গ্রিনহাউস গ্যাস ও ভার্চুয়াল পানির চ্যালেঞ্জ
Published: 10th, April 2025 GMT
গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসের অত্যধিক নিঃসরণের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে– যা বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণ শিল্পকারখানা ও জ্বালানি, পরিবহন খাত, কৃষিতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে নাইট্রাস অক্সাইড এবং বর্জ্য নিষ্কাশন ও ল্যান্ডফিল থেকে মিথেন গ্যাস নির্গত হওয়া।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ এমন একটি লক্ষ্য অর্জন করা, যা বায়ুমণ্ডলে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের অবদান কমিয়ে আনবে। এই লক্ষ্য বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটি চরম পরিবেশগত ঝুঁকিতে রয়েছে। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এবং নিম্নাঞ্চলীয় এই দেশটির একটি বড় অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এক মিটারেরও কম উচ্চতায় অবস্থিত, যা বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশেষ করে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ধ্বংসাত্মক বন্যার মুখোমুখি করেছে। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে মাত্র ০.
পরিষ্কার শক্তি সমাধান গ্রহণ তথা নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং এতে বিনিয়োগ করা যেমন– সৌরশক্তি, বায়ু ও টেকসই জলবিদ্যুৎ। আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনা কাজে লাগানো। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে অত্যাধুনিক পরিষ্কার শক্তি প্রযুক্তি এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যা দেশটিকে দূষণকারী শক্তির উৎসের ওপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করবে। সবুজ উদ্যোগকে উৎসাহিত করা। গ্রামীণ শক্তির মতো পরিবেশবান্ধব সামাজিক ব্যবসাগুলোকে সমর্থন এবং সম্প্রসারণের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে পরিষ্কার প্রযুক্তি ও অনুশীলনগুলোর ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্রকল্প এড়ানো। রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো প্রকল্পগুলো পুনর্বিবেচনা করা এবং এড়িয়ে চলা উচিত, যা পরিবেশ ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই উন্নয়নের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রযুক্তিগত লিপফ্রগিং বা অতিদ্রুত অগ্রগতি। একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কাছে পুরোনো ও দূষণকারী প্রযুক্তি এড়িয়ে সরাসরি আরও দক্ষ ও পরিষ্কার বিকল্প গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। টেকসই অনুশীলনের ওপর ফোকাস করা। টেকসই কৃষিনীতির প্রচার, বন উজাড় রোধ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো পদক্ষেপগুলো সামগ্রিক পরিবেশগত প্রভাব কমাতে এবং শূন্য নেট কার্বনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ অর্জন শুধু বাংলাদেশের জন্য একটি পরিবেশগত অপরিহার্যতা নয়, বরং এর দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনগণের কল্যাণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
বিলাতের কিংস কলেজের অধ্যাপক ও ব্রিটিশ ভূগোলবিদ জে. এ. অ্যালান কর্তৃক ভার্চুয়াল পানির ধারণাটি জনপ্রিয় হয়েছিল, যা পণ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকা পানি হিসেবে পরিচিত। ভার্চুয়াল পানিকে পণ্যের মধ্যে ‘অন্তর্নিহিত’ পানি হিসেবে দেখা যায়। এটি একটি সূচক, যা একটি পণ্য উৎপাদন ও পরিবহনের সময় বাষ্পীভূত বা দূষিত হওয়া স্বাদু পানির পরিমাণ নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, এক কেজি ধান উৎপাদনে প্রায় আড়াই হাজার লিটার পানি প্রয়োজন অথবা একটি কাপড় তৈরি করতে প্রায় ১০ হাজার লিটার পানি ব্যবহৃত হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে? এই পানি সরাসরি দেখা যায় না, কিন্তু পণ্যের মাধ্যমে ‘ভার্চুয়ালি’ স্থানান্তরিত হয়। পানির প্রাপ্যতা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং জলবায়ু পরিবর্তন এটিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। আমাদের রপ্তানি পণ্যের মাধ্যমে পানির গোপন স্থানান্তর সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। ভার্চুয়াল পানি বাণিজ্য বাংলাদেশের জন্য পানি সংকট ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি উপকরণ হতে পারে।
বিশ্বায়নের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ পানি-ঘন পণ্য (যেমন– পাট, চামড়া, তৈরি পোশাক, কৃষিজাত পণ্য) রপ্তানি করছে, যা ভার্চুয়াল পানির বড় ধরনের ক্ষতি ঘটাচ্ছে। এক জোড়া চামড়ার জুতা উৎপাদনে ৮ হাজার ৫০০ লিটার পানি ব্যবহৃত হয়, যা রপ্তানির মাধ্যমে দেশ থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।
ভার্চুয়াল পানির সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য কিছু পরিকল্পনা ও কৌশল প্রয়োজন। পণ্যের উৎপাদন ও বাণিজ্যে ব্যবহৃত পানির পরিমাণ হিসাব করে ভার্চুয়াল পানির আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ যদি গমের পরিবর্তে কম পানি ব্যবহার করে এমন ফসল (যেমন ভুট্টা) উৎপাদন করে, তাহলে ভার্চুয়াল পানির ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব। ভার্চুয়াল পানির সমস্যা মোকাবিলায় নাগরিকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার করে ভার্চুয়াল পানির আমদানি কমাতে হবে। বিদেশি ফল ও শাকসবজির পরিবর্তে স্থানীয় পণ্য কেনা। পরিবহনের কারণে এর পেছনে পানি বেশি খরচ হবে। তবে সরকারকেই ভার্চুয়াল পানি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। স্কুল ও কলেজে কর্মশালা আয়োজন করা, যেখানে শিক্ষার্থীরা পানির অপচয় রোধ ও ভার্চুয়াল পানির ধারণা সম্পর্কে শিখবে।
সরকারের উচিত নাগরিকদের সচেতন এবং কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা, যা নাগরিকদের মানতে বাধ্য করবে। নিচে সরকারের করণীয় বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো: প্রতিটি পণ্যের প্যাকেটে পানি ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে, যাতে নাগরিকরা সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন; জৈব ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের ওপর ভর্তুকি দেওয়া এবং রাসায়নিক সার ও প্লাস্টিক পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করা; বাড়ি ও অফিসে পানির পুনর্ব্যবহার ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা; পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা উন্নত এবং ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমানোর জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা; পানি ও কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা প্রদান এবং সেগুলো মেনে চলার জন্য নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করা।
পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করতে হবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও ভার্চুয়াল পানির সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশগত বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব। এ জন্য সরকার, বেসরকারি খাত ও নাগরিক সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এদিক দিয়ে তিন শূন্যের পৃথিবী তত্ত্বের জনক, শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশকে বৈশ্বিক পরিবেশ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উপযুক্ত নেতা।
মোহাম্মদ আসিফ চৌধুরী: সহকারী অধ্যাপক, রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব শ শ ন য ন ট ক র বন ল দ শ র জন য র ব যবহ র ক র বন ন পর ষ ক র স বর প পর ব শ ব যবস জলব য উৎপ দ ট কসই র ওপর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
পশ্চিমবঙ্গের চার শ্রমিককে বিদেশি বলে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা ভারতের
আসাম রাজ্যের পর গোটা ভারত থেকেই বাংলাদেশি বলে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো (পুশইন) হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা–ই নয়, প্রমাণের অভাবে আবার তাঁদের অনেককে ফিরিয়েও আনতে হচ্ছে বলে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত অঞ্চল থেকে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গেরই সংবাদমাধ্যম।
দক্ষিণ ও মধ্য বাংলার দুই জেলা বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের চার পরিযায়ী শ্রমিক মহারাষ্ট্রে কাজ করতে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে মহারাষ্ট্র পুলিশ তাঁদের ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে তুলে দেয়। এরপর বিএসএফ তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এ চারজনই আবার মুসলমান।
মুম্বাইয়ে কাজ করতে যাওয়া মুর্শিদাবাদ ও বর্ধমানের এই চার পরিযায়ী শ্রমিককে মহারাষ্ট্র পুলিশ বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়। কোনো রকম যাচাই না করেই তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজ্য পুলিশের উদ্যোগে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) কাছ থেকে ওই তিন নাগরিককে ফেরত নিয়ে বিএসএফ তাঁদের কোচবিহার জেলার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল। তাঁরা প্রত্যেকেই পরিযায়ী শ্রমিক। মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে তাঁরা রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। হেফাজতে নেওয়ার পাঁচ দিন পর তাঁদের উদ্ধার করা হলো বলে জানানো হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।পশ্চিমবঙ্গের সংবাদপত্র ‘পুবের কলম’ আজ সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তাঁদের কাছে বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করে দুই প্রকৃত বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। দুই দিন ধরে তাঁরা কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থেকে কিছুটা দূরে জিরো পয়েন্টে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় মুঠোফোন থেকে ভিডিও বার্তায় ওই চার শ্রমিক তাঁদের দুর্দশার কথা জানান। তারপরেই তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু করেন পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলামসহ অন্য জনপ্রতিনিধিরা। পুলিশও বিষয়টি বিএসএএফকে জানায়।
হরিহরপাড়ার বাসিন্দা শামীম রহমান গণমাধ্যমে বলেন, ‘স্থানীয় তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়। তারপর তাঁদের ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়। তাঁরা উদ্ধার হয়ে ঘরে ফিরছেন ভেবে ভালো লাগছে।’
সূত্রের খবর, বাংলাদেশি সন্দেহে চারজনকে আটক করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে ১০ জুন বিএসএফের হাতে তুলে দেয় মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাঁদের মুম্বাই থেকে আগরতলা ও পরে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে পাঠানো হয়। ওই শ্রমিকদের টাকা, মুঠোফোনও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন দুই বছর ধরে মুম্বাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গতকাল সকালে তাঁর স্ত্রী পিংকি বিবি হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখের সঙ্গে দেখা করেন। বিধায়কের মাধ্যমে বৈধ নথি সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও প্রশাসনের কর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। তারপরই তাঁদের ঘরে ফেরানোর তৎপরতা শুরু হয়।
হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ বলেন, নাজিমুদ্দিন এ দেশেরই নাগরিক। তাঁর বৈধ নথি ও নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র রয়েছে।
বিধায়ক নিয়ামত শেখ আরও বলেন, ‘তাঁর মতো আরও তিনজনকে বাংলাদেশি তকমা লাগিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় কেন্দ্রের বিএসএফ। গতকাল বিকেলে তাঁরা বিএসএফের হেফাজতে আসেন। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তাঁরা ঘরে ফিরবেন।’
এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশের তরফে গতকাল জানানো হয়, আটক ব্যক্তিদের কাগজপত্র রোববার বিএসএফের হাতে তুলে দেয় রাজ্য পুলিশ। এরপরে বিএসএফ যাবতীয় কাগজপত্র রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে যাচাইয়ের পরে তা বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) হাতে তুলে দেয়।
এরপর বিএসএফ সবাইকে ফেরানোর ব্যবস্থা করে এবং কোচবিহার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। মুর্শিদাবাদ ও বর্তমানের জেলা পুলিশের একটি দল ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। আজ সোমবার তাঁদের নিজে নিজে জেলায় ফেরানো হবে বলে জানা গেছে।
চারজনের মধ্যে তিনজনই মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন হরিহরপাড়ার তরতিপুর গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন মণ্ডল, ভগবানগোলার মহিষাস্থলি গ্রামপঞ্চায়েতের হোসেনপুর গ্রামের বাসিন্দা মেহবুব শেখ ও বেলডাঙার কাজিশাহার বাসিন্দা মিনারুল শেখ। অন্যজন পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার কুলুট গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফা কামাল।বাঙালি বলে হেনস্তা পশ্চিমবঙ্গে
তবে শুধু দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকই নন, পশ্চিমবঙ্গে উচ্চ ও মধ্যবিত্ত অনেকেই সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের অন্যভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে।
দিল্লির এক অধ্যাপিকা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গত কয়েক মাসে চারবার দক্ষিণ কলকাতার প্রধান পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও তিনি তাঁর ২০০৭ সালের পুরোনো পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারেননি।
এই অধ্যাপিকা বলেন, ‘আমাকে পুলিশের তরফে বলা হয়েছে, এখানে প্রচুর বাংলাদেশি ঢুকেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সে কারণে আমাদের যাঁদের প্রায় ২০ বছর ধরে বৈধ ভারতীয় পাসপোর্ট রয়েছে, তাঁদেরও সহজে পাসপোর্ট নবায়ন করা হচ্ছে না।’