Samakal:
2025-07-31@06:28:08 GMT

বাড়তি বোঝা ওষুধের খরচ

Published: 6th, April 2025 GMT

বাড়তি বোঝা ওষুধের খরচ

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী স্বামী বাদন আলীর আয় মাসে টেনেটুনে ৮-১০ হাজার টাকার ঘরে। অথচ মাসে ওষুধের পেছনেই হাজারের ওপর খরচ পড়ে যায় কবরী বেগমের। বছর তিনেক আগে তাঁর শরীরে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিম্নবিত্ত পরিবারের এই গৃহবধূকে ইনসুলিন নিতে হয় নিয়মিত। এ দম্পতির নিজস্ব কোনো জমিজিরাত নেই। রাজবাড়ী শহরের নতুনপাড়া এলাকায় সরকারি জায়গায় ঘর তুলে থাকেন। সংসারে এক ছেলে ও এক মেয়ে।
কবরী বেগমের (২৮) ভাষ্য, অল্প বয়সেই এমন রোগ শরীরে ধরা পড়বে ভাবতেও পারেননি। স্বামী শসা-ক্ষিরা বিক্রি করে যে আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। এর ওপর ওষুধের খরচ। ইনসুলিনের টাকা রাখার পর বাকি টাকা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালাতে হয়।
ওষুধ কিনতে হয় না, রাজবাড়ীতে এখন এমন পরিবার খুঁজে পাওয়াই কঠিন। বছরের সবসময় ওষুধ খেতে হয়– এমন পরিবারের সংখ্যাও কম নয়। এদের বেশির ভাগই ভুগছেন গ্যাস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগে। বহু মানুষ আছেন, যারা টাকার অভাবে নিয়মিত ওষুধ কিনতে পারেন না। ওষুধ কিনতে গিয়ে সংসার 
চালানোও কঠিন হয়ে যায় কবরীর মতো এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি।
রাজবাড়ী শহরের রেলগেট এলাকার চা দোকানি প্রণব কুমারের পায়ে ফোলা রোগ আছে। বছরের ৯ মাস ওষুধ খেতে হয় তাঁকে। প্রণব কুমারের ভাষ্য, মাসে গড়ে প্রায় তিন হাজার টাকার ওষুধ লাগে তাঁর। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু চা দোকানে সেই ফুরসত 
মেলে কীভাবে? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তো চা বানাতে হয়। কিছু করার নেই। সংসার চালাতে হলে কাজ তো করতেই হবে!
রাজবাড়ী জেলার জনসংখ্যা আনুমানিক ১০ লাখ। যাদের বেশির ভাগই দরিদ্র। দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। জেলায় ১০০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে মাত্র একটি। এর বাইরে চার উপজেলায় চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২৪টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১৪২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সদরে অবস্থিত ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে সারাক্ষণই লেগে থাকে রোগীর ভিড়। জনবল কম থাকায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।
এদিকে জেলায় ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। রাজবাড়ী ডায়াবেটিক সমিতিতে চিকিৎসার জন্য নিবন্ধন করেছেন এমন রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ী ডায়াবেটিক সমিতিতে গিয়ে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৫০ জনকে বসে থাকতে দেখা যায়। ৬৫ বছর বয়সী রাজ্জাক শেখের ভাষ্য, তিনি ও তাঁর স্ত্রী হালিমা বেগম দু’জনই নানা রোগে ভুগছেন। তাঁর ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, হৃদরোগ ও হাঁটুব্যথার সমস্যা। স্ত্রী ভুগছেন কিডনি রোগে। আগে দিনমজুরের কাজ করতেন রাজ্জাক। অসুখ-বিসুখের কারণে এখন তাও করতে পারেন না। দিনমজুর ছেলেই সংসার চালান, ওষুধপত্র কিনে দেন। কয়েক বছরে স্বামী-স্ত্রীর অসুখের পেছনে ৩০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে জানিয়ে রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ওষুধ আর ডাক্তারের পেছনেই সব টাকা চলে গেছে! সংসার চালাব কী করে।’
রাজবাড়ী মুরগি বাজারে পোলট্রির ব্যবসা রয়েছে বিনোদপুরের আবদুল আজিজ সরদারের (৭৫)। ২০০৪ সালে তাঁর ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। তখন থেকেই নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। পর্যায়ক্রমে ধরা পড়েছে হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যাও। যে কারণে ব্যবসায় সময় দিতে পারেন না। ছেলে ধরেছেন দোকানের হাল। মাসে ওষুধের জন্য গড়ে তিন হাজার টাকার মতো খরচ হয় আজিজ সরদারের। তিনি বলেন, পুরো টাকাই তো ছেলের কাছ থেকে নিতে হয়। এটা সংসারের ওপর বাড়তি চাপ।
রাজবাড়ী ডায়াবেটিক হাসপাতালের 
কো-অর্ডিনেটর আইনুদ্দিন শেখ জানান, তাদের এখানে ২৭ হাজার রোগীর বই আছে। ডায়াবেটিস রোগীদের সেবা দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। প্রতিবন্ধী রোগীদের চিকিৎসা খরচ পুরোপুরিই বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে।
শহরের বিনোদপুর এলাকার মানিক ফার্মেসির মালিক মানিক চক্রবর্তী জানান, তাঁর দোকান থেকে ওষুধ কিনতে আসা বেশির ভাগ মানুষই গরিব। নুন আনতে পানতা ফুরোয় অবস্থা। একটু সুস্থতার জন্য তারা জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। অনেকেই টাকার অভাবে ওষুধ না কিনেই ফিরে যান।
এরই মধ্যে বেশ কিছু ওষুধের দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যদিও রাজবাড়ী কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমানের দাবি, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির সুযোগ নেই। ওষুধের মেয়াদ শেষ হলে বাক্সে রেখে লিখে দিতে হবে– বিক্রয় নিষেধ। এ নির্দেশনা সব ওষুধ ব্যবসায়ীকে দেওয়া আছে। কখনও কখনও ভুলে বা বেখেয়ালে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ তাঁকে (র‍্যাক) থেকে যেতে পারে।
যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ অভিযোগে ৩২টি ফার্মেসিকে জরিমানা করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করে সংস্থাটির রাজবাড়ী কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান বলেন, সাধারণত ওষুধ ব্যবসা পরিচালনা হয় ড্রাগ অ্যাক্টের মাধ্যমে। এতে থাকা ১৪টি শর্তের একটি হলো মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য সংরক্ষণ। এই শর্ত অমান্য করলে তারা জরিমানা করতে পারেন।
রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা.

