Samakal:
2025-09-18@03:08:32 GMT

বাড়তি বোঝা ওষুধের খরচ

Published: 6th, April 2025 GMT

বাড়তি বোঝা ওষুধের খরচ

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্বামী বাদন আলীর আয় মাসে টেনেটুনে ৮-১০ হাজার টাকার ঘরে। অথচ মাসে ওষুধের পেছনেই হাজারের ওপর খরচ পড়ে যায় কবরী বেগমের। বছর তিনেক আগে তাঁর শরীরে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নবিত্ত পরিবারের এই গৃহবধূকে ইনসুলিন নিতে হয় নিয়মিত। এ দম্পতির নিজস্ব কোনো জমিজিরাত নেই। রাজবাড়ী শহরের নতুনপাড়া এলাকায় সরকারি জায়গায় ঘর তুলে থাকেন। সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে।
কবরী বেগমের (২৮) ভাষ্য, অল্প বয়সেই এমন রোগ শরীরে ধরা পড়বে ভাবতেও পারেননি। স্বামী শসা-ক্ষিরা বিক্রি করে যে আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। এর ওপর ওষুধের খরচ। ইনসুলিনের টাকা রাখার পর বাকি টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতে হয়।
ওষুধ কিনতে হয় না, রাজবাড়ীতে এখন এমন পরিবার খুঁজে পাওয়াই কঠিন। বছরের সবসময় ওষুধ খেতে হয়– এমন পরিবারের সংখ্যাও কম নয়। এদের বেশির ভাগই ভুগছেন গ্যাস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে। বহু মানুষ আছেন, যারা টাকার অভাবে নিয়মিত ওষুধ কিনতে পারেন না। ওষুধ কিনতে গিয়ে সংসার 
চালানোও কঠিন হয়ে যায় কবরীর মতো এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি।
রাজবাড়ী শহরের রেলগেট এলাকার চা দোকানি প্রণব কুমারের পায়ে ফোলা রোগ আছে। বছরের ৯ মাস ওষুধ খেতে হয় তাঁকে। প্রণব কুমারের ভাষ্য, মাসে গড়ে প্রায় তিন হাজার টাকার ওষুধ লাগে তাঁর। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু চা দোকানে সেই ফুরসত 
মেলে কীভাবে? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তো চা বানাতে হয়। কিছু করার নেই। সংসার চালাতে হলে কাজ তো করতেই হবে!
রাজবাড়ী জেলার জনসংখ্যা আনুমানিক ১০ লাখ। যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। জেলায় ১০০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে মাত্র একটি। এর বাইরে চার উপজেলায় চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২৪টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১৪২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সদরে অবস্থিত ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে সারাক্ষণই লেগে থাকে রোগীর ভিড়। জনবল কম থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।
