মহাকাশ অনুসন্ধানে নাসার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি সই
Published: 9th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) সঙ্গে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতার একটি নতুন দুয়ার খুললো।
এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ঢাকার একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫’ এর প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “আর্টিমিস জেনারেশন হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, যারা মহাকাশ অভিযাত্রী হবে। তারা শুধু পৃথিবীতেই থাকবে না ভবিষ্যতে বিভিন্ন গ্রহে ভ্রমণ করবে। এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশ ৫৪তম দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এ আর্টেমিস অ্যাকর্ডস সাইন করার ফলে বাংলাদেশের কী লাভ হয়েছে, সেটা দেখতে হলে আরও ২০-২৫ বছর সময় লাগবে। ইয়ুথ জেনারেশন হচ্ছে গ্লোবাল এবং তাদের এক্সপেক্টেশনও গ্লোবাল। আমরা যদি চাই, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে কোনো মহাকাশ অভিযাত্রী তৈরি হবে, তাহলে আজকের এ পদক্ষেপ তার সূচনা।”
তিনি বিনিয়োগ আকর্ষণে সংস্কারের অত্যাবশ্যকতা তুলে ধরে বলেন, “আমরা যদি রিফর্মের কথা বলি তাহলে ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেটের রিফর্মের লিস্টটা অনেক বড়। হয়তো এক বছরের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে এ লিস্ট ধরে আমাদের আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে হবে।”
তিনি বলেন, “ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৩০০ মিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করেছে। সম্প্রতি তারা ওয়াসার সঙ্গে একটি প্রজেক্ট অ্যাপ্রুভ করেছে। তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে এ বছরের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ফান্ডিং সাপোর্ট দেবে। তাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, শুধু সরকারকে ফান্ডিং করা নয় পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও তারা ফান্ডিং করতে চায়। এজন্য সেই ব্যালেন্স তারা আনতে চায়।”
এনডিবির ইনভেস্টের যে অর্থ তার সুদের হার কত হবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, “এনডিবি সব দেশকে একইভাবে ট্রিট করে। তারা প্রতিবেশী দেশ ভারতকে যে সুদ হারে দেবে, আমাদেরও সেই একই হারে দেবে। পাশাপাশি তারা একাধিক মুদ্রায় ঋণ দিচ্ছে, শুধু মাত্র ডলারে নয়। একই সঙ্গে আমরা তাদের প্রাইভেট সেক্টরে আসার জন্য বলেছি এ কারণে ভালো কোম্পানিগুলোতে তারা রিস্ক অ্যাসিস্ট করে ইনভেস্ট করবে। এনডিবির ঋণ সহায়তা খুবই সফট, বিশ্ব ব্যাংকের মতো নয়। তাদের ঋণগুলো ক্লাসিক কমার্শিয়াল থেকে কিছুটা সস্তা হয়।”
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন নাসার অ্যাক্টিং অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জ্যানেট পেট্রো। এছাড়া, অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন, বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি কাউন্সেলর স্টিফেন ইবেলি, অ্যাক্টিং ইকোনমিক ইউনিট চিফ জেমস এস গার্ডিনার, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
ঢাকা/হাসান/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইনভ স ট এনড ব
এছাড়াও পড়ুন:
পবিত্র কোরআনে ‘রুকু’ কীভাবে এল
আমরা কোরআন তিলাওয়াত করার সময় প্রতিটি সুরার শুরুতেই আয়াত সংখ্যার সঙ্গে ‘রুকু’ সংখ্যাও লেখা দেখি। পৃষ্ঠার মাঝেও রুকু লেখা থাকে। এই রুকু মানে কী? কী কাজ এই রুকুর?
