ইউটিউবের একটি আবছা ভিডিওতে রবার্তো কার্লোসের ফুটবল বিশ্বকে হতবাক করা সেই ফ্রি কিকটা এখনও দেখা যায়। ১৯৯৭ সালের ৩ জুন, লিলেতে ফ্রান্সের বিপক্ষে নেওয়া ব্রাজিলের সেই কিংবদন্তির বাঁ পায়ে নেওয়া বাঁকানো ফ্রি কিকটির ভিডিও ফুটেজ নিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা কম গবেষণা করেননি। বিখ্যাত চার ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী গুলিয়াম ডুপেক্স, লা জোফ, ডেভিড কোরে আর ক্রিস্টোফে ক্লানেক প্রায় দশ বছর ‘অ্যারোডাইনামিকস’ তত্ত্বের সঙ্গে সেই গোলটির বিশ্লেষণ করে ২০১০ সালে তাদের জার্নালে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেন। শেষে এসে একটি বাক্যে গোলটিকে ‘ফুটবল মিরাকল’ বলে লেখা শেষ করেন।
বহু বছর পর কার্লোসকে গ্যালারিতে সাক্ষী রেখে তাঁর সেই ফ্রি কিককেই মনে করিয়ে দিলেন ডেকলান রাইস। মঙ্গলবার রাতে উত্তর লন্ডনের এমিরেটস স্টেডিয়ামে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জিতে ইংলিশ ক্লাব আর্সেনাল। আরও স্পষ্ট করে বললে, আর্সেনালের ইংলিশ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রাইসের দুটি ফ্রি কিকের কাছে দুর্দান্তভাবে আহত হয়েছেন এমবাপ্পেরা। যেন আর্সেনালের ‘রাইস কুকারে’ সেদ্ধ রিয়াল! সেমিতে যেতে হলে তাদের এখন ১৬ এপ্রিল নিজেদের মাঠে ৪-০ গোলের ব্যবধানে হারাতে হবে গানারদের। ৩-০ ব্যবধানে হলে পরীক্ষা দিতে হবে টাইব্রেকের। যদিও লন্ডন ছাড়ার আগে মাদ্রিদের লোকজন বলে গেছেন, ‘বার্নাব্যুতে ৯০ মিনিট লম্বা সময়, মাদ্রিদ অসম্ভবকে সম্ভব করতে জানে।’
রাইস যেভাবে দুটি স্পট কিক থেকে প্রায় ৯০ ডিগ্রি বলের গতিপথ বাঁকিয়ে গোল করলেন, তার রহস্য আবিষ্কার করতে রিয়াল কোচ আনচেলত্তিকে হয়তো এখন কমপ্লুটেন্স ইউনিভার্সি অব মাদ্রিদের ফিজিক্সের অধ্যাপকদের দ্বারস্থ হতে হবে! আপাতত রাইসের দুটি ফ্রি কিকের ব্যাপারে চ্যাটজিপিটি জানাচ্ছে, সে তাঁর গায়ের শক্তি দিয়ে বলটির গতিপথ ঘোরানোর চেষ্টা করেছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে ফ্রি কিক থেকে জোড়া গোল ফুটবলারের সংখ্যা নেহাত কম নেই। রিভালদো, রোনালদো, নেইমার, হাকিমিরাও এমন কীর্তি গড়েছেন। রাইসের মতো নকআউট পর্বের স্নায়ুর লড়াইয়ে কেউ তা করেননি। তাছাড়া যে কিনা ৩৩৮ ম্যাচ পর ফ্রি কিক নেন, তাও আবার সাকার কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে নেন এদিন। ‘পোস্টে তিনজন রেখে রিভার্স ক্রসের ভাবনা ছিল আমাদের। তবে বুকায়ো (সাকা) বলল, তোমার যদি মনে হয় সরাসরি কিক নেওয়ার, তাহলে সেটিই করবে। এরপর বল যখন জালে, তখন সেটি ছিল জাদুকরি মুহূর্ত। এখনও ঠিক উপলব্ধি করতে পারছি না আমি ঠিক কী করলাম।’
ভিনি-এমবাপ্পেদের পারফরম্যান্স নিয়ে না বলে এদিনের ম্যাচে শুধু রাইসের দুটি ফ্রি কিক নিয়ে বিজ্ঞান চর্চা করা যায়। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে ফ্রি কিক নেন রাইস। ডান পায়ে নেওয়া তাঁর বুলেট গতির শটটি প্রায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে বারপোস্টের একেবারে কোনাঘেঁষে বল চলে যায় জালে। রিয়াল গোলরক্ষক কর্তুয়া ঝাঁপিয়ে পড়লেও বল ঠেকানোর মতো বিন্দুমাত্র সুযোগ ছিল না। স্টান্স নেওয়ার ধরন, গতি এবং নিখুঁত নিশানার সবকিছুতে যেন নস্টালজিক সেই ডেভিড বেকহাম। ৭০ মিনিট পর দ্বিতীয় গোলটিও একই ধরনের। সেটির দূরত্ব কিছুটা কম ২৫ গজের মতো। এবারে সুইংয়ের তুলনায় গতি আরও বেশি। ৭৫ মিনিটে বিধ্বস্ত রিয়ালের জালে মেরিনোও একটি গোল দিয়ে দেন।
বছর পাঁচেক আগে ক্যাম্প ন্যুতে এমনই এক রংধনু কিক নিয়ে লিভারপুলকে হারিয়েছিলেন বার্সার মেসি। এবার রাইসের মতো ‘খ্যাতির দাবি’ নেই যার, তিনি যখন অপূর্ব রহস্যময় গোল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তাঁর এই গোল নিয়েও ভবিষ্যতে বিজ্ঞান চর্চা হতে পারে। সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুইস ফার্নান্দো ফন্তানানি তাঁর ‘ফিজিক্স অব লাইফ রিভিউ’ জার্নালে রোনালদিনহোর সেই ফ্রি কিকে ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, কিক নেওয়ার সময় পায়ের অ্যাঙ্গেল, গতি, পোস্ট থেকে দূরত্ব এবং সেই সময়কার বাতাসের গতিবেগ মিলিয়ে এমন রংধনু গোল হয়ে থাকে। হয়তো এসব মিলিয়ে সৌন্দর্যের নিজস্বতা দিয়ে এদিন ফ্রি কিকের ভাস্বর হয়ে থাকলেন আর্সেনালের ডেকলান রাইস।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদেও আইএসআই প্রধান মালিক
পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) বর্তমান মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিক। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের খবরে এই তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারিভাবে দেশের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের বর্তমান মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিককে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি পাকিস্তানের দশম জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জেনারেল মালিক আইএসআই মহাপরিচালক হিসেবে তার বর্তমান পদেও বহাল থাকবেন।২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি এই পদে রয়েছেন। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
তার এই নিয়োগের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো একজন আইএসআই প্রধান একই সঙ্গে এনএসএ'র দায়িত্ব পেলেন। সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক উত্তেজনার মধ্যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুহাম্মদ অসিম মালিক নতুন দায়িত্ব পাওয়ার খবর এলো।
২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকার অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের এনএসএ পদটি শূন্য ছিল। সে সময় মঈদ ইউসুফ এনএসএ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।