এদিকে জেলায় ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। রাজবাড়ী ডায়াবেটিক সমিতিতে চিকিৎসার জন্য নিবন্ধন করেছেন এমন রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ী ডায়াবেটিক সমিতিতে গিয়ে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৫০ জনকে বসে থাকতে দেখা যায়। ৬৫ বছর বয়সী রাজ্জাক শেখের ভাষ্য, তিনি ও তাঁর স্ত্রী হালিমা বেগম দু’জনই নানা রোগে ভুগছেন। তাঁর ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, হৃদরোগ ও হাঁটুব্যথার সমস্যা। স্ত্রী ভুগছেন কিডনি রোগে। আগে দিনমজুরের কাজ করতেন রাজ্জাক। অসুখ-বিসুখের কারণে এখন তাও করতে পারেন না। দিনমজুর ছেলেই সংসার চালান, ওষুধপত্র কিনে দেন। কয়েক বছরে স্বামী-স্ত্রীর অসুখের পেছনে ৩০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে জানিয়ে রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ওষুধ আর ডাক্তারের পেছনেই সব টাকা চলে গেছে! সংসার চালাব কী করে।’
রাজবাড়ী মুরগি বাজারে পোলট্রির ব্যবসা রয়েছে বিনোদপুরের আবদুল আজিজ সরদারের (৭৫)। ২০০৪ সালে তাঁর ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। তখন থেকেই নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। পর্যায়ক্রমে ধরা পড়েছে হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যাও। যে কারণে ব্যবসায় সময় দিতে পারেন না। ছেলে ধরেছেন দোকানের হাল। মাসে ওষুধের জন্য গড়ে তিন হাজার টাকার মতো খরচ হয় আজিজ সরদারের। তিনি বলেন, পুরো টাকাই তো ছেলের কাছ থেকে নিতে হয়। এটা সংসারের ওপর বাড়তি চাপ।
রাজবাড়ী ডায়াবেটিক হাসপাতালের 
কো-অর্ডিনেটর আইনুদ্দিন শেখ জানান, তাদের এখানে ২৭ হাজার রোগীর বই আছে। ডায়াবেটিস রোগীদের সেবা দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। প্রতিবন্ধী রোগীদের চিকিৎসা খরচ পুরোপুরিই বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
শহরের বিনোদপুর এলাকার মানিক ফার্মেসির মালিক মানিক চক্রবর্তী জানান, তাঁর দোকান থেকে ওষুধ কিনতে আসা বেশির ভাগ মানুষই গরিব। নুন আনতে পানতা ফুরোয় অবস্থা। একটু সুস্থতার জন্য তারা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। অনেকেই টাকার অভাবে ওষুধ না কিনেই ফিরে যান।
এরই মধ্যে বেশ কিছু ওষুধের দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যদিও রাজবাড়ী কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমানের দাবি, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির সুযোগ নেই। ওষুধের মেয়াদ শেষ হলে বাক্সে রেখে লিখে দিতে হবে– বিক্রয় নিষেধ। এ নির্দেশনা সব ওষুধ ব্যবসায়ীকে দেওয়া আছে। কখনও কখনও ভুলে বা বেখেয়ালে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ তাঁকে (র‍্যাক) থেকে যেতে পারে।
যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ অভিযোগে ৩২টি ফার্মেসিকে জরিমানা করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে সংস্থাটির রাজবাড়ী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান বলেন, সাধারণত ওষুধ ব্যবসা পরিচালনা হয় ড্রাগ অ্যাক্টের মাধ্যমে। এতে থাকা ১৪টি শর্তের একটি হলো মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সংরক্ষণ। এই শর্ত অমান্য করলে তারা জরিমানা করতে পারেন।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা.

