আসছে অস্বাভাবিক গরম, সরকারের প্রস্তুতি কী
Published: 8th, April 2025 GMT
আবারও আমরা চরম গরমের মৌসুমে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। এখনই সেটি বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। এসপিএআইয়ের বৈশ্বিক খরা মনিটরিংয়ের একটা ওয়েবসাইট রয়েছে। ওই ওয়েবসাইটে যদি ঢোকেন, বাংলাদেশের অবস্থান দেখলে দেখবেন ‘লাল’ হয়ে আছে। আমাদের আবহাওয়াবিদেরা কি এ নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছেন?
অন্তর্বর্তী সরকারে বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা হিসেবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দায়িত্ব নেওয়ার পর সবাই বেশ আনন্দিত হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, এবার নতুন কিছু দেখতে পাবো। হ্যাঁ! আগের অনেক পরিবেশ ‘অবান্ধব’ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবেশদূষণে সরকারের দায় কিছুটা কমেছে; কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় যথেষ্ট উদ্যোগ এখনো দেখা যাচ্ছে না। হয়তো সামনে আমরা কিছু দেখতে পাব।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বরং এ ক্ষেত্রে বেশ সচেষ্ট। তারা সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রের টেন্ডার করছেন। নতুন নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালার খসড়া করেছে। এ ছাড়া সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার যাতে ভালো মতো হয়, সেই ব্যাপারে তাঁরা চেষ্টা করছেন; কিন্তু সুফল আসতে তো আরও অনেক সময় লাগবে।
ঢাকাসহ সারা দেশে পানির স্তর যে অস্বাভাবিকভাবে নেমে যাচ্ছে, তা রোধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? ঢাকায় যেখানে ১৯৯৬ সালে পানির স্তর ২৫ মিটার নিচে ছিল, তা এখন চলে এসেছে ৭৫ মিটারে। একটি শহরের ১৫ শতাংশ জলাশয় থাকা উচিত। আর ঢাকায় আছে মাত্র ২ দশমিক ৯ শতাংশ। পানির স্তর নেমে যাওয়া নিয়ে গুগলে সার্চ করলে এর অনেক খবর পাওয়া যাবে। এটা শুধু সুপেয় পানির অভাবের বিষয় নয়; ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ হলে দেশকে আরও ভঙ্গুর করে ফেলবে। কোনো চেষ্টা কি করা হচ্ছে ঠেকানোর?
গত বছর তীব্র গরমের সময় হাইপ উঠেছিল গাছ লাগানোর। আমরা শুনেছিলাম, তৎকালীন চিফ হিট অফিসার নাকি ৫০ হাজার গাছ লাগিয়েছিলেন। সেই গাছগুলা এখন কোথায় কেউ বলতে পারবেন? গাছ লাগানোর ব্যাপারে সামনের বর্ষার আগেই সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। মানুষ এই সরকারকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।এ দেশে ৫০ বছরে হারিয়ে গেছে ৫২০টি নদী। নদীগুলো উদ্ধারের কোনো চিন্তা কি সরকারের আছে? সরকার তো এখন্র জাতিসংঘের পানিপ্রবাহ কনভেনশনে স্বাক্ষরই করেনি। দায়িত্ব গ্রহণের তিন মাসের মধ্যে সেটি হওয়া দরকার ছিল।
এবার প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরে মানুষের বহুল প্রত্যাশিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে স্বাক্ষর হয়নি। এদিকে জিয়াউর রহমানের সময়ে পরিকল্পনা করা গঙ্গা ব্যারাজ, ভারতের বাধার জন্য টেন্ডারে যেতে পারেনি, সেটি নিয়েও কোনো কথা হচ্ছে না। এমনকি বিএনপিও যেন সেটি বেমালুম ভুলে গেছে। বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী পাওয়া আসলে যেকোনো দেশের জন্যই সৌভাগ্যের বিষয়। নদী পুনঃখনন এবং খাল উদ্ধারের জন্য মেগা পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না। বর্ষাকালে আমরা পানি কীভাবে ধরে রাখব? আমরা জানি, এই সরকারের মেয়াদ বেশি দিন হয়নি। কিন্তু এই সরকার পথ দেখিয়ে গেলে পরের সরকার অনেক কিছু বন্ধ করতে পারবে না।
প্রধান উপদেষ্টা চীনের কাছে ৫০ বছরের জন্য নদী পরিকল্পনা চেয়েছেন; কিন্তু আমাদের ২০১৮ সালে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতায় ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০ এবং ২০২০ সালে জাপানের সহযোগিতায় নদী ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। তাহলে নতুন করে একই কাজ আবার কেন? প্রধান উপদেষ্টাকে এ তথ্য দেওয়ার দায়িত্ব কার?
