কুরাইশের বনু তাইমি গোত্রের কন্যা সালমা বিনতে সাখার (রা.)। চাচাতো ভাই আবু কুহাফার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন মুসলিম উম্মাহর অন্যতম ব্যক্তিত্ব আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। ফলে তাঁকে ‘উম্মুল খাইর’ বা ‘কল্যাণের জননী’ উপনামে ডাকা হতো। খাইর অর্থ হচ্ছে কল্যাণ। এখানে খাইর বলতে আবু বকর (রা.)-কে উদ্দেশ্য। (ইবনুল আসির, উসদুল গাবা: ৭/১৪৯; ইবনে হাজার, আল-ইসাবা: ৮/১৮৪)

তাঁর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা তাঁর নাতনি আয়িশা (রা.

) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আবু বকর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করার পর একদিন রাসুলের (সা.) সঙ্গে কাবা চত্বরে উপস্থিত হলেন। সেখানে উপস্থিত কাফের ও অবিশ্বাসীদের আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি দাওয়াত দিয়ে বক্তৃতা দিতে শুরু করলেন। তাঁর কথা শুনতে না শুনতে অবিশ্বাসীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ল। তখন পর্যন্ত আবু তালিব জীবিত ছিল বলে তারা রাসুলের (সা.) ওপর আক্রমণ করার সাহস পেল না কিন্তু আবু বকর (রা.) ওপর চড়াও হলো। এমনকি নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে এক সময় তিনি বেহুঁশ হয়ে যান। ততক্ষণে সেখানে তাঁর গোত্র বনু তাইমির লোকেরা উপস্থিত হয়ে মুশরিকদের হটিয়ে তাঁকে ঘরে নিয়ে চলে যান।

আরও পড়ুন শুক্রবারের আমল২৪ মার্চ ২০২৫

ঘরে পৌঁছে কিছুক্ষণ পর যখন তাঁর একটু হুঁশ ফিরে এলো, সর্বপ্রথম তিনি জিজ্ঞেস করেন, রাসুল (সা.) কেমন আছেন? শুনে উপস্থিত সবাই তাঁকে গালমন্দ করে বলল, নিজের খবর নেই; এই অবস্থায়ও মুহাম্মদের খবর জানতে চায়! সবাই চলে যাওয়ার পর তিনি একটু সুস্থতা অনুভব করলে তাঁর মাকে আবার একই প্রশ্ন করলেন। উম্মুল খাইর (রা.) উত্তর দিলেন, তিনি জানেন না।

রাতে আবু বকরের (রা.)খবর নিতে ওমরের (রা.) বোন ফাতিমা আসেন। তিনি জানান, রাসুল দারুল আরকামে অবস্থান করছেন। আবু বকর(রা.) তাঁকে রাসুলের (সা.) কাছে নিয়ে যেতে বললেন। রাত গভীর হলে উম্মুল খাইর ও ফাতিমা দুজন দু দিক থেকে ধরে তাকে দারুল আরকামে নিয়ে যান। আবু বকর(রা.)কে দেখে রাসুল (সা.) বাকরুদ্ধ হয়ে যান এবং ভালোবাসার প্রাবল্যে তাঁর কপালে চুম্বন করে কল্যাণের প্রার্থনা করেন। আবু বকর (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল(সা.) , ইনি আমার মা, তাঁর জন্য প্রার্থনা করুন তিনি যেন ইসলাম গ্রহণ করে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারেন।’

রাসুল (সা.) দু হাত উঠিয়ে দোয়া করলেন, আল্লাহ তা কবুল করেন। উম্মুল খাইরের (রা.) অন্তরের ভাবান্তর হলো। তিনি সেখানেই রাসুল (সা.) হাতে মুসলমান হন।

আবু বকরের (রা.) মা উম্মুল খাইর ও বাবা আবু কুহাফা দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন। তাঁরা উভয়ে তাঁদের সন্তানের খেলাফতকালে বেঁচে ছিলেন এবং ছেলের মৃত্যুর পরও জীবিত ছিলেন এবং তাঁর মিরাসের অংশ লাভ করেন। দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রা.) খেলাফতকালে তাঁদের মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুনসাধকের প্রাপ্তি২৪ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপস থ ত গ রহণ বকর র

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রম অধিকার ও সুস্থ কর্মপরিবেশ

আজ মহান মে দিবস। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমিকের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারকারী মেহনতি মানুষদের স্মরণ করিবার দিন। তৎসহিত সকল শ্রমজীবী মানুষের জন্য মর্যাদাকর জীবন নিশ্চিতকরণের সংগ্রামে নূতন শপথ গ্রহণের দিন।

