকাশিত ফলাফল শিটে তার রোল নম্বর সার্চ দিলে ফারদিন হোসেন নামের আরেক ছাত্রের নাম আসে, অথচ সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেয়নি। ছাত্রটি একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়ছে। পরীক্ষা দিয়ে ফলাফল না পেয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ জুমা।

জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মাজহারুল হক বলেন, হাফিজুর রহমান নামের এক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনলাইনে নিবন্ধনের কাজ করেন। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ডাউনলোড করে তাদের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়। তাঁর দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড ও ভুলের কারণে ওই পরীক্ষার্থীরা ফলাফল পাচ্ছে না। নবম শ্রেণিতে তাদের নিবন্ধনই ঠিকমতো হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ওই পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধন কার্ড সংশোধন করে ফলাফল সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে বিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষকের দাবি, এসএসসির ফলাফল প্রকাশের পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমান বিদ্যালয়ে আসছেন না। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ। এই প্রতিবেদকও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পেয়েছেন।

অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে ইউএনও আমজাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত প্রতিবেদন কয়েক দিনের মধ্যে জমা দেওয়া হবে জানিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গাউছুল আজম পাটওয়ারী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই পরীক্ষার্থীদের নিবন্ধনই করা হয়নি। যেসব নিবন্ধন কার্ড ও প্রবেশপত্র পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ভুয়া। ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে আগামীকাল মঙ্গলবার কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের একটি প্রতিনিধিদল ওই বিদ্যালয়ে যাবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেঘনায় নদীতে অবৈধ বালু তোলায় ব্যবহৃত ৭টি খননযন্ত্র ও ১টি বাল্কহেড জব্দ
  • মতলব দক্ষিণে এক বিদ্যালয়ের ২০ এসএসসি পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরে অন্য শিক্ষার্থীদের নাম