প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে ভাঙচুর মন্দ বার্তা দেয়
Published: 9th, April 2025 GMT
‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতেও ইসরায়েলি নৃশংসতার নিন্দা এবং অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
গাজায় আক্রান্ত ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়, তাতে ছাত্র-তরুণসহ সর্বস্তরের মানুষ যোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ আক্রান্ত ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে। এসব কর্মসূচির লক্ষ্য ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ করতে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করা।
বাংলাদেশে সোমবারের কর্মসূচিটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের উদাহরণ এটাই প্রথম। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকাসহ বেশির ভাগ শহরে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে; যা অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
কিন্তু কর্মসূচি ঘিরে সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, গাজীপুর, বগুড়াসহ কয়েকটি শহরে বাটা শোরুম, কয়েকটি রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যেভাবে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটল, তা উদ্বেগজনক। কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক আছে কিংবা কোথাও ইসরায়েলি পণ্য আছে—এই গুজব ছড়িয়ে একদল লোক যথেচ্ছ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন। কক্সবাজারে ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েকজন পর্যটক আহত হন। এসব ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বাটা কোম্পানির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই কোম্পানির সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই। যাঁরা রেস্তোরাঁ ও বাটার দোকানে হামলা করেছেন, তঁারা একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন।
এসব ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা এমন একসময়ে ঘটল, যখন ঢাকায় সরকারের উদ্যোগে বড় আকারের বিনিয়োগ সম্মেলন চলমান। সোমবারই চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনটি শুরু হলো। এসব অঘটন আমন্ত্রিত অতিথিদের কী বার্তা দিল?
এ কথা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে কতিপয় ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অপরাধমূলক কাজের মাধ্যমে একটি মহৎ কর্মসূচিকে বিতর্কিত করেছে, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। যখন তাঁদের জানা আছে অতীতে এ ধরনের কর্মসূচি ঘিরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, তখন তাঁরা আগাম ব্যবস্থা নিলেন না কেন?
সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে কেন নির্দেশনা দিতে হবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রথম কর্তব্য ছিল প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই কাজটি তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে অন্তত তারা পেশাগত দায়িত্ববোধ প্রমাণ করুক।
মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, হামলা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এর বাইরেও অনেকে আছেন। ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। নিকট অতীতের অনেক ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই তারা এসব অপকর্ম করতে সাহস পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধীদের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। সেসব ভিডিও দেখেও তারা বাকি অপরাধীদেরও শনাক্ত করতে পারে।
নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে কিংবা লুটপাটকারী ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে না পারলে দেশি কিংবা বিদেশি—কোনো বিনিয়োগকারীই বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেখাবেন না। এ রকম অবস্থায় সোমবারের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের মুখোমুখি করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপর ধ দ র ইসর য় ল স মব র র ঘটন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
সারা দেশে সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৮৮
ঢাকাসহ সারা দেশে বিগত সাত দিনে অভিযান চালিয়ে ২৮৮ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় তাঁদের আটক করা হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, ককটেলসহ বিভিন্ন জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীনের ইউনিট এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব অভিযানে চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তসহ ২৮৮ জনকে আটক করা হয়।
আইএসপিআর জানিয়েছে, আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৪টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ১৫৬টি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, ২টি ককটেল, ৩টি ম্যাগাজিন, মাদকদ্রব্য, বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র, চোরাই মালামাল ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়। প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ এবং আইনি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাঁদের সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। সাধারণ জনগণকে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য দিতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।