মে দিবস বিশ্বের শ্রমিকদের সংহতি যদ্রূপ বৃদ্ধি করিয়াছে, তদ্রূপ তাহাদিগকে অধিকার সচেতনও করিয়াছে; প্রেরণা জোগাইয়া চলিয়াছে শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাইয়া যাইতে। মে দিবস বাংলাদেশসহ বিশ্বের উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়া স্বাধীনতা অর্জনকারী দেশসমূহের জন্য বিপুল প্রেরণার উৎসরূপে কাজ করিয়াছে।

তাহারই প্রতিফলনস্বরূপ এই সকল দেশে ছুটিসহকারে জাতীয়ভাবে দিবসটি পালিত হয়। উন্নত দেশসমূহ এই দিবসে পৃথক ছুটির ব্যবস্থা না করিলেও উহার প্রভাব উপেক্ষা করিতে পারে নাই। তাই ভিন্ন প্রকারে সেই সকল দেশেও দিবসটি পালিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে আজিকে শ্রমমান লইয়া যে আলোচনা হয়, জাতীয় ন্যূনতম মজুরিসহ শ্রমিকের বহু অধিকার আজিকে যে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বহু দেশে কার্যকর হইয়াছে, উহারও পশ্চাতে রহিয়াছে মে দিবসের চেতনা। তবে ইহা সত্য, বাংলাদেশে ঘটা করিয়া দিবসটি পালিত হইলেও মজুরি ও কর্মপরিবেশ প্রশ্নে খামতি সীমাহীন। প্রাতিষ্ঠানিক খাতসমূহে শ্রমিকদের জন্য এক প্রকার আইনি আশ্রয় থাকিলেও বিশাল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে উহার লেশমাত্র নাই। শেষোক্ত খাতে কোটি কোটি শ্রমিক উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য অধিকার হইতে বঞ্চিত। 

এই বৎসর শ্রমিক দিবস এমন সময়ে উপস্থিত, যখন গণঅভ্যুত্থানের ফসলস্বরূপ দেশে নূতন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে। সেই সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসাবে শ্রম খাতের সংস্কারেও উদ্যোগী। তাহাদের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে প্রতিবেদনও দাখিল করিয়াছে, যথায় দেশের সাড়ে সাত কোটি শ্রমজীবী মানুষের মৌলিক অধিকার-সংক্রান্ত একগুচ্ছ সুপারিশ রহিয়াছে। প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক, সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নিয়োজিত সকল শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণে ‘জাতীয় ন্যূনতম মজুরি’ ন্যূনতম মানদণ্ডরূপে বিবেচিত হইবে– কমিশনের এই সুপারিশ যুগান্তকারী বলিয়া আমরা মনে করি। উপরন্তু কমিশন ইহাও বলিয়াছে, কোনো খাতের মজুরি কাঠামো নির্ধারণে পরিবারে একক উপার্জনকারী হিসাবে বিবেচনায় লইয়া এমন পরিমাণ নির্ধারণ করিতে হইবে, যাহাতে শ্রমিক তাঁহার পরিবারের প্রয়োজন মিটাইতে পারেন।

বিভিন্ন খাতের শ্রমিকের মজুরি তিন বৎসর অন্তর মূল্যায়ন ও পুনর্নির্ধারণ, মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের জন্য আপৎকালীন তহবিল, ট্রেড ইউনিয়ন করিবার শর্ত শিথিল, স্থায়ী কাজের জন্য আউটসোর্সিং নিয়োগ বন্ধ, নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস এবং স্থায়ী শ্রম কমিশন প্রতিষ্ঠা-সংক্রান্ত সুপারিশসমূহও প্রণিধানযোগ্য। একটা সময় ছিল যখন শ্রমিক আন্দোলন বলিতে কারখানা ভাঙচুর ও সম্পদ ধ্বংস বোঝাইত। পরিণামে নিজের রুটি-রুজি লইয়া শ্রমিকদেরই টানাপোড়েনে পড়িতে হইত। ইহার সমাধান দিয়াছিল ট্রেড ইউনিয়ন প্রথা। দুর্ভাগ্যবশত এই দেশে ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার বিগত দশকসমূহে ক্রমশ জটিল রূপ ধারণ করে। উহার সহিত সুস্থ ধারার শ্রমিক আন্দোলনও বিরল হইয়া পড়ে।

আমাদের বিশ্বাস, শ্রম সংস্কার কমিশনের ট্রেড ইউনিয়ন-সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ আলোর মুখ দেখিলে শ্রমিক-মালিক উভয়েরই স্বার্থ রক্ষা হইবে। সর্বোপরি দেশের বিকাশমান শিল্প খাত হইবে লাভবান। উৎপাদন ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তিরূপে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে উদ্যোক্তার যদ্রূপ অবদান, তদ্রূপ শ্রমিকেরও অবদান ব্যাপক। তাই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার নিশ্চিতকরণে আর কোনো অবহেলা নহে। এইবারের মে দিবসে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে এই অঙ্গীকার গ্রহণ করিবে– ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা সমকালের পক্ষ হইতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে মে দিবসের অভিনন্দন জানাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