গত বছর তীব্র গরমের সময় হাইপ উঠেছিল গাছ লাগানোর। আমরা শুনেছিলাম, তৎকালীন চিফ হিট অফিসার নাকি ৫০ হাজার গাছ লাগিয়েছিলেন। সেই গাছগুলা এখন কোথায় কেউ বলতে পারবেন? গাছ লাগানোর ব্যাপারে সামনের বর্ষার আগেই সমন্বিত পরিকল্পনা দরকার। মানুষ এই সরকারকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।
বিশ্বে বনভূমি দখলের শীর্ষে আছে বাংলাদেশ। সারা দেশে দখল করা বনভূমি ২ লাখ ৫৭ হাজার একর। এই বনভূমি উদ্ধারে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? এই বনভূমিগুলো উদ্ধার করে গাছ লাগালেই তো দেশ অনেকখানি আগের সৌন্দর্য ফিরে পায়। এদিকে প্রতিবছর আবাদি জমি কমছে ৩৮ হাজার একর করে। ভারতে আবাদি জমি সংরক্ষণ আইন আছে, আমাদের দেশে কেন করা হচ্ছে না?
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, এই দেশের বায়ুদূষণের ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী ভারত। এটা গবেষণা দিয়ে প্রমাণিত; কিন্তু বাকি ৭০ শতাংশের জন্য আপনাদের প্রচেষ্টা আমরা দেখতে চাই। ঢাকায় মিথেন গ্যাসের পরিমাণ অত্যধিক বেশি। যার ফলে গরমও বেশি। এর কারণ হিসেবে মাতুয়াইলের ময়লার ডিপোর কথা বলা হয়। এ ছাড়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ ২০২১ সালে বণিক বার্তায় প্রকাশিত একটি লেখায় দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন—ঢাকায় মিথেন গ্যাস আধিক্যের একটি বড় কারণ হতে পারে গ্যাসের লাইনের লিকেজ। কিন্তু এ ব্যাপারটি এখনো কেউ আমলে নিয়েছেন বলে জানি না।
আমাদের করণীয় কী? আপনারা সবাই ‘থ্রি আর’-এর কথা শুনেছেন (রিডিউস, রিইউজ ও রিসাইকেল)। আমাদের সবার আগে পানির অপচয় কমাতে হবে। বিটিভির ইত্যাদি বহু আগে একটি ক্লিপ বানিয়েছিল— কীভাবে পানির অপচয় কমানো যায়, সে রকম প্রচারণা দরকার। পরিবেশ নিয়ে মিডিয়া প্রচারণা নেই বললেই চলে। এই দেশে ‘গ্রে ওয়াটার রিসাইকেল’ সিস্টেম চলে এসেছে। যার মাধ্যমে খুব অল্প খরচে আমরা বাসাবাড়ির ৮৫ শতাংশ পানি রিসাইকেল করে আবার ব্যবহার করতে পারি। দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে এখন। এ ব্যাপারে সরকারের প্রচারণা দরকার। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের এসি ২৫ ডিগ্রিতে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ভালো একটি সিদ্ধান্ত।
সারা বিশ্বই অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের সমস্যায় ভুগছে। আর আসছে নতুন নতুন টেকনোলজি; কিন্তু আমাদের দেশে মানুষদের মধ্যে এর প্রচারণা নেই। দরকার সরকারি পর্যায়ে প্রচারণা এবং ট্যাক্সের সুবিধা দেওয়া। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার একা দাবদাহ ঠেকাতে পারবে না; কিন্তু সবাইকে নিয়ে করার দায়িত্বও সরকারের।
দেশে পরিবেশ প্রকৌশল এবং বিজ্ঞান থেকে পাস করা অনেকে আছেন। তাঁদের ব্যবহার করতে হবে। সরকারি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বেসরকারি খাতের বিশেষজ্ঞ, একাডেমিশিয়ান এবং প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে একটি পরিবেশসংক্রান্ত দীর্ঘ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নই একমাত্র আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারে।
সুবাইল বিন আলম টেকসই উন্নয়নবিষয়ক কলামিস্ট।
ইমেইল: [email protected]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই সরক র প রস ত ত সরক র র ব যবহ র উপদ ষ ট র জন য আম দ র পর ব শ দরক র বনভ ম
এছাড়াও পড়ুন:
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
নিয়োগপত্র নেই। এ কারণে চাকরির নিশ্চয়তাও নেই। দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র। নেই কর্ম ঘণ্টার হিসাব। তবে রয়েছে মজুরিবৈষম্য ও জীবনের ঝুঁকি। এ চিত্র খুলনার বরফকলে কর্মরত বরফ শ্রমিকদের।
অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত বরফকলের শ্রমিকেরা জানেন না মে দিবসের অর্থ। তারা শুধু এটুকু জানেন, কাজ থাকলে মজুরি পাবেন, অন্যথায় জুটবে না কিছু। খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, শিপইয়ার্ড ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বরফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ঝুঁকি ও বৈষম্যের এই চিত্র।
সরেজমিনে জানা গেছে, লবণ পানি এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংমিশ্রণে বরফের প্রতিটি ক্যান তৈরি হয়। এ কাজে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়াও অধিকাংশ সময় হাত-পা ভিজে ঠান্ডা থাকায় ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। এর বাইরে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এখানকার শ্রমিকেরা। পাতলা বরফে অনেক সময় হাত-পা কেটে যায়। কিন্তু মালিক বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের অ্যাপ্রোন বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন না। তবে দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
আরো পড়ুন:
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, নিউমার্কেট, শিপইয়ার্ড, রায়েরমহল এবং রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি বরফকল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসায় সর্বাধিক বরফকল রয়েছে। এসব কলে গড়ে দশ জন হিসেবে দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।