এস এম মাসুদের মতে, গ্যাস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো রোগ পুরোপুরি নিরাময় হওয়া কঠিন। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। বেশির ভাগ মানুষ খাদ্য ঠিকভাবে চিবিয়ে খান না। এ জন্য গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। ধীরে-সুস্থে খেলে বা ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চললে এ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। বংশগত 
কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে এসবের 
ওষুধ লম্বা সময় ধরে সেবনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধে ক্ষতি হতেই পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ দেন। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, তারা এসব নিয়মিত মনিটর করছেন। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

আঠারো শতকের সুফি কবি ও সংগীতজ্ঞ সৈয়দ খাজা মীর দর্দ

আবদালি মারাঠিদের উৎপাত ও অত্যাচারে অন্য কবিরা যখন একে একে দিল্লি ছেড়ে লক্ষ্ণৌ চলে গিয়েছিলেন, তখনো প্রিয় শহর দিল্লি ছাড়েননি সৈয়দ খাজা মীর দর্দ (১৭২০-১৭৮৪ খ্রি.), বরং আমৃত্যু সেখানেই থেকে গিয়েছিলেন। লক্ষ্ণৌয়ে অবস্থানকারী কবিদের কাব্যবৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তাঁর কবিতার যে পার্থক্য ছিল, শুধু সে কারণেই তিনি সেই জায়গায় যাননি তা নয়, তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রখর, কারও তারিফ করে কখনো কসিদা লিখেছেন বলে শোনা যায়নি, সর্বোপরি তাঁর জীবনদর্শনও ছিল সমকালিক অন্য কবিদের থেকে আলাদা। মধ্যযুগের যে সময়টায় মীর দর্দের জন্ম, সেই সময় উর্দু সাহিত্যে ‘মীর-সওদার যুগ’ বলে পরিচিত—এই দুই কবি পারস্য কবি খাজা শামসুদ্দিন হাফিজ সিরাজি ও শেখ মোসলেহ উদ্দিন সাদির পথ অনুসরণ করে ফারসি কবিতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে উর্দু কবিতার ধারায় যুক্ত করেন এবং সফল হন। মির্জা রফী সওদার চেয়েও সাত বছরের অগ্রজ মীর দর্দ এই সবকিছুই নিবিড়ভাবে লক্ষ করেছেন, পারস্য ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ভান্ডার থেকে অনেক কিছু গ্রহণও করেছেন, তবু আমাদের ধারণা, পারিবারিক বংশধারার প্রভাবেই তাঁর জীবনদর্শন ও কাব্যচিন্তা শুরু থেকেই ভিন্ন ছিল।

মধ্যযুগের যে সময়টায় মীর দর্দের জন্ম, সেই সময় উর্দু সাহিত্যে ‘মীর-সওদার যুগ’ বলে পরিচিত—এই দুই কবি পারস্য কবি খাজা শামসুদ্দিন হাফিজ সিরাজি ও শেখ মোসলেহ উদ্দিন সাদির পথ অনুসরণ করে ফারসি কবিতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে উর্দু কবিতার ধারায় যুক্ত করেন এবং সফল হন।

মাহমুদ আলী খান জামী তাঁর ‘দর্দ কে সো শের’ (প্রকাশকাল: ১৯৫৫ খ্রি., দিল্লি) গ্রন্থে লিখেছেন, খাজা মীর দর্দের দাদা বাদশাহ আলমগীরের শাসনামলে বুখারা থেকে এ দেশে এসেছিলেন, আর বাবা খাজা মাহমুদ নাসির আন্দালিব ছিলেন ‘শায়েরে উর্দু’ এবং ব্যক্তিগত জীবনে একজন সুফি। ভিন্ন মতে, তাঁর বাবার নাম (মাহমুদ নাসির নয়) মুহাম্মদ, আর তিনি উর্দু ভাষার কবি ছিলেন না, ছিলেন ফারসি ভাষার কবি। এঁরা ছিলেন নকশবন্দী ঘরানার পথিকৃৎ খাজা বাহাউদ্দিনের বংশধর ও অনুসারী। সুফি পরম্পরার মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন বলেই মাত্র বাইশ বছর—ভিন্ন মতে, সাতাশ বছর বয়সে জাগতিক মোহ ত্যাগ করে সুফি শুদ্ধাচারী হয়ে ওঠেন দর্দ এবং সুফি তত্ত্বসংক্রান্ত একাধিক বই লেখেন। ফলে তিনি যখন শের ও গজল লেখেন, তখন সেগুলোতে স্বভাবগত কারণেই সুফি মরমি কবিতার সহজগভীর ভাবের ছায়া পড়েছে। নিচে দর্দ কে সো শের বই থেকে—অন্যত্র গজলরূপে গণ্য এবং গীত—প্রথম ৩টি শের পড়লে এ কথার সত্যতা মিলতে পারে :

তোহমতে চন্দ অপনে জিম্মে ধর চলে
জিস লিয়ে আয়ে থে হম সো কর চলে
জিন্দেগি হ্যয় য়া কোই তোফান হ্যয়
হম তো ইস জিনে কে হাথোঁ মে মর চলে
শমা কে মানিন্দ হম ইস বজম মে
চশম নম আয়ে থে দামন তর চলে

অর্থাৎ :

