কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
Published: 9th, April 2025 GMT
আমাদের দাপ্তরিক ও দৈনন্দিন কাজে জেনারেটিভ এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বিশ্বের বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতা করছে কী করে আরও বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন এআই মডেল তৈরি করা যায়। শুরুতে এসব মডেল শুধু টেক্সট বা লেখা আকারে ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল, কিন্তু ক্রমে এই পরিষেবায় ইমেজ জেনারেশন বা কৃত্রিম ছবি বানানোর সুবিধাও যুক্ত হয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ ডালি, মিড জার্নি কিংবা স্টেবল ডিফিউশনের কথা বলা যায়। এ ধরনের টুলগুলো লিখিত আকারের নির্দেশনা, অর্থাৎ টেক্সটচুয়াল প্রম্পটকে বর্ণনানুযায়ী ছবিতে রূপান্তরিত করে। আগে ডিজিটাল মাধ্যমে একটি ছবি তৈরিতে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগত, এখন একটি বর্ণনার মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে একটি প্রাথমিক বা পূর্ণাঙ্গ ছবি তৈরি করা যাচ্ছে, যা শিল্পীকে তাঁর নিজস্ব আইডিয়া নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ দিচ্ছে। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করছে, তাদের এই টেক্সট-টু-ইমেজ পরিষেবাগুলো ব্যবহারকারীদের সৃজনশীলতা ও উৎপাদনক্ষমতা বাড়িয়ে দিচ্ছে, যার প্রভাবে বিশেষ করে শিক্ষাগত, বিজ্ঞাপন বা গবেষণাকাজে চিত্রনির্ভর যোগাযোগ আরও সহজ ও ব্যাপক হয়ে উঠবে।
তবে এসব প্রযুক্তিকে ঘিরে বিতর্কও কম নয়। এই টুলগুলো নতুন ছবি তৈরি করে ইন্টারনেটে থেকে যাওয়া শিল্পকর্ম, ছবি ও শৈল্পিক ধারণাগুলোর ওপর নির্ভর, যা কি না মেধাস্বত্ব ও কপিরাইট আইন লঙ্ঘনের শঙ্কা তৈরি করছে। শিল্পীদের অনুমতি ছাড়াই তাঁদের কাজ ব্যবহৃত হওয়ায় সৃজনশীল পরিশ্রমের স্বীকৃতি ও সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এসব মডেল প্রায় সময়ই একই ধরনের সাংস্কৃতিক ছাঁচ অনুসরণ করে ছবি তৈরি করে, যার ফলে বিশ্বজুড়ে শিল্পমাধ্যমে বৈচিত্র্য, সমতা ও নতুন চিন্তার পরিসর সংকুচিত হয়ে পড়ছে বলে জানাচ্ছেন শিল্পীরা। গবেষকেরা বলছেন, এই ধরনের একমুখী উপস্থাপনায় সমাজের প্রান্তিক গোষ্ঠী বা বিকল্প শিল্পধারার প্রতিনিধিত্ব প্রায়ই অনুপস্থিত বা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
এটি সত্য যে এসব টুল সময় ও খরচ বাঁচিয়ে উচ্চমানের ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট তৈরিতে সুবিধা এনে দেওয়ায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপগুলো উপকৃত হতে পারে। কিন্তু এদের অতি ব্যবহার শিল্পী, ডিজাইনার ও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কর্মসংস্থানের সংকট তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে। আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হলো, এই এআই টুলগুলোর সাহায্যে সহজেই ভুয়া ছবি বা কনটেন্ট তৈরি করা সম্ভব, যা সামাজিক বিভ্রান্তি, রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা ও তথ্য জালিয়াতির আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে। আইনি ও অন্যান্য কাঠামোগত প্রস্তুতির অভাব থাকায় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে এসব আশঙ্কা আরও বেশি।