এই প্রবন্ধে রুকুর ধারণা, কোরআন তিলাওয়াতের সঙ্গে এর সম্পর্ক এবং কোরআনে রুকুর সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
রুকু কীরুকু আরবি শব্দ, যার অর্থ ‘নমন’ বা ‘বাঁকানো’। নামাজে রুকু বলতে কোমর ঝুঁকিয়ে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অঙ্গভঙ্গিকে বোঝায়।
তবে কোরআন তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে রুকু একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকলনকে বোঝায়, যা তিলাওয়াতকে সংগঠিত ও সহজতর করে। এটি বিশেষ করে হাফেজদের (যাঁরা কোরআন মুখস্থ করেন) জন্য সুবিধাজনক।
ইমাম সারাখসি (মৃ. ৪৮৩ হি.) রুকুকে রাকাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করে বলেছেন, এক রাকাতে তিলাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকেত হিসেবে রুকু ব্যবহৃত হতো।কোরআন তিলাওয়াতে রুকুর ভূমিকারুকু নির্ধারণের উদ্দেশ্য ছিল তিলাওয়াতের সময় আয়াতের বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং বিরতি নেওয়ার সুবিধা প্রদান। ইসলামের প্রাথমিক যুগে, বিশেষ করে হাফেজরা তিলাওয়াতের পর নির্দিষ্ট আয়াতে এসে রুকুতে যেতেন, যা এই প্রথার উৎপত্তির ইঙ্গিত দেয়।
ঐতিহাসিকভাবে রুকু নির্ধারণের প্রথা মা-ওয়ারাউন্নাহার (বুখারা, সমরখন্দ) অঞ্চলে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। এটি তারাবিহ নামাজের সময় কোরআন তিলাওয়াতকে সংগঠিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
ইমাম সারাখসি (মৃ. ৪৮৩ হি.) রুকুকে রাকাতের সঙ্গে সম্পর্কিত করে বলেছেন, এক রাকাতে তিলাওয়াতের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াতের সংকেত হিসেবে রুকু ব্যবহৃত হতো। অন্য একটি মত অনুসারে, হাফেজরা নির্দিষ্ট পরিমাণ তিলাওয়াতের পর রুকুতে যাওয়ার কারণে এই নামকরণ হয়েছে। (আল-সারাখসি, আল-মাবসুত, বৈরুত: দার আল-মা’রিফা)
আরও পড়ুনধীরে ধীরে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কারণ৩০ মে ২০২৫কোরআনে রুকুর সংখ্যাকোরআনে রুকুর সংখ্যা বিভিন্ন অঞ্চলে ও ঐতিহ্য অনুসারে ভিন্নতা দেখায়। প্রধানত তিনটি ধারা প্রচলিত: ৫৫৮, ৫৪০ ও ৪৮০।
৫৫৮ রুকু: বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসহাফে সাধারণত ৫৫৮টি রুকু ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি সুরায় রুকুর সংখ্যা উল্লেখ থাকে এবং আরবি অক্ষর ‘আইন’ দিয়ে রুকু চিহ্নিত করা হয়। এই চিহ্নে তিনটি সংখ্যা থাকে:
১. ওপরের সংখ্যা: সুরার মধ্যে রুকুর ক্রম।
২. মাঝের সংখ্যা: রুকুর আয়াতসংখ্যা।
৩. নিচের সংখ্যা: পারার (জুজ) মধ্যে রুকুর ক্রম।
এই পদ্ধতি তিলাওয়াতকে সুসংগঠিত করে এবং হাফেজদের জন্য সুবিধাজনক। (সিদ্দিকি, এ, ২০১৭, কোরআনিক ম্যানুস্ক্রিপ্টস অ্যান্ড দেয়ার ডিভিশনস, জার্নাল অব ইসলামিক স্টাডিজ, ২৮(২), (১৪৫-১৬৭)
বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসহাফে সাধারণত ৫৫৮টি রুকু ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি সুরায় রুকুর সংখ্যা উল্লেখ থাকে এবং আরবি অক্ষর ‘আইন’ দিয়ে রুকু চিহ্নিত করা হয়।৫৪০ রুকু: বুখারায় প্রথম রুকু নির্ধারণের সময় এর সংখ্যা ছিল ৫৪০। বুখারার মাশায়েখরা রমজানে তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে ১০টি আয়াত তিলাওয়াতের প্রথা অনুসরণ করতেন। এভাবে ৩০ দিনে কোরআনের প্রায় ৬ হাজার আয়াত তিলাওয়াত হতো। তবে দশ আয়াতের ভিত্তিতে তিলাওয়াত করলে বিষয়বস্তুর মাঝখানে বিরতি পড়ত, তাই তারা বিষয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুকু নির্ধারণ করেন। (রহিম বখশ, আল-খাত্ত আল-উসমানি ফি রাসমিল কোরআন, লাহোর: মাকতাবা কুদ্দুসিয়া, ১৯৮২)
৪৮০ রুকু: সিন্ধুর হাশিম থাট্টুভি কোরআনের রুকুসংখ্যা ৪৮০ নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি সুরাভিত্তিক নয়, বরং পারাভিত্তিক রুকু নির্ধারণ করেন। প্রতি পারায় ১৬টি রুকু ধরে ৩০ পারায় মোট ৪৮০ রুকু হয়।
তিনি ‘রুকু’ শব্দের পরিবর্তে ‘মাকরা’ বা ‘মাকারি’ শব্দ প্রস্তাব করেন, যা ‘কিরআত’ (পাঠ্যাংশ) থেকে উদ্ভূত। (আজমি, এম এম, ২০০৩, দ্য হিস্ট্রি অব দ্য কোরআনিক টেক্সট: ফ্রম রেভল্যুশন টু কম্পাইলেশন, যুক্তরাজ্য: আল-কোরআন সোসাইটি)
আরও পড়ুনসহজে কোরআন বোঝার পাঁচটি কৌশল০৩ মে ২০২৫রুকুর প্রচলনহিজাজ, আন্দালুসিয়া, মিসর, আফ্রিকা ও সিরিয়ায় রুকুর প্রচলন তেমন ছিল না। রুকুর প্রচলন মূলত মা-ওয়ারাউন্নাহার (বুখারা, সমরখন্দ), ভারতবর্ষ ও তুরস্কে ব্যাপক ছিল। ওসমানি খেলাফতের পর তুরস্কে এটা বিলুপ্ত হয়ে, তবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে এখনো রুকুর প্রচলন আছে।
বুখারার মাশায়েখরা রমজানে তারাবিহ নামাজে প্রতি রাকাতে ১০টি আয়াত তিলাওয়াতের প্রথা অনুসরণ করতেন। তবে এভাবে তিলাওয়াত করলে বিষয়বস্তুর মাঝখানে বিরতি পড়ত, তাই তারা বিষয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য রুকু নির্ধারণ করেন।ইমাম দানি (মৃ. ৪৪৪ হি.) তাঁর গ্রন্থ আল-বায়ান ফি আদ্দি আয়িল কোরআন-এ কোরআনের বিভিন্ন ভাগ নিয়ে আলোচনা করলেও রুকু নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। তবে ইমাম সারাখসি এবং রহিম বখশ তাঁদের লেখায় রুকুর ঐতিহাসিক বিবরণ দিয়েছেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়ে সাহাবিরা ১০টি আয়াত করে মুখস্থ করতেন এবং এর ব্যাখ্যা বুঝে পরবর্তী আয়াত শিখতেন, যা রুকু নির্ধারণের প্রাথমিক ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত। (আল-দানি, আল-বায়ান ফি আদ্দি আয়িল কুরআন, কায়রো: দার আল-মা’আরিফ)
সারকথা, রুকু কোরআন তিলাওয়াতকে সহজ ও সংগঠিত করে, বিশেষ করে হাফেজদের জন্য। এটি ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে প্রচলিত একটি পদ্ধতি, যা বুখারা, সমরখন্দ ও ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। ৫৫৮, ৫৪০ ও ৪৮০ রুকুর ধারা বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত হলেও বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে ৫৫৮ রুকুই বেশি ব্যবহৃত হয়।
লেখক: খণ্ডকালীন শিক্ষক, আরবি বিভাগ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আরও পড়ুনযে ঘটনায় কোরআনে পূর্ণ দুটি রুকু নাজিল হয়১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