আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের বাকি ২৩৯ কোটি ডলার বাংলাদেশ পাবে কিনা তা নিশ্চিত করতে শনিবার (৫ এপ্রিল) ঢাকায় আসছে সংস্থাটির প্রতিনিধিদল।
সফরে ভর্তুকি কমানো, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করাসহ বিভিন্ন শর্ত নিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করবে তারা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফের কিস্তি আটকে গেলে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হতে পারে বিশ্বব্যাংক, এডিবির মতো উন্নয়ন সহযোগীরা।
তবে অর্থ উপদেষ্টা বলছেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এই মুহূর্তে আইএমএফের সব শর্ত বাস্তবায়ন করা যাবে না।
অর্থপাচার, খেলাপি ঋণসহ নানা কারণে বাংলাদেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতির সহায়তায় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ দেওয়া শুরু করে আইএমএফ। এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পাওয়া গেছে। বাকি দুই কিস্তির ২৩৯ কোটি ডলার বাজেট সহায়তার জন্য একসঙ্গে চায় সরকার। যা মিলতে পারে জুনে।
চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পালনের অগ্রগতি দেখতে ঢাকায় আসছে আইএমএফের একটি দল। ঋণ পেতে মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, জিডিপির দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায়, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোসহ বেশ কিছু শর্ত রয়েছে। যা নিয়ে ৬ এপ্রিল থেকে টানা দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্থিতি নানা উদ্যোগেও আটকে আছে ৯ শতাংশে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি জনমনে অসন্তোষ বাড়াবে। অর্থনীতিবিদ মাহফুজ কবীর বলেন, “বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে বা এ খাতে ভর্তুকি তুলে নেওয়া হলে নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হবে। তার দায় কে নেবে?”
আইএমএফের শর্ত মেনে অন্তত ৫৭ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আদায় করতে হবে। কমাতে হবে কর অব্যাহতি। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড.
ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার নির্ধারণ করায় হু হু করে বাড়তে থাকা ডলারের দাম আপাতত ১২২ টাকায় স্থিতিশীল। এবার আইএমএফই চায় এই পদ্ধতি থেকে বের হোক বাংলাদেশ। যার সঙ্গে একমত নন খোদ অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে পরিস্থিতি পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। বিপদে পড়তে হবে। এই সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা সময় লাগবে।”
তবে আইএমএফের শর্ত মেনে এনবিআরের রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ঢাকা/হাসান/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইএমএফ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।
আরো পড়ুন:
নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”
প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”
গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী