ঠান্ডা-কাশি হলে কি টুথব্রাশ বদলানো জরুরি
Published: 10th, April 2025 GMT
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক, টুথব্রাশ কোনো জীবাণু ছড়ানোর মাধ্যম হতে পারে কি না। সুস্থ একজনের মুখসহ দেহের বিভিন্ন অংশে স্বাভাবিকভাবেই কিছু জীবাণু থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় এসব আমাদের ক্ষতি করে না। এদের বলা হয় ‘নরমাল ফ্লোরা’। এসব জীবাণুর উপস্থিতিতে ক্ষতিকর জীবাণু অনুপ্রবেশের সুযোগ কমে যায়। অর্থাৎ নরমাল ফ্লোরা আমাদের জন্য উপকারী। কিন্তু একজনের নরমাল ফ্লোরা অন্য কারও দেহে প্রবেশ করলে সেখানে সংক্রমণ হতে পারে। টুথব্রাশ ব্যবহার করার পর ধুয়ে রাখা হলেও তাতে আপনার মুখের জীবাণু রয়ে যায়। তাই একজনের টুথব্রাশ থেকে অন্যজনের কাছে ছড়িয়ে পড়তেই পারে জীবাণু। এমনটাই বলছিলেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা.
সাইফ হোসেন খান।
বুঝতেই পারছেন, আপনি সুস্থ থাকলেও আপনার ব্যবহৃত টুথব্রাশ অন্যের রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অন্য কেউ আপনার টুথব্রাশ ব্যবহার করলে তো বটেই, আপনার টুথব্রাশ অন্যের টুথব্রাশের সংস্পর্শে এলেও জীবাণু ছড়াতে পারে। এভাবে অন্য কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। আর আপনি যদি এমন রোগে আক্রান্ত হন, যা হাঁচি-কাশি বা মুখের নিঃসরণের মাধ্যমে ছড়ায়, তাহলে সেই রোগটিও একইভাবে টুথব্রাশের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। শ্বাসতন্ত্রের নানা সংক্রমণ এভাবে ছড়ানোর ঝুঁকি আছে। সাধারণভাবে এসব সংক্রমণের উপসর্গই হলো হাঁচি, কাশি, কফ, সর্দি প্রভৃতি।
টুথব্রাশের কারণে নিজের দেহের সংক্রমণও কি ফিরে আসবেমুখের নিঃসরণ বা হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, এমন রোগে যখন আপনি আক্রান্ত, তখন এসব খারাপ জীবাণু আপনার টুথব্রাশে পৌঁছে যায় অনায়াসেই। ওই টুথব্রাশ ব্যবহার করার সময় এসব খারাপ জীবাণু আবার সেখান থেকেই আপনার মুখে ফিরে যেতে পারে। সে কারণে এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হলে তা সেরে যাওয়ার পর টুথব্রাশ বদলে ফেলার পরামর্শ দেন অনেকে।
তবে বিজ্ঞান বলছে, এসব জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে করতে আপনার দেহে তার বিরুদ্ধে একটা সুরক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে। তাই রোগাক্রান্ত সময়ের টুথব্রাশ থেকে ওই জীবাণু দিয়ে নিজের দেহে পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না। তবে যদি কারও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম হয়, তাহলে অবশ্য ফের সংক্রমণের ঝুঁকি রয়ে যায়। তাই তাঁদের ক্ষেত্রে একবার এ ধরনের সংক্রমণ হলে তা সেরে যাওয়ার পর নতুন একটি টুথব্রাশ প্রয়োজন।
শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি, ডায়াবেটিস বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবনকারীদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। অন্যান্য কিছু রোগ এবং ওষুধের কারণেও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যেতে পারে।
আরও পড়ুনবিবর্ণ দাঁত কীভাবে সুন্দর করা যায়১৫ জানুয়ারি ২০২৫সব সময় খেয়াল রাখুনতিন-চার মাস অন্তর টুথব্রাশ বদলাতে হবে সবাইকেই।
টুথব্রাশ ব্যবহারের পর ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝেড়ে ফেলুন। টুথব্রাশের জন্য এমন কভার বেছে নিন, যেটির ছিদ্র দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে।
একই হোল্ডারে একাধিক ব্যক্তির টুথব্রাশ না রাখাই ভালো। আলাদা আলাদা হোল্ডার ব্যবহার করুন এবং সেসব বেশ কয়েক ইঞ্চি দূরত্বে রাখুন।
শুকনা জায়গায় টুথব্রাশ রাখুন। বাথরুমের সামনের দেয়ালে টাইলস করে হোল্ডার গড়ে নিতে পারেন।
আরও পড়ুনএকটি টুথব্রাশ কত দিন ব্যবহার করবেন?১৯ জানুয়ারি ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর স ক রমণ আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