রূপসার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করেন মোহাম্মদ রাসেল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি হলেও পরিবার নিয়ে রূপসার জাবুসা এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বরফকলে কাজ করছেন তিনি। রাসেল জানান, তাদের মাসিক বেতন নেই। নেই নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র। মূলত উৎপাদনের উপর প্রতি পিস বরফের ক্যান অনুযায়ী ১২ টাকা হারে মজুরি পান। নামমাত্র এ মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার ঠিকমতো চলে না।
‘‘তিন বছর আগে নির্ধারণ করা মজুরি এখনো চলছে। লোকসানের অজুহাতে মালিকপক্ষ মজুরি বাড়াতে চান না। তাদের মতো শ্রমিকদের কোন বেতন-বোনাস নেই। নো ওয়ার্ক, নো পে অর্থাৎ কাজ থাকলে মজুরি আছে কাজ না থাকলে নেই। মালিকদের এ সিদ্ধান্ত না মানলে চাকরিও থাকে না।’’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন রাসেল হোসেন।
একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গড়ে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু মাসিক খাবার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা চলে যায়।’’
তবে জাকির হোসেন ব্যাচেলর হওয়ায় কারখানার মধ্যেই থাকেন। বিয়ের পর এ কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।
বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১-এ অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মোঃ সেলিম শেখ। তার জন্ম নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা হলেও কর্মসংস্থানের কারণে রুপসার বাগমারা গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বয়স ৮৪। ২০ বছর বয়স থেকেই বরফ কারখানার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে হেলপার হিসেবে ২৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে মাসিক ১৫ হাজার টাকা পান। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করতে হয়। তবে সবসময় উৎপাদন না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা কারখানায় থাকতে হয়। ছুটি পান না।
‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি কখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হননি বলে জানান তিনি।
‘মায়ের দোয়া আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজে’র শ্রমিক জাকারিয়া হাওলাদার বলেন, ‘‘চার বছর বরফকলে কাজ করছি। চাকরির ভবিষ্যৎ নেই। শ্রম দিতে পারলে মজুরি হয়, না হলে হয় না। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেন না মালিকপক্ষ। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তারা আমলে নেন না।’’
একই এলাকার ‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করছেন মোঃ মুন্না গাজী ও মোঃ হাসান শেখ। তারা নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুজনেই মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।
‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’র ম্যানেজার আশিকুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীন। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার মাঝেমধ্যেই লিক হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৩২টি আইস উৎপাদনের ক্যানের প্লান্ট রয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। ছয়জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান তিনি।
‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ- ২'র ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বরফের মূল ক্রেতা চিংড়ি ও সাদা মাছের ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে গ্রীষ্ম মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ও দোকানে শরবত বিক্রেতারাও কারখানা থেকে বরফ কিনে নেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের ৬ মাস চাহিদা থাকে এবং কিছুটা লাভের মুখ দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমের ছয় মাস বরফের চাহিদা কম থাকে। তখন কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিয়ে লোকসান গুণতে হয়।’’
জামাল উদ্দিন স্বীকার করেন কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা এড়াতে কোন সরঞ্জাম নেই। তবে অপারেটরদের অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঝুঁকি প্রতিরোধে মাক্স সরবরাহ করা হয়।
‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১'র মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ-উল-জান্নাত সৈকত বলেন, ‘‘ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। কখনো লাভ, কখনো লোকসান এভাবেই চলছে। গত বছর কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’’
তবে লাভ হলে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে শ্রমিকদের সংগঠন রূপসা বেড়িবাঁধ হ্যান্ডলিং শ্রমজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিপন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বরফকলের ৪০ জন শ্রমিক তাদের ইউনিয়নের সদস্য। বিগত দেড় বছর আগে মজুরির সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে দুই একজন শ্রমিক অভিযোগ করলে ইউনিয়নের মাধ্যমে সেটির সমাধান করে দেন তারা। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না।’’
বরফকলের শ্রমিকদের নিয়ে তারা মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তারা//