খুলনা নগরের বাঙ্গালবাড়ি এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি বিদেশি পিস্তল ও একটি শটগান উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় সাতটি শটগানের গুলি, আটটি পিস্তলের গুলি ও একটি রামদাও পাওয়া গেছে। অবৈধ অস্ত্র রাখা ও কেনাবেচার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শটগান ও শটগানের গুলির গায়ে ‘বিডি পুলিশ’ শব্দটি লেখা আছে। পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া শটগানটি পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্রের একটি। তবে কবে ও কোথা থেকে অস্ত্রটি লুট হয়েছিল, তা জানা যায়নি।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দুজন হলেন ফারুক হোসেন ও খাইরুল সরদার। ফারুক হোসেনের বাড়ি থেকেই অস্ত্র ও গুলিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। আর খাইরুল সরদার অস্ত্র কিনতে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় হাতে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। খাইরুলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ফারুক হোসেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে অস্ত্রগুলো পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। ব্রিফিংয়ে কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ফাইন্যান্স) আবু রায়হান মো.

সালেহ বলেন, বুধবার রাতে পুলিশ জানতে পারে, হরিণটানা থানাধীন বাঙ্গালবাড়ি রোডে সন্ত্রাসীদের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। হরিণটানা ও আড়ংঘাটা থানা–পুলিশ এ ব্যাপারে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন খাইরুল সরদারকে (২৭) শনাক্ত করে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে যে হরিণটানা থানাধীন বাঙ্গালবাড়ি এলাকায় অস্ত্র কিনতে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় অসর্তকতাবশত পিস্তলের গুলি ফায়ার হয়ে তাঁর বাঁ হাতের তালুতে লাগে।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এরপর খাইরুল সরদারকে নিয়ে হরিণটানা থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ আজ বৃহস্পতিবার বাঙ্গালবাড়ি এলাকায় অভিযান চালায়। গুলিবিদ্ধ খাইরুল অস্ত্র বিক্রেতা ফারুক হোসেনের (২৩) বাড়ি দেখিয়ে দিলে সেই বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। ফারুক জিজ্ঞাসাবাদে অস্ত্র থাকার কথা স্বীকার করে। একপর্যায়ে তাঁর তথ্যের ভিত্তিতে রান্নাঘরে থাকা জ্বালানি কাঠের স্তূপের মধ্য থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, বসতঘরের মধ্যে থাকা টিনের বাক্সে রাখা একটি শটগান এবং শটগানের সাতটি গুলি, ঘরের ভেতরের দেয়ালের ওপর থেকে পিস্তলের আটটি গুলি ও একটি রামদা উদ্ধার করা হয়। অবৈধ অস্ত্র বেচাকেনার কাজে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল এবং একটি মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়।

অতিরিক্ত কমিশনার আবু রায়হান মো. সালেহ বলেন, অস্ত্রটি কোন থানার আওতায় বা কার কাছে ছিল তা পুলিশ সদর দপ্তর ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। এ কারণে সদর দপ্তরে অস্ত্রের বিষয় জানিয়ে চিঠি লেখা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক হোসেন স্বীকার করেছেন তিনি বিভিন্ন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দুষ্কৃতকারীদের কাছে অবৈধ অস্ত্র কেনাবেচা করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন। সন্ত্রাসীদের সহযোগীদের গ্রেপ্তার এবং আরও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য অভিযান চলমান রয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শটগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ কোনো সংস্কার কমিশনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন। তাদের প্রশ্ন, ঐকমত্য কমিশনে কোনো রাজনৈতিক দলকেও প্রশ্ন করতে দেখা গেল না যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে বা তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য গঠন হয়।

‘অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ৮% জনগোষ্ঠীর অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) তরুণ রায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের আগে হোক বা পরে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো ৮ শতাংশ শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জায়গা। তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক দলকে। সে ক্ষেত্রে এমন অবস্থা চলমান থাকলে ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা দাবি তোলা হয়। সেসব দাবি বাস্তবায়নে তখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু গত ১ বছরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছে, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে। ৮ দফা যে দেশের ৮ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের মনের কথা জানান দিতে ২২ আগস্ট ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক সুস্মিতা কর বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তো ঐকমত্য গঠন হতে পারে না। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট আছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠন আট দফা দাবিতে একাত্ম। যদি নির্বাচন–পূর্ববর্তী সময়ে সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে না দেখা যায়, তাহলে হয়তো সংখ্যালঘুরা ভোট বয়কট লড়তে পারে।

এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক সুব্রত বল্লভ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আদিবাসী সংগঠক সুমন ত্রিপুরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