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, জেনারেটিভ এআই টুলের উন্নয়ন ও মূল্যায়ন নিয়ে যে গবেষণা ও বিতর্ক চলছে, তা এখনো প্রধানত পাশ্চাত্য প্রেক্ষাপটে সীমাবদ্ধ। প্রাপ্তিস্বল্পতার কারণে টুলগুলোকে অনেক সময়ই সাংস্কৃতিকভাবে বৈচিত্র্যহীন ডেটাসেটের ওপর প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। যদিও এসব টুল গ্লোবাল সাউথ, যেমন দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার মতো অঞ্চলে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, তবু এসব অঞ্চলের সামাজিক-প্রযুক্তিগত বাস্তবতা এবং সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গগুলো প্রায়ই গবেষণায় উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। ফলে গ্লোবাল মেজরিটি, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও প্রযুক্তির উন্নয়ন–কাঠামোতে প্রান্তিক, তাদের অভিজ্ঞতা, চাহিদা ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলো যথাযথভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না।
এ বিষয়ের গবেষক হিসেবে আমরা মনে করি, এই ন্যায্যতার প্রশ্ন আমাদের সামনে নিয়ে আসতে হবে, কেননা এআইকে বহু মানুষের না করে তোলা পর্যন্ত এর বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্ন থেকে যাবে।
বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং আশঙ্কাগুলোকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশ্বিক আলাপে তুলে ধরার গবেষণাগত শূন্যতা পূরণে আমরা কয়েক ধাপে উদ্যোগ নিই। প্রথম ধাপে, কয়েক মাস ধরে আমরা কথা বলি বাংলাদেশের বিভিন্ন ‘ইমেজ প্র্যাকটিশনার’দের সঙ্গে। ইমেজ প্র্যাকটিশনার বলতে আমরা এমন পেশাজীবীদের বোঝাচ্ছি, যাঁরা তাঁদের পেশাগত কাজে ডিজিটাল ইমেজ তৈরি বা উৎপাদন করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন স্থপতি, যাঁরা স্থাপত্য নকশা–ভাবনা তুলে ধরতে ড্রয়িং ব্যবহার করেন; ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট, যেমন গ্রাফিক ডিজাইনার, ইলাস্ট্রেটর ও কনটেন্ট আর্টিস্টরা, যাঁরা অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রে চরিত্র, পরিবেশ বা প্রাণীর নকশা করেন।
বাংলাদেশ তারুণ্যের শক্তিতে ভর করে এক নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা নীতিনির্ধারকদের বলতে চাই যে আমাদের স্থানিক প্রযুক্তিভাবনাকেও জাতীয়ভাবে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে।আমরা বাণিজ্যিক কাজে যুক্ত শিল্পীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। যাঁরা ব্র্যান্ড, চলচ্চিত্র, সিরিজ বা বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করেন। এই বৈচিত্র্যময় শিল্পগোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়ার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে টেক্সট-টু-ইমেজ টুল ব্যবহারের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতাগুলো বুঝতে চেষ্টা করেছি।
আমাদের প্রকাশিত গবেষণায় উঠে এসেছে, কীভাবে জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তিগুলো চিত্রমাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক আবহকে সীমিত করে ফেলছে। এসব টুল প্রায় অপ্রতিনিধিত্বশীল ছবি তৈরি করতে পারে, যা বাংলাদেশের সমাজের সাংস্কৃতিক সূক্ষ্মতা ও জীবন অভিজ্ঞতাকে ‘অপর’ করে তোলে। আমরা শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, যাঁরা টুলগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁদের পেশায় এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ভাষার দুর্বলতা এবং প্রযুক্তিগত অসামর্থ্য তাঁদের সৃজনশীলতা এবং অনুসন্ধানী মনোভাবকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরে যেতে আমরা বাংলাদেশের স্থানিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় টুলগুলোর প্রম্পট অনুসরণক্ষমতা নিয়ে তাত্ত্বিক ও গুণগত মূল্যায়ননির্ভর গবেষণা করি। আমরা দেখতে পাই, উন্নত দেশের প্রেক্ষাপটে সফল হলেও দেশীয় শৈল্পিক রীতিনীতি পুনরুৎপাদনে মডেলগুলো ব্যর্থ হচ্ছে। গবেষণার পরবর্তী ধাপে আরও প্রান্তিক শিল্পীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করি।