কত অপবাদ বয়ে নিয়ে আমি চলছি
অথচ যে কারণে এসেছি তা–ই করে গেছি
এ কোনো জীবন, নাকি তুফান
তার হাতেই তো আমি মারা যাব
এই সভার প্রদীপ ছিলাম আমি
এখন আমার চোখের জলে আঁচল ভিজে যায়

[অনুবাদ: লেখক]

অল্প বয়স থেকে যিনি এমন ভাবনায় তাড়িত, তাঁর গজলে এই প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। সুফি কবি ও সাধক হিসেবে স্বীকৃত হলেও গজলকার হিসেবে যেরকম গণ্য হননি খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি, ঠিক একই কারণেই গজলকার হিসেবে কেউ কেউ তাঁর নাম সমকালের মীর তকী মীর ও মির্জা রফী সওদার কাতারে রাখতে কুণ্ঠিত। অবশ্য এ ক্ষেত্রে খোদ মীর তকী মীরের একটি মন্তব্য আছে, যা অনেকেই উদ্ধৃত করেন, তা হলো: তিনি নাকি আড়াইজন কবিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতেন, যার মধ্যে একজন তিনি নিজে, অন্যজন মির্জা রফী সওদা আর অর্ধজন হলেন খাজা মীর দর্দ।

তাঁর এমন সহজগভীর ভাষার জন্য বোধ হয় বেশ কিছু অনুসারী তৈরি হয়েছিল, যাঁরা নিয়মিত তাঁর মাহফিলে আসতেন। শুধু ভাবশিষ্যরাই নন, সংগীতশাস্ত্রে পারদর্শী খাজা মীর দর্দ মর্যাদার ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যে তাঁর পাক্ষিক আসরে অনুরাগী হিসেবে কখনো কখনো বাদশাহ শাহ আলমও আসতেন।

শের ও গজলের ক্ষেত্রে মীর তকি মীর শেষমেশ যে উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন সেই জায়গা থেকে বিচার করে তাঁর এই কথাটিকে সদর্থে ধরে নিলে কবিতায় খাজা মীর দর্দের অবদানকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন না করে উপায় নেই। আসলে পারস্য কবিতার ঐতিহ্য ধারণ করে উর্দু গজলে যখন পরবর্তীকালের জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নারীর সঙ্গে আলাপের আবহ তৈরি হচ্ছে, খাজা দর্দ তখন একই উৎস থেকে গ্রহণ করেছিলেন সুফি ঐতিহ্য। সমালোচকদের মতে, তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘দিওয়ান-এ উর্দু’, কিন্তু তাঁর ‘শমা-এ মহফিল’, ‘আহ-এ দর্দ’, ‘দর্দ-এ দিল’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের প্রাঞ্জল ভাষা ও সুফিহৃদয়ের ভাব সেই সময় ও পরবর্তীকালের কবিদেরকেও প্রভাবিত করেছে। তাঁর একটি অনবদ্য শের হলো: ‘তমান্না তেরি হ্যাঁয় অগর হ্যাঁয় তমান্না/ তেরি আরজু হ্যায় অগর আরজু হ্যায়’ অর্থাৎ, আকাঙ্ক্ষা যদি থাকে, তা তোমারই আকাঙ্ক্ষা/ আশা তোমার জন্য, আদৌ আশা বলে যদি কিছু থাকে’। প্রেমের এমন একনিষ্ঠ নিবেদন খাজা দর্দের শেরেই পাওয়া সম্ভব। নিচে পড়ে নিতে পারি তাঁর আরও একটি জনপ্রিয় শের:

হাজারোঁ খওয়াহিশেঁ অ্যায়সি কে হর খওয়াহিশ পে দম নিকলে
বহুত নিকলে ম্যারে আরমান ল্যাকিন পির ভি কম নিকলে

অর্থাৎ :

এমন হাজার বাসনা আমার, যার প্রতিটি বাসনার জন্য প্রাণ ওষ্ঠাগত
কিছু আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো বটে; কিন্তু তা খুবই সামান্য