এস এম মাসুদের মতে, গ্যাস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো রোগ পুরোপুরি নিরাময় হওয়া কঠিন। এসব রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। বেশির ভাগ মানুষ খাদ্য ঠিকভাবে চিবিয়ে খান না। এ জন্য গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। ধীরে-সুস্থে খেলে বা ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চললে এ থেকে মুক্তি মিলতে পারে। বংশগত 
কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। তবে এসবের 
ওষুধ লম্বা সময় ধরে সেবনে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধে ক্ষতি হতেই পারে। তাই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পরামর্শ দেন। মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, তারা এসব নিয়মিত মনিটর করছেন। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতির মামলায় শেখ হাসিনার পরিবারের ৭ সদস্যের বিচার শুরু, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের পৃথক ছয়টি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন ও ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক মো. রবিউল আলম আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম ও সুলতান মাহমুদ।

আগামী ১১ ও ১৩ আগস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের ঠিক করা হয়েছে।

মামলায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যরা হলেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি)।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের পৃথক ছয়টি মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে অভিযোগ গঠনের পক্ষে আদালতে যুক্তি তুলে ধরা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন আদালত।

এর আগে গত ২০ জুলাই পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের ৭ সদস্যসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি এই আদালতে বদলি হয়।

দুদকের পিপি মীর আহমেদ আলী সালাম প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগের ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের আদালতে হাজির হওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে মামলাগুলো বিচারের জন্য অন্য আদালতে বদলির আদেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিন মামলায় গত এপ্রিলে শেখ হাসিনা, তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে পৃথক তিনটি মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। তিনটি মামলায় তাঁদের ছাড়াও সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদসহ ১৬ জন অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।

২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের নামে বরাদ্দ নেওয়া প্লটের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা করে দুদক।

পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ছয়টি মামলায় শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে গত ১০ মার্চ অভিযোগপত্রের অনুমোদন দেয় দুদক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