ঈদ উপলক্ষে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা
Published: 4th, April 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। নির্মল চিত্ত বিনোদন ভাগাভাগি করতে কাশিয়ানী উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া বাগিয়া গ্রামে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
এ ঘোড়দৌড় দেখতে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ অর্থ পুরস্কার।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে কাশিয়ানীর নোয়াপাড়া বাগিয়া ফুটবল মাঠে মো.
এ ঘোড়দৌঁড় দেখতে তীব্র গরম উপেক্ষা করে দুপুর থেকেই নোয়াপাড়া বাগিয়া ফুটবল মাঠে ভিড় করেন নানা বয়সের দর্শনার্থী। মাঠের চারদিকে দর্শকের উচ্ছ্বসিত আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ১০ হাজার দর্শনার্থী হর্ষধ্বনি আর করতালি দিয়ে এ প্রতিযোগিতার অনাবিল আনন্দ উপভোগ করেন। প্রতিযোগীতো দেখতে গোপালগঞ্জসহ আশপাশের এলাকার শিশু ও নারীসহ হাজার হাজার দর্শনার্থী পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন এই মাঠে। দর্শনার্থীরা ঘোড়দৌঁড় উপভোগের পাশাপাশি এ উপলক্ষে আয়োজিত গ্রামীণ মেলায় কেনাকাটা করেন। মেলায় নানা ধরণের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজক মঞ্চ
এ প্রতিযোগিতায় নড়াইলের রবিউল মোল্যার ঘোড়া প্রথম, একই জেলার রাব্বি মোল্যার ঘোড়া দ্বিতীয়, শিমুল শেখের ঘোড়া তৃতীয় ও আরজু মোল্যার ঘোড়া চতুর্থ হয়। পরে বিজয়ী ঘোড়ার মালিকদের হাতে নগদ অর্থ পুরস্কার তুলে দেন আয়োজকেরা।
প্রথম হওয়া ঘোড়ার মালিক নড়াইলের রবিউল মোল্যা (৪৫) বলেন, “এখানে নিজের ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় এসেছি। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে খুব ভাল লাগছে। এলাকার মানুষও আনন্দ পাচ্ছে। আমরা পুরস্কার পাওয়ার জন্য নয় মানুষকে আনন্দ দিতে এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকি।”
ঘোড়দৌঁড়ে অংশ নেওয়া অপর ঘোড়ার মালিক শাহাজান শেখ (৪৫) বলেন, “ঈদ পুজাপার্বণসহ গ্রামীণ অনুষ্ঠানে আমরা অংশ নিয়ে থাকি। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমরা ছুটে যাই। অংশগ্রহণ করে আমরা আনন্দিত হই।”
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা উপলক্ষে আয়োজিত গ্রামীণমেলা
ঘোড় দৌঁড় দেখতে আসা মো. রিয়াজ হাসান বলেন, “এখানে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ঘোড়দৌঁড় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আমি প্রতিবছর এখানকার ঘোড়দৌঁড় দেখছি। এ বছরও এসেছি। আমি চাই প্রতি বছর এখানে এমন ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতা হোক।”
ঈদে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসা শাহ আলম মিয়া বলেন, “আমি ঢাকা থাকি। ঈদ আসলে বাড়িতে আসি। এবার এসে শুনলাম ঘোড়দৌড় হবে। তাই মেয়েকে নিয়ে দেখতে এসেছি। দেখে খুব আনন্দ পেলাম।”
স্কুল ছাত্রী জাহ্নবী চক্রবর্তী বৃষ্টি বলেন, “এবারই প্রথম ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতা দেখলাম। মা-বাবার সাথে দেখতে এসেছি। ঘোড়দৌঁড় দেখে খুব ভাল লেগেছে।”
ঘোড়দৌঁড় দেখতে আসা বিপ্লব চক্রবর্তী বলেন, “এমন আয়োজন করায় আমি আয়োজক কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই। এখন এসব প্রতিযোগিতা হারিয়ে যাচ্ছে। আশা করি, আগামীতেও এমন আয়োজন করবেন।”
আয়োজক কমিটির সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আমাদের গ্রামে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে। সারা বছর এই একটি দিনের জন্য সকলে অপেক্ষা করে। ঈদে সকলকে আনন্দ দিতে এ আয়োজন করা হয়েছে।”
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় আসা দর্শনার্থী
আয়োজক কমিটির অপর সদস্য আবু জাফর মোল্যা বলেন, “ঘোড়দৌড় হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামীণ খেলাধুলা হারিয়ে যাওয়ায় যুব সমাজ মাদক ও মোবাইল গেমে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাই বিনোদন দিতে ও যুব সমাজকে মাদক ও মোবাইল গেম থেকে দূরে রাখতে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।”