তাঁর এমন সহজগভীর ভাষার জন্য বোধ হয় বেশ কিছু অনুসারী তৈরি হয়েছিল, যাঁরা নিয়মিত তাঁর মাহফিলে আসতেন। শুধু ভাবশিষ্যরাই নন, সংগীতশাস্ত্রে পারদর্শী খাজা মীর দর্দ মর্যাদার ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যে তাঁর পাক্ষিক আসরে অনুরাগী হিসেবে কখনো কখনো বাদশাহ শাহ আলমও আসতেন।

আরও পড়ুনএকাদশ শতকের সুফি কবি হাকিম সানায়ি গজনভি২৮ আগস্ট ২০২৫

মীর দর্দের এমন উচ্চাসনে পৌঁছার অন্য একটি কারণ হলো, তাঁর জন্মের বহু আগে থেকেই গান শোনা ও তার চর্চা বিষয়ে যে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছিল, সে বিষয়ে তাঁর সবিস্তার আলোচনা এবং গানবিষয়ক গান লেখার উদাহরণ। আমাদের অজানা নয়, গান বিষয়ে কওয়ালির প্রতিষ্ঠাতা আমির খসরুর একাধিক বাণী আছে, যেমন: ‘গান হলো আত্মার খোরাক’, ‘দরবেশের কাছে গান হলো ঐশ্বরিক জ্যোতির সমতুল’ ইত্যাদি, আর দর্দ লিখেছেন: ‘অগর ঘিনা নফস কো বড়্কায়ে তো হারাম, অগর দিল কো ইলাহ কি তরফ নরম করে তো হালাল’ অর্থাৎ গান যদি মনকে প্রবৃত্তিতাড়িত হতে উসকে দেয় তাহলে হারাম, আর স্রষ্টামুখী করলে হালাল’। এ বিষয়ে দর্দের যে শের রয়েছে, সেটি আরও সুন্দর :

সামা’ আহলে দিল কো হ্যা সোদমন্দ দর্দ
কে ইস সে নরম হোতা হ্যা পাত্থর কা দিল ভি

অর্থাৎ :

হৃদয়বান মানুষের জন্য গান উপকারী, হে দর্দ
কারণ পাথরের মতো হৃদয়ও তাতে গলে যায়।

উল্লেখ্য যে, গান বিষয়ে আলোচনা করবার সময় এ অঞ্চলের গবেষক ও সুফি-বাউল-ফকিরেরা ইমাম গাজ্জালি, মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি ও আমির খসরুর বইয়ের তথ্যের উল্লেখ করেন, কিন্তু প্রকাশ ও প্রচারের অভাবে কোথাও সৈয়দ খাজা মীর দর্দের কথা পাওয়া যায় না। জাভেদ হুসেন দর্দের কয়েকটি গজল অনুবাদ করতে গিয়ে তার ভূমিকায় লিখেছেন: ‘দর্দ ছিলেন একজন বড় সংগীতজ্ঞ। সুফি সাধনায় সংগীতের ভূমিকা নিয়ে হুরমতে ঘিনা নামে পুস্তিকা লিখেছেন। উর্দু গজলের গীতিময়তা আজ দেখা যায় তাতে দর্দের ভূমিকা ব্যাপক ও গভীর।’ এই পুস্তিকাটি দুর্লভ, ভবিষ্যতে এটি অনূদিত হলে শায়ের ও গজলকার মীর দর্দের পাশাপাশি সংগীতচিন্তক হিসেবে তাঁর পরিচয়টাও আমরা জানতে পারব।

অন্য আলো–য় লিখতে পারেন আপনিও। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধসহ আপনার সৃজনশীল, মননশীল যেকোনো ধরনের লেখা পাঠিয়ে দিন। পাঠাতে পারেন প্রকাশিত লেখার ব্যাপারে মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া।
ই–মেইল: [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