ব্যবসায় প্রশাসন বা বিবিএর অনেক শাখা। শুধু সাধারণ বিবিএ নিয়ে যেমন পড়া যায়, তেমনি মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে আলাদা মেজর করা যায়। তবে চাকরির ক্ষেত্রে সব পড়াশোনাই কাজে লাগে, এমনটা নয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এসব কোর্স করতে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হন।

গ্রে অ্যাডভারটাইজিং বাংলাদেশ লিমিটেডের সার্ভিসিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন জাহিন অর্ণব। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির এই স্নাতক বলেন, ‘বিবিএ প্রোগ্রামে বিভিন্ন ধরনের কোর্স করেছি। কিছু পড়াশোনা সরাসরি বা অন্যভাবে কাজে লাগে। শতভাগই চাকরির জীবনে কাজে লেগেছে, এমন নয়। তবে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো, যোগাযোগে দক্ষতা তৈরি, মানুষের সঙ্গে মেশার ব্যাপারগুলো গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।’

করপোরেট চাকরিতে প্রয়োজন, অথচ পাঠ্যক্রমে গুরুত্ব কম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ) থেকে পড়াশোনা শেষে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস লিমিটেডের গ্লোবাল গ্র্যাজুয়েট (এয়ারক্রাফট অ্যাকুইজিশন) হিসেবে কর্মরত আছেন মো.

জুনাইদুর রহমান দেওয়ান। তিনি বলেন, ‘কিছু স্কিলের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। মাইক্রোসফট এক্সেলের কথাই ধরুন। বিবিএ স্নাতকদের জন্য এটা শেখা খুব প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, আমি এটা শিখেই বিবিএ পড়তে এসেছি। কিন্তু সবাই তো উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এটা শেখে না। তাই একদম শুরু থেকেই যদি এক্সেলে শেখানো হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হবে।’

আরও পড়ুনপ্রকৌশলের পড়ালেখার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের মিল কতখানি৩ ঘণ্টা আগে

পুঁথিগত বিদ্যার ব্যবহারিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের উপায়গুলোও পরখ করে দেখার সুযোগ পাঠ্যক্রমে থাকা উচিত বলে মনে করেন অর্ণব।

প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তরিকতা

ইন্টার্নশিপ, প্রকল্পভিত্তিক কাজ বা করপোরেট সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুযোগ শিক্ষার্থীদের পথটা নিশ্চয়ই সহজ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কি এ ক্ষেত্রে সহায়ক হয়?

জুনাইদুর রহমান জানালেন, আইবিএ প্রশাসনই তাঁদের ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করে দেয়। এটা তাঁদের পাঠ্যক্রমের অংশ। নিজে থেকে ইন্টার্নশিপ খোঁজারও সুযোগ আছে। সেটার মূল্যায়নও বেশি। কিন্তু সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থা নেই। এ প্রসঙ্গে জাহিন অর্ণবের মত, ‘সবকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। তারা হয়তো আপনাকে ইন্টার্নশিপের সুযোগ এনে দিচ্ছে না, কিন্তু ক্লাব, বিভিন্ন লিডারশিপ প্ল্যাটফর্ম ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বানিয়ে দিয়েছে। এসব ব্যবহার করে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। কীভাবে ইন্টার্নশিপ খুঁজতে হয়, কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়, সেটাও কিন্তু আপনার শিক্ষারই অংশ।’

তাঁর মতে, শেখার ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। শিক্ষার্থী থাকাকালীন কাজের ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ খুঁজতে হবে। শুধু টাকা উপার্জনের জন্য নয়, বরং নিজেকে তৈরি করার জন্য।

যেসব স্কিল অত্যাবশ্যক

অনেকের ভালো সিজিপিএ আছে, কিন্তু যোগাযোগ দক্ষতায় পিছিয়ে। মানুষের সঙ্গে তেমন মিশতে পারেন না। এসব ঘাটতি চাকরি পেতে বা কর্মক্ষেত্রে আপনাকে পিছিয়ে রাখতে পারে। অনেকেই ভাবেন, আগে ভালো ফল করে নিই, বাকি সব পরে হবে। কিন্তু এটা ভালো পদক্ষেপ নয়। বরং পড়াশোনার পাশাপাশি যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব, দলে কাজ করার মানসিকতা এবং নেটওয়ার্কিংয়ে দক্ষতা অর্জনের গুরুত্ব বুঝতে হবে। আলাদা করে সময় দিতে হবে।

আরও পড়ুনবিবিএ নিয়ে ৬ ভুল ধারণা০৪ আগস্ট ২০২২

জুনাইদুর রহমান বলেন, ‘আইবিএতে আমাদের অনেক দলগত প্রকল্পে কাজ করতে হয়। তথ্য সংগ্রহের জন্য কথা বলতে হয় নানান ধরনের মানুষের সঙ্গে। এ ছাড়া আমাদের অ্যালামনাই খুব শক্তিশালী। যেকোনো ভালো প্রতিষ্ঠানেই কেউ না কেউ আছে। তাই কাজ করতে গেলে তাঁরাও আমাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে সাহায্য করেন। ফলে এসব দক্ষতা স্বাভাবিকভাবেই গড়ে ওঠে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এই সুযোগ করে নেওয়া তুলনামূলক কঠিন। পাঠ্যসূচি ও কার্যক্রমকে আরও যুগোপযোগী করার আহ্বান জানান এখানকার পড়ুয়ারা। ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইহছানুল কবির। ম্যানেজমেন্টে স্নাতক এই তরুণ বাংলাদেশ আই হসপিটালে কাস্টমার রিলেশন অফিসার হিসেবে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদেরও বিবিএর কয়েকটি মৌলিক শাখার ধারণা দিয়ে তারপর মেজর করার সুযোগ থাকলে ভালো হতো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামে ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক নয়। টার্ম পেপারও সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে করানো হয় না। নেই নিয়মিত প্রেজেন্টেশন বা দলগত কাজের চাপ। ফলে সফট স্কিল সেভাবে গড়ে ওঠে না। অন্ততপক্ষে চাকরির ভাইভার মৌলিক বিষয়গুলো শেখানো জরুরি। তাহলে আমরা আরও ভালো করতে পারব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র ক জ কর র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।

ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