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজক মো. ইদ্রিস শেখ বলেন, “আমাদের দেশ থেকে ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এসব খেলাগুলো ধরে রাখা উচিত। আগামীতে এসব খেলাগুলো ধরে রাখতে আমার সহযোগিতা সব সময় অব্যাহত থাকবে এবং আগামীতেও এমন আয়োজন করা হবে।”
ঢাকা/বাদল/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ অন ষ ঠ ত উপলক ষ আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইনের সংশোধন কবে হবে, তা বলছে না শ্রম মন্ত্রণালয়
শ্রম আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ কবে হবে, সে বিষয়ে আর সময়সীমার কথা বলছে না শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত নভেম্বর মাসে এই মন্ত্রণালয় বলেছিল, ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে এ অধ্যাদেশ হবে। মার্চ শেষে এপ্রিলও শেষ হচ্ছে আজ বুধবার।
সচিবালয়ে আজ ‘মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন সংশোধনীর ক্ষেত্রে সময়সীমা থাকার পক্ষে নন তিনি। শ্রমিক–মালিকদের স্বার্থ রক্ষাসহ শিগগিরই তা করা হবে। বিষয়টি এখন কোন প্রক্রিয়ায় আছে, তা বলতে রাজি হননি শ্রম উপদেষ্টা।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। তিনি আরও বলেন, ‘একসময় স্লোগান ছিল দুনিয়ার মজদুর, এক হও।’ এখন তা বদলে গেছে। এখন হবে ‘দুনিয়ার মালিক-শ্রমিক, এক হও’। এখন ভালো মালিকেরা শ্রমিকদের সন্তানের মতো মনে করেন।
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে ১০১টি ধারা ও উপধারা সংশোধন হবে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ১০ থেকে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
আইএলওর বৈঠকে যোগ দিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে যে দলটি জেনেভা সফর করে, সেখানে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হুমায়ুন কবীর, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন সরকার ও শ্রম উপদেষ্টার একান্ত সচিব মো. জাহিদুল ইসলাম ছিলেন।
এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর তৎকালীন শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আইএলওর গভর্নিং বডির বৈঠক থেকে দেশে ফিরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, মার্চের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন হবে। উপদেষ্টা তখন এ–ও বলেছিলেন, আগের সরকারের আইনমন্ত্রীর (আনিসুল হক) নেতৃত্বাধীন দলকে আইএলও পর্ষদে অপদস্থ করা হয়েছিল। অথচ এবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো নিয়ে বরং প্রশংসা করা হয়েছে। কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো তুলে নেওয়ার কথাও বলেছিল।
জানা গেছে, শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতির অভিযোগ এনে জাপানসহ ছয়টি দেশের পক্ষ থেকে আইএলওতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলাগুলো চলমান।
আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাত মিলিয়ে দেশে ৭ কোটি ৬৫ লাখ শ্রমিক রয়েছে। এদিকে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদকে (টিসিসি) শ্রমিকপক্ষ জানিয়েছে, আইন সংশোধনের সময় সব শ্রমিকের কথা মাথায় না রেখে প্রধানত পোশাক খাতের শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মে দিবস আর জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেফটি দিবস উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ–স্কুল পর্যায়ে রচনা ও প্রবন্ধ লেখার ওপরে বিজয়ীদের পুরস্কার দেওয়া হবে।
এ ছাড়া শ্রম অধিকার বিষয়ে প্রকাশিত বা প্রচারিত মানসম্মত সংবাদ বা স্থিরচিত্র যাচাই করে সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহকদের দেওয়া হবে পুরস্কার।