‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সোমবার ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বাত্মক ধর্মঘট পালিত হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতেও ইসরায়েলি নৃশংসতার নিন্দা এবং অবিলম্বে গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।

গাজায় আক্রান্ত ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে যেসব কর্মসূচি নেওয়া হয়, তাতে ছাত্র-তরুণসহ সর্বস্তরের মানুষ যোগ দিয়েছে। এর মাধ্যমে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ আক্রান্ত ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে। এসব কর্মসূচির লক্ষ্য ইসরায়েলি গণহত্যা বন্ধ করতে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করা।

বাংলাদেশে সোমবারের কর্মসূচিটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের উদাহরণ এটাই প্রথম। বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকাসহ বেশির ভাগ শহরে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালিত হয়েছে; যা অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। 

কিন্তু কর্মসূচি ঘিরে সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনা, গাজীপুর, বগুড়াসহ কয়েকটি শহরে বাটা শোরুম, কয়েকটি রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যেভাবে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটল, তা উদ্বেগজনক। কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক আছে কিংবা কোথাও ইসরায়েলি পণ্য আছে—এই গুজব ছড়িয়ে একদল লোক যথেচ্ছ হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছেন। কক্সবাজারে ভাঙচুরের ঘটনায় কয়েকজন পর্যটক আহত হন। এসব ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বাটা কোম্পানির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, এই কোম্পানির সঙ্গে ইসরায়েলের কোনো সম্পর্ক নেই। যাঁরা রেস্তোরাঁ ও বাটার দোকানে হামলা করেছেন, তঁারা একটি প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন।

এসব ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা এমন একসময়ে ঘটল, যখন ঢাকায় সরকারের উদ্যোগে বড় আকারের বিনিয়োগ সম্মেলন চলমান। সোমবারই চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনটি শুরু হলো। এসব অঘটন আমন্ত্রিত অতিথিদের কী বার্তা দিল? 

এ কথা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে কতিপয় ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অপরাধমূলক কাজের মাধ্যমে একটি মহৎ কর্মসূচিকে বিতর্কিত করেছে, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। যখন তাঁদের জানা আছে অতীতে এ ধরনের কর্মসূচি ঘিরে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, তখন তাঁরা আগাম ব্যবস্থা নিলেন না কেন? 

সংবাদমাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে কেন নির্দেশনা দিতে হবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রথম কর্তব্য ছিল প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই কাজটি তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় এনে অন্তত তারা পেশাগত দায়িত্ববোধ প্রমাণ করুক।

মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, হামলা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এর বাইরেও অনেকে আছেন। ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। নিকট অতীতের অনেক ঘটনায় অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই তারা এসব অপকর্ম করতে সাহস পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপরাধীদের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। সেসব ভিডিও দেখেও তারা বাকি অপরাধীদেরও শনাক্ত করতে পারে। 

নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে কিংবা লুটপাটকারী ও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে না পারলে দেশি কিংবা বিদেশি—কোনো বিনিয়োগকারীই বিনিয়োগ করতে উৎসাহ দেখাবেন না। এ রকম অবস্থায় সোমবারের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের মুখোমুখি করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপর ধ দ র ইসর য় ল স মব র র ঘটন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ঘটছে গণহত্যা

হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে আলোচকরা বিশ্বনেতাদের সমালোচনা করেছেন। তারা মনে করেন, বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ইসরায়েল মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। মানুষ হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞকে তারা অপরাধ বলে স্বীকারই করে না। কোনো দেশ, সংস্থা এমনকি জাতিসংঘই যদি ইসরায়েলি নিকৃষ্ট হামলার প্রতিবাদ করে, তাহলে তাদের দখলদারদের রোষানলে পড়তে হয়। এমনকি আইসিজেও ইসরায়েলের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

বিবিসি বলেছে, গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিভাগের প্রধান জেন ডাঙ্গর আইসিজেতে দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বিশ্বের নজরদারির অধীনে, ফিলিস্তিনিরা নৃশংসতা, অপরাধ, নিপীড়ন, বর্ণবাদ এবং গণহত্যার শিকার হচ্ছে। ফিলিস্তিনিরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।  

মানবাধিকার সংস্থা ল ফর প্যালেস্টাইনের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য আনিশা প্যাটেল আলজাজিরাকে বলেন, আইসিজের শুনানি কেবল ফিলিস্তিনে কর্মরত জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর ভবিষ্যৎ নিয়েই নয়, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার এবং অস্তিত্বের ব্যাপার। একদিকে আন্তর্জাতিক আদালতে শুনানি চলেছে, অন্যদিকে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালিয়েই যাচ্ছে।  

আলজাজিরা জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ৫০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৮ মাসে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় কমপক্ষে ৫২ হাজার ৩৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৯০৫ জন আহত হয়েছেন। 

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল গাজায় ‘গণহত্যার লাইভ স্ট্রিমিং’ করছে। বেশির ভাগ জনসংখ্যাকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। ইচ্ছা করেই মানবিক বিপর্যয় তৈরি করা হয়েছে। 

আইসিজেতে সৌদি আরবের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সৌদ আল নাসের গাজায় ‘ইসরায়েলের জঘন্য আচরণের’ নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল আইসিজের রায় উপেক্ষা করার ঘোষণা দিয়ে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে বিবেচনা করছে। 

এদিকে বাইডেনের কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, তারা কখনও ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেননি। বরং যুদ্ধে বাইডেন প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণ হয়েছে ইসরায়েলি চ্যানেল-১৩-এর এক তদন্ত প্রতিবেদেন।  

গাজায় খাদ্যাভাবে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা নারী-শিশুর করুণ পরিণতি ডেকে আনছে। ৫৫ হাজার প্রসূতি নারীর ২০ শতাংশই অপুষ্টিতে ভুগছেন। ৬০ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি কারাগারে আটক ৫০ জনের বেশি সাহায্যকর্মীকে নির্যাতন করা হয়েছে।  

এদিকে হামাসের সঙ্গে গাজায় পাঁচ বছরের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা ইসরায়েলের নেই বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। গাজায় হামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে মতবিরোধ ও দ্বন্দ্বের পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের শীর্ষ নির্বাহী রোনেন বার।  


  
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫১ ফিলিস্তিনি নিহত
  • বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ঘটছে গণহত্যা
  • রাখাইনে করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ হেফাজতের
  • ইয়েমেনে মার্কিন হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা ইরানের
  • ডিবির অভিযানে আ.লীগের সাবেক এমপিসহ গ্রেপ্তার ৭
  • পুলিশ সপ্তাহ শুরু মঙ্গলবার, নির্বাচনী নির্দেশনা পাবে আইনশৃঙ্খলা ব
  • সাবেক আইজিপিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় আবার বাড়ল