Samakal:
2025-05-01@04:47:27 GMT

বাড়তি বোঝা ওষুধের খরচ

Published: 6th, April 2025 GMT

বাড়তি বোঝা ওষুধের খরচ

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্বামী বাদন আলীর আয় মাসে টেনেটুনে ৮-১০ হাজার টাকার ঘরে। অথচ মাসে ওষুধের পেছনেই হাজারের ওপর খরচ পড়ে যায় কবরী বেগমের। বছর তিনেক আগে তাঁর শরীরে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নবিত্ত পরিবারের এই গৃহবধূকে ইনসুলিন নিতে হয় নিয়মিত। এ দম্পতির নিজস্ব কোনো জমিজিরাত নেই। রাজবাড়ী শহরের নতুনপাড়া এলাকায় সরকারি জায়গায় ঘর তুলে থাকেন। সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে।
কবরী বেগমের (২৮) ভাষ্য, অল্প বয়সেই এমন রোগ শরীরে ধরা পড়বে ভাবতেও পারেননি। স্বামী শসা-ক্ষিরা বিক্রি করে যে আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। এর ওপর ওষুধের খরচ। ইনসুলিনের টাকা রাখার পর বাকি টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতে হয়।
ওষুধ কিনতে হয় না, রাজবাড়ীতে এখন এমন পরিবার খুঁজে পাওয়াই কঠিন। বছরের সবসময় ওষুধ খেতে হয়– এমন পরিবারের সংখ্যাও কম নয়। এদের বেশির ভাগই ভুগছেন গ্যাস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে। বহু মানুষ আছেন, যারা টাকার অভাবে নিয়মিত ওষুধ কিনতে পারেন না। ওষুধ কিনতে গিয়ে সংসার 
চালানোও কঠিন হয়ে যায় কবরীর মতো এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি।
রাজবাড়ী শহরের রেলগেট এলাকার চা দোকানি প্রণব কুমারের পায়ে ফোলা রোগ আছে। বছরের ৯ মাস ওষুধ খেতে হয় তাঁকে। প্রণব কুমারের ভাষ্য, মাসে গড়ে প্রায় তিন হাজার টাকার ওষুধ লাগে তাঁর। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু চা দোকানে সেই ফুরসত 
মেলে কীভাবে? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তো চা বানাতে হয়। কিছু করার নেই। সংসার চালাতে হলে কাজ তো করতেই হবে!
রাজবাড়ী জেলার জনসংখ্যা আনুমানিক ১০ লাখ। যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। জেলায় ১০০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে মাত্র একটি। এর বাইরে চার উপজেলায় চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২৪টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১৪২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সদরে অবস্থিত ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে সারাক্ষণই লেগে থাকে রোগীর ভিড়। জনবল কম থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।
এদিকে জেলায় ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। রাজবাড়ী ডায়াবেটিক সমিতিতে চিকিৎসার জন্য নিবন্ধন করেছেন এমন রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ী ডায়াবেটিক সমিতিতে গিয়ে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৫০ জনকে বসে থাকতে দেখা যায়। ৬৫ বছর বয়সী রাজ্জাক শেখের ভাষ্য, তিনি ও তাঁর স্ত্রী হালিমা বেগম দু’জনই নানা রোগে ভুগছেন। তাঁর ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, হৃদরোগ ও হাঁটুব্যথার সমস্যা। স্ত্রী ভুগছেন কিডনি রোগে। আগে দিনমজুরের কাজ করতেন রাজ্জাক। অসুখ-বিসুখের কারণে এখন তাও করতে পারেন না। দিনমজুর ছেলেই সংসার চালান, ওষুধপত্র কিনে দেন। কয়েক বছরে স্বামী-স্ত্রীর অসুখের পেছনে ৩০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে জানিয়ে রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ওষুধ আর ডাক্তারের পেছনেই সব টাকা চলে গেছে! সংসার চালাব কী করে।’
রাজবাড়ী মুরগি বাজারে পোলট্রির ব্যবসা রয়েছে বিনোদপুরের আবদুল আজিজ সরদারের (৭৫)। ২০০৪ সালে তাঁর ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। তখন থেকেই নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। পর্যায়ক্রমে ধরা পড়েছে হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যাও। যে কারণে ব্যবসায় সময় দিতে পারেন না। ছেলে ধরেছেন দোকানের হাল। মাসে ওষুধের জন্য গড়ে তিন হাজার টাকার মতো খরচ হয় আজিজ সরদারের। তিনি বলেন, পুরো টাকাই তো ছেলের কাছ থেকে নিতে হয়। এটা সংসারের ওপর বাড়তি চাপ।
রাজবাড়ী ডায়াবেটিক হাসপাতালের 
কো-অর্ডিনেটর আইনুদ্দিন শেখ জানান, তাদের এখানে ২৭ হাজার রোগীর বই আছে। ডায়াবেটিস রোগীদের সেবা দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। প্রতিবন্ধী রোগীদের চিকিৎসা খরচ পুরোপুরিই বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
শহরের বিনোদপুর এলাকার মানিক ফার্মেসির মালিক মানিক চক্রবর্তী জানান, তাঁর দোকান থেকে ওষুধ কিনতে আসা বেশির ভাগ মানুষই গরিব। নুন আনতে পানতা ফুরোয় অবস্থা। একটু সুস্থতার জন্য তারা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। অনেকেই টাকার অভাবে ওষুধ না কিনেই ফিরে যান।
এরই মধ্যে বেশ কিছু ওষুধের দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যদিও রাজবাড়ী কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমানের দাবি, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির সুযোগ নেই। ওষুধের মেয়াদ শেষ হলে বাক্সে রেখে লিখে দিতে হবে– বিক্রয় নিষেধ। এ নির্দেশনা সব ওষুধ ব্যবসায়ীকে দেওয়া আছে। কখনও কখনও ভুলে বা বেখেয়ালে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ তাঁকে (র‍্যাক) থেকে যেতে পারে।
যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ অভিযোগে ৩২টি ফার্মেসিকে জরিমানা করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে সংস্থাটির রাজবাড়ী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান বলেন, সাধারণত ওষুধ ব্যবসা পরিচালনা হয় ড্রাগ অ্যাক্টের মাধ্যমে। এতে থাকা ১৪টি শর্তের একটি হলো মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সংরক্ষণ। এই শর্ত অমান্য করলে তারা জরিমানা করতে পারেন।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা.

এস এম মাসুদের মতে, গ্যাস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো রোগ পুরোপুরি নিরাময় হওয়া কঠিন। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। বেশির ভাগ মানুষ খাদ্য ঠিকভাবে চিবিয়ে খান না। এ জন্য গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। ধীরে-সুস্থে খেলে বা ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চললে এ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। বংশগত 
কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে এসবের 
ওষুধ লম্বা সময় ধরে সেবনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধে ক্ষতি হতেই পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ দেন। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, তারা এসব নিয়মিত মনিটর করছেন। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ

এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।

ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।

‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।

ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।

খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।

এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী

ডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।

প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।

পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।

ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।

নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউব

ইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।

ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।

ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।

২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।

মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