এবার আমরা কথা বলি রিকশা আর্টিস্ট, মেহেদি আর্টিস্ট, আলপনা আঁকিয়েদের সঙ্গে। আমাদের গবেষণায় আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছি যে ছবি আঁকার বিষয়টি শিল্পীদের সামষ্টিক অভিজ্ঞতা ও মর্যাদার সঙ্গে জড়িত এবং বিষয়টিকে অবহেলা করে সামগ্রিকভাবে এআইনির্ভর আর্টকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করা সম্ভব হবে না। এসব গবেষণা এখনো চলমান; কিন্তু আমাদের বিশ্বাস, এগুলো প্রকাশিত হলে সেগুলো দেশীয় প্রেক্ষাপটে এআই টুলগুলোর উন্নতি এবং একই সঙ্গে এদের ঘিরে নৈতিক ব্যবহারবিধি ও আইনি নীতিমালা প্রস্তুতিতে ভূমিকা রাখবে।
এ পর্যায়ে আমাদের গবেষণাপদ্ধতির অংশ হিসেবে আমরা একটি এআই আর্ট হ্যাকাথনের পরিকল্পনা করেছি। মাইক্রোসফট, ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশনের সহায়তায় এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে সারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পেশাজীবী, শিক্ষার্থী, শিল্পী ও প্রযুক্তিতে আগ্রহী সবাই এক প্ল্যাটফর্মে আসবেন। অংশগ্রহণকারীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছবি তৈরি করবেন।
এই ছবিগুলোতে তাঁরা তুলে ধরার চেষ্টা করবেন বাংলাদেশি কোনো একটি প্রেক্ষাপটকে, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে খুব একটা চর্চিত হয়নি। তাই অংশগ্রহণকারীদের পুরোপুরি জেনারেটিভ এআইয়ের ওপর ভরসা করার সুযোগ নেই। তখন সামনে প্রশ্ন চলে আসে, কী করে একটা ছবি তৈরি করা যায়, যেখানে অংশগ্রহণকারীর মূল ভাবনা ও স্বকীয়তা বিসর্জন না দিয়ে এআই ব্যবহার করতে পারে।
এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, আমাদের প্রয়াস এআইকে ঘিরে নয়, বরং আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশি শিল্পীদের চিত্রকর্মের উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে আগ্রহী।
এটি বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এআইনির্ভর প্রতিযোগিতা, যা বৈশ্বিক উদাহরণ হিসেবেও কাজ করবে। এই প্রাণবন্ত প্রতিযোগিতাটির মধ্য দিয়ে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি একজন শিল্পী যখন নিজের সামাজিক–সাংস্কৃতিক অবস্থান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁর শিল্পভাবনাকে এআই মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চান, তখন ঠিক কী কী বাধার সম্মুখীন হন। আমরা আরও ভাবছি, কী করে সম্মিলিত সৃজনশীলতার শক্তিতে এআই টুলগুলোর সীমাবদ্ধতাগুলোকে আমরা উতরে যেতে পারি।
বাংলাদেশ তারুণ্যের শক্তিতে ভর করে এক নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা নীতিনির্ধারকদের বলতে চাই যে আমাদের স্থানিক প্রযুক্তিভাবনাকেও জাতীয়ভাবে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে।
বাংলাদেশেও এআই রেডিনেস বা প্রস্তুতিবিষয়ক সরকারি ও উন্নয়ন-সহযোগীদের প্রচেষ্টা চলমান। নতুন অর্থনৈতিক যাত্রায় আমাদের তরুণ প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় দক্ষতা বাড়ানো যেমন অত্যন্ত জরুরি, তেমনি এই প্রযুক্তিগত পরিষেবাকে আমাদের সমাজ–সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গড়ে তোলার জন্য নতুন কার্যকর পদ্ধতি আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। এ বিষয়ে গবেষণা জারি রাখার বিকল্প নেই।
আবদুল্লাহ হাসান সাফির কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যে পিএইচডি গবেষক ([email protected])
নুসরাত জাহান সহকারী অধ্যাপক ([email protected])
ইশতিয়াক আহমেদ সহযোগী অধ্যাপক ([email protected]) হিসেবে টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডায় কর্মরত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত জ ন র ট ভ এআই ব যবহ র কর আর ট স ট আম দ র স এআই ট ল স জনশ ল ন র ভর এই প র ব ষয়ট র বলত
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’